‘মোহ কাঠের নৌকা’ উপন্যাসে আধুনিক সমাজের জটিলতা, পেশাগত টানাপোড়েন, ব্যক্তিগত সংকট ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় চরিত্র রবীন গ্রাম থেকে শহরে এসে উচ্চশিক্ষা শেষে এক অখ্যাত অনলাইন সংবাদমাধ্যমে যোগ দেয় বড় স্বপ্ন নিয়ে। বাস্তবতা তাকে হতাশ করে তোলে। অফিসের রাজনীতি, অনিয়মিত বেতন ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা তাকে এক ধরনের পেশাগত দুঃখবোধে ফেলে। এ ছাড়া রবীনের জীবনে একের পর এক সংকট আসে– নিজের একাকিত্ব, পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং সমাজের নানা অসংগতি। একসময় তার পরিচয় হয় জলি নামে এক মেয়ের সঙ্গে, যার বাবা গুমের শিকার। জলি চরিত্রের মাধ্যমে লেখক তুলে ধরেন গুম হওয়া পরিবারের কষ্ট, অনিশ্চয়তা ও অবহেলার যন্ত্রণা। অন্যদিকে, গ্রামের স্মৃতি রবীনের মনে গভীরভাবে গেঁথে থাকলেও বাস্তবতা সেখানে গিয়ে বদলে গেছে। বিদেশের অর্থে বদলে যাওয়া গ্রামীণ সমাজ, পারিবারিক মূল্যবোধে পরিবর্তন এবং দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য তাকে আরও ব্যথিত করে তোলে। রবীনের জীবনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রুবি– এক ব্যাংক কর্মকর্তা, যে নিজেও জীবন সংগ্রামে এগিয়ে এসেছে। রুবির মা চায় রবীনের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হোক। সম্ভবত রুবিও তা চায়। জীবনের নানা দোলাচলের মধ্যে রুবিই রবীনের জীবনে একমাত্র স্থিরতার প্রতীক হয়ে ওঠে। প্রশ্ন থেকে যায়, রবীন কি পারবে এই ‘মোহ কাঠের নৌকা’য় উঠে জীবনের নিরাপদ তীরে ভিড়তে? নাকি বাস্তবতার ঢেউ সেই নৌকাকে ডুবিয়ে দেবে?
রবীন: রবীন একজন স্বপ্নবান যুবক, যে সাংবাদিকতা দিয়ে সমাজে কিছু পরিবর্তন আনতে চায়। চারপাশের বাস্তবতায় ধীরে ধীরে তার ভেতরের স্বপ্নগুলো নিঃশব্দে ভেঙে পড়ে। রবীনের চরিত্রে দেখা যায় একজন সাধারণ ছেলের ভেতরের গভীর অনুভব, লড়াই আর স্বপ্নভাঙার হতাশা। সে জীবনের কাছে হেরে গিয়েও চুপচাপ বাঁচতে থাকে– যেমনটা করে অসংখ্য বাস্তব মানুষ।
রুবি: রুবি একজন সফল নারী– প্রাইভেট ব্যাংকের কর্মকর্তা। প্রেম, পারিবারিক টানাপোড়েন আর অতীতের জটিল স্মৃতি তাকে সব সময় তাড়া করে। মা অনেক ত্যাগে তাকে গড়েছেন, কিন্তু সেই মাও অসুখী। রুবির চরিত্রে উঠে এসেছে নারীর আত্মত্যাগ, গভীর আবেগ, জীবনের এমন অনিশ্চয়তা; যা মানুষকে ভেতর থেকে ভেঙে দেয়।
মানবসমাজের সহজাত প্রবণতা হলো, আমরা সত্যের মুখোমুখি হতে চাই না। আমরা চোখ ফিরিয়ে নিতে চাই কঠিন বাস্তবতা থেকে। অথচ    ‘ মোহ কাঠের নৌকা’ সেই তেতো সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়। এই উপন্যাস কেবল একটি গল্প নয়, বরং আমাদের সময়, সমাজ এবং সম্পর্কের এক নির্মোহ আয়না। এদের মধ্য দিয়ে সমাজের মধ্যবিত্ত মানসিকতা, অতিমাত্রায় আত্মমর্যাদা বোধের চাপ এবং সম্পর্কের টানাপোড়েন অত্যন্ত সাবলীলভাবে ফুটে উঠেছে। লেখক এই উপন্যাসে একটি সময়কে ধরার চেষ্টা করেছেন যেখানে শহর ও গ্রামের দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজব্যবস্থা, আর্থসামাজিক অসংগতি, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং ব্যক্তিগত জীবনের অস্থিরতাগুলো একসঙ্গে চিত্রায়িত হয়েছে। 
সময়ের এই চলমান প্রবাহে লেখক সম্পর্কের জটিলতা নিয়েও অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি মন্তব্য রেখেছেন– ‘আশ্রয়হীন মানুষরা আশ্রয়ের তিল পরিমাণ সন্ধান পেলেই ভুলে যায়, সব আশ্রয় তার জন্য ইতিবাচক নাও হতে পারে।’
এই বাক্যটিই যেন উপন্যাসের সারকথা হয়ে ওঠে। বাস্তবতা ও অনুভূতির দ্বন্দ্বে মানুষের ভেতরের একাকিত্ব, অস্থিরতা ও টিকে থাকার লড়াই– সবই মূর্ত হয়ে উঠেছে এই উপন্যাসে। এ ধরনের বাস্তবভিত্তিক উপন্যাস পাঠকের কাছ থেকে কিছুটা ধৈর্য দাবি করে। কারণ– এখানে রোমাঞ্চ নেই, নেই চমকজাগানো মোড়। অনেকটা যেন নিরবধি বয়ে চলা নদীর মতো, যার স্রোতের গভীরতা উপলব্ধি করতে হয় ধীরে ধীরে। মনে হয়েছে, ‘মোহ কাঠের নৌকা’ শুধু উপন্যাস নয়, এটি সমাজের বিবেকের কাছে একটি প্রশ্নপত্র– যেখানে এই সমাজে কি সত্যিই কারও নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার নৌকা আছে, নাকি বাস্তবতার ঢেউয়ে সবকিছুই তলিয়ে যায়?
যারা বাস্তববাদী সাহিত্য, সাংবাদিকতার ভেতরকার জটিলতা কিংবা সমাজের দ্রুত পরিবর্তনের অভিঘাত নিয়ে ভাবতে ভালোবাসেন, তারা এই উপন্যাস পাঠে গভীর আনন্দ পেতে পারেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বই ব স তবত র জট ল রব ন র জ বন র

