অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টাকে বিএনপির মুখপাত্র বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দেওয়া তাদের সুপারিশ মানা না হলে বড় কর্মসূচি দিয়ে এই তিন উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয়ের সামনে এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এডুকেশন সেক্টর (শিক্ষা খাত) ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য ওয়াহিদউদ্দিন ভাই কাজ করছেন, বাংলাদেশের ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরকে (আর্থিক খাত) ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য সালেহউদ্দিন ভাই কাজ করছেন, বাংলাদেশের আইন মন্ত্রণালয় ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য আসিফ নজরুল কাজ করছেন।’

অন্তর্বর্তী সরকার গণ–অভ্যুত্থানের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আসিফ নজরুলসহ অন্যরা ইসি পুনর্গঠনের যে কলাকৌশল করেছে, তা সরাসরি গণ–অভ্যুত্থানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।’

হুঁশিয়ারি দিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ইলেকশন কমিশনারদের পদত্যাগ ও ইসি পুনর্গঠনে ঐকমত্য কমিশনে তাঁরা যে সুপিরিশমালা দিয়েছেন, সেগুলো মেনে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়ার কোনো প্রচেষ্টা যদি না করা হয়, তাহলে বড় কর্মসূচি দিয়ে এই তিন উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।

এ সময় জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দাবি করেন এনসিপির এই মুখ্য সমন্বয়ক। স্থানীয় নির্বাচনের আগে কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইসি পুনর্গঠন না হলে বর্তমান ইসির অধীনে এনসিপি নির্বাচনে যাবে না।

এনসিপির সমাবেশে ‘ইসি তুই দলকানা, ইসি তুই চলে যা’; ‘ফ্যাসিবাদের কমিশন, মানি না মানব না’, ‘খুনি হাসিনার কমিশন, মানি না মানব না’ স্লোগান দেন এনসিপির নেতা–কর্মীরা। নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন উপদ ষ ট ক এনস প র

এছাড়াও পড়ুন:

ঐকমত্য কমিশন: মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবে মতপার্থক্য

রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়েছে। পাঁচটি সংস্কার কমিশনের অনেকগুলো সুপারিশ বা প্রস্তাবের বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও ক্ষমতার ভারসাম্যসহ মৌলিক প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ের আলোচনার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দলগুলোর সঙ্গে শিগগিরই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে। এ পর্যায়ে মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। যেসব বিষয়ে মতভিন্নতা আছে, সেগুলো নিয়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা হবে। পবিত্র ঈদুল আজহার (জুনের প্রথম সপ্তাহ) আগে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হতে পারে। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করা হবে। আগামী জুলাই মাসে এ সনদ চূড়ান্ত করার লক্ষ্য রয়েছে ঐকমত্য কমিশনের।

মৌলিক যেসব পরিবর্তনের প্রস্তাব আছে, সেগুলো মূলত সংবিধান–সম্পর্কিত। সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে সংস্কারের যেসব উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করেছে, তার অন্যতম হলো ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার উত্থান রোধ এবং রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ—নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা।

জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে অনেকটা কাছাকাছি অবস্থানে আছে। এনসিপি জোর দিচ্ছে মৌলিক সংস্কারে।

ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে এবং এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা যাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে না যায়, সে জন্য সংবিধানে বেশ কিছু সংস্কার আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানো; এক ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না; একই ব্যক্তি একাধারে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলের প্রধান হতে পারবেন না; সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগের জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন; আইনসভা (সংসদ) দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করা এবং উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব–পদ্ধতিতে (একটি দল সারা দেশে যত ভোট পাবে, সে অনুপাতে উচ্চকক্ষে আসন পাবে) নির্বাচন; অর্থবিল ছাড়া নিম্নকক্ষের সদস্যরা তাঁদের দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা পাবেন ইত্যাদি।

এসব প্রস্তাবের মধ্যে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ করার প্রস্তাবের সঙ্গে প্রায় সব দলই একমত হয়েছে; কিন্তু নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতা আছে। অন্য প্রস্তাবগুলোর ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির মতপার্থক্য বেশি। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে অনেকটা কাছাকাছি অবস্থানে আছে। এনসিপি জোর দিচ্ছে মৌলিক সংস্কারে।

