শ্রেণিকক্ষে ধূমপানে বাধা দেওয়ায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ
Published: 20th, May 2025 GMT
রাজশাহীর চারঘাটে শ্রেণিকক্ষে ধূমপান করা নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আট জন গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার রাতে চারা বটতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অভিভাবক শহিদুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই ঈদের লম্বা ছুটি থাকবে, তার আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ থাকলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে।
জানা গেছে, রোববার সকালে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিজভী আলী নবম শ্রেণির কক্ষের পেছনে বসে ধূমপান করছিল। এ ঘটনায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী দুর্জয় ইসলামসহ কয়েকজন তাকে সেখান থেকে বের করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত রিজভী বন্ধু ইমন আলীসহ কয়েকজনকে নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে দুর্জয়কে মাঠে ডেকে বেধড়ক মারধর করে। দুর্জয়কে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক ওয়াজ নবী ঘটনাটি মীমাংসা করতে সোমবার দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবককে আসতে বলেন। এক পক্ষ না আসায় মীমাংসা হয়নি। শ্রীখণ্ডী গ্রামের আহত দুর্জয়ের স্বজনরা লোকজন নিয়ে রাত ৮টার দিকে চারা বটতলা গ্রামে রিজভী ও ইমনের বাড়িতে হামলা করেন। তারা ইমনের চাচা মিঠুর বাড়িতেও ভাঙচুর চালায়। বাধা দিলে সাদিকুল ও ইমনকে মারধর করা হয়। এ অবস্থায় মসজিদে মাইকে ঘোষণা দিয়ে শ্রীখণ্ডী গ্রামের লোকজনকে প্রতিহত করতে আহ্বান জানালে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে দুর্জয়ের বাবা সওদাগর আলী, আরজ আলী ও পলাশ হোসেনসহ দুই পক্ষের আটজন আহত হন।
চারা বটতলা গ্রামের হামলার শিকার মিঠু আলী বলেন, দুই শিক্ষার্থীর দ্বন্দ্ব হয়েছে। আমি কিছুই জানি না। অথচ আমার বাড়িতে ভাঙচুর করে প্রায় ১১ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা না দিলে আরও বেশি ক্ষতি হত।
শ্রীখণ্ডী গ্রামের রাকিবুল ইসলাম বলেন, দুর্জয়কে দলবল নিয়ে রিজভী মারধর করেছে। বিষয়টি জানানোর জন্য তাদের বাড়িতে গেলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে আবারও মারধর করা হয়। দুর্জয়ের বাবা গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি মৃত্যু শয্যায়।
প্রধান শিক্ষক ওয়াজ নবী বলেন, এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বিদ্যালয় তিনদিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দুই পক্ষে মীমাংসা হলে ক্লাস যথারীতি শুরু হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
চারঘাট মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ আহত পর স থ ত দ র জয়
এছাড়াও পড়ুন:
হরহামেশা ছিনতাই, প্রতিকার মেলে না অভিযোগেও
বগুড়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীরা। আগে গভীর রাতে হলেও, এখন দিনেও প্রকাশ্যে ছিনতাই হচ্ছে। মানুষকে জিম্মি করে, অস্ত্র ঠেকিয়ে অথবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে সর্বস্ব লুটে নেওয়া হচ্ছে। এতে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
এদিকে একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও নেই পুলিশের জোরালো পদক্ষেপ। অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
গত এপ্রিলে অন্তত ১৭টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৫ এপ্রিল রাতেই পাঁচটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার হয়েছে ৯ জন। ওই দিন বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আবদুল্লাহ আল কাফি নামে এক ছাত্র শহরের খোকন পার্কে বৈশাখী মেলা দেখতে যান। তিন যুবক তাঁকে মেলা চত্বরের পূর্বপাশে ডেকে নিয়ে ছুরি ধরে মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক মেলা চত্বরে ডিউটিরত পুলিশকে জানালে তিনি থানায় অভিযোগ করতে বলেন। তাঁর কথামতো অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি বলে জানান আবদুল্লাহ আল কাফি।
