মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি সিন্ডিকেটে জড়িত শেখ রেহানা-সালমানসহ প্রভাবশালীরা
Published: 21st, April 2025 GMT
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিন্ডিকেটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ প্রভাবশালীরা জড়িত ছিলেন।
সোমবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া স্মারকলিপিতে এ অভিযোগ করেছেন জনশক্তি ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, অতীতের মতো যেন আর সিন্ডিকেট না হয়। সিন্ডিকেট ভাঙতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক সংশোধন করতে হবে।
সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিতে স্মারকলিপিটি প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড.
সিন্ডিকেট নামে পরিচিতি পাওয়া মালয়েশিয়ার বাছাই করা ১০ এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগে অতীতের অনিয়ম হলেও, ২০২১ সালে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার একই পদ্ধতিতে কর্মী পাঠাতে রাজি হয়। ২০২২ সালে প্রথমে ২৫ এজেন্সি এবং পরবর্তীতে তিন ধাপে আরও ৭৬ এজেন্সি কর্মী পাঠানোর কাজ পায়। এগুলো সিন্ডিকেট নামে পরিচিত।
প্রথম ২৫ এজেন্সিতে ছিল তৎকালীন মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দুই এজেন্সি। ছিল আওয়ামী লীগ এমপি বেনজির আহমেদ, আলাউদ্দিন নাসিম, জাতীয় পার্টির মাসুদউদ্দিন চৌধুরীর তিন প্রতিষ্ঠান। বাকি ২০টির অন্তত আটটি আওয়ামী লীগ নেতাদের মালিকানাধীন।
৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও, সিন্ডিকেট নামে পরিচিত এজেন্সিগুলো কর্মী প্রতি গড়ে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা নেয়। স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়, অতীতে কর্মী হয়রানীর নজির থাকার পরও শেখ রেহানা, সালমান এফ রহমানসহ প্রভাবশালীদের যোগসাজশে দ্বিতীয়বারের সিন্ডিকেট অনুমোদন দেওয়া হয়।
মালয়েশিয়া বিদেশি কর্মী নিয়োগের ‘ফরেন ওয়ার্কার সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-এফডব্লিওসিএমএস’র নিয়ন্ত্রক ছিল বেস্টিনেট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর অন্যতম মালিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমিনুল ইসলাম নুর। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক ছিলেন রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিসের মালিক রুহুল আমিন স্বপন।
গত বছরের মে মাসে সমকালের অনুসন্ধান অনুযায়ী, এফডব্লিওসিএমএসে কর্মীর নিবন্ধন ফি ১০০ রিঙ্গিত হলেও, টাকা পরিশোধে ‘মাইগ্রাম’র ভার্চুয়াল রিচার্জ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পাঁচ হাজার রিঙ্গিত করে নেওয়া হয়। সিন্ডিকেটে ঢুকতেও আগাম ঘুষও দিতে হয়েছিল এজেন্সিগুলোকে। প্রতি কর্মী নিয়ন্ত্রণের সময়ে ‘ঘুষের ব্যালেন্স’ থেকে পাঁচ হাজার রিঙ্গিত করে কাটা হতো। আবার অটো রোটেশন পদ্ধতির কারণে অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। পৌনে পাঁচ লাখ কর্মী পাঠিয়ে অন্তত ১৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। কর্মী প্রতি এক লাখ ৫২ হাজার টাকা করে ঘুষ নেওয়া হয়।
স্মারকলিপিতেও একই সংখ্যা উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, যখনই মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সম্ভাবনা দেখা দেয়, তখনই ওই সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের পর পলাতক রুহুল আমিন স্বপন এবং আমিনুল ইসলাম নুর আবারও সিন্ডিকেট গড়তে সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন। তাদের কারণে ২০২৪ সালে বহির্গমন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও ১৭ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেনি।
জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বায়রার সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, সিন্ডিকেটের অনিয়মের কারণে অসংখ্য কর্মী মালয়েশিয়া গিয়ে চাকরি ও বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। সিন্ডিকেট নির্মূলে মালয়েশিয়া অন্যান্য কর্মী প্রেরণকারী দেশ থেকে যেভাবে এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ দেয়, বাংলাদেশ থেকেও সেভাবে কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। মালয়েশিয়ার সরকারের পরিবর্তে নিয়োগকর্তা বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাই করবে।
৪৫৩টি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকের স্বাক্ষরসহ রয়েছে স্মারকলিপিতে। তাদের পক্ষে স্মারকলিপি জমা দেন বায়রার সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, সাবেক সহ-সভাপতি নোমান চৌধুরীসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ম রকল প ত ল ইসল ম ব যবস য়
এছাড়াও পড়ুন:
চিম্বুকে ভালুকের আক্রমণে একজন আহত, ৫ বছরে ১০ জন হামলার শিকার
বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কের পোড়াবাংলা পটোসিংপাড়ায় আজ শুক্রবার সকালে ভালুকের আক্রমণে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
বন বিভাগ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০২১ সাল থেকে ভালুকের আক্রমণ বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে ১০ জন আক্রমণের শিকার হয়েছেন। আক্রমণের শিকার ব্যক্তিদের অধিকাংশ ম্রো জনগোষ্ঠীর। ভালুকের কারণে আহত হওয়ার ঘটনায় আবেদন না করায় এই পর্যন্ত কেউ ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পোড়াবাংলা পটোসিংপাড়ার কাইনপ্রে ম্রো (৩৫) পাড়া থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে জুমখেতে কাজ করতে যান। সেখানে জুমের পাশে কলাবাগানে কাজ করার সময় হঠাৎ কালো রঙের একটি ভালুক তাঁর ওপর আক্রমণ করে। ভালুকটি তাঁর পেটে ও মুখে আঘাত করতে থাকে। তাঁর চিৎকারে আশপাশে জুমের লোকজন এগিয়ে আসেন।
আহত কাইনপ্রে ম্রোর ভাই তনরুই ম্রো জানিয়েছেন, আশপাশের লোকজনের এগিয়ে আসা দেখে ভালুকটি কাইনপ্রে ম্রোকে ছেড়ে দিয়ে বনে পালিয়ে যায়। তাঁরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে কাইনপ্রে ম্রোকে উদ্ধার করে দুপুরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পোড়াবাংলা পটোসিংপাড়া জেলা শহর থেকে ৩১ কিলোমিটার দূরে। পাড়াটি রুমা উপজেলার গালেংগ্যা ইউনিয়নে পড়েছে।
বান্দরবান সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আহত কাইনপ্রে ম্রোর পেটে ও মাথায় গভীর ক্ষত আছে। এ জন্য তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, থানচি তিন্দু ইউনিয়নে মেনপই ম্রো নামের একজন ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল প্রথম ভালুকের আক্রমণের শিকার হন। ওই একজনসহ ২০২১ সাল থেকে এই পর্যন্ত ৫ বছরে ১০ জন ভালুকের আক্রমণে আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে থানচিতে দুজন, রুমাতে তিনজন, আলীকদমে একজন ও বান্দরবান সদর উপজেলা চিম্বুক পাহাড়ে চারজন রয়েছেন। কারও মৃত্যু না হলেও তাঁদের মধ্যে কেউ চোখ হারিয়েছেন, কারও হাত–পা পঙ্গু হয়েছে। আহত ব্যক্তিরা একজন মারমা ও একজন খুমি ছাড়া অন্যরা সবাই ম্রো।
বন বিভাগের বান্দরবানের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আবদুর রহমান জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক বনাঞ্চল কেটে উদ্যান বাগান ও জুমচাষ করা এলাকাগুলোতে ভালুকের আক্রমণ বেড়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বাগানের কারণে ভালুক ও অন্যান্য বন্য প্রাণীরা আবাসস্থল ও বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যসংস্থান হারাচ্ছে। জীবনের তাগিদে তারা মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি হতে বাধ্য হচ্ছে। বন নির্ভর মানুষকে অন্যভাবে আয়ের সংস্থানের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সংরক্ষণ না হলে বন্য প্রাণীর সঙ্গে সহাবস্থান গড়ে উঠবে না। এভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা না হলে বন্য প্রাণী ও মানুষ কারও জন্য মঙ্গলজনক হবে না।