সরকারি চাকরিজীবীদের ওপর কঠোর হতে সাড়ে চার দশক আগের একটি অধ্যাদেশের কিছু ধারা ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এটি করা হচ্ছে মূলত সরকারি কর্মচারীদের রাজপথে সভা-সমাবেশ, কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি বন্ধ করতে। অন্য কর্মচারীকে তাঁর কর্মস্থলে যেতে বাধা না দিতে। সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ বন্ধ করতে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোনো কর্মচারীর কারণে দাপ্তরিক শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটলে তদন্ত ছাড়া তাঁকে আট দিনের নোটিশে চাকরিচ্যুত করতে পারবে সরকার। কেউ বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে তাঁকেও তদন্ত ছাড়া আট দিনের মধ্যে অব্যাহতি দেওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে কোনো কর্মচারী আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন না।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোনো কর্মচারীর কারণে দাপ্তরিক শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটলে তদন্ত ছাড়া তাঁকে আট দিনের নোটিশে চাকরিচ্যুত করতে পারবে সরকার। কেউ বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে তাঁকেও তদন্ত ছাড়া আট দিনের মধ্যে অব্যাহতি দেওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে কোনো কর্মচারী আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন না।

‘সরকারি চাকরি আইন ২০১৮’ সংশোধনের মাধ্যমে এ বিষয়গুলো যুক্ত করা হচ্ছে। আর এ-সংক্রান্ত ধারাগুলো আনা হচ্ছে ‘সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ ১৯৭৯’ থেকে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালে নতুন সরকারি আইন পাস করার পর সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ের অধ্যাদেশটি বাতিল হয়ে যায়।

সরকারি চাকরিতে এখন প্রায় ১৫ লাখ কর্মচারী রয়েছেন। কর্মচারীদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, ছুটি, শাস্তি—সবকিছুই নির্ধারিত হয় ‘সরকারি চাকরি আইন ও সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮’-এর মাধ্যমে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এসব বিষয় বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লাগে। অন্তর্বর্তী সরকার চায়, কর্মচারীরা অপরাধ করলে দ্রুত শাস্তি পাবেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়–সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনে অস্থিরতা দেখা দেয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুলিশ, প্রশাসন, শিক্ষাসহ কয়েকটি ক্যাডারের কর্মচারীদের অনেকে আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। অনেক কর্মচারী বিনা অনুমতিতে দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন। সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখাচ্ছেন না। অন্য কর্মচারীদের কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে।

আইনটি সংশোধনের কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগ। সংশোধিত আইন অনুমোদনের জন্য শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করা হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

অনিবার্য কারণে যদি সরকার আইনটি সংশোধন করতে চায়, তাহলে তাদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে আইনের অপব্যবহার হবে না।মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের প্রধান ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব এ এন এম মঈনুল ইসলাম কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন।

গত রোববার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমানের দপ্তরে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে গত সোমবার মন্ত্রণালয়ের বিধি বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শামীম সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সংশোধিত আইনটি তোলার প্রক্রিয়া চলছে।

প্রশাসনে শৃঙ্খলা আনতে আইনটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাবেক রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কর্মচারী বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে পারেন না। অন্যকে প্ররোচিত করতে পারেন না। সচিবালয়ে গিয়ে বারান্দায় শুয়ে পড়তে পারেন না। কর্মচারীরা মাঝেমধ্যে যুক্তি মানেন না। প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারকে কঠোর হতে হবে।

আইনে যা যুক্ত হচ্ছে

সরকারি কর্মচারী বিশেষ বিধান অধ্যাদেশ ১৯৭৯-এর চারটি ধারা সরকারি চাকরি আইনে সংযোজন করা হচ্ছে। অধ্যাদেশের তিন নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীর জন্য যেসব বিষয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে—

১.

