এবার মানুষের ডিম্বাশয়ে প্লাস্টিক কণা সনাক্ত
Published: 19th, April 2025 GMT
মানুষের ডিম্বাশয়ের ফলিকুলার তরল পদার্থে প্রথমবারের মতো প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। বিষয়য়টি নারীর উর্বরতার উপর সর্বব্যাপী এবং বিষাক্ত পদার্থের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। শনিবার দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।
ইকোটক্সিকোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সেফটি-তে প্রকাশিত নতুন পিয়ার-রিভিউ করা গবেষণায় ইতালির স্যালার্নোর একটি ফার্টিলিটি (উর্বরতা) ক্লিনিকে সহকারী প্রজনন চিকিৎসাধীন ১৮ জন নারীর ফলিকুলার তরল পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪ জনের ফলিকুলার তরলে প্লাস্টিক কণা সনাক্ত করা হয়েছে।
ফলিকুলার তরল ডিম্বানু বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং জৈব রাসায়নিক সংকেত সরবরাহ করে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, প্লাস্টিকের টুকরো দিয়ে সেই প্রক্রিয়া দূষিত করার ফলে উর্বরতা, হরমোনের ভারসাম্য এবং সামগ্রিক প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা বেশি।
রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং গবেষণার প্রধান লেখক লুইজি মন্টানো জানান, প্লাস্টিক কণা কীভাবে এবং কেন মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে তা নির্ধারণের দিকে এই ফলাফলগুলো একটি বড় পদক্ষেপ। তবে এটি ‘খুবই উদ্বেগজনকও’ বটে।
তিনি বলেন, “এই আবিষ্কারটি নারী প্রজনন ব্যবস্থায় উদীয়মান দূষকগুলোর আক্রমণাত্মকতা সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা সংকেত হিসেবে কাজ করবে।”
মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া থেকে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের নীচ পর্যন্ত পরিবেশজুড়ে প্লাস্টিক কণা এবং ছোট ন্যানোপ্লাস্টিক সনাক্ত করা হয়েছে। মানুষের দেহে প্লাস্টিক কণার উপস্থিতির জন্য খাদ্যকে প্রধান বাহন হিসেবে মনে করা হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় পরীক্ষিত সব মাংস ও উৎপাদিত পণ্যে এগুলো পাওয়া গেছে।
এই প্লাস্টিক কণাগুলো বিশেষভাবে বিপজ্জনক এই কারণে যে, এতে ১৬ হাজার প্লাস্টিক রাসায়নিক থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে পিএফএস, বিসফিনল ও প্যাথালেটসের মতো অত্যন্ত বিষাক্ত যৌগ যা, ক্যান্সার, নিউরোটক্সিসিটি, হরমোন ব্যাঘাত বা বিকাশগত বিষাক্ততার সাথে যুক্ত।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।
মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।