বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জনবল বাড়াবে সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 19th, April 2025 GMT
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, সরকার বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে বিশেষ করে কনস্যুলেট জেনারেল অফিসগুলোতে জনবল বাড়ানোর কাজ করছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মানবসম্পদ বাড়ানোর প্রচেষ্টা শুরু করেছি, বিশেষ করে আমাদের কনস্যুলার পদগুলোতে। আশা করছি, এ প্রচেষ্টায় অন্তত আংশিক সাফল্য পাব।’
ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ফরেন সার্ভিস ডে ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, তার প্রায় ৮০ শতাংশ তাঁদের অভিবাসনের আগে দেশের ভেতরে এ–বিষয়ক কার্যক্রম থেকে আসে, বাকি ২০ শতাংশ অভিবাসী দেশে ঘটে। ‘তবু বিদেশে আমাদের মিশনগুলোকে ১০০ শতাংশ সমস্যার সমাধান করতে হবে’—এ কথা উল্লেখ করে তিনি বিদেশি মিশনের ওপর চাপ কমাতে দেশে মূল কারণগুলো সমাধানের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, সীমিত জনবল ও লজিস্টিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ মিশনগুলো বিশ্বব্যাপী এক কোটির বেশি প্রবাসীকে পরিষেবা প্রদান করছে।
সৌদি আরবের উদাহরণ টেনে উপদেষ্টা বলেন, সৌদি আরবে প্রায় ৩২ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘একটি মিশনের ৫০ জন কর্মকর্তা কীভাবে এত বিপুলসংখ্যক মানুষের সমস্যা সামাল দিতে পারেন?’
অভিবাসী শ্রমিকেরা দেশ ছাড়ার আগেই যে পদ্ধতিগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তা কমাতে ঢাকায় উদ্যোগ নিতে তিনি আহ্বান জানান।
কর্মকর্তাদের মধ্যে আরও বেশি সহানুভূতি জানানোর আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রবাসীরা ইচ্ছা করে মিশনে (কনস্যুলেট) যান না। বেশির ভাগই মরিয়া হয়ে আসেন। যদিও কয়েকজন ভালো আচরণ না–ও করতে পারে, তবে বেশির ভাগের সহায়তার গুরুতর প্রয়োজন হয়।’ তিনি বিদেশে মিশনের কর্মকর্তাদের দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্য অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁদের সেবা করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সংকটের কথাও উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থানকে ‘দ্বিধাগ্রস্ত’ হিসেবে অবহিত করেন।
তৌহিদ হোসেন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে এই অগ্রগতির পথে একটি বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেন।
উপদেষ্টা বলেন, আরাকান আর্মি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত নয়, তাই আনুষ্ঠানিক আলোচনা সম্ভব নয়। তবু কোনো না কোনোভাবে তাদের সম্পৃক্ত না করে সংকটের সমাধান অসম্ভব। তিনি জোর দিয়ে বলেন, স্বীকৃতি না পেলেও রাখাইনে আরাকান আর্মির উপস্থিতি ও প্রভাব রোহিঙ্গা সংকটের যেকোনো সামগ্রিক সমাধানে তাদের ভূমিকা অনিবার্য করে তুলেছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকে স্মরণ করে প্রতিবছর ১৮ এপ্রিল ফরেন সার্ভিস দিবস পালন করা হয়। তৎকালীন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে কর্মরত একদল সাহসী বাঙালি কূটনীতিক প্রথম বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন।
পররাষ্ট্রসচিব মো.