একজন কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হয়, যার কারণে অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি হয়, শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়, কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি হয়।

২. কোনো কর্মচারী যদি ছুটি ছাড়া বা যুক্তিসংগত কারণ না দেখিয়ে নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন বা অন্যভাবে বিরত থাকেন এবং নিজের কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হন।

৩. কোনো কর্মচারী যদি তাঁর নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, একই সঙ্গে অন্য কর্মচারীকে কাজে অনুপস্থিত থাকতে প্ররোচিত করেন। কোনো কর্মচারীকে তাঁর কর্তব্য পালন না করতে উসকানি দেন।

৪. যদি কোনো কর্মচারী আরেক কর্মচারীকে কাজে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য পালনে নিবৃত্ত করেন। কোনো সরকারি কর্মচারী যদি এসব কর্মকাণ্ড করে থাকেন, তাহলে তিনি অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন এবং নিচের যেকোনো দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

অধ্যাদেশের ৪ নম্বর ধারায় অপরাধের দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, সরকার তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে পারবে। সরকার চাইলে অব্যাহতি দিতে পারবে। অথবা কোনো কর্মচারীর পদের অবনমন বা বেতন কমাতে পারবে।

৫ নম্বর ধারায় বলা হয়, যখন কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য মামলা হবে, তখন নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বিশেষ আদেশবলে তাঁর বিষয়ে অভিযোগ গঠন করবেন। কর্মচারীকে নোটিশের মাধ্যমে অভিযুক্ত করে ৫ দিনের বেশি নয়, ২ দিনের কম নয়—এমন সময়ের মধ্যে কারণ দর্শানোর কথা বলা হবে। ওই কর্মচারী ব্যক্তিগত শুনানিতে ইচ্ছুক কি না, সেটি জানতে চাওয়া হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর অনেক কর্মচারী নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে পদোন্নতি চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হচ্ছেন। কেউ কেউ দাবি আদায়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ছেন। এতে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতেই সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তি কারণ দর্শানোর পর ব্যক্তিগত শুনানিতে হাজির হলে শুনানি গ্রহণের পর যদি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে, তখন নোটিশের মাধ্যমে প্রস্তাবিত দণ্ড কেন আরোপ করা হবে না—নোটিশ জারির তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হবে। নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত কর্মচারী কারণ দর্শালে অথবা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ না দর্শালে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ নোটিশে উল্লিখিত দণ্ড অভিযুক্ত কর্মচারীর ওপর আরোপ করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে তদন্ত ছাড়া একজন কর্মচারীকে আট দিনের নোটিশে চাকরিচ্যুত করা যাবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের কোনো উদ্যোগ বা সিদ্ধান্তে যদি একজন কর্মচারী ভিন্নমত পোষণ করেন কিংবা নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন, সেটিকে সরকারের বিরুদ্ধাচরণ বলে চাকরিচ্যুত করার আশঙ্কা থাকবে। এ ভয়ে অনেকে নিজের মত জানাবে না।

আরও পড়ুনসচিবালয়ের ভেতরে ‘পদোন্নতিবঞ্চিত’, বাইরে চাকরিচ্যুতদের বিক্ষোভ১১ আগস্ট ২০২৪

কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক

সরকারি চাকরি আইন সংশোধনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগে কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেক কর্মকর্তা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসন ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের অন্তত ১০ কর্মচারী প্রথম আলোকে বলেন, আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ ভালো হচ্ছে না। গত সাড়ে চার দশকে কর্মচারীদের চিন্তায় ও কাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সমাজে অনেক মুক্তচিন্তার মানুষ তৈরি হয়েছে। সরকার যত দ্রুত বিচার করবে, তত ক্ষতি বেশি হবে। এ আইনের অপব্যবহার হবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা এক জেলা প্রশাসক (ডিসি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে যাঁরা ডিসির দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাঁদের চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হয়নি। এ জন্য তাঁদের চাকরি থেকে অবসরে পাঠাতে পারছে না সরকার। সে কারণে সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশের কিছু ধারা নিয়ে আসা হচ্ছে, যাতে সরকারি চাকরিতে ২৫ বছর পূর্ণ না হলেও কোনো একটি কারণ দেখিয়ে তাঁদের চাকরিচ্যুত করা যাবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সরকারি চাকরিতে কারও ২৫ বছর পূর্ণ হলে তিনি স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে পারেন। সরকারও চাইলে তাঁকে অবসরে পাঠাতে পারে। সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-এর ৪৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কারণ দর্শানো ছাড়া তাঁকে অবসরে পাঠাতে পারবে।