মৌলিক যেসব পরিবর্তনের প্রস্তাব আছে, সেগুলো মূলত সংবিধান–সম্পর্কিত। সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে সংস্কারের যেসব উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করেছে, তার অন্যতম হলো ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার উত্থান রোধ এবং রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ—নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা।

সংস্কার বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়েও দলগুলোর মধ্যে বড় ধরনের মতভিন্নতা আছে। অবশ্য সংস্কার বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া নিয়ে এখনো দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় এ বিষয় আসতে পারে।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠন করা হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এ কমিশন।

ঐকমত্য তৈরির অংশ হিসেবে পুলিশ সংস্কার কমিশন ছাড়া সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে স্প্রেড শিটে (ছক) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মতামত নেয় ঐকমত্য কমিশন। যেসব সুপারিশের বিষয়ে আংশিক একমত বা ভিন্নমত ছিল, সেগুলো নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলাদা আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ২০ মার্চ শুরু করে গতকাল সোমবার দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়েছে। দুই মাসে ৩৩টি দলের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে বিএনপি তিন দিন, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি দুই দিন করে প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেয়।

এনসিসি ও সাংবিধানিক পদে নিয়োগ

ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগ—রাষ্ট্রের এই তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল’ (এনসিসি) গঠন করার প্রস্তাব ছিল সংবিধান সংস্কার কমিশনের। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়, প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের এবং বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য এই কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠাবে। রাষ্ট্রপতি তাঁদের নিয়োগ দেবেন।

বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতিকে অন্য যেকোনো কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী করতে হয়। এনসিসি গঠন করা হলে সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমবে।

তবে এ প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনসিসি গঠনের প্রস্তাব নিয়ে বিএনপির জোরালো আপত্তি আছে। তারা মনে করে, এ বিধান করা হলে সরকার দুর্বল হবে।

অন্যদিকে এ প্রস্তাবের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত এনসিপি। জামায়াতে ইসলামীও এ প্রস্তাবের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত। তবে দলটি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে এ কাউন্সিলে না রাখার পক্ষে।

অবশ্য বিএনপি বলেছে, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা তাদের অঙ্গীকার। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি আইন করার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। তবে সে আইনে রাষ্ট্রপতিকে কী কী ক্ষমতা দেওয়া হবে, তা তারা স্পষ্ট করেনি। দলটি বলেছে, এ বিষয়ে পরবর্তী সংসদে আলোচনা করে তা ঠিক করা হবে।

সংবিধানের মূলনীতি, জরুরি অবস্থা জারির বিধান, সংবিধান সংশোধনপ্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক চুক্তি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনপদ্ধতিসহ কিছু প্রস্তাব নিয়েও এখনো মতপার্থক্য আছে।প্রধানমন্ত্রী–সংক্রান্ত

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। একই ব্যক্তি একাধারে প্রধানমন্ত্রী, দলের প্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন না। এই দুটি প্রস্তাবে এনসিপি একমত। তবে এ দুটি প্রস্তাব নিয়ে ভিন্নমত জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপি চায় কোনো ব্যক্তি টানা দুবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, এমন বিধান। আর দলের প্রধান, সরকারপ্রধান ও সংসদ নেতা কে হবেন, তা দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়।

এ ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান হলো একই ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং দলের প্রধান থাকতে পারবেন না। এক ব্যক্তি সারা জীবনে ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না।

সংসদে দলের বিরুদ্ধে ভোট

বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। তাতে বলা আছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন বা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংসদে তাঁর আসন শূন্য হবে।

এখানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অর্থবিল ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদের নিম্নকক্ষের সদস্যদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।

এ প্রস্তাব নিয়েও পুরোপুরি ঐকমত্য হয়নি। অনেকগুলো দলই অর্থ বিলের পাশাপাশি আস্থা ভোট, সংবিধান সংশোধন বিলে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা দেওয়ার বিপক্ষে।

