মুলতান সুলতানের বিপক্ষে রিশাদ হোসেন মূল্যবান দুটি উইকেট পেলেও দিয়েছেন ৪৫ রান। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) এই ম্যাচে লাহোর কালান্দার্স অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদি ব্যবহার করেছেন ৭ বোলার। একমাত্র আব্বাস আফ্রিদি ছাড়া বাকি সবারই রানরেট ছিল ৭ এর ওপরে। তাই রিশাদের ৪৫ রান খরচকে খুব একটা দৃষ্টিকুটু লাগছে না। তবে এরপরও টাইগার লেগ স্পিনারের হাতাশার বড় কারণ আছে। তার দল লাহোর যে হেরেছে ৩৩ রানে।
ঘরের মাঠ মুলতান স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিধান্ত নেন সুলতানের অধিনায়ক মুহাম্মদ রিজওয়ান। ইয়াসির খানের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ২২৮ রানের পাহাড় গড়েছিল মুলতান। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ৪৪ বলে ৮৭ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৬টি করে চার ও ছক্কায়।
জবাবে লাহোর ৯ উইকেট হারিয়ে ১৯৫ রানে থামে। ৩৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে লাহোরকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন উবাইদ শাহ। এই ১৯ বছর বয়সী ক্রিকেটার পাকিস্তান জাতীয় দলের পেসার নাসিম শাহর ছোট ভাই।
রিশাদ এই ম্যাচে প্রথম বল করতে আসেন সপ্তম ওভারে। তার আগে মুলতান পাওয়ারপ্লেতে এই আসরের সর্বোচ্চ ৭৯ রান তুলে বিনা উইকেটে। প্রথম ওভারে রিশাদ বিলিয়েছেন ১০ রান। ১২তম ওভারে দিয়েছেন ১২ রান। নিজের শেষ দুই ওভারে ২ আরও ২৩ রান দিলেও তুলে নেন উসমান খান আর অ্যাস্টন টার্নারের উইকেট।
খরুচে বোলিং করলেও এদিন পিএসএলে বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী বোলার হয়ে গিয়েছেন রিশাদ। এই লেগি ছুঁয়ে ফেলেছেন সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের গড়া কীর্তি। পিএসএলে সাকিব ও রিয়াদ পেয়েছেন সমান ৮টি করে উইকেট, যা এখন আছে রিশাদেরও। তবে এই ২২ বছর বয়সী স্পিনারে ৮ উইকেট নিয়েছেন মাত্র ৩ ম্যাচে, যেখানে বাকি দুজনের লেগেছিল অন্তত দুই আসর।
২০১৬-১৭ মৌসুমে রিয়াদ খেলেছিলেন কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের জার্সিতে। সেই আসরে পেয়েছিলেন ৭ উইকেট। রিশাদ ইতিমধ্যেই সেটা অতিক্রম করেছে। তবে চলতি আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় আপাতত আছেন তিনে। জেসন হোল্ডারের ১১, হাসান আলীর ১০ উইকেটের পরেই আছেন রিশাদ।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বারসিকের গবেষণা: রাজশাহীর ৯৯ ভাগ দোকানেই মিলছে নিষিদ্ধ কীটনাশক
রাজশাহীর ৯৯ ভাগ কীটনাশকের দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ কীটনাশক ও বালাইনাশক। সরকার নিষিদ্ধ করে রাখলেও নানা নামে এসব কীটনাশক বাজারজাত করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশ, প্রকৃতি ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। শতকরা ৯৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ ব্যবহারকারীই জানেন না এগুলো নিষিদ্ধ এবং বিপজ্জনক।
চলতি বছর রাজশাহীতে ‘জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ক মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধানমূলক সমীক্ষা’ শীর্ষক এক গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। সমীক্ষাটি করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক।
বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে রাজশাহী নগরের একটি হোটেলের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলন করে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজশাহীর আটটি উপজেলার ১৯টি কৃষিপ্রধান গ্রামাঞ্চলে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ, ভুক্তভোগীদের কেস স্টাডি, স্থানীয় কীটনাশক ডিলার, দোকানদার, পরিবেশক এবং উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষাটি করা হয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার করে শতকরা ৬৮ শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর কীটনাশকের ৯৯ ভাগ দোকানেই দেশে নিষিদ্ধ কীটনাশক পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন নামে। এসব নাম দেখে বোঝার উপায় নেই এটি নিষিদ্ধ, বোতলের গায়ে নিচের দিকে জেনেরিক নাম খুব ছোট করে লেখা থাকে।
বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ যেসব কীটনাশক এখনো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো হলো- জিরো হার্ব ২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), ফুরাডান ৫জি (কার্বোরাইল), এরোক্সান ২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), গ্যাস ট্যাবলেট (অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড), কার্বোফোরান ৩ জিএসিআই (কার্বোফোরান), ইঁদুর মারা বিষ (বডিফ্যাকোয়াম) ও তালাফ ২০ এসএল (প্যারাকোয়াট)। এই প্যারাকোয়াট বা ঘাস মারা বিষ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকে এগুলো আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে পান করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে কিডনি নষ্ট হয়ে তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাজারে অহরহ এসব নিষিদ্ধ কীটনাশক পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু সরকারের কোনো তদারকি নেই। এসব নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। নিষিদ্ধ কীটনাশক কীভাবে বাজারে বিক্রি হয়, কৃষি বিভাগের দায়িত্ব কী সে বিষয়েও সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রশ্ন তোলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিষিদ্ধ কিছু কীটনাশকও আনা হয়। এগুলো যে দোকান থেকে কেনা হয়েছে তার রশিদও দেখানো হয়। এসব দেখিয়ে বারসিকের নির্বাহী পরিচালক পাভেল পার্থ বলেন, “এগুলো তো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আমরা কিনেছি। রশিদও আছে। এগুলো নিষিদ্ধ। আমরা এগুলো হাজির করতে বাধ্য হয়েছি। এই গবেষণা একটি ফৌজদারি অপরাধকে খুঁজে পেয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে নিষিদ্ধ কীটনাশকের ব্যবহার কঠোরভাবে বন্ধ করা, কীটনাশক আইন ও বিধি প্রয়োগ করা, কীটনাশক সম্পর্কিত স্বাস্থ্য তথ্য নিবন্ধন করা, কীটনাশকের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের জন্য তহবিল গঠন করার সুপারিশ করা হয়।
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