কারিগরি শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন। ১৬ এপ্রিল সাতরাস্তায় তাঁদের অবস্থান কর্মসূচিতে রাজধানীজুড়ে যানজট তৈরি হয়। ঢাকার বাইরেও জেলায় জেলায় আন্দোলন হচ্ছে।

আন্দোলনকারীরা মূলত ছয়টি দাবি তুলেছেন। যদিও তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনের সূত্রপাত মূলত ‘ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর’ থেকে ‘জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর’ পদে পদোন্নতি বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশকে কেন্দ্র করে।

পদন্নোতির বিধান না থাকায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড ও নন-গেজেটেড কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০২০-এর দুটি সিরিয়াল (২৭ ও ২৮) চ্যালেঞ্জ করে গত বছর ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর মো.

আশিক মিয়াসহ কয়েকজন হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুল দেন। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১৮ মার্চ হাইকোর্ট রায় দেন।

রায়ে কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে রিট আবেদনকারীদের (ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর) জন্য কিছু পদ রাখতে বা সন্নিবেশিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়, যদি পদ না থাকে তাহলে যোগ্যতাসাপেক্ষে যেকোনোভাবে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দিতে বলা হয়।

রায়ের পর থেকেই পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছেন। ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।

তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (দশম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।

আর ষষ্ঠ দাবি হলো পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস এবং ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

দাবিগুলো পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ১৫ এপ্রিল লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক রোববার হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। একই সঙ্গে আবেদনটি আগামী ১৮ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি করতে বলা হয়েছে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ বলছে, আন্দোলনকারীদের সব দাবি মানা কঠিন।  

ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর কারা

ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর হলেন এমন প্রশিক্ষক, যাঁরা কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিভিন্ন ট্রেডে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন। তাঁরা মূলত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং বা ভোকেশনাল কোর্সের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক বা প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস পরিচালনা করেন।

কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থায় শুরু থেকে সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে জনবলকাঠামো অনুযায়ী চিফ ইনস্ট্রাক্টর, ইনস্ট্রাক্টর, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর ও ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর রয়েছেন। এর মধ্যে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদটি সরকারি বেতনকাঠামোর ১৩তম গ্রেডের।

অবশ্য ১৭তম গ্রেডে বেতনপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরও রয়েছেন। তাঁদের মূল কাজ পরীক্ষাগার-ওয়ার্কশপে দায়িত্ব পালন করা এবং ওয়ার্কশপ ও পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ করে রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। তাঁরা যন্ত্রপাতি কীভাবে চালানো যায়, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন।

আন্দোলনকারীরা যা বলছেন

শিক্ষার্থীরা বলছেন, অনেকেই আছেন, যাঁরা অফিস সহায়ক পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর হয়েছেন। অনেকে অনিয়মিত কর্মী (মাস্টাররোল) হিসেবে নিয়োগ পেয়ে পদোন্নতির মাধ্যমে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর হয়েছেন। এ ধরনের কর্মচারীরা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি পেলে কারিগরি শিক্ষার মর্যাদা কমবে।

ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, চিফ ইনস্ট্রাক্টর ও ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর—দুটি পদেরই সংক্ষিপ্ত রূপ সিআই। এ কারণে ক্র্যাফট ইন্সপেক্টরদের অনেকে বিভিন্ন জায়গায় সিআই পরিচয় দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন।

২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া স্নাতক ডিগ্রিধারী ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিলের দাবির বিষয়ে আন্দোলনকারীরা বলছেন, এই নিয়োগের ফলে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। তাঁরা বলছেন, যেখানে উচ্চশিক্ষিত জনবলের প্রয়োজন নেই, সেখানে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া অযৌক্তিক।

বিতর্কিতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত (২০২১ সালে) ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের কোনো কারিগরি যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, তাঁদের নিয়োগে যোগ্যতা হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে স্নাতক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। গোপনে নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রধান কার্যনির্বাহী সদস্য জুবায়ের পাটোয়ারী শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা পদোন্নতির জন্য রিট করেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন এসএসসি পাস ব্যক্তি রয়েছেন। তিনি পদোন্নতি পেয়ে যখন শিক্ষকতায় আসবেন, তিনি কী শেখাবেন!

ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদে উচ্চশিক্ষিত জনবল নিয়োগের বিষয়ে জুবায়ের বলেন, তাহলে বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি-এইচএসসি পাস করে যাঁরা বের হবেন, তাঁদের চাকরির নিশ্চয়তা সরকার কোথা থেকে দেবে।

‘বক্তব্য সঠিক নয়’

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে কর্মরত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের সংগঠন বাংলাদেশ পলিটেকনিক নন-গেজেটেড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাপনটিএ)।

সংগঠনটির তথ্য বলছে, সারা দেশে ১৩তম গ্রেডে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ২০০। এঁদের মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী রয়েছেন ৪০০ জনের বেশি। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন প্রায় ৫০০ জন। পদার্থ ও রসায়নে স্নাতক ডিগ্রিধারীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। এসএসসি (ভোকেশনাল) পাস করা রয়েছেন প্রায় ৩০০ জন।