এছাড়াও পড়ুন:

কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৮৯তম একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে সার্বিকভাবে আসন সংখ্যা কমানোসহ অর্গানোগ্রামে আরো ১৮টি নতুন বিভাগের অন্তর্ভুক্তি, চারটি ইনস্টিটিউট চালু এবং ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। 

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

ল্যাবভিত্তিক বিভাগগুলোতে আসন সংখ্যা ৪০টি এবং ল্যাববিহীন বিভাগগুলোতে ৫০টি আসন রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন ১৮টি বিভাগ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগ এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত গুলো হলো—ইসলামিক স্টাডিজ ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ এবং দর্শন বিভাগ। ব্যবসায় অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্যবসায়িক তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগ এবং লজিস্টিক ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ। প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ, পুরকৌশল বিভাগ এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগ। আইন অনুষদভুক্ত বিভাগটি হলো— অপরাধবিদ্যা বিভাগ। 

পাশাপাশি চারটি ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্র। এগুলোর গঠন কাঠামোও সুপারিশ করা হয়েছে। 

এর মধ্যে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, নিয়মিত অধ্যাপক দুইজন, তিনজন সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার বা ম্যানেজার একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং একজন ক্লিনার। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্রের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, একজন অতিথি অধ্যাপক, অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার অথবা ম্যানেজার হিসেবে একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং ক্লিনার একজন। 

১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২৬ জন করে শিক্ষক রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, “আমরা মিটিংয়ে এগুলো সুপারিশ করেছি। অর্গানোগ্রাম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ডিপার্টমেন্টের জন্য ছাড়পত্র চায়, তারপর কমিশন (ইউজিসি) যদি অনুমোদন দেয়, তখন সেটা অর্গানাগ্রামে যুক্ত হয়। অর্গানোগ্রামে থাকলেই যে বিভাগ হয়ে যাবে, এমন না। একটা অনুমোদন দিয়ে রাখে। এই অনুমোদনের আলোকে আবার যখন দরখাস্ত দেওয়া হয়, তখন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।”

তিনি আরো বলেন, “ইউজিসি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে আসন সংখ্যা কমাতে, যাতে কোয়ালিটি এডুকেশনের নিশ্চিত হয়। তারা ল্যাববেজড বিভাগের জন্য ৪০টি আসন এবং ল্যাববিহীন বিভাগের জন্য ৫০টি আসন বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।”

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেছেন, “অনেকগুলো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। তবে, এখনই না দেখে বলা যাচ্ছে না। রেজ্যুলেশন পাস হলে বিস্তারিত বলতে পারব।”

ঢাকা/এমদাদুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিমামান্দা এনগোজি আদিচির নারীবাদ
  • ভোররাতে রণক্ষেত্র: নরসিংদীতে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