বিএনপির অবস্থান হলো সংসদে আস্থা ভোট, অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধনী বিল এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত, এমন সব বিষয়ে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়া যাবে না।

জামায়াতে ইসলামীও অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধন বিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষে।

অন্যদিকে এনসিপির অবস্থান হলো সংসদ সদস্যরা সংসদে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবেন। পাশাপাশি সরকারের স্থিতিশীলতাও যেন রক্ষিত হয়, সে ধরনের সাংবিধানিক ব্যবস্থা থাকতে হবে।

সংবিধানের মূলনীতি, জরুরি অবস্থা জারির বিধান, সংবিধান সংশোধনপ্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক চুক্তি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনপদ্ধতিসহ কিছু প্রস্তাব নিয়েও এখনো মতপার্থক্য আছে।

তবে এসব মৌলিক বিষয়ের বাইরে সংবিধান ও অন্য চারটি সংস্কার কমিশনের বেশ কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে দলগুলো একমত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষে বিএনপি জানিয়েছিল, তারা বেশির ভাগ সুপারিশের সঙ্গে একমত। জামায়াতে ইসলামী বলেছিল, ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে তারা ১২০টির বেশি সুপারিশে একমত হয়েছে।

এখন দলগুলো যা বলছে

প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সুপারিশে ঐকমত্য হয়নি। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় কতটা অগ্রগতি হতে পারে বলে মনে করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কতটা ক্ষেত্রে ঐকমত্য হয়েছে বা হয়নি, তার বিস্তারিত এখনো তাঁরা জানেন না। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হলে বিষয়গুলো সামনে আসবে। তখন বিষয়গুলো নিয়ে তাঁরা মন্তব্য করবেন।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের দল এনসিপি গুরুত্ব দিচ্ছে মৌলিক সংস্কারে। তারা ইতিমধ্যে ঐকমত্য কমিশনের কাছে মৌলিক সংস্কারের একটি রূপরেখাও তুলে ধরেছে। তবে তারা যৌক্তিক ছাড় দিতে রাজি আছে। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সাত-আটটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতানৈক্য আছে। এনসিপি সর্বোচ্চ ‘ফ্লেক্সিবল’ (নমনীয়)। ক্ষমতাকাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কার নীতিকে ঠিক রেখে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে এনসিপি প্রস্তুত আছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে দলগুলো একটি কাছাকাছি পর্যায়ে আসতে পারবে বলে আশা করছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রথম আলোকে বলেন, যেসব সুপারিশের বিষয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা আছে, সেগুলো নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে কমিশন আলোচনা করবে। সেখানে সবাই নিজ নিজ যুক্তি দেবে। এর মধ্য দিয়ে একটি কাছাকাছি অবস্থানে আসা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ, এমন বিষয়গুলোও গণভোটে দেওয়ার পক্ষে তাঁরা। গণভোটে যে রায় আসবে, তার বিপক্ষে কারও কিছু বলার থাকবে না। কারণ, গণভোট হলো জনগণের সম্মতি।

আশাবাদী কমিশন

গতকাল বিকেলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়। গতকাল আলোচনার শুরুতে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অব্যাহত এই আলোচনায় অনেকগুলো বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছি এবং বেশ কিছু বিষয়ে আমাদের ভিন্নমতও রয়েছে। খুব শিগগির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করে যেসব বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে, তা বিষয়ভিত্তিকভাবে আলোচনা করে দ্রুত জাতীয় সনদ তৈরিতে অগ্রসর হতে পারব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোন পথে সংস্কার ও রাজনৈতিক ঐকমত্য
  • শেষ মাইলটি অতিক্রমে দুদিক থেকেই এগিয়ে আসতে হবে
  • নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা জরুরি
  • সীমান্তের অতিরিক্ত সেনা সরাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান
  • নাগরিক কোয়ালিশনের সাত প্রস্তাব কেন গুরুত্বপূর্ণ
  • ঐকমত্যের ভিত্তিতেই ‘জাতীয় সনদ’ হবে
  • ঐকমত্য কমিশন: মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবে মতপার্থক্য
  • ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনা সমাপ্ত
  • শেষ হয়েছে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনা