রাজশাহীর জিআই পণ্য মিষ্টি পান খাচ্ছে চিনিপোকায়, দিশেহারা চাষিরা
Published: 3rd, May 2025 GMT
রাজশাহীতে আমের চেয়ে পানের বাজার বড়। সম্প্রতি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে রাজশাহীর মিষ্টি পান। কিন্তু এই পানের রস চুষে খাচ্ছে ‘চিনিপোকা’। এটি একধরনের মাকড়সার ডিম। দেখতে চিনির দানার মতো। পানচাষিরা নাম দিয়েছেন চিনিপোকা। এই পোকা পান পাতার কাণ্ড, ডগা ও পাতায় দল বেঁধে রস চুষে খায়। এতে পাতার গায়ে ছোট ছোট বাদামি দাগ দেখা দেয়।
ভালো মানের এক আঁটি (৬৪টি পাতা) পানের দাম ১২০ টাকা। তবে চিনিপোকায় আক্রান্ত পান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০ টাকায়। চিনিপোকা দমনের নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। হাতুড়ে পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষিরা পোকা দমনের চেষ্টা করছেন। কৃষি বিভাগ থেকেও তাঁরা তেমন কোনো পরামর্শ পাচ্ছেন না।
রাজশাহীর মোহনপুর, দুর্গাপুর, পবা, বাগমারা ও পুঠিয়ায় তিন বছর ধরে এই পোকার উপদ্রব বেড়েছে। চাষিরা বারবার চেষ্টা করেও পোকা দমন করতে পারছেন না। কীটনাশক থেকে শুরু করে ঘরোয়া নানা উপায় ব্যবহার করেও কোনো কাজে আসছে না।
মোহনপুর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের পানচাষি আফসার আলীর ২০ শতাংশ জমিতে পান চাষ করেছেন। তাঁর সবটাতেই চিনিপোকার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। পানপাতার নিচে এই পোকা ডিম দেয়। ওপর থেকে কিছু বোঝার উপায় নেই। পাতা উল্টালেই তা চোখে পড়ছে। পোকার আক্রমণে তাঁর বাগানের পান জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।
আফসার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নাই। যে যা বলছেন, তা–ই দিচ্ছেন। কোনো কাজ হচ্ছে না। কীটনাশক দিলে মনে হচ্ছে মরে গেছে। কিন্তু আবার হচ্ছে। এই পান হাটে বিক্রি করতে গিয়েও দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ২০ টাকা আঁটি বিক্রি করতে হচ্ছে। যেখানে ভালো পান ১২০ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে।’
চাঁদপুর গ্রামে অনেক পানবরজ। শনিবার সকালে গ্রামের পানচাষি আফাজ উদ্দিন ও আলতাব উদ্দিনের বরজে গিয়েও একই অবস্থা দেখা যায়। আলতাব উদ্দিন বলেন, ‘এটা খুব ভয়ানক পোকা। এখন এমন কোনো বরজ নেই, যেখানে এই পোকা নেই। পাতার রস চুষে পাতাকে দুর্বল করে ফেলে। ফলে অনেক পাতা হলুদ হয়ে ঝরে যায়, উৎপাদন কমে যায়।’
পবা উপজেলার কালুপাড়া গ্রামে শহীদুল ইসলামের বরজেও চিনিপোকার আক্রমণ হয়েছে। তিনি বললেন, কীটনাশক কিংবা নিমতেল, ডিটারজেন্ট, এমনকি উকুননাশক ছিটানোর পরেও কাজ হয়নি। ১০ দিনের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
রাজশাহীতে বর্তমানে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। প্রতিবছর বরজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার পান বাজারে আসে। রাজশাহীর মিষ্টি পান শুধু দেশে নয়, বিদেশেও পরিচিত। এ কারণে চিনিপোকার আক্রমণ শুধু চাষির অর্থনীতিতেই নয়, প্রভাব ফেলছে স্বাস্থ্যেও। কারণ, আক্রান্ত পাতায় পোকা দমনে ব্যবহৃত রাসায়নিকের অবশিষ্টাংশ থেকে যেতে পারে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মাকড়সা সহজে মরে না। একে মারার জন্য বাজারে যে ধরনের কীটনাশক পাওয়া যায়—সবই ভয়ংকর। এগুলো ব্যবহার করা পান খেলে মানুষের কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ জন্য অন্য কায়দায় এই পোকা নিধন করতে হবে, যাতে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি না হয়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, পান সরাসরি খাওয়া হয় বলে কীটনাশক ব্যবহারে সতর্কতা জরুরি। চাষিদের গুল, নিমতেল, হ্যান্ডওয়াশ ও শ্যাম্পু দিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে দমন পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এই পোকা দমনের কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সাবেক মহাব্যবস্থাপক আরিফ হোসেন রাজশাহীর পান নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তিনি এই পোকার ব্যাপারে অবগত। তিনি বলেন, একধরনের মাকড়সা পান পাতায় ডিম দেয়। দেখতে চিনির দানার মতো। দমন করার নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। চাষিরা পাঁচ টাকার গুল, অর্ধেক পাতা সার্ফ এক্সেল ও ৫০ গ্রাম সালফারজনিত ছত্রাকনাশক ১৬ লিটার পানিতে মিশিয়ে ছিটিয়ে উপকার পাচ্ছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাজেকে নিহত খুবি শিক্ষার্থী রিংকীর মরদেহ নেওয়া হবে গাইবান্ধা
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সেশনাল ট্যুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকীর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তার বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে।
এছাড়া শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে এদিন সকল ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সেশনাল ট্যুরের সময় রাঙামাটির সাজেক যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকী নিহত হন। দুর্ঘটনায় নিহত রুবিনা আফসানা রিংকির মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাদের বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে। এই দুর্ঘটনায় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদেরকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনজনকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হচ্ছে ।”
তিনি বলেন, “এই শোকাবহ ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে, সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত আছেন। তিনি নিজে এবং সহকারী পরিচালকসহ কর্মকর্তারা খাগড়াছড়ি রওনা হয়েছেন।”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে নিহত শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে, সাজেকে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সেশনাল ট্যুর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার কাকলি রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ ৪র্থ বর্ষ টার্ম-২ এর সেশনাল ট্যুরে অংশগ্রহণরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। শিক্ষার্থীর এই অকাল মৃত্যুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে শোকাহত এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল দূরপাল্লার সেশনাল ট্যুর স্থগিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে চান্দের গাড়ি পাহাড়ের খাদে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এসময় আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সাজেকের হাউসপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রুবিনা আফসানা রিংকী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। আহতরা সবাই একই বিভাগের শিক্ষার্থী।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস