নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধন
Published: 26th, April 2025 GMT
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ছোট ফেনী নদীর ভয়াবহ ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। এসময় ঘরবাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে মুছাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জনতার বাজারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় অনেকে কাফনের কাপড় পরে আত্মাহুতির ঘোষণা দেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য ফখরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাহিনীর অব্যাহত বালু উত্তোলনের ফলে গত ২৬ আগস্ট ছোট ফেনী নদীর ওপর নির্মিত মুছাপুর ২৩ ভেন্ট রেগুলেটর ভেঙে যায়। এতে লোনা পানি ঢুকে এ অঞ্চলের এক লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমির ফসল ফলানো যাচ্ছে না। উপরন্তু আশপাশের শত শত বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।’’
ফখরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘‘গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হওয়ার পরও এ এলাকায় বালু দস্যুতা বন্ধ হয়নি। আমাদের দলের এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত এখন অবাধে বালু তুলে নদী ভাঙন বৃদ্ধি করেছে। আমি বিএনপির হাই কমান্ডের কাছে অনুরোধ করব, আমাদের দলের যারা এ বালু সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিন।’’
কাফনের কাপড় পরে সাহাব উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘বাড়িঘর, ফসলি জমি হারিয়ে আমি কাফনের কাপড় পরে ফেলেছি। আমার বেঁচে থাকার আর স্বাদ নেই। সরকার যদি আমাদের দিকে নজর না দেয় পরিবারসহ আমরা আত্মাহুতি দেব।’’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সাবেক কৃষি কর্মকর্তা পুষ্পেন্দু বড়ুয়া বলেন, ‘‘রেগুলেটরটি বঙ্গোপসাগরের সন্দীপ চ্যানেলের কাছাকাছি ছোট ফেনী নদী হয়ে বড় ডাকাতিয়া নদীর মুখে অবস্থিত। কুমিল্লা জেলার ছয়টি উপজেলা- কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, বরুড়া, লাকসাম, নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম; ফেনী জেলার ফেনী সদর উপজেলা, দাগনভূঞা, সোনাগাজী ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা- এই দশটি উপজেলার বৃষ্টির পানি এই মুছাপুর রেগুলেটর হয়েই যেত। আবার বোরো মৌসুমের সেচ কার্যক্রম এ মুছাপুর ক্লোজারের জমানো মিষ্টি পানির মাধ্যমে সম্পন্ন হতো। এ তিন জেলার দশটি উপজেলার আনুমানিক এক লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমি এ রেগুলেটরের ক্যাচমেন্ট এরিয়াতে পড়ে। এটা ভাঙার ফলে রাষ্ট্রের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘মুছাপুর রেগুলেটরটি ভাঙার অন্যতম দুটি কারণ দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা রেগুলেটরের ৫০ থেকে ১০০ মিটার দূরত্বে বালু তুলে শত শত কোটি টাকার ব্যবসা করেছেন। ফলে এই রেগুলেটরের গোড়ার ভিত্তি দুর্বল হয়েছে এবং ভাঙার মতো এই ভয়ানক পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। এই রেগুলেটরের মাধ্যমে তিন জেলার দশটি উপজেলার প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হতো। এ বছর মিঠা পানি না থাকার কারণে এই এক লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ সম্ভব হবে না। এতে রাষ্ট্রের প্রায় ১৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে। সুতরাং, এই ১০ উপজেলার মানুষের বাস্তু নিরাপত্তা, কৃষিসহ সর্বোপরি রাষ্ট্রের প্রয়োজনে অতি দ্রুত এ রেগুলেটরের পুনর্নির্মাণ জরুরি।’’
ঢাকা/সুজন/রাজীব
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সিজু নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় পুকুর থেকে সিজু মিয়ার (২৫) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুর ৩টার দিকে সাংবাদিকদের এ কথা জানান রংপুর রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ম্যানেজম্যান্ট) রুনা লায়লা ও গাইবান্ধা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) শরিফুল আলম।
আরো পড়ুন:
অধ্যাপক জওহরলাল বসাকের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
‘এইচ টি ইমামের’ বন্ধ কারখানায় ডাকাতির চেষ্টা, আটক ৬
এডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণই আমাদের লক্ষ্য।” সিজু নিহত হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় ঢুকে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মহসিন আলীকে ছুরিকাঘাত করে পার্শ্ববর্তী সাঘাটা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের পুকুরে ঝাঁপ দেন সিজু মিয়া। পরদিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুকুরের কচুরিপানার ভেতর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তার মরদেহ উদ্ধার করে।
পরদিন শনিবার পুকুরে সিজুকে পিটিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ভাইরাল হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সেই দিনই গাইবান্ধা পুলিশ সুপারের কর্যালয় ঘেরাও এবং সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। গত রবিবার সিজু নিহতের প্রতিবাদে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন সচেতন নাগরিক ও স্থানীয়রা।
নিহত সিজু গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাগুরিয়া গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে। তিনি ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন।
ঢাকা/মাসুম/মাসুদ