পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষামূলক বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সমকাল সুহৃদ সমাবেশ নিয়মিতভাবে আয়োজন করছে বই পড়া প্রতিযোগিতা, পাঠচক্র, পড়ার আসরসহ নানা কর্মসূচি। এর ধারাবাহিকতায় ‘বই পড়ি জীবন গড়ি’ প্রতিপাদ্যে রাজবাড়ী ও পাবনার ঈশ্বরদীতে অনুষ্ঠিত হয় বই পড়া প্রতিযোগিতা। কর্মসূচির বিস্তারিত…
রাজবাড়ী
সৌমিত্র শীল চন্দন
‘বই চিরকালের প্রকৃত বন্ধু। মানুষের জীবন গড়ার পথ দেখায় বই। বইয়ের সঙ্গে গভীর সখ্য গড়ে তুলতে হবে। সুস্থ, সুন্দর ও সমৃদ্ধ জীবন গড়তে বইয়ের বিকল্প নেই।’ রাজবাড়ী সুহৃদ সমাবেশের উদ্যোগে বই পড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণের সময় এমন কথা বলেন বক্তারা।
২৪ এপ্রিল রাজবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী রাজা সূর্য কুমার ইনস্টিটিউশনে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। রাজবাড়ী সুহৃদ সমাবেশের ধারাবাহিক কর্মসূচির আওতায় এ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত ছিল জহির রায়হানের গল্প ‘নয়া পত্তন’। বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াদের মধ্যে সেরা আটজনকে পুরস্কার হিসেবে বই দেওয়া হয়।
শনু পণ্ডিত গ্রামের ছেলেমেয়েদের জন্য জমিদারের সহায়তায় একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঝড়ে স্কুলটি ভেঙে যায়। স্কুলটি মেরামতে গ্রামের কেউ আর এগিয়ে আসে না। আশপাশে কোনো স্কুল না থাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া যায় বন্ধ হয়ে। এ অবস্থায় শনু পণ্ডিত তাঁর কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে নিজেরা স্কুলটি নির্মাণ করেন। তাদের উৎসাহে চাষি তোরাব আলী স্কুলের নাম দেন ‘শনু পণ্ডিতের স্কুল’।
সবাই মিলে ভালো কাজ করতে চাইলে যে কোনো বাধা অতিক্রম করা সহজ– এটিই প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্ত করে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা।
রাজবাড়ী সুহৃদ সমাবেশের সভাপতি কমল কান্তি সরকারের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন– উপদেষ্টা প্রাক্তন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান, মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেবাশীষ গোস্বামী, চায়না রানী সাহা, আনোয়ার হোসেন মুকুল প্রমুখ। নিলুফা আক্তার ইভা, স্মৃতি প্রামাণিক, আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ জেলা সুহৃদ সদস্যরা কর্মসূচিতে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
সমন্বয়ক সুহৃদ সমাবেশ, রাজবাড়ী
ঈশ্বরদী
সেলিম সরদার
প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বদৌলতে সবার হাতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস আসায় পাঠবিমুখতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা জানি, জীবনে এগিয়ে যেতে জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই। অনেক শিক্ষার্থী জ্ঞান অর্জনের প্রতি অমনোযাগী ও অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পাবনার ঈশ্বরদীতে বই পড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সুহৃদ সমাবেশ। ৪ মে শহরের পূর্বটেংরি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। শিক্ষক, অভিভাবক, স্কুল পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয়রা কর্মসূচির প্রশংসা করেন। এ উদ্যোগে খুশি শিক্ষার্থীরাও।
নবম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে নির্বাচিত বিষয় ‘আমাদের নতুন গৌরব গাথা’র অংশ শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পড়তে দেওয়া হয়। পড়া শেষে তাদের পরীক্ষা নেওয়া এবং নির্ধারিত সময় পর খাতা মূল্যায়ন করা হয়। মূল্যায়ন শেষে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্ধারণ করে তাদের হাতে পুরস্কার ও উপহার তুলে দেওয়া হয়।
বই পড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নবম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস নওমী প্রথম, হুমায়রা ইসলাম দ্বিতীয় ও রওশান আরা জাহান সাথী তৃতীয় স্থান অর্জন করে।
অতিথি হিসেবে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার ও উপহার তুলে দেন সাবেক ছাত্রনেতা এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহ্বুবুর রহমান পলাশ ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোমসেদ আলী। বক্তব্য দেন কলেজশিক্ষক ও পরীক্ষক মনিরুল ইসলাম বাবু, সুহৃদ তানহা ইসলাম শিমুল, মাসুদুল ইসলাম মাসুদ, ফিরোজ আহমেদ এবং শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান রবি। শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন রাইদুল ইসলাম, আব্দুল মজিদ, ফেরদৌস আরা রেবা, ফাতেমা ইয়াসমিন, সেলিম হোসেন, মুনসুর রহমান, আসাদুজ্জামান আসাদ, আসাদুজ্জামান বকুল, খোকন কুমার সাহা, নূর বক্স শাহ, জাফর ইকবাল নয়ন প্রমুখ। v