তাঁদের সাহসী পদক্ষেপ জাতির স্বাধীনতার দিকে যাত্রায় একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল এবং যা একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি স্থাপন করেছে। দিনটি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের স্বার্থকে এগিয়ে নিতে দেশের কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের সাহস, প্রতিশ্রুতি ও পেশাগত উৎকর্ষতার প্রতীক।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট ফর ন স র ভ স ম শনগ ল প রব স উল ল খ
এছাড়াও পড়ুন:
নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের শয্যাসংখ্যা ৫২। তবে গত সোমবার হাসপাতালের এই ওয়ার্ডে সাতটি শয্যা খালি দেখা গেছে। একই চিত্র সার্জারি ওয়ার্ডেরও। নগরের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেখানে রোগীর চাপ থাকে শয্যার দেড় গুণ, সেখানে জেনারেল হাসপাতালে এই সংখ্যা অর্ধেক। বছরে সাড়ে তিন লাখের মতো রোগী এখানে সেবা নিলেও তাঁদের মাত্র আড়াই শতাংশ ভর্তি হন এখানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত চার বছরের গড় হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ২৩ থেকে ২৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। প্রতি মাসে শয্যা অনুপাতে আবাসিক রোগী ভর্তি গড়ে ৪৭ শতাংশ; অর্থাৎ মোট শয্যার অর্ধেকের বেশি ফাঁকা থাকে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এই হার আরও কম; ৩৭ শতাংশ।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এই হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার কারণ জানা গেছে। সেগুলো হলো হাসপাতালের অবস্থান, নিরাপত্তাঝুঁকি, রাতের বেলায় ওষুধ না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত যাতায়াতব্যবস্থা না থাকা। হাসপাতালটিতে জনবলেরও ঘাটতিও রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় নার্সদের পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ভবনগুলোর বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে রোগীরা এখানে থাকতে চান না।
ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। মোহাম্মদ একরাম হোসেন, ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচট্টগ্রাম নগরে সরকারি দুই হাসপাতালের মধ্যে একটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অন্যটি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ২ হাজার ২০০ হলেও প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগী থাকেন। অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরীতে ১২০ থেকে ১৪০ জন রোগী থাকেন।
রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা চিকিৎসা নেন, তার অধিকাংশই আশপাশের এলাকার। দূরের রোগীরা এখানে আসতে চান না। কারণ, পাহাড়ের ওপর হাসপাতালটির অবস্থান। এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। রাতে পাহাড়ের পথ ধরে মাদকসেবীরা হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের পাশে অবস্থান করে। ছিনতাই ও নিরাপত্তাঝুঁকির কারণেই রোগীরা অন্যত্র চলে যান।
চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য ২৫টি শয্যা সংরক্ষিত আছে। এসব শয্যায় অন্য কোনো রোগী ভর্তি করা হয় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের মূল ভবন দুটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে গেছে। ফাটল ধরেছে কিছু স্থানে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন গুটিকয় নার্স। প্রসূতি বিভাগে নার্সের উপস্থিতি বেশি। সার্জারি বিভাগের পুরুষ ব্লকের অন্তত ৫টি বেড খালি। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থাও একই। রোগী বেশি মেডিসিন বিভাগে।
হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায়ই অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় সম্ভব হচ্ছে না।চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের অবস্থান নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার রংমহল পাহাড়ের ওপর। এর পেছনের দিকে কাটা পাহাড় লেন। আগে এ সড়ক দিয়েই হাসপাতালে ঢুকতে হতো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ধ্যা হলেই বন্ধ এ পাহাড়ি পথ ধরে বহিরাগত লোকজন হাসপাতালে ঢোকে। নিরাপত্তা না থাকায় মাদকসেবীরাও পাহাড়ে ওঠে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ একরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।
শুরুতে এটি কেবল একটি ডিসপেনসারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তবে ১৯০১ সালে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় জেলা সদর হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতাল ১৯৮৬ সালে ৮০ শয্যা এবং পরে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে জনবল থেকে যায় ১০০ শয্যার। সেই পুরোনো জনবল কাঠামোতেই সর্বশেষ ২০১২ সালে হাসপাতালটিতে ২৫০ শয্যার সেবা শুরু হয়। তবে এখনো জনবল সে–ই অর্ধেক।
হাসপাতাল–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শয্যা ২৫০টি হলেও এখানে চিকিৎসক ও নার্স আছেন প্রয়োজনের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও কনসালট্যান্ট মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪২ জন চিকিৎসক আছেন। অথচ ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৬৫ থেকে ৬৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে চিকিৎসকদের মতে, যে সংখ্যক রোগী এখানে আসেন, এর জন্য ১০০ জনের বেশি চিকিৎসক প্রয়োজন। নেই পর্যাপ্ত নার্স ও মিডওয়াইফও।
এ ছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায় সময় অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে সংকট সত্ত্বেও বহির্বিভাগের সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন রোগীরা। তবে বিভিন্ন সময় এসে টিকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন রোগী। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছেন ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৭২ জন রোগী। জরুরি সেবা নিয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার রোগী।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিক আমান প্রথম আলোকে বলেন, জনবল স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে রোগীদের পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে সংখ্যক চিকিৎসক থাকার কথা, তার তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে সেবা চলছে। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হলে পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
হাসপাতালে বিভিন্ন চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শয্যা বাড়লেও সেখানে পদ বাড়ানো হয়নি। নিরাপত্তার জন্য তাঁদের ৩০ জন আনসার অনুমোদন করা হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।