মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে যাত্রাবিরতির জন্য থামা একটি লঞ্চে দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ও নারীর স্বাধীন চলাফেরায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। আজ রোববার আসকের এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে মারধরের ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তিকে স্বেচ্ছায় আঘাত করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্যের ভিত্তিতে আসক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, ৯ মে ঢাকা-লালমোহন রুটে চলাচলকারী একটি লঞ্চ প্রায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরছিল। লঞ্চটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বেশ কয়েকটি কেবিনে ২০-২৫ জন কিশোর, যুবক ও নারী ছিলেন। রাত ৮টার দিকে লঞ্চটি মুন্সিগঞ্জ ঘাটে নোঙর করে। এ সময় স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটির নেতৃস্থানীয় কর্মীসহ কিছু লোক লঞ্চে উঠে পিকনিকে আসা যাত্রীদের ওপর হামলা করেন। মুন্সিগঞ্জ জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচিত মুখ নেহাল আহমেদ জিহাদ লঞ্চের এক নারী যাত্রীকে বেল্ট দিয়ে বেপরোয়াভাবে পেটান। এ সময় বিভিন্ন বয়সী ৫০ থেকে ৬০ জন পুরুষ সেই দৃশ্য তাঁদের মুঠোফোনে ধারণ করে উল্লাস করেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দেন।

আসক মনে করে, সমাজে নারীর প্রতি সংবেদনশীলতা কোন পর্যায়ে এবং কারও কারও দৃষ্টিভঙ্গি কতটা নিষ্ঠুর, তার একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ এই ঘটনা। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো জায়গায় নারীদের এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হতে দেখা যাচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, নারীর স্বাধীনতা, নারীর পছন্দ করার বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার, চলাফেরার অধিকার সবই সাংবিধানিক অধিকার। এসব অধিকার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সনদ দ্বারাও স্বীকৃত।

আসকের বিবৃতিতে বলা হয়, যেখানে নারীর মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তা সর্বোত্তম উপায়ে নিশ্চিত হওয়ার কথা, সেখানে তাঁদের প্রকাশ্য মারধরের এমন ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। মুন্সিগঞ্জে নির্যাতনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সহিংসতার শিকার নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে আসক। এ ধরনের ঘটনাকে বৈষম্যহীন সরকারের রীতিনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছে আসক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম রধর র র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

‘শুধু জাতীয় দলের ১৫ ক্রিকেটারে উন্নতি হবে না’ 

নাজমুল হোসেন শান্তদের সেরা মানের ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বিদেশি কোচিং স্টাফের পেছনে কম তো খরচ করেনি বিসিবি। চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কোচিং প্যানেলের পেছনে মাসে খরচ ছিল দুই কোটি টাকা। এই বিশাল খরচ করেও বৈশ্বিক মানে উন্নীত করা যায়নি দেশের ক্রিকেট।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তথা বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে তেমন একটা ছাপ ফেলতে পারছে না বাংলাদেশ। পঞ্চপাণ্ডবের বাইরে গত এক দশকে একক কোনো তারকা ক্রিকেটার পায়নি দেশ। দল হিসেবে প্রত্যাশা পূরণ করতেও ব্যর্থ হয়েছে। আসলে বিসিবির ফোকাস ছিল জাতীয় দলের তাৎক্ষণিক সাফল্যের দিকে। তাইতো অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটারদের সরাসরি জাতীয় দলে প্রমোশন দিতে দেখা গেছে। অভিজ্ঞতার অভাবে ভালো করতে না পেরে সেই ক্রিকেটারদের অনেকে অকালে ঝরেও গেছেন। 

এ প্রক্রিয়াতে আপত্তি বর্তমান জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের। ১৫ জন ক্রিকেটারের ওপর নির্ভরতা থেকে বেরোতে চান তিনি। বৈশ্বিক ক্রিকেটে সাফল্য পেতে বাংলাদেশ ‘এ’ দল, এইচপি, বাংলাদেশ টাইগার্স ও জাতীয় দলকে একসঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। 

এইচপি এবং বাংলাদেশ টাইগার্সের সঙ্গে জাতীয় দলকে এক সুতায় বাঁধতে চেয়েছিলেন সাবেক প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। এ দুই বিভাগকে জাতীয় দলের ‘সাপ্লাই চেইন’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করায় হোঁচট খায় সে পরিকল্পনা। দেশি কোচ সালাউদ্দিন নিয়োগ পাওয়ার পর জাতীয় দলের ‘সাপ্লাই চেইনে’র দিকে মনোযোগ দেন। 

এইচপি, বাংলাদেশ টাইগার্স ও ‘এ’ দলের কোচিং স্টাফকে জাতীয় দলের চাওয়া পূরণে কাজ করার আহ্বান জানালেন তিনি। সালাউদ্দিনের মতে, একটি দেশের ক্রিকেট শুধু গুটিকতক (১৫ জন) খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করে না। তার জন্য ভালো কাঠামো লাগে। সবাই মিলেই এটি করতে হবে। কখনোই বলা যাবে না দল হিসেবে কত দিনে উন্নতি হবে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে ভালো করা সম্ভব। প্রতিটি বিভাগকে জাতীয় দলকেন্দ্রিক কাজ করতে হবে। ‘এ’ দল, এইচপি, টাইগার্স সবাইকে জাতীয় দলকে চাহিদা মতো সার্ভিস দিতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে একটি দেশের ক্রিকেট এগোবে; কোনো একজন খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করে না। আমার চাওয়া থাকবে– ‘এ’ দল, এইচপি, টাইগার্স ও জাতীয় দলের লক্ষ্য যেন এক হয়।

আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সফরের প্রস্তুতির অগ্রগতির সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন জানান, লিটন কুমার দাসরা নিজেদের উন্নতির জন্য অসম্ভব পরিশ্রম করছেন। তাঁর মতে, ‘শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটাররা তাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করছেন। গত কয়েকটা দিন তারা অমানুষিক ট্রেনিং করেছেন। এত কঠিন পরিশ্রমের জন্য আমার একটু খারাপই লাগছে। তারা চাচ্ছেন তাদের উন্নতি। উন্নতিটা সব দিক থেকে হতে হবে।’

কোচ জানান, ক্রিকেটাররা সিরিজ খেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। বোর্ড যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন সিরিজগুলো সেভাবে খেলা হবে। টি২০ দলের উন্নতির জন্য ৫ মে থেকে অনুশীলন ক্যাম্প শুরু করে বিসিবি। এক সপ্তাহ ধরে স্কিলের পাশাপাশি ফিটনেস নিয়েও কাজ করা হয়েছে বলে জানান এই সিনিয়র সহকারী কোচ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