বাপনটিএর সদস্যদের অভিযোগ, নতুন যোগদান করা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর ও বিগত সরকারের সময় প্রকল্প থেকে সরাসরি উচ্চপদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের উসকানি দিয়ে আন্দোলনে নামিয়েছেন। কারণ হলো ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টররা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি পেলে মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করছেন তাঁরা (জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর)।

পিয়ন থেকে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে—আন্দোলনকারীদের এমন দাবি সঠিক নয় বলেও অভিযোগ করছেন ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টররা। তাঁরা বলছেন, ১৭তম গ্রেডে চাকরি করা ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টররা এই পদোন্নতির আওতাভুক্ত নন।

বাপনটিএর একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদটি শিক্ষক পদ। তাঁদের মানহানি করার জন্য ১৭তম গ্রেডের ল্যাবরেটরি বেয়ারার এবং দক্ষ বাহক পদের নাম পরিবর্তন করে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর করা হয়েছে। এসব পদের কর্মপরিধি ১৩তম গ্রেডের ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ওপর চাপিয়ে শিক্ষার্থীদের ভুল বোঝানো হয়েছে।

যা বলছে কারিগরি শিক্ষা বিভাগ

কারিগরি শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকটি দাবিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালা আবার সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারিগরি শিক্ষা বিভাগ।

২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল করার যে দাবি, তা পূরণ কারিগরি শিক্ষা বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সূত্র জানিয়েছে, ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদ থেকে পদোন্নতির বিষয়ে ভিন্ন ব্যবস্থা রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।

জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে দাবিগুলো নিয়ে তাঁরা কথা বলছেন, এগুলো আমার কাছে খুব ছোট দাবি। আমি ওদের নিয়ে আরও বড় চিন্তা করছি, পরিকল্পনা করছি এবং কাজ শুরুও করেছি।’ তিনি বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষাকে আমি বাংলাদেশের মেইন স্ট্রিম (মূল ধারা) করতে চাই। তারা আমাদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করুক। সমঝোতার মাধ্যমে যেগুলো সম্ভব আমরা মেনে নেব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০২১ স ল ব ত ল কর ত জনবল র জন য প স কর করছ ন ত করত সরক র বলছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

নাসির-তামিমার মামলার শুনানি বিব্রত আদালত, বদলির আদেশ 

অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার শুনানিতে বিব্রত বোধ করেছেন আদালত। মামলাটি অন্য আদালতে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান এ আদেশ দেন।

সোমবার এ মামলায় নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানার আত্মপক্ষ শুনানির দিন ধার্য ছিল। নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানা আদালতে হাজির হন।

তাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান দুলু আদালতে দুটি আবেদন করেন। এর মধ্যে বাদীপক্ষের আইনজীবী ইসরাত হাসানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে একটি আবেদন করা হয়। কারণ হিসেবে আজিজুর রহমান দুলু বলেন, “এ মামলার বিচার চলছে। এ অবস্থায় বাদীপক্ষের আইনজীবী গত ১৬ এপ্রিল মিডিয়াতে বলেন, নাসির হোসেন ব্যাভিচার করে তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন। বিচার শেষে আদালত নির্ধারণ করবেন, নাসির তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন কি না এবং ব্যাভিচার করেছেন কি না।” 

একই সঙ্গে আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার পুরো অভিযোগ না শুনিয়ে সারসংক্ষেপ পড়ে শোনানোর আবেদন করেন নাসির ও তামিমার আইনজীবী।

এদিকে, বাদীপক্ষের আইনজীবী আদালতে অভিযোগ করেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী আগে বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। আইন অনুযায়ী তিনি এখন আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করতে পারেন না।

দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত বলেন, উভয় পক্ষেরই আবেদন দেওয়ার অধিকার আছে। এটা বিজি কোর্ট। একটা মামলার শুনানি করতে যে ধৈর্য দরকার, এত সময় এই আদালতের নেই। এতে অন্য মামলায় ইফেক্ট পড়ে। আমি বিব্রত বোধ করে মামলাটা অন্য কোর্টে পাঠিয়ে দিই। এতে আপনারা কি নাখোশ হবেন?

তখন আইনজীবীরা জানান, এতে তাদের আপত্তি নেই। তখন আদালত বলেন, মামলাটা বদলি করে সিএমএম বরাবর পাঠিয়ে দিই। সিএমএম মামলাটি একটা কোর্টে পাঠিয়ে দেবেন।

এর আগে গত ১৬ এপ্রিল এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।

২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তামিমা সুলতানা তাম্মির স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে আদালতে এ মামলা করেন। ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শেখ মো. মিজানুর রহমান তিন জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি আদালত নাসির-তামিমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তবে, এ মামলার অপর আসামি তামিমার মা সুমি আক্তারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

ঢাকা/এম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অকার্যকর সিসি ক্যামেরা, পানি নেই ছয় মাস
  • আউটসোর্সিং এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন
  • ক্রিকেটার নাসির ও তামিমার মামলায় শুনানিতে আদালত বিব্রত
  • নাসির-তামিমার মামলায় বিব্রত আদালত, অন্য আদালতে বদলি
  • নাসির-তামিমার মামলার শুনানি বিব্রত আদালত, বদলির আদেশ