বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম। অমর্ত্যর পক্ষে তাঁর আইনজীবী আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আজ সোমবার আপিলটি করেন।

মোর্শেদ অমর্ত্যর আইনজীবী মো. আজিজুর রহমান দুলু প্রথম আলোকে বলেন, আপিলে হাইকোর্টের রায় বাতিল চাওয়া হয়েছে। অমর্ত্যকে খালাস দেওয়ার আরজি রয়েছে।

এর আগে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে গত ১৬ মার্চ হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন। গত মাসের শেষ দিকে ১৩১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

আপিলের উল্লেখযোগ্য যুক্তি সম্পর্কে আইনজীবী বলেন, অমর্ত্যকে কোনো বিশেষজ্ঞ সাক্ষী শনাক্ত করেননি। ফলে মামলার ঘটনাস্থলে তাঁর উপস্থিতি সুনিশ্চিত নয়, বরং সন্দেহপূর্ণ; চার সাক্ষীর কেউই বলেননি যে অমর্ত্য হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও আঘাত করেছেন। অথচ ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছে, অংশগ্রহণ করেছেন, যা জালিয়াতির শামিল। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া এ রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি; অর্মত্য কোনো দোষ স্বীকার করেননি অথচ তাঁকে দোষ স্বীকারোক্তি প্রদানকারী আসামি হিসেবে উল্লেখ করে রায় বহাল রাখা হয়। মামলায় অমর্ত্য ঘটনায় জড়িত, তা কোনোভাবে প্রমাণিত হয়নি বলে আপিলে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।

সাড়ে পাঁচ বছর আগে বুয়েটের একটি হলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের সবাই ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ সংগঠন) নেতা-কর্মী। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারিক আদালতের রায়ে ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত ১৬ মার্চ রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন বহাল থাকা আসামি

মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ২০ আসামির সবাই বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন মেহেদী হাসান (রাসেল), মো.

অনিক সরকার, মেহেদী হাসান (রবিন), ইফতি মোশাররফ, মো. মনিরুজ্জামান, মো. মেফতাহুল ইসলাম, মো. মাজেদুর রহমান, মো. মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম, হোসাইন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মুনতাসির আল (জেমি), মো. শামসুল আরেফিন, মো. মিজানুর রহমান, এস এম মাহমুদ, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল, এহতেশামুল রাব্বি ও মুজতবা রাফিদ।

এই ২০ জনের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ের সময় থেকেই তিনজন পলাতক। তাঁরা হলেন মোর্শেদ-উজ-জামান, এহতেশামুল রাব্বি ও মুজতবা রাফিদ।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি মুনতাসির আল (জেমি) গত বছরের ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যান। বিষয়টি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকা আসামিরা হলেন মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন, মো. আকাশ হোসেন, মুয়াজ আবু হুরায়রা, অমিত সাহা ও ইশতিয়াক আহমেদ। এ মামলায় সব মিলিয়ে দণ্ডিত ২৫ আসামির মধ্যে ৪ জন পলাতক বলে রায় ঘোষণার দিন (গত ১৬ মার্চ) জানিয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ।

খন্দকার তাবাককারুল ইসলামসহ মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা সাত আসামির অন্যতম আইনজীবী মাসুদ হাসান চৌধুরী আজ প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের নকল (প্রত্যায়িত অনুলিপি) হাতে পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। কোনো আসামির ক্ষেত্রে নকল পেয়েছেন। অপর আসামিদের ক্ষেত্রে অনুলিপি এখনো হাতে আসেনি। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আপিল করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র শ দ অমর ত য র রহম ন আইনজ ব কর ছ ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাবাকে হত্যায় ছেলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বাবাকে হত্যার দায়ে ছেলে জসিম মিয়াকে (৪৩) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর পাশাপাশি তাকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

বুধবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ মো. শহিদুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। 

আরো পড়ুন:

ভারতীয় ভ্যাকসিন-বীজ বিক্রি করায় ৪ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

শেরপুরে বালু উত্তোলন: ৯ জনকে কারাদণ্ড

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের জিনোদপুর ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে পাট কাটা নিয়ে লিল মিয়ার (৭৫) সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় তার ছেলে জসিম উদ্দিনের। একপর্যায়ে ঘর থেকে কাঠ নিয়ে এসে বাবার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন জসিম উদ্দিন। এতে রক্তাক্ত হয়ে বৃদ্ধ লিল মিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে জসিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জসিম উদ্দিনকে দায়ী করে ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। একই বছরের ২৭ আগস্ট একমাত্র আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেওয়া হয় এবং ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩০২/৩২৩ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণ ও যুক্তি-তর্ক শেষে আজ আদালত জসিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। 

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন খান সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, এ রায়ের মাধ্যমে বাদী ন্যায়বিচার পেয়েছেন। 

তবে, আসামিপক্ষের আইনজীবী নাজমুল হক রিটন বলেছেন, এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

ঢাকা/পলাশ/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাইকোর্টে রিট করে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন দুই প্রার্থী
  • আসিফ নজরুলের কাছে দুই কোর্ট একত্রে রাখার দাবি জানালেন আনোয়ার প্রধান
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাবাকে হত্যায় ছেলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড 
  • জুলাই ফাউন্ডেশনের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘জুলাই যোদ্ধা’কে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা
  • বিএনপি নেতার জামিন নামঞ্জুর, আইনজীবীর উপর হামলার চেষ্টা
  • কালের কণ্ঠের ‘ডিক্লারেশন’ বাতিল চেয়ে সাবেক ১১ কর্মীর রিট
  • কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক চিকিৎসক সাফিয়াকে কেন মুক্তি দেবে না ইসরায়েল