সোলস। বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের আত্মা। ১৯৭৩ সালে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ‘সুরেলা’ নামে এই ব্যান্ডের যাত্রা শুরু। বছর দুই পরে সেটি নতুন নাম ধারণ করে হয়ে যায় ‘সোলস’। সারা বাংলায়, সারা বিশ্বে ‘মুখরিত জীবনের’ গান করা সোলস ৫০ ছুঁয়েছে আরও তিন বছর আগে ২০২৩ সালে। অর্ধশতাব্দী পূর্তি উপলক্ষে ব্যান্ডটি নতুন গান, কনসার্টসহ অনেক কিছু করার ঘোষণা দিয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামে হয়ে গেল ‘মাস্টারকার্ড প্রেজেন্টস সোলস আনপ্লাগড: ৫০ ইয়ার্স অব টাইমলেস মিউজিক’ শিরোনামে অনবদ্য এক কনসার্ট। র্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ-তে কনসার্টে ছিলেন সোলসের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যরা, ছিলেন বিভিন্ন সময়ের কান্ডারিরা। কথা আর সুরে চট্টগ্রাম মাতিয়ে গেলেন তারা।
ঘড়ির কাঁটা যখন ৮টার ঘরে, তখন শব্দযন্ত্রে ভেসে এলো সোলসের ৩৫ বছরের সাথি পার্থ বড়ুয়ার দরাজ কণ্ঠ। না তিনি গান নয়, ছোট্ট একটা ডকুমেন্টারিতে সোলসের ৫২ বছেরের স্বপ্নযাত্রার কথা বলছিলেন। পার্থের ধারা বর্ণনার সময় পর্দায় ভেসে উঠছিল ব্যান্ডের নানা সময়ের সাথিদের প্রিয় মুখগুলো। সাজেদ উল আলম, নকীব খান, তপন চৌধুরী, লুলু, পিলু খান, শাহেদ উল আলম, সুব্রত বড়ুয়া রনি, আহমেদ নেওয়াজ, আইয়ুব বাচ্চু। তাদের কেউ কেউ এখন পৃথিবীতে নেই। সবার অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করা হলো।
এবার গানের পালা। ‘বন্ধ হয়ে গেছে সব ক্যাফে আর রেস্টুরেন্ট/ বৃষ্টি ভেজা রাস্তা, ফাঁকা হয়ে গেছে বাসস্ট্যান্ড’ গানটি দিয়ে শুরু করলেন পার্থ বড়ুয়া। ‘নিয়নের লাইটগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে যেন, আলো দেয় ঘুম ঘুম চোখে/ কৈশোর চলে গেছে অভিমানে বহুদূরে আমাকে মাঝপথে রেখে’– গানের কথাগুলো মিলে যায় সোলসের সঙ্গে। ৩৫ বছর ধরে ব্যান্ডটির
সঙ্গে আছেন তিনি, বয়স হয়েছে। নিয়নের লাইটগুলো’র মতোই কি ঝিমিয়ে পড়বে সুরের ভুবন? না পার্থের গান শুনে তো তা মনে হয় না। ‘আইয়োনা আইয়োনা আঁরার দেশত আইয়োনা আইয়োনা’ গানপ্রেমীদের আহ্বান জানালেন তার প্রাণের শহর চট্টগ্রামে। সুরে সুরে চট্টগ্রামের প্রশস্তি বর্ণনা করলেন, ‘পাহার আছে সাইগর আছে, মনের মইধ্যে রঙ/ উঁচা নিচা পথ আছে, আছে মারফতী গান/অফুরান ভালোবাসা আছে তোয়ারাল্লাই’।
টানা গান করছিলেন পার্থ। ‘দেখা হবে বন্ধু কারণে অকারণে’ গানটির গীতিকার নুরের গল্প বললেন। ‘১০/১২ বছর আগের কথা। গানটি যেদিন রিলিজ হলো সেদিন আমি আমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ দেখলাম নুর খালি পায়ে বৃষ্টি মাথায় হেঁটে যাচ্ছে। তাকে বললাম, নুর আজ তো তোমার লেখা আমার গাওয়া গানটি রিলিজ হয়েছে, তুমি কি শুনেছ? সে আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাল, আর বলল–হ্যাঁ, গানটি আমি শুনেছি, তবে ভাল হয়নি। পার্থদা, তোমাকে আমি আর কোন গান দেব না। এরপর তার সঙ্গে আমার আর কখনো দেখা হয়নি। ছেলেটার আসলে কিছুটা মানসিক সমস্যা ছিল। কিন্তু তার লেখা গানটি আমার ভীষণ প্রিয়।’
