মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় নির্ভরযোগ্য থেরাপি দিতে পারে এআই, দাবি মার্কিন গবেষকদের
Published: 4th, May 2025 GMT
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর প্রযুক্তি মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এক নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ কলেজের একদল গবেষকের বিশ্বাস, এআই ব্যবহার করে মানসিক জটিলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নির্ভরযোগ্য সাইকোথেরাপি দেওয়া যেতে পারে।
গবেষকেরা থেরাবট নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছেন। তাঁদের দাবি, এ অ্যাপটি বাজারে থাকা নানা অপ্রমাণিত ও বিভ্রান্তিকর মানসিক স্বাস্থ্য অ্যাপগুলো থেকে একেবারে আলাদা। এ ছাড়া এর মধ্য দিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা খাতে জনবলের ঘাটতি–সংক্রান্ত যে সমস্যা আছে, তা সামাল দেওয়া যাবে বলে মনে করেন তাঁরা।
অ্যাপ্লিকেশনগুলো দায়িত্বশীল ও নৈতিকভাবে তৈরি করা হলে এগুলোর ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। তবে কিশোর ব্যবহারকারীদের ওপর এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ আছে।ডার্টমাউথ কলেজের ডেটা সায়েন্স ও মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক নিক জ্যাকবসনের মতে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যত থেরাপিস্ট আছেন, সেই সংখ্যা যদি ১০ গুণ বাড়ানোও হয়, তবু মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বিপুল চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না।
জ্যাকবসন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘এই বিশাল চাহিদা মেটাতে আমাদের ভিন্ন কিছু প্রয়োজন।’
ডার্টমাউথের গবেষক দল সম্প্রতি মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় এআই প্রযুক্তির কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছে। এতে দেখা গেছে—উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও খাওয়ার সমস্যায় ভোগা মানুষদের সহায়তায় থেরাবট অ্যাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কার্যকর।
গবেষক দল এখন নতুন একটি পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করছে। এ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে থেরাবটের কার্যকারিতা প্রচলিত থেরাপির সঙ্গে তুলনা করে দেখা হবে।
চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট মহলও এ ধরনের উদ্ভাবনকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছে বলে মনে হচ্ছে।
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (এপিএ) হেলথ কেয়ার ইনোভেশনের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ভেইল রাইটের আশা, ভবিষ্যতে মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যা মোকাবিলায় বিশেষভাবে তৈরি বিজ্ঞানভিত্তিক এআইচালিত চ্যাটবট থাকবে।
এই বিশেষজ্ঞের মতে, অ্যাপ্লিকেশনগুলো দায়িত্বশীল ও নৈতিকভাবে তৈরি করা হলে এগুলোর ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। তবে তিনি কিশোর ব্যবহারকারীদের ওপর এগুলোর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
থেরাবট তৈরিতে জ্যাকবসন ও তাঁর দল প্রায় ছয় বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন। তাঁদের মূল লক্ষ্য, এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা।
প্রকল্পের সহনেতা ও মনোরোগবিশেষজ্ঞ মাইকেল হেইঞ্জ মনে করেন, মুনাফার জন্য তাড়াহুড়া করতে গেলে নিরাপত্তার বিষয়টিকে তখন ছাড় দিতে হবে।
ডার্টমাউথের গবেষক দল এখন তাদের ডিজিটাল থেরাপিস্ট কীভাবে কাজ করে, তা গভীরভাবে বোঝা ও ব্যবহারকারীদের আস্থা অর্জন করার ওপর জোর দিচ্ছে।
থেরাবটকে ঘিরে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায় কি না, তা নিয়েও ভাবছেন গবেষকেরা। যাঁরা সশরীর প্রচলিত থেরাপি নিতে সক্ষম নন, তাঁদের জন্যও এই ডিজিটাল থেরাপির সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এমন ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।
বর্তমানে বাজারে থাকা বহু অ্যাপের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যেন সেগুলো ব্যবহারকারীর মনোযোগ কাড়ে ও রাজস্ব আনে। তবে তা বাস্তবে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারে না। এ ধরনের অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীদের মনমতো কথা বলে তাঁদের আসক্ত করে রাখে। কিন্তু অনেক তরুণ ব্যবহারকারী বুঝতেই পারেন না যে তাঁরা একধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।ভেইল রাইট, আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ পরিচালকসেবা নাকি মুনাফাথেরাবট অ্যাপের ডেভেলপাররা সতর্ক ও দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করার কারণে এটি সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি হয়ে উঠতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। একঝাঁক অপরীক্ষিত অ্যাপের ভিড়ে এটি ব্যতিক্রমী হতে পারে। অনেক অ্যাপ আছে যেগুলোতে একতরফা দাবি করা হয়, তারা একাকিত্ব, বিষণ্নতা ও অন্যান্য মানসিক সমস্যার সমাধান দিতে পারে। অথচ এগুলো পরীক্ষিত নয়।
ভেইল রাইট বলেন, বর্তমানে বাজারে থাকা বহু অ্যাপের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যেন সেগুলো ব্যবহারকারীর মনোযোগ কাড়ে ও রাজস্ব আনে। তবে তা বাস্তবে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারে না। এ ধরনের অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীদের মনমতো কথা বলে তাঁদের আসক্ত করে রাখে। কিন্তু অনেক তরুণ ব্যবহারকারী বুঝতেই পারেন না যে তাঁরা একধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের মানসিক স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিষয়ক কমিটির চেয়ারপারসন ডারলিন কিং স্বীকার করেছেন, এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। তবে প্রকৃত উপকারিতা ও ঝুঁকি সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আরও অনেক তথ্য জানার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
ডারলিন কিং বলেন, ‘এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা।’
অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফল যতটা সম্ভব এড়াতে থেরাবটের গবেষক দল শুধু থেরাপি ট্রান্সক্রিপ্ট ও প্রশিক্ষণ ভিডিওর ওপর নির্ভর করেনি; বরং তারা রোগী ও থেরাপিস্টের কৃত্রিম কথোপকথন নিজেরা তৈরি করেছে। এর মধ্য দিয়ে এআই-অ্যাপটিকে আরও বাস্তব ও সংবেদনশীল করে তোলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনলাইনে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়গুলো তদারক করে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে সংস্থাটি কোনো মেডিকেল ডিভাইস বা এআই অ্যাপ অনুমোদন দেয় না।
এফডিএর এক মুখপাত্রের বক্তব্য অনুযায়ী, সংস্থাটি কোনো পণ্য বাজারে আসার আগে পর্যালোচনা করে সেটি বাজারজাত করার অনুমোদন দিতে পারে।
এফডিএ স্বীকার করেছে, ডিজিটাল মানসিক স্বাস্থ্য থেরাপিগুলো মানুষের জন্য সহজে আচরণগত থেরাপি পাওয়ার সুযোগ বাড়াতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র পর ক ষ সমস য র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’
ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।