রাশিয়ায় সেনা মোতায়েনের কথা প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ আজ সোমবার জানিয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ের সেনারা ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণাধীন কুরস্ক সীমান্ত অঞ্চল পুনর্দখলে রাশিয়াকে সাহায্য করেছে।

এর কয়েক দিন আগেই উত্তর কোরিয়ার সেনাদের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করে রাশিয়া। যদিও দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনেক আগে থেকেই জানাচ্ছিল, পিয়ংইয়ং গত বছর কুরস্কে ১০ হাজারেরও বেশি সেনা পাঠিয়েছিল।

উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন কেসিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর উপদলটি রাষ্ট্রপ্রধানের নির্দেশ অনুযায়ী কুরস্ক এলাকা মুক্ত করতে অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে।’

কেসিএনএ জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ছিল পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির অধীনে।

কিম বলেন, ‘ন্যায়বিচারের জন্য যারা লড়ছে, তারা সবাই মাতৃভূমির গর্ব এবং সম্মানের প্রতিনিধিত্বকারী।’

আরও পড়ুন কুরস্ক ‘পুনর্দখলে’ রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সেনারা, প্রশংসায় মাতল মস্কো১৭ ঘণ্টা আগে

কিম আরও বলেছেন, যুদ্ধের বীরত্বগাথার স্মরণে রাজধানীতে শিগগিরই একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হবে। তিনি ‘শহীদ সেনাদের সমাধিফলক’ স্থাপনের কথাও উল্লেখ করেছেন। এতে প্রকাশ্যে নিশ্চিত করা হলো, যুদ্ধে উত্তর কোরীয় সেনারা নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধে অংশ নেওয়া সেনাদের পরিবারের প্রতি বিশেষ সম্মান দেখানো হবে এবং তাদের দেখভালের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

আরও পড়ুনপুতিন একটা মহাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন?২৬ এপ্রিল ২০২৫

কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের মতে, ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের দুঃসাহসী আক্রমণ প্রতিহত করে কুরস্ক অঞ্চল মুক্ত করার অভিযানে বিজয় হয়েছে।’

রুশ সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ গত শনিবার উত্তর কোরীয় সেনাদের ‘বীরত্বের’ প্রশংসা করে বলেছিলেন, তাঁরা ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর একটি দলকে পরাজিত করতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা করেছে।

আরও পড়ুনইউক্রেনে রুশ যুদ্ধশিবির থেকে দুর্বিষহ জীবনের গল্প বললেন এই বাংলাদেশি তরুণ২৬ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক রস ক

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