কালবৈশাখীতে ঘরবাড়ি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
Published: 28th, April 2025 GMT
আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের প্রভাব পুরো দেশে। ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে কাঠফাটা রোদ। গরমে অস্বস্তিতে মানুষ। ঠিক উল্টো চিত্র উত্তরাঞ্চল ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলায়। বৃষ্টি আর কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা ভেঙে বন্ধ হয়েছে রাস্তাঘাট। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে বহু এলাকা। ঝড়বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে মারা গেছেন তিনজন।
আবহাওয়াবিদরা কোথাও বৃষ্টি, কোথাও গরমকে আবহাওয়ার ‘হেঁয়ালি আচরণ’ হিসেবে দেখেছেন। তারা বলছেন, কোথাও বৃষ্টি, কোথাও খরা। গরমের সময় হঠাৎ বৃষ্টি। আবার শীতকালে নামছেই না পারদ। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের অশনিসংকেত।
কালবৈশাখীতে রংপুরের কয়েকটি উপজেলার বেশ কিছু এলাকার বাড়িঘর-ফসল তছনছ হয়ে গেছে। গাছ উপড়ে ও ডাল পড়ে তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আম, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত শনিবার রাত ১১টার দিকে এ ঝড় শুরু হয়। প্রায় ৩০ মিনিটের এই ঝড়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তারাগঞ্জ, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলায়। এ ছাড়া রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা ভেঙে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গঙ্গাচড়ায় কালবৈশাখীতে ৯টি ইউনিয়নের কয়েকশ কাঁচা ঘরবাড়ি তছনছ হয়েছে। উপড়ে গেছে গাছপালা। খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ। নষ্ট হয়েছে ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত।
কালবৈশাখীতে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শনিবার মধ্যরাতে শুরু হওয়া এই ঝড় প্রায় আধা ঘণ্টা সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে তাণ্ডব চালায়। স্থানীয়রা জানান, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ধান, ভুট্টা, আম, লিচুসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের পর জেলার কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। অনেক এলাকায় সড়কের ওপর গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা গাছ সরিয়ে যান চলাচল সচল করেন। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে কালবৈশাখীতে বড়ভিটা বাজারের ১৪ দোকানপাট লন্ডভন্ড হয়েছে। এতে প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, কালবৈশাখীর ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে বলা যাবে।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় শনিবার রাতে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আধা ঘণ্টা ধরে চলা শিলাবৃষ্টিতে টিনের চাল ফুটো হয়ে যায় এবং অসংখ্য কাঁচা ঘর ভেঙে পড়ে। ধানগাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ঝড়ে বহু বাড়ির চাল উড়ে গেছে। অনেক ঘর সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। আশ্রয়ের অভাবে বহু পরিবার রাত কাটিয়েছে খোলা আকাশের নিচে।