আইনটি পাস হলে সরকারি চাকরিতে ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে নোটিশ দিয়ে কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ আইন মানেই হচ্ছে কালো আইন। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সামরিক শাসনামলেও একই উদ্দেশে অধ্যাদেশটি করা হয়েছিল। ঢালাওভাবে কর্মচারীদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া প্রশাসনে ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে। একজন কর্মচারীকে অবশ্যই আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।

আরও পড়ুনজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়: অপছন্দের জায়গায় যান না, পছন্দের পদ পেতে তদবির১৩ এপ্রিল ২০২৫

যেসব উদাহরণ সামনে এসেছে

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশের ৮২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজি), ১৩ জন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), অর্ধশতাধিক অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ১৫ জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁদের অনেকের চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হয়নি। এ জন্য তাঁদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাচ্ছে না। আবার ৫ আগস্টের পর পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ১৮০ জন কর্মচারী এখনো কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাঁদের অনেকে কর্তৃপক্ষ থেকে ছুটি নেননি। তাঁদের বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।

সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে সেখানে ১৯৭৯ সালের অধ্যাদেশের কিছু ধারা সংযোজন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রশ্ন তোলা হয়, দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকা পুলিশ কর্মচারীদের সরকার বসে বসে বেতন দেবে?

আইনটি পাস হলে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পুলিশের অনেক সদস্য চাকরিচ্যুত হবেন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওএসডি হওয়া বিসিএস ২৪তম ব্যাচের পুলিশের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, চাকরি থাকবে নাকি চলে যাবে, এ বিষয়ে তিনি এখন ভাবছেন না।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারি চাকরিজীবীদের বড় একটা অংশ একের পর এক দাবি আদায়ে আন্দোলন শুরু করে। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ-আন্দোলন করায় ঢাকায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। সরকারি কাজে ব্যাঘাত ঘটে। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক কর্মচারী ডিসি হওয়ার দাবিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিক্ষোভ করেছেন, হট্টগোল করেছেন।

‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ নামে ২৫ ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা উপসচিব পদে কোটাপদ্ধতি বাতিল, নিজ নিজ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব পদে দায়িত্ব দেওয়া এবং সব ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছে। আইনটি পাস হলে তাঁদের আন্দোলন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মুহম্মদ মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যারা ফ্যাসিস্ট, তারা মানুষের মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করে। বর্তমান সরকার তো ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটিয়ে দায়িত্ব নিয়েছে। তাহলে তারা কর্মচারীদের মুখ বন্ধ রাখতে চায় কেন?

মফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘আইনটি পাস হলে ভালো হবে না। কোনো সরকারি কর্মচারীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরিচ্যুত করা প্রশাসনে ভালো বার্তা দেয় না।’

আইনের অপব্যবহার করা যাবে না

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর অনেক কর্মচারী নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে পদোন্নতি চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হচ্ছেন। কেউ কেউ দাবি আদায়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ছেন। এতে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতেই সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার কর্মচারীদের বার্তা দিতে চায় যে কোনো ধরনের আন্দোলন করা যাবে না। আন্দোলন করতে কাউকে উসকানিও দেওয়া যাবে না।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সংশোধিত আইনটির অপব্যবহার হতে পারে। অনেক নির্দোষ কর্মচারী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। তিনি আরও বলেন, অনিবার্য কারণে যদি সরকার আইনটি সংশোধন করতে চায়, তাহলে তাদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে আইনের অপব্যবহার হবে না।

আরও পড়ুন৬৬ শতাংশ নাগরিকের মতে সরকারি কর্মচারীরা শাসকের মতো আচরণ করেন০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইন র অপব যবহ র চ কর চ য ত কর ২৫ বছর প র ণ র কর মকর ত প রথম আল ক তদন ত ছ ড় দ র চ কর আট দ ন র য ক ত কর র রহম ন সরক র র চ কর ত র অন ক অন য ক ন র পর কর ত প র পর প প স হল আগস ট হওয় র ন করত ত করত অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে