ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার ‘সা রে গা মা পা’ খ্যাত গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডেমরা থানার ইন্সপেক্টর মুরাদ হোসেন তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
নোবেলের পক্ষে তার আইনজীবী জসিম উদ্দিন জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, “মামলার ঘটনা গত বছরের ১২ নভেম্বর। আর বাদি আসামির স্ত্রী। গতকাল (১৯ মে) রাত পর্যন্ত তারা একই বাসায় ছিলেন। ভুল বোঝাবুঝিতে মামলা করেছেন। ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নাই। লিগ্যালি তার ওয়াইফ, চার মাসের প্রেগন্যান্ট। নোবেল তার সাথে সংসার করতে চান। আমরা আপোস করে নিব।”
এসময় বিচারক কাবিননামা আছে কি না, জানতে চান। তখন আসামি পক্ষের আইনজীবী বলেন, “তাড়াহুড়ার কারণে কাবিননামাটা আনা হয়নি।”
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করেন।
ভুক্তভোগীর মামলার সূত্র ধরে পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, “আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি সাংসারিক, ব্যক্তিজীবন নিয়ে ভালো অবস্থায় নেই আসামি। বাদী দাবি করেছেন, ইডেন কলেজে তিনি অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয়। পরে ফোনে কথাবার্তা হয়। গত বছরের ১২ নভেম্বর তাদের দেখা হয়।”
“আসামি বাদীকে তার ডেমরার স্টুডিওতে নিয়ে যান। সেখানে তাকে আটকে রাখেন। ২-৩ জনের সহায়তায় তাকে ধর্ষণ করেন, মারধর করেন,” যোগ করেন তিনি।
এ সময় বিচারক জানতে চান, “ঘটনার ৫ মাস পর মামলা কেন? কারণ বাদী একজন ছাত্রী। মূল বক্তব্য হলো, বাদীকে আটকে রেখে ২-৩ জনের সহায়তায় তাকে ধর্ষণ করা হয়।”
এ বিষয়ে ডেমরা থানার আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের সাব-ইন্সপেক্টর ইলামনি বলেন, “ভিকটিমকে আটকে রাখেন তারা। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো না। তাকে মারধর করা হতো। একটা ভিডিও দেখতে পায় তার পরিবার। তারা এসে তাকে উদ্ধার করে।”
শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে নোবেলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সোমবার (১৯ মে) নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই তরুণী।
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগী ইডেন কলেজের ছাত্রীর সঙ্গে নোবেলের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে প্রেম হয়। গত বছরের ১২ নভেম্বর গায়ক নোবেল তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ভুক্তভোগীকে ডেমরা থানাধীন তার বাসায় নিয়ে যান। এরপর কয়েকজন আসামির সহায়তায় ওই ছাত্রীকে আটকে রাখেন তিনি।
অভিযোগে বলা হয়, এরপর ১২ নভেম্বর রাত অনুমানিক ৮টার সময় ভুক্তভোগীকে আটকে তার মোবাইল নিয়ে নেন নোবেল ও তার সহযোগীরা। বাদী তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য আসামিকে মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়ার জন্য বললে নোবেল ওই তরুণীর ২৬ হাজার টাকার রেডমি ১০ প্রো মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলেন।
ভুক্তভোগীর তার অভিযোগে বলেছেন, এরপর আসামি নোবেল তাকে তার বসতঘরে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও তার মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখেন। নোবেলের কথা মতো বাসায় না থাকলে তার মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। তাই বাদী আসামির ভয়ে কাউকে কোনো কিছু বলার সাহস পাননি।
অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, আসামি নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ১৯ মে পর্যন্ত বাদীকে মারপিট করেন। আসামি তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আরো ২-৩ জনের সহায়তায় বাদীকে সিঁড়ি দিয়ে চুলের মুটি ধরে টানা-হেঁচড়া করে আরেকটি কক্ষে আটক নিয়ে রাখেন। ওই ঘটনার একটি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বাদীর পিতা-মাতা তাকে চিনতে পারেন। এরপর তার পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করেন।
ঢাকা/এম/রাসেল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
হায়দরাবাদের তাণ্ডবে লক্ষ্ণৌর স্বপ্নভঙ্গ
ঘরের মাঠে জয়ই ছিল শেষ ভরসা। কিন্তু হায়দরাবাদের ব্যাটিং তাণ্ডবে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের প্লে-অফ স্বপ্ন। ২০৫ রানের বিশাল স্কোর করেও শেষরক্ষা হলো না তাদের, ১০ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে ম্যাচ শেষ করে মাঠ ছাড়ে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।
লক্ষ্ণৌর ইনিংসটি ছিল যেন এক অদ্ভুত সমীকরণ। ৯ ব্যাটারের মধ্যে ছয় জনই পার হতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘর। অথচ স্কোরবোর্ডে উঠে গেল ২০৫ রান! মূল কারিগর ছিলেন মিচেল মার্শ ও এইডেন মার্করাম। দুজনের ব্যাটে জমে ওঠে ১১৫ রানের বিধ্বংসী ওপেনিং জুটি। মার্শ ৩৯ বলে ৬৫ এবং মার্করাম ৩৮ বলে করেন ৬১ রান।
এরপর নিকোলাস পুরান ঝড়ো ৪৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে এনে দেন দুইশর দোরগোড়ায়। ইনিংসের শেষ বলে আকাশ দীপের ছক্কায় পূর্ণ হয় ২০৫ রানের চূড়া।
আরো পড়ুন:
মরুর বুকে বিজয়ানন্দ
এশিয়া কাপ থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টিকে ‘গুজব’ বলল বিসিসিআই
জবাবে হায়দরাবাদ ইনিংসের শুরুতেই হারায় ওপেনার অথর্ব তাইদেকে। তবে এরপর যা হলো, তা যেন এক পেশাদার চিত্রনাট্য। অভিষেক শর্মা ও ইশান কিষাণ গড়েন ৮২ রানের দুর্দান্ত জুটি। মাত্র ২০ বলে ৫৯ রান করে ম্যাচের গতি পাল্টে দেন অভিষেক। বিশেষ করে রবি বিষ্ণইয়ের এক ওভারে টানা চার ছক্কায় আসে তার বিধ্বংসী ফিফটি।
ইশান কিষাণ আউট হলে হাল ধরেন দুই বিদেশি হেনরিখ ক্লাসেন ও কামিন্দু মেন্ডিস। চাপের মুহূর্তে লঙ্কান ব্যাটার মেন্ডিস ১৪তম ওভারের প্রথম তিন বলে মেরে দেন তিনটি চার। সেখান থেকেই হায়দরাবাদের রানের চাকা ঘুরতে শুরু করে দুরন্ত গতিতে।
জয়ের মাত্র তিন রান দূরে ক্লাসেন ৪৭ রানে আউট হলেও কাজ শেষ করে দেন নিতিশ রেড্ডি। ১৮.২ ওভারে জয়সূচক রান তুলে ২০৬ রানে পৌঁছে যায় হায়দরাবাদ।
এই জয়ে ১২ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম স্থানে উঠে এলো হায়দরাবাদ। আর ১০ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানে থেকেই বিদায় নিতে হলো লক্ষ্ণৌকে। প্লে-অফের শেষ টিকিট এখন কেবল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যে কার হাতে উঠবে—সে দিকেই তাকিয়ে ক্রিকেটভক্তরা।
ঢাকা/আমিনুল