রোববার সকালে বরগুনার আমতলীতে মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে রিপন হাওলাদার নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এদিন দুপুরে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চরফলকন ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে শাহানাজ বেগম কনা নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। নোয়াখালী সদর উপজেলায় বজ্রপাতে আবুল কালাম কালা নামে এক দিনমজুর প্রাণ হারিয়েছেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে পৌরসভার জালিয়াল গ্রামের দালাল বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার রাত ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার ঝড়ে ফসল, বিশেষ করে ভুট্টা, বোরো ধান এবং শাকসবজি তছনছ হয়ে গেছে। এ ছাড়া এলাকার বেশ কিছু টিনের ঘর এবং কয়েক হাজার গাছপালা উপড়ে পড়ে। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকালের সংশ্লিষ্ট অফিস ও প্রতিনিধিরা]
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যে ৬টি সীমারেখা একজন পুরুষকে নারীর কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে
১. নিজেকে সহজলভ্য না করা
যে পুরুষ ফোনে মেসেজ পেলেই সব কাজ ফেলে উত্তর দেন না, ফোন বেজে উঠলেই অস্থির হয়ে পড়েন না—নারীরা স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হন। কারণ, এতে তাঁরা ভাবেন, এই মানুষটা আলাদা।
একজন পুরুষ, যিনি কাউকে ভালোবাসলেও নিজের জগৎ ভুলে যান না, তিনি নারীদের কাছে ভিন্ন রকম। এতে নারী বুঝতে পারেন, এই পুরুষটি কারও মনোযোগ পাওয়ার জন্য ছোটেন না, বরং নিজের সময় ও জীবনকে গুরুত্ব দেন। আর যা সহজে পাওয়া যায় না, সেটাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
আমাদের সমাজে যেখানে অনেকে মনে করেন, ২৪ ঘণ্টা অনলাইনে থাকাই ভালোবাসার প্রমাণ, সেখানে এ ধরনের পুরুষ হন ব্যতিক্রম। তিনি তাঁর প্রতিটি মুহূর্ত অন্যের জন্য উন্মুক্ত রাখেন না; কারণ, তাঁর সময় দখল করে রেখেছে তাঁর লক্ষ্য, কাজ ও তাঁর জীবন। এই সামান্য দূরত্বই জন্ম দেয় গভীর আকর্ষণের।
২. আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ‘না’ বলাএকজন নারী যখন কাউকে সত্যিকার অর্থে পছন্দ করেন, তিনি শুধু সুন্দর চেহারা দেখেন না। তিনি খোঁজেন এমন একজনকে, যিনি নিজের সীমারেখা সম্পর্কে সচেতন এবং কারও মন রক্ষার জন্য নিজের অবস্থান থেকে সরে যান না। যিনি সোজাসাপটা বলেন, ‘আমি যেতে পারব না’ বা ‘আমি কাজটা করতে পারব না’।
আবার ভদ্রতা দেখিয়ে বলেন না, ‘আশা করি কিছু মনে করবেন না।’ যে পুরুষ দুঃখ প্রকাশ না করে এবং অপরাধবোধ ছাড়াই ‘না’ বলতে পারেন, তিনি নারীদের চোখে হয়ে ওঠেন সম্মানের। কারণ, এতে নারী বুঝতে পারেন, এই মানুষটির আত্মমর্যাদা আছে, নিজের সময়কে গুরুত্ব দেন।
এ রকম পুরুষ পাওয়া সহজ নয়। আর যা সহজ নয়, তা–ই সবচেয়ে বেশি টানে। কারণ, নারী খোঁজেন এমন কাউকে, যাঁকে তিনি শুধু ভালোবাসবেন না, শ্রদ্ধাও করবেন।
৩. নিজেকে অসম্মানিত হতে না দেওয়াকখনো কখনো অসম্মান করা হয় ঠাট্টার ছলে, কটাক্ষ করে। বেশির ভাগ পুরুষ এমন মুহূর্তে চুপ করে থাকেন, যাতে সহকর্মী বা পরিচিতজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি না হয়। কিন্তু একজন আত্মমর্যাদাবান পুরুষ তা করেন না। তিনি রেগে না গিয়ে, অন্যকে অপমান না করেও শান্ত গলায় বলেন, ‘আমি এ ধরনের আচরণ বা ব্যবহার মেনে নিই না।’
এই স্বচ্ছ ও দৃঢ় অবস্থান নারীদের মনে তৈরি করে ভরসা, নিরাপত্তা আর সম্মানের অনুভব। কারণ, তাঁরা বুঝে যান, যে পুরুষ নিজের সম্মান রক্ষা করতে জানেন, তিনি অন্যের সম্মান রক্ষায় পিছপা হবেন না।
