টাঙ্গাইলে পেটে বাচ্চাসহ গরু জবাই করে মাংস বিক্রির দায়ে এক ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

শুক্রবার (১৬ মে) সকালে শহরের বটতলা বাজারে ওই মাংস ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের টাঙ্গাইল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রোমেল। 

টাঙ্গাইল শহরের বটতলা বাজারে ‘সোহেল মাংসের দোকান’-এ দীর্ঘদিন ধরে মাংস বিক্রি করছেন সদর উপজেলার চিলাবাড়ির পাইকপাড়া গ্রামের মো.

শফিকুল ইসলামের ছেলে মো. সোহেল মিয়া। 
শুক্রবার বটতলা বাজারে পৌরসভার কসাইখানা পরিদর্শক সিল মারতে গিয়ে গর্ভবতী গাভি শনাক্ত করেন। এর পর সদর উপজেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি চিকিৎসককে খবর দিলে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পান, জবাই করা গাভিটির পেটে বাচ্চা ছিল। 

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডাক্তার মো. শাহিন আলম বলেছেন, বটতলা বাজারে সোহেল মাংসের দোকানে একটি গর্ভবতী গাভি জবাই করা হয়েছে, এ অভিযোগ পেয়ে সেখানে যাই। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, গাভিটির পেটে প্রায় দুই মাসের ভ্রুণ ছিল।

জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল বলেছেন, সকালে সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বটতলা বাজারে যাই। মাংস ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো তিনি অকপটে সব দোষ স্বীকার করেন। তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জব্দ করা গাভির ৭০ কেজি মাংস সবার সামনে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলার সেনিটারি ইন্সপেক্টর সাহিদা আক্তার, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন  অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু জুবায়ের উজ্জল ও এএসআই মিলনসহ থানা পুলিশের একটি দল। 

ঢাকা/কাওছার/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সদর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

রামগতির ৫১ ইটভাটার সব কটিই ফসলের জমিতে

সবে বর্ষা মৌসুম শেষ হয়েছে। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে ইট উৎপাদনের ব্যস্ততা। ইট তৈরি, নতুন ভাটা নির্মাণ, শ্রমিক নিয়োগ, মাটি কেনাবেচা—সব মিলিয়ে এখন চলছে তোড়জোড়। তবে এসবে আইন মানছেন না কোনো মালিক। উপজেলায় মাত্র দুটি ভাটার অনুমোদন থাকলেও চলছে ৫১টি। সব কটির অবস্থানই ফসলের জমিতে।

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চিত্র এটি। অবৈধ ভাটা বন্ধ করতে গত বছর নির্দেশনা দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। তবে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন। উল্টো এ আদেশের পর চলতি বছর আরও দুটি ইটভাটা উপজেলায় নির্মাণ করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে রামগতিতে ইটভাটা ছিল ৪০টি। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯টিতে। চলতি বছর আরও দুটি বাড়ায় বর্তমানে ৫১টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে রামগতির চর রমিজ ইউনিয়নেই রয়েছে ৪০টি ইটভাটা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিবছরই এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে লোক দেখানো অভিযান চালায় প্রশাসন। কিন্তু এ অভিযানে কোনো ভাটা বন্ধ হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাময়িক জরিমানা করে প্রশাসন চলে যায়। যাওয়ার পরপরই আবার পুরোদমে ইটভাটার কার্যক্রম শুরু হয়। কার্যকর অভিযান থাকলে অবৈধ ইটভাটা স্থাপনে মালিকেরা নিরুৎসাহিত হতেন।

গ্রামে একসময় ছিল ধান ও সবজির জমি। এখন সেখানে সারি সারি ইটভাটা। জমির মাটি কেটে নেওয়ায় ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।নুরুল আলম, চর আফজল গ্রামের কৃষক

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, লোকালয়, কৃষিজমি ও টিলার নির্দিষ্ট দূরত্বে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। কৃষিজমির মাটি দিয়ে ইট তৈরিতেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আইনের ৫ (১) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে—ইট তৈরির জন্য পাহাড়, টিলা ও কৃষিজমি থেকে মাটি নেওয়া যাবে না। এ আইন লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

তবে এসব আইন শুধু কাগজে-কলমেই। রামগতি উপজেলার ভাটার মালিকদের কেউ এ আইন মানছেন না। সব ভাটার আশপাশেই রয়েছে মানুষের বসতবাড়ি ও কৃষিজমি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ তাঁরা এসব ভাটা বন্ধের দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন করেছেন। উপজেলা প্রশাসনকেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে মালিকদের প্রভাবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে প্রশাসনের নাগের ডগায় এসব ইটভাটা গড়ে উঠছে। উপজেলার এসব ইটভাটা নিয়ে গত বছর ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সরেজমিন গত বৃহস্পতিবার চর আফজল, চর মেহার, চর আলগী ও চর পোড়াগাছা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাটাগুলোতে ইটের ছাঁচ তৈরি, চুল্লি সংস্কার, শ্রমিক নিয়োগ ও কাঠ-কয়লার মজুতের কাজ চলছে। কিছু ভাটায় কাঁচা ইট তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু আগুন জ্বালানোর অপেক্ষা।

জানতে চাইলে রামগতির একটি ইটভাটার শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইটভাটাগুলোতে কাজ শুরু হয় অক্টোবরের শুরুতে। এখন পুরোদমে কাজ চলছে। চলতি সপ্তাহেই ইট পোড়ানো শুরু হবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে রামগতিতে ইটভাটা ছিল ৪০টি। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯টিতে। চলতি বছর আরও দুটি বাড়ায় বর্তমানে ৫১টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে রামগতির চর রমিজ ইউনিয়নেই রয়েছে ৪০টি ইটভাটা।

স্থানীয় চর আফজল গ্রামের কৃষক নুরুল আলম বলেন, গ্রামে একসময় ছিল ধান ও সবজির জমি। এখন সেখানে সারি সারি ইটভাটা। জমির মাটি কেটে নেওয়ায় ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। কারণ খেতে আর কাদা জমছে না।

একই এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, চর রমিজ ইউনিয়নে ৪০টি ইটভাটা। ভাটার কারণে সাত মাস (নভেম্বর থেকে মে) লোকজন চরম দুর্ভোগে বসবাস করেন। ভাটার ধোঁয়ায় বাতাস দূষিত হয়ে যায়। গত ছয় বছর ধরে তাঁর গলায় চর্মরোগ দেখা দেয়। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন; কিন্তু কাজ হচ্ছে না। বর্ষা মৌসুমে ভাটা বন্ধ থাকলে তাঁর চর্মরোগ কিছুটা কমে যায়।

আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি

গত বছর রামগতি ও কমলনগর উপজেলার সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রামগতির ৪৮ ও কমলনগরের ১০টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ চেয়েছিলাম। আদালত চলতি বছর ৪ মার্চ সেই নির্দেশ দেন, কিন্তু প্রশাসন এখনো তা বাস্তবায়ন করেনি।’

জানতে চাইলে রামগতি ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি খলিল উল্যাহ বলেন, ‘ভাটাগুলো অনেক আগেই তৈরি হয়েছিল। তখন এ গ্রামে বসতি ছিল না। এখন সবাই ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন; কিন্তু ছাড়পত্র পাননি।’

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, রামগতির এসব ইটভাটা বন্ধে তাঁরা কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে অভিযানও চালিয়েছেন। আবার চালাবেন।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘গত বছর হাইকোর্টের নির্দেশে আমরা কয়েকটি ভাটা ভেঙে দিয়েছিলাম। পরে মালিকেরা আবার মেরামত করে চালু করেছেন। এ বছর ভাটা বন্ধে আগস্টে মাইকিং করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রচারও চালানো হয়েছে। তাঁরা দ্রুত আবার অভিযান চালাবেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