কারিগরি শিক্ষার্থীদের দাবি কী, পূরণে বাধা কোথায়, কী চিন্তা করছে সরকার
Published: 21st, April 2025 GMT
কারিগরি শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন। ১৬ এপ্রিল সাতরাস্তায় তাঁদের অবস্থান কর্মসূচিতে রাজধানীজুড়ে যানজট তৈরি হয়। ঢাকার বাইরেও জেলায় জেলায় আন্দোলন হচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা মূলত ছয়টি দাবি তুলেছেন। যদিও তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনের সূত্রপাত মূলত ‘ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর’ থেকে ‘জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর’ পদে পদোন্নতি বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশকে কেন্দ্র করে।
পদন্নোতির বিধান না থাকায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড ও নন-গেজেটেড কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০২০-এর দুটি সিরিয়াল (২৭ ও ২৮) চ্যালেঞ্জ করে গত বছর ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর মো.
রায়ে কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে রিট আবেদনকারীদের (ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর) জন্য কিছু পদ রাখতে বা সন্নিবেশিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়, যদি পদ না থাকে তাহলে যোগ্যতাসাপেক্ষে যেকোনোভাবে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দিতে বলা হয়।
রায়ের পর থেকেই পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছেন। ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (দশম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
আর ষষ্ঠ দাবি হলো পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস এবং ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
দাবিগুলো পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ১৫ এপ্রিল লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক রোববার হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। একই সঙ্গে আবেদনটি আগামী ১৮ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি করতে বলা হয়েছে।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ বলছে, আন্দোলনকারীদের সব দাবি মানা কঠিন।
ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর কারা
ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর হলেন এমন প্রশিক্ষক, যাঁরা কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিভিন্ন ট্রেডে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন। তাঁরা মূলত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং বা ভোকেশনাল কোর্সের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক বা প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস পরিচালনা করেন।
কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থায় শুরু থেকে সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে জনবলকাঠামো অনুযায়ী চিফ ইনস্ট্রাক্টর, ইনস্ট্রাক্টর, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর ও ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর রয়েছেন। এর মধ্যে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদটি সরকারি বেতনকাঠামোর ১৩তম গ্রেডের।
অবশ্য ১৭তম গ্রেডে বেতনপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরও রয়েছেন। তাঁদের মূল কাজ পরীক্ষাগার-ওয়ার্কশপে দায়িত্ব পালন করা এবং ওয়ার্কশপ ও পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ করে রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। তাঁরা যন্ত্রপাতি কীভাবে চালানো যায়, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন।
আন্দোলনকারীরা যা বলছেন
শিক্ষার্থীরা বলছেন, অনেকেই আছেন, যাঁরা অফিস সহায়ক পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর হয়েছেন। অনেকে অনিয়মিত কর্মী (মাস্টাররোল) হিসেবে নিয়োগ পেয়ে পদোন্নতির মাধ্যমে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর হয়েছেন। এ ধরনের কর্মচারীরা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি পেলে কারিগরি শিক্ষার মর্যাদা কমবে।
ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, চিফ ইনস্ট্রাক্টর ও ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর—দুটি পদেরই সংক্ষিপ্ত রূপ সিআই। এ কারণে ক্র্যাফট ইন্সপেক্টরদের অনেকে বিভিন্ন জায়গায় সিআই পরিচয় দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন।
২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া স্নাতক ডিগ্রিধারী ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিলের দাবির বিষয়ে আন্দোলনকারীরা বলছেন, এই নিয়োগের ফলে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। তাঁরা বলছেন, যেখানে উচ্চশিক্ষিত জনবলের প্রয়োজন নেই, সেখানে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া অযৌক্তিক।
বিতর্কিতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত (২০২১ সালে) ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের কোনো কারিগরি যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, তাঁদের নিয়োগে যোগ্যতা হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে স্নাতক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। গোপনে নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রধান কার্যনির্বাহী সদস্য জুবায়ের পাটোয়ারী শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা পদোন্নতির জন্য রিট করেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন এসএসসি পাস ব্যক্তি রয়েছেন। তিনি পদোন্নতি পেয়ে যখন শিক্ষকতায় আসবেন, তিনি কী শেখাবেন!
ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদে উচ্চশিক্ষিত জনবল নিয়োগের বিষয়ে জুবায়ের বলেন, তাহলে বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি-এইচএসসি পাস করে যাঁরা বের হবেন, তাঁদের চাকরির নিশ্চয়তা সরকার কোথা থেকে দেবে।
‘বক্তব্য সঠিক নয়’
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে কর্মরত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের সংগঠন বাংলাদেশ পলিটেকনিক নন-গেজেটেড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাপনটিএ)।
সংগঠনটির তথ্য বলছে, সারা দেশে ১৩তম গ্রেডে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ২০০। এঁদের মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী রয়েছেন ৪০০ জনের বেশি। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন প্রায় ৫০০ জন। পদার্থ ও রসায়নে স্নাতক ডিগ্রিধারীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। এসএসসি (ভোকেশনাল) পাস করা রয়েছেন প্রায় ৩০০ জন।
বাপনটিএর সদস্যদের অভিযোগ, নতুন যোগদান করা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর ও বিগত সরকারের সময় প্রকল্প থেকে সরাসরি উচ্চপদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের উসকানি দিয়ে আন্দোলনে নামিয়েছেন। কারণ হলো ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টররা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি পেলে মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করছেন তাঁরা (জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর)।
পিয়ন থেকে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে—আন্দোলনকারীদের এমন দাবি সঠিক নয় বলেও অভিযোগ করছেন ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টররা। তাঁরা বলছেন, ১৭তম গ্রেডে চাকরি করা ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টররা এই পদোন্নতির আওতাভুক্ত নন।
বাপনটিএর একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদটি শিক্ষক পদ। তাঁদের মানহানি করার জন্য ১৭তম গ্রেডের ল্যাবরেটরি বেয়ারার এবং দক্ষ বাহক পদের নাম পরিবর্তন করে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর করা হয়েছে। এসব পদের কর্মপরিধি ১৩তম গ্রেডের ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ওপর চাপিয়ে শিক্ষার্থীদের ভুল বোঝানো হয়েছে।
যা বলছে কারিগরি শিক্ষা বিভাগ
কারিগরি শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকটি দাবিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালা আবার সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারিগরি শিক্ষা বিভাগ।
২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল করার যে দাবি, তা পূরণ কারিগরি শিক্ষা বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সূত্র জানিয়েছে, ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর পদ থেকে পদোন্নতির বিষয়ে ভিন্ন ব্যবস্থা রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।
জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে দাবিগুলো নিয়ে তাঁরা কথা বলছেন, এগুলো আমার কাছে খুব ছোট দাবি। আমি ওদের নিয়ে আরও বড় চিন্তা করছি, পরিকল্পনা করছি এবং কাজ শুরুও করেছি।’ তিনি বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষাকে আমি বাংলাদেশের মেইন স্ট্রিম (মূল ধারা) করতে চাই। তারা আমাদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করুক। সমঝোতার মাধ্যমে যেগুলো সম্ভব আমরা মেনে নেব।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২১ স ল ব ত ল কর ত জনবল র জন য প স কর করছ ন ত করত সরক র বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অভিযুক্তরা এর আগে শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী হিসেবে শেয়ার কারসাজিতে জড়িত ছিলেন এবং তাদেরকে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
শেয়ার কারসাজির কোম্পানিগুলো হলো- গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স পিএলসি, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পিপলস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তথ্য মতে, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে তারা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই সময়ে অর্থাৎ ১০ দিনে কোম্পানির শেয়ারের দাম বহুগুণ বেড়ে যায়। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে দীর্ঘদিন পর কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
পুঁজিবাজারে ওই সময়কালে গুঞ্জন ছিল- গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানিটির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে ৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়ানোর দায়ে ৩ ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মো. সাইফ উল্লাহকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা, মো. এ.জি. মাহমুদ ও মো. সাইফ উল্লাহকে যৌথভাবে ৪২ লাখ টাকা ও এস. এম. মোতাহারুল জানানকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে অভিযুক্তদের মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
কারসাজিতে জড়িতদের পরিচিতি
স্বল্প সময়ের মধ্যে ৫টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করে মো. সাইফ উল্লাহ, মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানান বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ শেয়ার কারসাজিতে নেতৃত্ব দেন শেয়ার ব্যবসায়ী মো. সাইফ উল্লাহ। আর তাকে সহযোগিতা করেন শেয়ার ব্যবসায়ী মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানান। এর মধ্যে মো. সাইফ উল্লাহর শ্যালক মো. এ.জি. মাহমুদ। আর এস. এম. মোতাহারুল জানান তাদের সহযোগী। সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স লিমিটেডে অভিযুক্ত ৩ ব্যক্তির বিও হিসাব রয়েছে। তারা সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ায়। তারা সবাই সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও বিশিষ্ট শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী।
এর আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্ব থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে শেয়ার কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে ১৫ লাখ টাকা ও মো. এ.জি. মাহমুদকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতেও জড়িত থাকার অভিযোগে হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, মো. সাইফ উল্লাহকে ৫০ লাখ টাকা ও মো. এ.জি. মাহমুদকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়।
ওই বছরের মে মাসে ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার নিয়ে শেয়ার কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে ৩০ লাখ টাকা এবং মো. এ.জি. মাহমুদকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
একই বছরের আগস্টে জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে মো. সাইফ উল্লাহকে ৪০ লাখ টাকা এবং মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানানকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম
২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৩.৯২ শতাংশ, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৫.২৮ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ৩৪.৬৫ শতাংশ, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ৩৭.৩৫ শতাংশ ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ১৪.৭৪ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করতে স্বল্প সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ায় কারসাজি চক্র। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির তদন্তে দীর্ঘদিন পর অবশেষে তা প্রমাণিত হয়েছে।
বিএসইসির সিদ্ধান্ত
কমিশন জানায়, অভিযুক্তরা ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে কারসাজি করে অভিযুক্তরা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি করে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং এ কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থি। তাই অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জরিমানা ধার্য করা হয়।
ঢাকা/এনটি/ইভা