ভারতের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে ‘প্রস্তুত পাকিস্তান’
Published: 29th, April 2025 GMT
ভারতের সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, পাকিস্তান যে কোনো কিছুর জন্য তৈরি; ভারত চেষ্টা করে দেখতে পারে। অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে নয়াদিল্লিতে তাঁর বাসভবনে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দেড় ঘণ্টা ধরে ওই বৈঠক চলে। বৈঠকে মোদি পেহেলগাম হামলার জবাবে অভিযান পরিচালনায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তারা হামলার ধরন, লক্ষ্য ও সময় নির্ধারণের ক্ষমতাও পেয়েছে।
সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি অনলাইন এ খবর জানায়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এটি ছিল গত সাত দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত দ্বিতীয় বৈঠক। পেহেলগাম হামলা নিয়ে আলোচনা করতে বৈঠকটির আয়োজন করা হয়েছিল। এতে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ভারত আর কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর আগে ভারত সিন্ধুর পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। পাকিস্তানও ভারতের বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ রাখাসহ পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ভারত যে কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ নিলে তার জবাব দিতে প্রস্তুত আছে তাঁর দেশ। সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করেছি। কারণ, এখন এটি (সম্ভাব্য হামলা) অত্যাসন্ন হয়ে উঠেছে। তাই এমন পরিস্থিতিতে কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) চার দিন ধরে গোলাগুলি চলছে। গত সোমবার রাতেও দু’পক্ষের মধ্যে এ গোলাগুলি হয়। দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে উস্কানির অভিযোগ তুলছে। এরই মধ্যে উভয় দেশ সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে।
এ অবস্থায় সীমান্তে কাশ্মীরের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে বাঙ্কার প্রস্তুত করে তাতে লুকিয়ে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঝুঁকি এড়াতে কাশ্মীরের ৮৭টি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে ৪৮টি বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এগুলো বন্ধ থাকছে।
দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন অনলাইন জানায়, সীমান্তে পাকিস্তান অংশে আজাদ কাশ্মীরে মঙ্গলবার নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর আকাশসীমা লঙ্ঘনের কারণে ভারতের একটি কোয়াডকপ্টার (ড্রোন) গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ভিম্বার জেলার মানাওয়ার সেক্টরে ওই কোয়াডকপ্টার ভূপাতিত করা হয়। পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের দাবি, কোয়াডকপ্টারটি সীমান্তের ওপার থেকে নজরদারি চালানোর চেষ্টা করছিল। তখনই পাকিস্তানি সেনারা দ্রুত সেটি গুলি করে নামিয়ে আনে।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হন।
ভারতে মুসলিমবিদ্বেষী গান
পেহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে ভারতে মুসলিমবিদ্বেষ বেড়েছে। মঙ্গলবার আলজাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় ইউটিউবে মুসলিমবিদ্বেষী গান ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা আবার দ্রুত ভাইরালও হচ্ছে। এ ছাড়া একই ধরনের আরও কয়েকটি গান সামাজিক মাধ্যমে রয়েছে। এগুলোর কথা হিন্দুত্ববাদী ও মুসলিম বিদ্বেষে পূর্ণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপিও একটি হিন্দুত্ববাদী দল।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় অপু গ্রেপ্তার
রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির মামলায় এজাহারনামীয় আসামি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে ওয়ারী থেকে ডিবির ওয়ারী বিভাগের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছেন। তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
গত ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একটি চক্র রাজধানীর গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব অপু এবং আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। এ সময় শাম্মী আহমেদ দেশের বাইরে থাকায় তার স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে জিম্মি করে ভয় দেখানো হয়।
চক্রটি বাসায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে প্রথম ধাপে ১০ লাখ টাকা আদায় করে নেয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা ভাগ পান অপু এবং বাকি ৫ লাখ পান রিয়াদ। চাঁদার দ্বিতীয় কিস্তি আনতে ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় আবারও গুলশানের ওই বাসায় গেলে চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, সাকদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং আমিনুল ইসলাম। তাদের সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বিভিন্ন পদে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পরপরই তাদেরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে, চাঁদাবাজির এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এজাহারনামীয় ছয় আসামি ও অজ্ঞাত ১০-১২ জন সমন্বয়ক পরিচয়ে ১৭ জুলাই সকালে আমার গুলশান-২ নম্বরের বাসায় আসে। যার মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেখায়। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে ১০ লাখ টাকা দিই। পরে ১৯ জুলাই রাতে রিয়াদ ও অপু আমার বাসায় এসে ধাক্কাধাক্কি করে, যা আমি পুলিশকে ফোন করে জানাই। এ সময় অভিযুক্তরা সেখান থেকে সটকে পড়ে।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ২৬ জুলাই শনিবার বিকেলে রিয়াদের নেতৃত্বে আসামিরা আমার বাসার সামনে এসে আমাকে খুঁজতে থাকে। আমি বাসায় না থাকায় বাসার দারোয়ান আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। এ সময় আসামিরা তাদের দাবিকৃত আরো ৪০ লাখ টাকা না দিলে আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হবে বলে হুমকি দিতে থাকে।
ঢাকা/এমআর/রফিক