এ ধরনের পুরুষ তাই নারীদের চোখে হয়ে ওঠেন আরও আকর্ষণীয়; শুধু তার কথার জন্য নয়, তাঁর স্থির ও সাহসী উপস্থিতির জন্য।
আরও পড়ুনকিডনি ভালো রাখতে যে ৩টি খাবার খাবেন২৮ জুলাই ২০২৫৪. চট করে প্রতিক্রিয়া না দেখানোঅনেক সময় নারীরা পুরুষকে ছোট ছোট পরীক্ষায় ফেলেন, তবে সেটা কিন্তু বেকায়দায় ফেলার জন্য নয়, বরং অবচেতনভাবে একজন সঙ্গীর ভেতরে স্থিরতা ও ভরসা খোঁজার জন্য।
তাঁরা হয়তো খোঁচা দেন, রসিকতা করেন, কিংবা হালকা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, এটা দেখার জন্য যে পুরুষটি চাপের মুখে কতটা স্থির থাকতে পারেন।
বেশির ভাগ পুরুষ এসব মুহূর্তে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখান; রেগে যান, তর্কে জড়ান বা ব্যাখ্যা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু যেসব পুরুষ শান্ত থাকেন, একটুখানি হাসেন কিংবা কিছুই না বলে নিজের ভেতরের ভারসাম্য ধরে রাখেন, তাঁরা সেই মুহূর্তেই অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে ওঠেন।
এ ধরনের পুরুষকে তখন নারী আর সাধারণ কেউ মনে করেন না। বরং তিনি হয়ে ওঠেন এক দৃঢ় পুরুষ। আর তাঁদের উপেক্ষা করা যায় না। তাঁদের ভেতরের শক্তি, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং স্থিরতা নারীদের মনে আনে একধরনের নিরাপত্তা। নারীরা মনে করেন, তাঁরা শুধু পরিস্থিতি সামলাতে জানেন না, তার পাশে দাঁড়ানোও যায় নিশ্চিন্তে।
৫. নীরব আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাআত্মবিশ্বাস, স্থিরতা ও ভেতরের শক্তি—সব মিলিয়ে আত্মমর্যাদা একজন পুরুষকে পছন্দ করার অন্যতম কারণ। যে পুরুষ অল্প কথায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেন, অযথা ব্যাখ্যা দেন না এবং সিদ্ধান্তে দৃঢ় থাকেন, নারীদের কাছে তিনিই হয়ে ওঠেন আলাদা।
যেমন তিনি সহজভাবে বলেন, ‘আমি যেতে পারব না, পরে দেখা হবে।’ এতে থাকে না দুঃখ প্রকাশ, থাকে না বাড়তি ব্যাখ্যা। এতে নারী বুঝতে পারেন, এই পুরুষ নিজেকে বোঝেন এবং অন্যের মতামত দিয়ে নিজের পথ বদলান না।
এ ধরনের পুরুষদের আচরণে থাকে একরকম শান্ত আত্মবিশ্বাস। তাঁরা কম কথা বলেন, কিন্তু যা বলেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি তাঁর নীরবতাও অর্থবহ হয়ে ওঠে। নারীরা এসব পুরুষের মধ্যে খুঁজে পান ভরসা, যা শুধু কথায় নয়, আচরণেই ফুটে ওঠে। তাই নারীদের চোখে এই নিঃশব্দ আত্মমর্যাদা হয়ে ওঠে গভীর আকর্ষণের উৎস।
আরও পড়ুনহাতিরঝিলের রাস্তার গর্তে অটোরিকশা, দুজন আহত এবং একটি টুইস্ট১৬ ঘণ্টা আগে৬. লক্ষ্যে অটল থাকাএকজন পুরুষ সুদর্শন হলেই যে একজন নারী তাঁকে পছন্দ করবেন বা ভালোবাসবেন, এমনটা নয়। কারণ, একজন নারী এমন পুরুষকে ভালোবাসেন, যাঁর নিজের লক্ষ্য আছে। পাশাপাশি নিজের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেন।
একজন নারী এমন কাউকে চান না, যিনি তাঁকেই (ওই নারীকে) নিজের পুরো জগৎ বানিয়ে ফেলেন। বরং এমন পুরুষকে ভালোবাসেন, যাঁর পাশে দাঁড়িয়ে নিজেও এগিয়ে যাওয়া যায়। যাঁকে সমর্থন করা যায়, যাঁর স্বপ্নে অংশ নেওয়া যায়।
সেই পুরুষ শুধু একজন সঙ্গী নন, বরং পূর্ণাঙ্গ এক মানুষ। যে পুরুষের সঙ্গে জীবন ভাগ করে নেওয়া যায় আত্মবিশ্বাস আর সম্মানের সঙ্গে। এই ভরসাপূর্ণ, আত্মবিশ্বাসী, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে অটল পুরুষই একজন নারীর কাছে হয়ে ওঠেন সত্যিকার অর্থে পছন্দের।
সূত্র: মিডিয়াম
আরও পড়ুনজিমে কেন হার্ট অ্যাটাক হয়১৪ ঘণ্টা আগে