সমন্বয়ক সুহৃদ সমাবেশ, ঈশ্বরদী
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বই প রস ক র র রহম ন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
বাকৃবি ২ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৫৪ জনকে শাস্তি
জুলাই গণভ্যুত্থান চলাকালে শান্তি মিছিলে যোগদান এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম ও নির্যাতনের অভিযোগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ১৫৪ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকতা কর্মচারীকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো হেলাল উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৩২৮তম সভায় গত বছর ৪ আগস্ট ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ শান্তি মিছিলে যোগদান এবং গণঅভ্যুত্থান চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম ও নির্যাতনের অভিযোগে ১৫৪ জনকে শাস্তি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন, বাকৃবির ৫৭ জন শিক্ষক, ২৪ জন কর্মকর্তা, ২১ জন কর্মচারী এবং ৩১ জন শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
যৌন হয়রানির অভিযোগে বেরোবি শিক্ষক রশীদুল বরখাস্ত
বিসিএসে সার্কুলারে নেই আরবি বিভাগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
এছাড়াও ২০২২ সালে ২৩ ডিসেম্বর আশরাফুল হক হলে বিকেল ৫টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চারজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে অমানবিক শারীরিক নির্যাতনকারী ১৮ জন শিক্ষার্থী, দুইজন শিক্ষক ও একজন কর্মচারীকে শাস্তি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষকদের মধ্যে ছয়জনকে বরখাস্ত, ১২ জনকে অপসারণ, আটজনকে পদাবনমন এবং ৩১ জনকে তিরস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে আটজনকে বহিষ্কার, আটজনকে অপসারণ, সাতজনকে তিরস্কার এবং একজনকে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মচারীদের মধ্যে দুইজনকে বরখাস্ত এবং ১৯ জনকে তিরস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাতজনকে আজীবন বহিষ্কার এবং ২৪ জনের সনদপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আশরাফুল হক হলে ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় তিনজন শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার এবং ১৫ জনের সনদপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও একজন শিক্ষককে নিম্নপদে অবনমন, একজনকে বেতন বৃদ্ধি স্থগিত এবং একজন কর্মকর্তাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে বাকৃবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ বহিরাগতদের নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ‘শান্তি মিছিল’ নামে একটি সন্ত্রাসী মিছিল আয়োজন করে। এ মিছিলে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ এবং ‘ঘরে ঘরে খবর দে, এক দফার কবর দে’—এ ধরনের উসকানিমূলক ও সহিংস স্লোগান দিয়ে তারা খুনি ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার জুলুম, নির্যাতন ও গণহত্যার পক্ষে প্রচারণা চালায়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এ সময় নিরীহ ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবিহীন ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়, যা শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করে এবং চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এছাড়া ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-শিক্ষকদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদান করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “তদন্ত কমিটি বিভিন্ন আলোচনা, সাক্ষাৎকার, তথ্যের ভিত্তিতে শাস্তি সুপারিশ করেছে এবং সেগুলোকে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত ১৮ মে সিন্ডিকেট সভায় এই শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী সভায় পরিসমর্থন হয়েছে।”
তিনি বলেন, “তিনজন শিক্ষক তদন্ত কমিটি বৈধ নয় দাবি করে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। সে রিটগুলো গতকাল খারিজ হয়েছে। আজ থেকে তাদের শাস্তি সংক্রান্ত কাগজ বিলি হচ্ছে।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী