গ্রেপ্তার করা হয় পল্লবী থেকে। এজাহারে লেখা হয় দারুস সালামের কথা। মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে দেখা যায়, তিন মাসেও সেখানে যাননি অভিযুক্ত। সিসিটিভি ফুটেজেও ধরা পড়েনি গ্রেপ্তারের দৃশ্য। রাজধানীর দারুস সালাম থানায় এক মাদক মামলায় এমন কারসাজি করেছে পুলিশ।

এ মামলায় ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য সচিব শান্তনুর হোসেন রুবেলকে ফাঁসানো হয়। গত বছরের ৭ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়। ৩০০ গ্রাম হেরোইন পাওয়া যায় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। রাসায়নিক পরীক্ষায় ধরা পড়ে, সাদা পাউডার।

এদিকে অভিযান-সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ সদস্য আগে থেকে হেরোইন সংরক্ষণ করে রুবেলকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন। তাঁর সঙ্গে সেই পুলিশ সদস্যের মোবাইল ফোনের কথোপকথন ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে এর প্রমাণ রয়েছে। নতুন করে তদন্তের পর সম্প্রতি এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি আদালতও এই ‘সাজানো’ মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এর পর এ ঘটনায় দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মহাপরিদর্শকের কাছে (আইজিপিস কমপ্লেইন মনিটরিং সেল) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রুবেলের ভাই সুমন হোসেন।
সুমন সমকালকে জানান, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কলেজছাত্র মো.

মাহিন ওরফে শুভকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেই মামলার সাক্ষী ও নিহতের পরিবারকে নানাভাবে সহায়তা করেন রুবেল। এতে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শফিকুর রহমান অতুলের সঙ্গে তাঁর বিরোধ হয়। অতুল সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিনের ভগ্নিপতি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নাবিল খানের সহযোগী। এ কারণে নাবিল নানাভাবে রুবেলকে নির্যাতন ও হয়রানি শুরু করেন। ২০২৩ সালের ২ অক্টোবর রুবেল মারধরের শিকার হলে সুমন আদালতে মামলা করেন। এর জের ধরে সুমনের বিরুদ্ধে ১০০ মামলা করার হুমকি দেন নাবিল। 

সুমনের অভিযোগ, নাবিল খানের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে রুবেলকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়েছে পুলিশ। এ উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তারের দু-তিন মাস আগে রুবেলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন দারুস সালাম থানার তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান। তিনি অতুলকে গ্রেপ্তার করে তাঁর নামে হেরোইনের মামলা দেওয়ার কথা জানান। এক পর্যায়ে রুবেলের সঙ্গে দেখা করতে চান মোখলেস। দেখা করতে গেলে তিনিসহ উপপরিদর্শক সুব্রত কুমার দাস, জুয়েল, তুষার ও নাসির পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশন থেকে রুবেলকে গ্রেপ্তার করেন। এর আগে রুবেলের সঙ্গে মোখলেসুরের মোবাইল ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে। সেখানে মোখলেসুর বলছেন, ‘অতুলের জন্য ২২০ গ্রাম হেরোইন বরাদ্দ আছে। ২২০ গ্রাম মানে মোটামুটি এক বছর ভেতরে থাকতে হবে।’ যদিও পরে ৩০০ গ্রাম হেরোইন দিয়ে রুবেলকেই ফাঁসানো হয়। তবে এ জন্য হেরোইন যে আগে থেকে সংরক্ষণ করা ছিল, তা এই কথোপকথন থেকে বোঝা যায়। দু’জনের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
মাদক মামলার বাদী দারুস সালাম থানার তৎকালীন এসআই সুব্রত কুমার দাস দাবি করেন, রুবেলের কাছে হেরোইন পাওয়া গিয়েছিল। প্রথমবার রাসায়নিক পরীক্ষায় তার প্রমাণ মিলেছে। তবে দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় কেন ভিন্ন প্রতিবেদন এসেছে, তাঁর জানা নেই।

অভিযুক্ত এএসআই মোখলেসুরসহ অভিযান-সংশ্লিষ্ট অন্য পুলিশ সদস্যরা বর্তমানে কোথায় কর্মরত, জানা যায়নি। তাদের বক্তব্যও নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সুমনের ভাষ্য, যুবদল করায় রুবেলকে একাধিক রাজনৈতিক মামলাসহ অন্যান্য মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। তবে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর তিনি সব রাজনৈতিক মামলা থেকে খালাস এবং অন্যান্য মামলায় জামিন পান। তার পরও তিনি যেন কারাগার থেকে বের হতে না পারেন, সে জন্য নাবিল খান পুলিশকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এখনও ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। এর ধারাবাহিকতায় দারুস সালাম থানার এসআই আমির সোহেল ও মিরপুর থানার এসআই আতাউল গনি ওসমানী পৃথক মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে রুবেলকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রুবেল কারাগারে থাকলেও মিরপুর থানার এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন এ-সংক্রান্ত মামলায় সন্দিগ্ধ হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন।
এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন দাবি করেন, মামলার বাদী ও সাক্ষীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি রুবেলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন জানান। তবে রোববার সেটি নাকচ করে দেন আদালত।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর প ল শ সদস য র ব লক হ র ইন

এছাড়াও পড়ুন:

‘টাকার বিনিময়ে’ নারীদের হাতে স্বেচ্ছায় নির্যাতনের শিকার হন পুরুষ, গ্রেপ্তার ২

‘টাকার বিনিময়ে’ নারীদের হাতে পুরুষের কথিত নির্যাতন, বিকৃত যৌনাচারের ডিভিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের দুই নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, এই চক্র ‘ফেমডম গ্রুপ’ হিসেবে পরিচিত। নারীরা নিজেদের ‘মিসট্রেস’ হিসেবে পরিচয় দেন।

গ্রেপ্তার দুই নারী হলেন-শিখা আক্তার (২৫) ও সুইটি আক্তার জারা (২৫)। তারা দুইজন বান্ধবী বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।

এ ধরনের চক্রের সদস্য গ্রেপ্তারের ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম বলে মনে করছেন ভাটারা থানার এসআই ইকবাল হেসেন।

তাদের একটি টেলিগ্রাম গ্রুপ থাকার তথ্য দিয়ে এসআই ইকবাল বলেন, ‘এই গ্রুপের সাথে এক ব্যক্তি যোগাযোগ করে এক ঘণ্টার ‘ফেমডম সেশন’ বুকিং করেন। পরে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশকে খবর দিলে সেখান অভিযান চালানো হয়। এসময় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওই দুই নারীর কাছ থেকে বেশ কিছু ভিডিও পাওয়া যায় যেগুলো ‘ফেমডম সেশন’ এর অংশ। এছাড়া বিকৃত যৌনাচারে ব্যবহৃত একটি চাবুক, বিশেষ পোশাক, হাইহিল বুট জুতা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা ইকবাল বলেন, যেসব পুরুষ এ বিষয়ে আগ্রহী তারা গ্রুপে যোগাযোগ করে এক ঘণ্টার জন্য ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায় ‘সেশন’ বুকিং করেন। পুরুষরা সেখানে গিয়ে স্বেচ্ছায় তরুণীর হাতে কথিত নির্যাতনের শিকার হন। এতে সে পুরুষরা আনন্দ পান বলে গ্রেপ্তার দুই নারী বলেছেন।

যখন কথিত নির্যাতন চলে তখন সে পুরুষের অনুমতি নিয়ে ভিডিও করার দাবি করে তিনি বলেন, পরে সে ভিডিও ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় কিনে নেয় পুরুষটি। এসব ভিডিওর কিছু অংশ তাদের নির্ধারিত গ্রুপে পোস্ট করে থাকে। প্রতিদিন তারা দুই থেকে তিনজনের বুকিং নেন বলে পুলিশকে বলেছেন গ্রেপ্তার দুই নারী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুষ্টিয়ায় দুই পুলিশ সদস্যকে আসামির হাতুড়িপেটা
  • থানায় নেওয়ার পথে মোটরসাইকেল থামিয়ে দুই পুলিশকে হাতুড়ির আঘাত আসামির
  • মামলা না নেওয়ায় ওসিকে চাকরি ছাড়তে বললেন বিএনপি নেতা
  • ‘টাকার বিনিময়ে’ নারীদের হাতে স্বেচ্ছায় নির্যাতনের শিকার হন পুরুষ, গ্রেপ্তার ২
  • ‘২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’ বক্তব্যটি শেখ হাসিনার: তাজুল ইসলাম