রাত সাড়ে ১০টায় শহরের বড়গোলা ভূমি অফিসের পাশ দিয়ে যাওয়ায় শিবগঞ্জের রায়নগর এলাকার জাকির হোসেনের পথরোধ করে চার যুবক। ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাঁর মোবাইল ফোন ও ব্যাগ নিয়ে পালানোর সময় এক ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলেন জাকির। আশপাশের লোকজন ওই ছিনতাকারীকে পুলিশে সোপর্দ করে। একই রাতে ফুলবাড়ি বটতলা এলাকার আজিজুল হক কলেজের নতুন ভবনের সামনে এবং সাবগ্রামের উদ্দিগোলা রোডে গণছিনতাই হয়।
২৪ এপ্রিল ১০টার দিকে শহরের সাতমাথার স্টেশন রোডের বিআরটিসি গেট এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে মিজান নামে এক যুবকের ব্যাগ তল্লাশি করে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। ১৯ এপ্রিল রাতে লাহিড়ীপাড়া বন্দর এলাকায় ব্যবসায়ী নান্নুকে ছুরিকাঘাত করে ৩৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় পাঁচ ছিনতাইকারী। একজনকে চিনে ফেলেন নান্নু। এ ঘটনায় মামলা করা হলেও কেউ ধরা পড়েনি।
১৬ এপ্রিল আলতাফুননেছা খেলার মাঠে ঢাকা থেকে আসা এক যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে টাকা ও ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারী। ১৪ এপ্রিল দুপুরে কাহালু রেলস্টেশনে শাহীন আলমকে ছুরিকাঘাত করে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল জামিলনগর, নামাজগড় ও মাটিডালি এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন তিন ব্যক্তি।
গত ৯ এপ্রিল শহরের বনানী পর্যটন মোটেলের সামনে সকালে নীতেশ গাঙ্গুলী নামে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করে ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। মামলা করার পরেও কেউ গ্রেপ্তার বা টাকা উদ্ধার হয়নি। ৮ এপ্রিল চকসূত্রাপুর কসাইপাড়া এলাকায় চালক ইব্রাহিম হোসেনকে ছুরিকাঘাত করে তাঁর অটোরিকশা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।
গত ২২ ডিসেম্বর শহরের কলোনি বটতলা এলাকায় এক ব্যবসায়ীর ম্যানেজার তারেক আহম্মেদকে মুখোশ পরা ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত করে ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। সিসিটিভি ফুটেজে ছিনতাইকারীদের দেখা গেলেও তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি।
ছিনতাইয়ের হটস্পট
বগুড়ায় ছিনতাইয়ের হটস্পট হিসেবে ২৭টি এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শহরের বড়গোলা, দত্তবাড়ি, টিনপট্টি, নামাজগড়, নুরানী মোড়, বিসিক, আজিজুল হক কলেজের নতুন ও পুরাতন ভবনের সামনে, কামারগাড়ি, জামিলনগর, জহুরুলনগর, কলোনি বটতলা, স্টেশন রোড, সেউজগাড়ী, সবুজবাগ, মালগ্রাম রোড, মালতিনগর, রহমাননগর, মোহাম্মদ আলী থেকে শজিমেক হাসপাতাল রোড, নাটাইপাড়া কৃষি অফিসের সামনে, নারুলী কৃষি অফিসের সামনে, উদ্দিগোলা রোড, ঠনঠনিয়া ব্যাংকপাড়া, চকফরিদ রোড, শাহ সুলতান কলেজের সামনে।
সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কেজিএম ফারুক আহম্মেদ বলেন, পুলিশের কার্যক্রম গতিশীল করতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে অপরাধীদের শনাক্ত করে পরিবারের সঙ্গে বসতে হবে। কোনো ছেলে যেন অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য পরিবারকে চাপে রাখতে হবে।
সদর থানার ওসি এসএম মঈন উদ্দিন বলেন, ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এ কারণে আগের চেয়ে অনেকাংশে ছিনতাই কমেছে।
টহল টিম সুপারভিশনের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান বলেন, ছিনতাই প্রতিরোধে মাঝেমধ্যে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। কয়েকটি সফল অভিযান চালানো হয়েছে। এ কারণে আগের তুলনায় ছিনতাই কমেছে।