জেনারেল আসিম মুনির এখন ‘প্রিয় শক্তিশালী মানুষ’
Published: 21st, May 2025 GMT
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সাথে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতের পর তার জনসমর্থনও বাড়তে শুরু করেছে। এর বদৌলতে রাজনীতিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং বিরোধীদের উপর কঠোর দমন-পীড়নের অভিযোগ দূরে সরে যাচ্ছে।
জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এবং শত্রুকে দৃঢ়ভাবে পরাজিত করার কৌশলগত মেধা ও সাহসী নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি সপ্তাহে জেনারেল মুনরিকে ফিল্ড মার্শাল পদে বিরল পদোন্নতি দিয়েছে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে সামরিক বাহিনী কমপক্ষে তিন দশক পাকিস্তান শাসন করেছে। এমনকি বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও অসাধারণ প্রভাব বিস্তার করেছে সেনাবাহিনী। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর লড়াই পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটিতে সেনাবাহিনীর আধিপত্যকে আরো শক্তিশালী করেছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলিতে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে আয়োজিত সমাবেশে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘জেনারেল আসিম মুনির দীর্ঘজীবী হোন!’ ল্যাম্পপোস্ট ও সেতুতে জেনারেলের ছবি টাঙানো হয়েছিল। কিছু ব্যানারে লেখা ছিল: ‘আপনি আমাদের ত্রাণকর্তা!’
স্থানীয় জরিপকারী গ্যালাপ পাকিস্তানের পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৯৩ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন যে সেনাবাহিনী সম্পর্কে তাদের মতামত উন্নত হয়েছে।
মুনিরের সবচেয়ে তিক্ত অভ্যন্তরীণ শত্রু কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও ভারতের সাথে চলতি মাসে সংঘর্ষের পরে সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ইমরান খান এক পোস্টে বলেছেন, “এটি আমার দেশ, এটি আমার সেনাবাহিনী। আমি পাকিস্তান বিমান বাহিনী এবং আমাদের সব সামরিক কর্মীকে তাদের পেশাদারিত্ব ও অসাধারণ কর্মকাণ্ডের জন্য শ্রদ্ধা জানাই।”
রাজনৈতিক ভাষ্যকার ওসুফ নজর সেনাপ্রধান মুনির সম্পর্কে বলেছেন, “তিনি পাকিস্তানের শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এবং তার সেনাবাহিনীর সুনাম একটি শক্তিশালীভাবে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।”
২০২২ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাস পর মুনির সামরিক বাহিনীর আধিপত্যের জন্য সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। ওই সময় ইমরান খানের সমর্থকরা সামরিক স্থাপনাগুলিতে আক্রমণ এবং লুটপাট চালায়। পরে মুনির ইমরান খানকে কারাদণ্ড এবং তার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের সমর্থকদের উপর দমন-পীড়নের জন্য তীব্র অভ্যন্তরীণ সমালোচনার মুখোমুখি হন। একইসঙ্গে অভিযোগ করা হয়, সাধারণ নির্বাচনে ইমরানের প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে কারচুপির মাধ্যমে জিতিয়েছে সেনাবাহিনী।
তবে ভারতের সাথে সংঘাত পরিস্থিতিকে উল্টে দিয়েছে।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর উপর লেখা বই ‘মিলিটারি ইনকর্পোরেটেড’ এর লেখক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, “এটি জেনারেলকে পূর্ববর্তী যেকোনো জেনারেলের চেয়ে শক্তিশালী করে তুলেছে। তিনি এখন একজন নায়ক।”
আয়েশা সিদ্দিকা জানান, প্রতিবেশীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার নেতৃত্ব দেবেন দুই কট্টরপন্থী- ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের মুনির যিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম।
পবিত্র কুরআনের হাফেজ জেনারেল মুনির প্রকাশ্যে ইসলামী পাকিস্তান এবং হিন্দু প্রধান ভারতের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য তুলে ধরেছেন।
ভারতীয় কাশ্মীরে হামলার এক সপ্তাহ আগে ইসলামাবাদে এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “আমাদের ধর্ম ভিন্ন। আমাদের রীতিনীতি ভিন্ন। আমাদের ঐতিহ্য ভিন্ন। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের সব শক্তি দিয়ে পাকিস্তানকে ভয় দেখাতে পারে না। পাকিস্তানকে একটি কঠোর রাষ্ট্র হতে হবে।”
জেনারেল মুনিরই ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পাল্টা হামলার নামকরণ করেছিলেন ‘বুনিয়ানুম মারসুস।’ কোরানের আয়াত অনুযায়ী, এর অর্থ সীসা ঢালা প্রাচীর। এটি ১০ মে ফজরের নামাজের সাথে মিল রেখে চালু করা হয়েছিল, যা মুসলমানদের জন্য একটি শুভ সময় হিসেবে বিবেচিত হয়।
স্কুল শিক্ষকের ছেলে মুনির পদাতিক কর্মকর্তা এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স ও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০২৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সরকার চাইলে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্যও তার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি বলেছেন, সাম্প্রতিক সংঘাতের আগেও মুনির তার পূর্বসূরি সেনাপ্রধানের তুলনায় ভারতের প্রতি বেশি কঠোর ছিলেন।
হাক্কানি বলেন, “ভারতের সাথে সংঘাত পাকিস্তানিদেরকে তাদের দেশের ভঙ্গুরতার কথা মনে করিয়ে দেয় এবং তারা তাদের সেনাবাহিনীকে এমন একটি সত্তা হিসেবে দেখে যেটি দেশকে রক্ষা করবে। ভারতের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক শক্তি প্রদর্শন এবং দাঁড়ানোর ফলে জেনারেল মুনিরকে দেশের অভ্যন্তরে তার অবস্থান দৃঢ় করতে সাহায্য করেছে।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইমর ন খ ন আম দ র র জন য সবচ য
এছাড়াও পড়ুন:
লাকসামে অস্ত্রের মুখে এতিমখানার ৫ গরু লুট, আহত ৮
কুমিল্লার লাকসামে একটি এতিমখানার খামার থেকে গত শুক্রবার পাঁচটি গরু লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাত দল। এ সময় তাদের হামলায় মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আটজন আহত হন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা করেছে।
গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) ভোরে উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের বড়বাম আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসা ও এর সংলগ্ন এতিমখানার খামারে ঘটনাটি ঘটে। তিন মাস আগেও এই খামারের সাতটি গরু লুট করেছিল ডাকাতরা।
আরো পড়ুন:
খুলনায় বিএনপি নেতার অফিসে বোমা-গুলি, শিক্ষক নিহত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের হামলা: গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু
সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
এলাকাবাসী জানান, মাদরাসার আয় এই খামারের মাধ্যমে হয়। তিন মাসের ব্যবধানে দুই দফা ডাকাতি হওয়ায় শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। খামারের বড় গরুগুলো লুট হয়ে যাওয়ায় এক পাশ ফাঁকা পড়ে আছে। বর্তমানে খামারে ১১টি গরু অবশিষ্ট রয়েছে।
খামারের সামনে পড়ে আছে ডাকাত দলের ব্যবহৃত তুষের বস্তা, যা দিয়ে গরুগুলো পিকআপ ভ্যানে তোলে তারা। গরু উদ্ধার এবং ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মামলার বাদী এবং মাদরাসার শিক্ষক ইমরান হোসাইন জানান, গত শুক্রবার ভোরে একদল ডাকাত দুটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে। শিক্ষকদের মারধর করে তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ডাকাতরা। তারা খামারে ঢুকে কেয়ারটেকার উৎসব হোসেনকে বেঁধে একে একে পাঁচটি গরু পিকআপ ভ্যানে তুলে নেয়। শিক্ষক ও ছাত্রদের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা শরীফুল আলম খন্দকার জানান, খামারের আয়ের ওপর ভিত্তি করে মাদরাসার কার্যক্রম চলে। তিন মাস আগেও এই খামারের সাতটি গরু নিয়ে যায় ডাকাতরা।
লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, “লুট হওয়া গরু উদ্ধার এবং ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। মাদরাসার শিক্ষক ইমরান হোসাইন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।”
ঢাকা/রুবেল/মাসুদ