ট্রাকস্ট্যান্ডটি দ্রুত উচ্ছেদের ব্যবস্থা নিন
Published: 27th, April 2025 GMT
রাজধানী শহরের ভেতর থেকে বাসস্টেশন ও ট্রাকস্ট্যান্ড সরানোর দাবি নতুন নয়। ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র প্রয়াত আনিসুল হক একটি ট্রাকস্ট্যান্ড সরিয়ে প্রশংসিতও হয়েছিলেন। যদিও পরবর্তী সময়ে সেই ট্রাকস্ট্যান্ডটির অংশবিশেষ আবার দখল হয়ে যায়। এরপরও যে সুফলটুকু পাওয়া গেছে, তা কম অর্জন নয়। সম্প্রতি গাবতলী এলাকায় বিশাল সরকারি জায়গা দখল করে আরেকটি ট্রাকস্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এতে পুলিশের নীরব ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি করেছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গাবতলীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ উৎপাদন খামারের প্রায় তিন বিঘা জমি দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ডটি বসানো হয়েছে। আন্তজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে এই জমি করা হয়েছে। দখল করা তিন বিঘা জমির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। একেবারে এ জমি দখল করা হয়নি। ধীরে ধীরে এ দখলবাজি চালানো হয়েছে। যত সময় যাবে, জমি দখলের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিএডিসির কর্মকর্তারা।
গাবতলীর মাজার রোডের বীজ উৎপাদন খামারের ভেতরের এই জমি পাঁচ বছরের জন্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে মালামাল রাখার জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের জুনে ইজারার মেয়াদ শেষ হয়। তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে জমিটি বিএডিসিকে হস্তান্তর করেনি। এর মধ্যেই তিন বিঘা জমি বেদখল হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে সরকারি দেয়াল ভেঙে ট্রাক রাখতে ও চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। শুরুতেই স্থানীয় থানা-পুলিশকে অভিযোগ করেছে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দারুস সালাম থানার নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে দখলবাজি তো থামেইনি; বরং আরও বেড়ে ট্রাকস্ট্যান্ডটি সম্প্রসারিত হয়েছে। বিএডিসি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, শুরুতে পুলিশ খুবই গুরুত্ব দিয়েছিল। পরে থানায় পরিবহননেতাদের সঙ্গে পুলিশ বৈঠক করে। ওই বৈঠকের পর পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তারা আর সরকারি জমি দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্য কোনোভাবে সন্তোষজনক নয়। তারা দখলবাজি থামাতে বিএডিসি কর্তৃপক্ষকে যে পথ দেখিয়ে দিয়েছে, তাতে সমাধান পেতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হবে এবং আরও বেশি জমি হারাবে প্রতিষ্ঠানটি। বিএডিসির কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের শতকোটি টাকার জমি দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড নির্মাণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে জানানো হয়েছে। তবে এই দখলের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
দ্রুত এই দখলবাজি থামাতে হবে। দখল হয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধার করতে ট্রাকস্ট্যান্ডটি উচ্ছেদ করতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সরকার ও দল কেউ দায় এড়াতে পারে না
রাজনৈতিক দল—ডান–বাম ও মধ্যপন্থী যা–ই হোক না কেন, সেটা পরিচালিত হয় নির্দিষ্ট নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে। যাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক দলের অনুসারী বলে দাবি করেন, তাঁদের সেই নীতি–আদর্শও ধারণ করতে হয়। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যখন সরাসরি চাঁদাবাজি, দখলবাজির অভিযোগ আসে, তখন তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়ে চাঁদাবাজ-দখলবাজ পরিচয়ই মুখ্য হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি রাজশাহী মহানগরের চাঁদাবাজদের যে তালিকা তৈরি হয়েছে, তাতে রাজশাহী মহানগর বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের পরিচয়ধারী ১২৩ জন ‘চাঁদাবাজের’ নাম রয়েছে। এই তালিকায় বিএনপি, ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, ক্যাডার, সমর্থক থেকে শুরু করে ৪৪ জনের নাম–পরিচয় আছে। একইভাবে পতিত আওয়ামী লীগের ২৫ জন এবং জামায়াতের ৬ জনের নাম আছে।
তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের থানাভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও রাজনৈতিক পরিচিতি উল্লেখ রয়েছে। কিছু ব্যক্তির মোবাইল নম্বরও আছে। এ ছাড়া কোন খাত থেকে চাঁদা তোলেন এবং বর্তমানে সক্রিয় কি না, সেই তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে এতে। তালিকায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ১২টি থানার মধ্যে ১০ থানা এলাকার তথ্য রয়েছে। তালিকাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
কেবল রাজশাহী নয়, দেশের প্রতিটি জেলায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি মহামারি আকার নিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের আগে এসব ঘটনায় পতিত সরকারি দলের নেতা–কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত। গণ–অভ্যুত্থানের পর সেই দলটির নেতা–কর্মীরা হয় আত্মগোপনে, নয় কারাগারে। তাহলে এসব চাঁদাবাজির ঘটনা কে বা কারা ঘটাচ্ছেন? একশ্রেণির পেশাদার চাঁদাবাজ আছে, যারা সব সরকারের আমলেই তাদের পেশাদারত্ব দেখিয়ে থাকে। রাজনৈতিক মামলার দোহাই দিয়ে আগের সরকারের আমলে কারাগারে আটক থাকা বেশ কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসীও জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন করে অপকর্ম শুরু করেছেন।
আগে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে এসব রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায় থাকা চাঁদাবাজেরা রং বদল করে ক্ষমতাসীন দলে ভিড়ে যেতেন। তাঁরা নিজেদের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য ভাবতে পছন্দ করতেন। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলটি এতটাই বিধ্বস্ত যে তাঁদের নেতা–কর্মীদের পক্ষে পোশাক বদল করে মাঠে থাকা অসম্ভব। ফলে তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ করেছেন ভবিষ্যতে ক্ষমতাপ্রত্যাশী দল কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রশ্রয় পাওয়া দলের নেতা–কর্মীরা।
যেসব রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাদের কেউ কেউ প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দল থেকে স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অপকর্মের কারণে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটছে। এ ক্ষেত্রে ‘বড় দল’ এগিয়ে থাকলেও ছোটরাও খুব পিছিয়ে নেই। রাজশাহীর তালিকায় তিনটি দলের নেতা–কর্মীদের নাম ছাপা হয়েছে। যেসব দলের নেতা–কর্মীদের নাম ছাপা হয়নি, তাঁরাও যে চাঁদাবাজি, দখলবাজি থেকে মুক্ত নন, সেটা হলফ করে বলা যায়। অতি সম্প্রতি একটি ছাত্রসংগঠনের নেতারা গুলশানের একজন সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়িতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে বমাল ধরা পড়েন। এসব ঘটনা কোনোভাবে নতুন বন্দোবস্তের নমুনা নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করতে না পারুন, অন্তত চাঁদাবাজির মতো অপরাধ থেকে সংগঠনের নেতা–কর্মীদের বিরত রাখুন।
কেবল রাজশাহী নয়, দেশের অন্যান্য স্থানে চাঁদাবাজির তালিকায় যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার আইনি ব্যবস্থা নেবে আশা করি। আর রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অঘটন ঘটলে বহিষ্কারের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে অঘটনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। বিলম্বে হলেও তাদের বোধোদয় হোক।