রোহিতদের বাংলাদেশে পাঠাতে চায় না বিসিসিআই
Published: 2nd, May 2025 GMT
চলতি বছরের আগস্টে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের। শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও চট্টগ্রামের বীর শ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছয়টি ম্যাচ। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান অস্থিরতা ও বাংলাদেশের সঙ্গে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক টানাপোড়েনে সেই সফর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে টাইমস অফ ইন্ডিয়া।
সূত্রের বরাত দিয়ে বলছে টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ‘এই সফর ক্যালেন্ডারের অংশ (পূর্ব নির্ধারিত) হলেও এখনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ভারতীয় দল যে বাংলাদেশে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে যাচ্ছে না, সেই সম্ভাবনাই বেশি। কারণ বাংলাদেশ সফর নিয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা হাতে নেয়নি বিসিসিআই।’
ভারতের সংবাদমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে সিরিজ নিয়ে শঙ্কার পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যেখানে তারা বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল (অব.
বিজিবির (সাবেক বিডিআর) সাবেক মহাপরিচালক এ এল এম ফজলুর রহমান বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার এমন মন্তব্যে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। ফলে পুরো সফর বয়কটের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানানো হয়েছে। কেউ কেউ ধারণা করছেন, বিডিআর কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) এএলএম ফজলুর রহমানের একটি বিতর্কিত মন্তব্যের পরই ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে আগ্রহ কমেছে বিসিসিআইয়ের।
যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মেজর জেনারেল (অব.) এ এল এম ফজলুর রহমানের বক্তব্য সরকার সমর্থন করে না। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা সম্পূর্ণভাবে তার ব্যক্তিগত। এ মন্তব্য বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বা নীতির প্রতিফলন নয়, এবং সে জন্য সরকার এ মন্তব্য কোনোভাবে অনুমোদন করে না কিংবা সমর্থন করে না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অনুরোধ করছে, মেজর জেনারেল (অব.) এ এল এম ফজলুর রহমানের ব্যক্তিগত মন্তব্যকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যুক্ত না করতে। বাংলাদেশ সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, পারস্পরিক সম্মান এবং সব জাতির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতিতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া তাদের প্রতিবেদনে আরও জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য ২০২৫ এশিয়া কাপ নিয়েও অনিশ্চয়তা দিতে পারে। কারণ ভারত সরকার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে কড়া অবস্থান নিয়েছে। এতে করে শিগগিরই ভারত-পাকিস্তান বা ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার ক্রিকেট আয়োজন বেশ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
২০২৫ এশিয়া কাপ আয়োজনের কথা রয়েছে ভারতের মাটিতে। আগস্টে বাংলাদেশ সফর শেষে সেপ্টেম্বরে এই প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান বাস্তবতায় তা পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠেছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চুক্তি হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি সাপেক্ষে গোপনীয়তার বিষয়টি প্রকাশ করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় যে গোপনীয়তার বিষয়টি ছিল, চুক্তি সই হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি সাপেক্ষে তা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। তিনি বলেন, চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর শিগগিরই হয়তো যৌথ বিবৃতি আসবে। তথ্য অধিকারের আলোকে এটা করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজার সঙ্গে আলাপচারিতায় বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। গোলাম মোর্তোজা ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড পেজে ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, বাণিজ্য চুক্তি কাজে লাগাতে হলে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে এ নিয়ে আত্মসন্তুষ্টির সুযোগ নেই।
গোপনীয়তার বিষয়ে শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, বিষয়টি আন্তর্জাতিক রীতিতে নির্দিষ্ট, শুধু তা–ই নয়, স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক ও বিমা চুক্তিতে উপনীত হয়, তখন এই গোপনীয়তার বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। এমনকি দুজন ব্যক্তি সম্পদ হস্তান্তর করলেও এ ধরনের বিষয় থাকে।
শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, ‘এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যেখানে চুক্তির মূল নিয়ামক হিসেবে নিজস্ব নিরাপত্তার কথা বলেছে, সেখানে আলোচনায় গোপনীয়তার শর্ত থাকা অবশ্যম্ভাবী। এর মাধ্যমে দেশের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো উপাদান থাকলে আমরা সে চুক্তিতে করব না, সেটাই স্বভাবিক বলে মন্তব্য করেন শেখ বশিরউদ্দিন। নিজস্ব স্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার সুযোগ নেই। নিজস্ব স্বার্থ জলাঞ্জলি দিলে সক্ষমতার ঘাটতি হবে। তাতে বাণিজ্য চুক্তি করে লাভ হবে না। স্বল্প মেয়াদে বা দীর্ঘ মেয়াদে যদি আমাদের বাণিজ্য সক্ষমতা হ্রাস পায়, কিংবা আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির কোনো ধরনের ক্ষতি হয়, সেই চুক্তি কোনোভাবেই পালনযোগ্য নয়।’
তবে আলোচনা চলাকালে দুঃখজনকভাবে চুক্তিটি ফাঁস হয়ে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ বশিরউদ্দিন। সেখানে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু নেই। যেগুলো দেশের স্বার্থবিরোধী হতে পারত, সেখান থেকে বাংলাদেশ পরিষ্কারভাবে বের হয়ে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র মোটেও বিষয়টি উত্থাপন করেনি। এই বিষয়টি একমুখী। গত বছর বোয়িং ১২টি বিমান বানিয়েছে। সুতরাং এই চুক্তি অনুযায়ী তারা হয়তো ২০৩৭ সালে প্রথম বিমান সরবরাহ করতে পারবে। বরং তাদের আগ্রহ ছিল কৃষিপণ্য নিয়ে। বাংলাদেশ প্রতি ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে। যুক্তরাষ্ট্রও কৃষিপণ্যের বৃহৎ উৎপাদক। বাংলাদেশ মূলত জ্বালানি ও কৃষিপণ্যের ভিত্তিতে বাণিজ্যঘাটতি কমানোর কথা বলেছে, যেসব পণ্য এমনিতেই বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলারের মতো। ফলে বাংলাদেশে তুলা, সয়াবিন, ভুট্টা, গমজাতীয় পণ্য আমদানি বাড়িয়ে ২০০ কোটি ডলারের বাণিজ্যঘাটতি কমানোর চেষ্টা করতে পারে।
বোয়িং বিমান খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বিমানের পরিচালনা সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে বিমান কিনে তেমন লাভ হবে না। অন্তর্বর্তী সরকার সেই চেষ্টা করছে। তবে বিমানের পক্ষে অতিরিক্ত এক কোটি যাত্রী পরিবহনের সুযোগ আছে। সেই বিবেচনায় ২৫টি বিমান খুব বেশি কিছু নয়। বিমানের পরিচালন সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি আশাবাদী।