মানুষের ডিম্বাশয়ের ফলিকুলার তরল পদার্থে প্রথমবারের মতো প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। বিষয়য়টি নারীর উর্বরতার উপর সর্বব্যাপী এবং বিষাক্ত পদার্থের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। শনিবার দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।

ইকোটক্সিকোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সেফটি-তে প্রকাশিত নতুন পিয়ার-রিভিউ করা গবেষণায় ইতালির স্যালার্নোর একটি ফার্টিলিটি (উর্বরতা) ক্লিনিকে সহকারী প্রজনন চিকিৎসাধীন ১৮ জন নারীর ফলিকুলার তরল পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪ জনের ফলিকুলার তরলে প্লাস্টিক কণা সনাক্ত করা হয়েছে।

ফলিকুলার তরল ডিম্বানু বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং জৈব রাসায়নিক সংকেত সরবরাহ করে। 

গবেষকরা জানিয়েছেন, প্লাস্টিকের টুকরো দিয়ে সেই প্রক্রিয়া দূষিত করার ফলে উর্বরতা, হরমোনের ভারসাম্য এবং সামগ্রিক প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা বেশি।

রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং গবেষণার প্রধান লেখক লুইজি মন্টানো জানান, প্লাস্টিক কণা কীভাবে এবং কেন মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে তা নির্ধারণের দিকে এই ফলাফলগুলো একটি বড় পদক্ষেপ। তবে এটি ‘খুবই উদ্বেগজনকও’ বটে।

তিনি বলেন, “এই আবিষ্কারটি নারী প্রজনন ব্যবস্থায় উদীয়মান দূষকগুলোর আক্রমণাত্মকতা সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা সংকেত হিসেবে কাজ করবে।”

মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া থেকে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের নীচ পর্যন্ত পরিবেশজুড়ে প্লাস্টিক কণা এবং ছোট ন্যানোপ্লাস্টিক সনাক্ত করা হয়েছে। মানুষের দেহে প্লাস্টিক কণার উপস্থিতির জন্য খাদ্যকে প্রধান বাহন হিসেবে মনে করা হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় পরীক্ষিত সব মাংস ও উৎপাদিত পণ্যে এগুলো পাওয়া গেছে।

এই প্লাস্টিক কণাগুলো বিশেষভাবে বিপজ্জনক এই কারণে যে, এতে ১৬ হাজার প্লাস্টিক রাসায়নিক থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে পিএফএস, বিসফিনল ও প্যাথালেটসের মতো অত্যন্ত বিষাক্ত যৌগ যা, ক্যান্সার, নিউরোটক্সিসিটি, হরমোন ব্যাঘাত বা বিকাশগত বিষাক্ততার সাথে যুক্ত।

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রজনন

এছাড়াও পড়ুন:

চা বাগানের ন্যাড়া টিলায় নীল-লেজ সুইচোরাদের কোলাহল

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার ইটা ও করিমপুর চা বাগানের মধ্যখানে লালচে রঙের ন্যাড়া টিলা। মাটি কেটে নেওয়ায় বির্পযস্ত সেই টিলার গা জুড়ে গর্ত করে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে নীল-লেজ সুইচোরা পাখিরা।

নানা অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শণ করে দিনভর চলে উড়াউড়ি আর বেলা-অবেলাজুড়ে চলে নানা সুরের মনমতানো গান। গ্রীষ্মকালে এ এলাকায় বেড়াতে আসা পাখিদের মধ্যে অন্যতম এই নীল-লেজ সুইচোরা পাখি।

টিলার পাশে দাঁড়িয়ে একটু গভীর দৃষ্টিতে তাকালেই দেখা যায় টিলার গায়ে ছোট ছোট অসংখ্য গর্ত। গর্তগুলোর প্রতিটিই একেকটি বাসা, সুইচোরা পাখির বাসা। কোন কোন বাসায় বাচ্চা রয়েছে। আবার কোন বাসায় বসে ডিম তা দিচ্ছে স্ত্রী সুইচোরা।

বিকেলের পড়ন্ত রোদে টিলার গায়ের উঁচু গাছটির মরা ডালগুলোতে সরু, লম্বা ঠোঁট ও নীল লেজের কয়েকটি সুইচোরাকে বসে থাকতে দেখা গেল। কিছুক্ষণ পরপর তারা উড়ে গিয়ে শূন্য থেকে শৈল্পিক ভঙ্গিমায় পোকা ধরে নিয়ে আবারও গাছের ডালে গিয়ে বসছে। মা পাখিরা পোকা ধরে বাসায় নিয়ে বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে।মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত প্রজননের জন্য নিরাপদ ও উপযুক্ত স্থানে বসবাস করে সুইচোরা পাখিরা। এরা আমাদের দেশীয় পাখি হলেও সব সময় একই অঞ্চলে বসবাস করে না এরা। তাই এদের অনেকে পরিযায়ী বলেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এরা পরিযায়ী বা আবাসিক পাখি নয়। এরা আমাদের স্থানীয় পাখি।

প্রকৃতি প্রেমি মুরাদ হোসেন বলেন, “এরা এদেশের আবাসিক ‘নীল-লেজ সুইচোরা’। ইংরেজী নাম Blue-tailed Bee-eater. Meropidae নাম এই পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Merops Philippinus.”

স্থানীয়রা এদের ‘নীল চড়ুই’ বলে জানেন। তবে সবসময় এদের দেখা মেলে না। কেবল গ্রীষ্মকালেই কোথা থেকে যেন ঝাঁক বেঁধে চলে আসে এরা। 

করিমপুর চা বাগানের বাসিন্দা আইয়ুব আলী বলেন, “বাগানের পাশে পরিত্যাক্ত ন্যাড়া টিলার পেটে গর্ত করে গত তিনমাস ধরে পাখিগুলো বসবাস করছে। আগে ফি-বছর তারা আসলেও এখন আর আগেরমতো আসে না। মাঝে মাঝে এদের দেখা মেলে।”

ওই বাগানের বাসিন্দা দিপঙ্কর ঘোষ বলেন, “পাখি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বসবাস শুরু করে। কোন বাধা বিপত্তি এলে তারা চলে যায়। ৩/৪ বছর পর এদের দেখা মিলল। এরা এখানে নিরাপদে প্রজনন করতে পারছে। জুন মাসের শেষে তারা আবার চলে যাবে।”

শেখ কামাল ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টার গাজীপুরের পাখি বিশেষজ্ঞ আল্লামা শিবলী সাদিক বলেন, ‘‘নীল-লেজ সুইচোরা পাখিদের পরিযায়ী বা আবাসিক বলা যাবে না। এরা আমাদের দেশীয় পাখি। প্রজননের সময় তারা নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করে বলে এদের অনেকেই মনে করেন তারা পরিযায়ী বা আবাসিক। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত তাদের প্রজনন সময়। এরা পাহাড়ি টিলার নরম মাটিতে গর্ত করে বসবাস করে। গর্তের মধ্যেই বাসা তৈরি করে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটায়। পরে বাচ্চাদের নিয়ে অন্য স্থানে চলে যায়।”

প্রাপ্তবয়স্ক এই পাখির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার, ওজন ৩৮ থেকে ৫০ গ্রাম। নীল-সবুজ পালক বিশিষ্ট পাখিটির পেছনের অংশ ও লেজ নীল। গলা খয়েরি, বুকের ওপরটা বাদামি, চোখে কাজল টানা এবং পেট আপেলের মতো সবুজ। 

চোখ লালচে বাদামি থেকে গাঢ় লাল। কোমর, লেজ ও লেজের নিচের অংশ নীল। লেজের আগায় লম্বা নীল সুই বা পালক রয়েছে। 

এদের ঠোঁট সরু, লম্বা ও কালো। নিচের দিকে খানিকটা বাঁকানো। পা ও পায়ের পাতা কালচে বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক নীললেজ সুইচোরার দেহের রং অনুজ্জ্বল ও ফ্যাকাশে। স্ত্রী ও পুরুষ একই রকম দেখতে।

এদের আয়ুষ্কাল প্রায় ছয় বছর। মার্চ থেকে জুন এদের প্রজননকাল। এসময় পাহাড়ের গায়ে বা নদী ও খালপাড়ে প্রায় দুই মিটার লম্বা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বানায় এরা। সেখানে ৫-৬টি ডিম পাড়ে, ডিমের রং সাদা। ২১-২৬ দিনে ডিম ফোটে এবং ২০-২৭ দিন পরে বাচ্চারা উড়তে শেখে।

ঢাকা/আজিজ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চা বাগানের ন্যাড়া টিলায় নীল-লেজ সুইচোরাদের কোলাহল