ভ্যাটিকানের অন্তর্বর্তী প্রধান কেভিন ফ্যারেল সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
Published: 22nd, April 2025 GMT
ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর খবর সোমবার (২১ এপ্রিল) বিশ্ববাসীকে সর্বপ্রথম যিনি দিয়েছিলেন, তিনি হলেন কেভিন ফ্যারেল।
তিনি একজন কার্ডিনাল, যার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সাধারণত পোপের খুবই ঘনিষ্ঠ মহলের সদস্য হন কার্ডিনালরা। পৃথিবীজুড়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের চার্চগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে কার্ডিনালরা পোপকে সহায়তা করেন। সূত্র: বিবিসি
আইরিশ-আমেরিকান কার্ডিনাল কেভিন ফ্যারেল সোমবার ঘোষণা করেন, পোপ তার প্রভুর ঘরে ফিরে গেছেন। এই ঘোষণার পর তিনি 'ক্যামেরলেনগো' হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনিই এখন থেকে ভ্যাটিকানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান।
এই দায়িত্বের জন্য ২০১৯ সালেই তাকে মনোনীত করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। পোপের মৃত্যু অথবা কোনো পোপ পদত্যাগ করলে পোপের পরবর্তী উত্তরসূরি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত যে সময়, এটি 'অ্যাপোস্টোলিকা সেডেস ভ্যাকান্স' নামে পরিচিত।
শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বের ক্ষেত্রে না, পোপ ফ্রান্সিসকে শ্রদ্ধা জানানোর শত শত বছরের প্রথাগত আনুষ্ঠানিকতার নেতৃত্বেও থাকবেন কেভিন ফ্যারেল।
১৯৪৭ সালে ডাবলিনে জন্ম নেওয়া কেভিন ফ্যারেল পড়াশোনা করেছেন স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব সালামাঙ্কা ও রোমের পন্টিফিক্যাল গ্রেগরিয়ান ইউনিভার্সিটিতে।
তিনি কর্মজীবনে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করেছেন। যেমন— মেক্সিকোর ইউনিভার্সিটি অব মন্টেরে-তে চ্যাপলেইন বা ধর্মগুরু হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। আবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডের বেথেসডা'র একটি প্যারিশেও (গির্জা ও যাজক সংক্রান্ত দেশের বিভাগ বিশেষ) তিনি কাজ করেছেন।
৭৭ বছর বয়সী কার্ডিনাল ফ্যারেল তার জীবনের ৩০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গির্জায় কাজ করে।
২০০৭ সালে তিনি ডালাসের বিশপ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এরপর ২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাকে ভ্যাটিকানের প্যাস্টোরালেয়ার বিষয়ক নতুন একটি বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব দেন এবং পাশাপাশি তিনি তাকে কার্ডিনালের মর্যাদায়ও উন্নীত করেন।
'ক্যামেরলেনগো' হিসাবে নির্বাচিত করার কয়েক বছর পর, ২০২৩ সালে কেভিন ফ্যারেলকে ভ্যাটিকান সিটি স্টেটের সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট এবং কমিশন ফর কনফিডেনশিয়াল ম্যাটারসের প্রধান হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া হয়।
এখন ক্যামেরলেনগো হিসেবে তার মূল দায়িত্ব— পরবর্তী পোপ নির্বাচনের জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করা। তবে এই পদ থেকেও পোপ নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ আছে, যদিও তা বিরল। এর আগে ইতিহাসে মাত্র দু'জন ক্যামেরলেনগো পোপ হয়েছেন।
তাদের একজন হলেন গিওআচিনো পেচি (পোপ লিও ১৩), যিনি ১৮৭৮ সালে ক্যামেরলেনগো পোপ হয়েছিলেন। দ্বিতীয়জন হন ১৯৩৯ সালে, তার নাম ইউগেনিও পাচেলি (পোপ পায়াস ১২)।
কার্ডিনাল ফ্যারেলই আনুষ্ঠানিকভাবে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর সনদে স্বাক্ষর করবেন। তারপর তিনিই পোপ ফ্রান্সিসের মরদেহ কফিনে শায়িত করবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, স্থানীয় সময় বুধবার সকালে শোকযাত্রার মাধ্যমে পোপের মরদেহ ডোমাস সান্তা মার্তা চ্যাপেল থেকে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় নিয়ে যাওয়া হবে। এই শোকযাত্রার নেতৃত্বেও থাকবেন কার্ডিনাল কেভিন ফ্যারেল।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে গত বছরের ৪ মার্চ শিক্ষার্থীকে গুলির একটি মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি। এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করা কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে নাম নেই যার কাছ থেকে ডা. রায়হান অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন সেই এস এস আল হোসাইন ওরফে সোহাগের। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতার একাধিক মামলা আছে।
গত বছরের ৪ মার্চ ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখান শিক্ষক রায়হান। তার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে শিক্ষক রায়হান গুলি করেন। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ হলেও বর্তমানে সুস্থ। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। তাঁর ব্যাগে লাইসেন্সবিহীন দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি জাপানি সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছুরি ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া যায়। ডা. রায়হানের বিরুদ্ধে সে সময় আহত শিক্ষার্থী তমালের বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন হত্যাচেষ্টা ও ডিবি পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন রায়হান। যদিও পরবর্তী সময়ে জামিন নিয়ে রায়হান এখন পলাতক। ঘটনার পর থেকে উধাও অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগও।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, সোহাগের কাছ থেকেই সব অস্ত্র কিনেছেন। এরপর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সোহাগ ও রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগপত্র থেকে সোহাগের নাম বাদ দিয়েছেন ডিবির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম ও ইউনিট ওসি ইকরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা।
সিরাজগঞ্জ ডিবির এসআই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁর ইউনিটপ্রধান বর্তমান ওসি ইকরামুল হোসাইন আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে পুলিশ পদক নিতে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ফোনে দাবি করেন, ডা. রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তাঁর বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদী এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি এতে জড়িত নন। বিএনপি করার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতেই আগের সরকারের সময় সাবেক এসপি ও ওসি সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান যে সময় অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এসপি আরিফুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন, শিক্ষক রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সোহাগের কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়।
সমকালের অনুসন্ধানেও সাবেক এসআই ওয়াদুত আলীর এজাহার অনুযায়ী সোহাগের ফোন নম্বরের কল ডিটেইল এবং এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহাগেরই তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গতকাল ফোনে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি জানি না।’
মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আত্মঘাতী ও তদন্তের নীতিমালার বাইরে।
জানা গেছে, ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবক দলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগ। গতকাল তিনি ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ী নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।