পার্থ বড়ুয়া শুধু তার নিজের নয়, শ্রোতাদের ভীষণ জনপ্রিয় গানগুলো করতে থাকলেন। ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’ গানটি তো শিল্পী নকীব খানের কণ্ঠে দারুণ জনপ্রিয়। পার্থ বললেন, ‘আমি নকীব ভাইয়ের সামনে তার গানটি করতে চাই, আশা করি বেয়াদবি নেবেন না।’ পর্দায় নকীব খানের হাসিমুখ খানা ভেসে উঠতেই পার্থ গানটা ধরলেন, তখন মিলনায়তন মুখর করতালিতে। এরপর তপন চৌধুরীর কণ্ঠে বিখ্যাত ‘এ এমন পরিচয়, অনুমতি প্রার্থনা’ গেয়ে অন্যরকম আবেশ ছড়িয়ে দিলেন পার্থ।
এবার মঞ্চে নকীব খান। তিনি সোলসের সঙ্গে গাইবেন। সোলসের শুরুর দিকের গল্প করলেন। বললেন–আমি যুক্ত হওয়ার আগে সোলস শুধু কাভার সং করত। আমি ভাবলাম মৌলিক গান না থাকলে তো ঠিকে থাকা যাবে না। এমন সময়েই একটি নতুন গান করলাম। আমি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, বাংলা বিভাগের এক ছাত্র, খালিদ তার নাম, একদিন একটি কবিতা নিয়ে আসল। ভারী সুন্দর লিরিক্স। আমি বাসায় এসে সুর দিলাম। গানটি ছিল, ‘নদী এসে পথ’। সেই গানটি সোলসের প্রথম অ্যালবামে ঝড় তুলেছিল। নকীব খান সেটি গাইলনে, উপরি হিসাবে শ্রোতারা তার কাছ থেকে পেলেন আরও একটি গান, ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’।
সুবীর সেনের ‘সারাদিন তোমায় ভেবে হলো না কোন কাজ’ গানটি কাভার করেছিল সোলস। সেটা দিয়ে আবার শুরু করলেন পার্থ বড়ুয়া। ‘চল না ঘুরে আসি অজানাতে’ গানে তো মিলনায়তনজুড়ে আনন্দের ঢেউ। গানে গানে সবাই ঘুরে আসছে সোলসের ৫০ বছরের ইতিহাসের বাঁকে। ‘বাঁশী শুনে আর কাজ নেই’ গেয়ে দর্শকদের উন্মাতাল করলেন পার্থ। এরপর গাইলেন সোলসের দীর্ঘদিনের ভোকাল নাসিম আলী খান। পার্থ বড়ুয়া শেষ করলেন তার বিখ্যাত ‘নিঃষঙ্গতা’ গানটি দিয়ে। বললেন–আবার দেখা হবে, ভালো থেক চট্টগ্রাম।’
সবশেষে মঞ্চে সোলসের নতুন পুরোনোদের মিলনমেলা। সবাই অনুভূতি জানালেন। ১৯৭৩ সালে মাত্র দুজন সদস্য নিয়ে সোলস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তাদের একজন লুলু। তিনি কথা বলতে গিয়ে আপ্লুত হলেন, বললেন–‘আমি নিশ্চিত সোলস শতায়ু হবে, কারণ সোলসে আইয়ুব বাচ্চুর মত লিডার ছিল, পার্থ বড়ুয়ার মতো কাণ্ডারী এখনো শক্ত করে হাল ধরে আছে। ভবিষ্যতে কেউ না কেউ আসবেই।’
পিলু খান ফিরে গেলেন অতীতে। সোলসের সঙ্গে তার ছয় বছরের (১৯৮৯–৮৫) গান আর সুরের দিনগুলোর কথা বললেন। আহমেদ নেওয়াজ স্মরণ করলেন সতীর্থ প্রয়াত সুব্রত বড়ুয়া রনি, শাহেদ উল আলম, আইয়ুব বাচ্চুকে।
এবার যাবার পালা। নকীব খান, পিলু খান, পার্থ বড়ুয়া, নাসিম আলী খান–নতুন পুরোনো সবাই কণ্ঠ মিলিয়ে গাইলেন আলোড়ন সৃষ্টি করা সেই গানটি–‘এই মুখরিত জীবনের চলা পথে’। অবশেষে সাঙ্গ হলো সুরের রাতটি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প র থ বড় য় স লস র বলল ন আইয় ন করল ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইউরোপে পাইলটদের বেতন কোন দেশে কত
ইউরোপে সবচেয়ে বেশি বেতনের পেশার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পাইলট। ফ্রান্সে এটি পঞ্চম সর্বোচ্চ মাসিক বেতনের পেশা। জার্মানিতে জটিল ভূমিকার পাইলটেরা মাসে ২৮ হাজার ৯৬ ইউরো উপার্জন করেন। যুক্তরাজ্যে পূর্ণকালীন পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা মধ্যম আয়ে পঞ্চম স্থানে। ডেনমার্কে ২০২৩ সালে মাসিক বেতন ১৩ হাজার ৫২৩ ইউরো, দেশটির হিসাবে সপ্তম সর্বোচ্চ বেতন।
অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেতনের বৈচিত্র্য
পাইলটদের বেতন দেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। যুক্তরাজ্যে বেতন শুরু হয় বছরে ৫৪ হাজার ২৮৩ ইউরো (৪৭,০০০ পাউন্ড) থেকে, অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্য এটি প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৪৩ ইউরো (১ ইউরো সমান ১৪১ টাকা ৭৭ পয়সা, ২২ অক্টোবর ২০২৫ হিসাবে) পর্যন্ত হতে পারে, জানিয়েছে ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্যারিয়ার্স সার্ভিস।
ইআরআই অর্থনৈতিক গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, আট বছরের বেশি অভিজ্ঞতার পাইলটরা এক থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞ পাইলটের চেয়ে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি আয় করেন। অর্থাৎ অভিজ্ঞ পাইলটরা প্রায় তিন গুণ বেশি উপার্জন করেন।
আরও পড়ুনফ্রিল্যান্সিংয়ে নামার আগে এ পাঁচটি বিষয় ভাবুন১৯ অক্টোবর ২০২৫দেশভিত্তিক তথ্যযুক্তরাজ্য
২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এএনএসের তথ্যানুসারে, পূর্ণকালীন ‘এয়ারক্রাফট পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার’-এর বার্ষিক আয় প্রায় ৯৫ হাজার ২৪০ ইউরো (৮০,৪১৪)। ইআরআইয়ের মতে, গড় বার্ষিক বেতন ৯০ হাজার ২৫৩ ইউরো (৭৮,১৪৬ পাউন্ড), লন্ডনের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৬২ ইউরো (১০০,০৬০ পাউন্ড)।
জার্মানি
জার্মানির ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসের তথ্যমতে, গড় মাসিক বেতন ১২ হাজার ৫৬৬ ইউরো (বার্ষিক ১,৫০,৭৯২ ইউরো)। মধ্যম আয় ১০ হাজার ২০৭ ইউরো (বার্ষিক ১,২২,৪৮৪ ইউরো), অভিজ্ঞ ও বিশেষায়িত পাইলটদের ক্ষেত্রে তা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭২ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। ইআরআইয়ের তথ্য অনুসারে, এক থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটের গড় বেতন ৭৩,৭৮৫ ইউরো, আট বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটদের জন্য ১ লাখ ৩২ হাজার ১১৭ ইউরো।
ফ্রান্স
INSEE জানায়, ‘সিভিল এভিয়েশন টেকনিক্যাল ও কমার্শিয়াল ফ্লাইট অফিসার’দের গড় মাসিক বেতন ৯ হাজার ৩০০ ইউরো (বার্ষিক ১,১১,৬০০ ইউরো)। ERI অনুসারে, অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্য গড় বেতন ১ লাখ ৯ হাজার ২৯২ ইউরো।
ছবি: এমিরেটসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া