Prothomalo:
2025-09-18@10:42:53 GMT

‘আমাকে আমার মতো পাকতে দাও’

Published: 26th, May 2025 GMT

‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও...যেটা ছিল না ছিল না সেটা না পাওয়াই থাক, সব পেলে নষ্ট জীবন...।’ কয়েক দিন থেকেই এই গানটার একটা প্যারোডি মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করছে। সেটা হচ্ছে, ‘আমাকে আমার মতো পাকতে দাও, যেটা পাকেনি পাকেনি সেটা না খাওয়াই ঠিক, সব খেলে নষ্ট জীবন...।’ ১৭ মে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নোন্দাপুর চাত্রাপুকুর এলাকায় ক্ষীরশাপাতি আম পাড়তে দেখা গেছে।

অপরিপক্ব এই আমে ‘টম টম’ নামের একধরনের রাসায়নিক ছিটানো হচ্ছে। আবার উপজেলার কাঁকনহাট পৌর এলাকার সাহাপুর মহল্লায় গোপালভোগ আম পেড়ে একইভাবে হরমোন ছিটাতে দেখা গেছে। চাষিরা বলছেন, এই হরমোন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। আমগুলো একসঙ্গে পাকবে আর সুন্দর একটা রং হবে, পচবে না, সে জন্য তাঁরা এই হরমোন ব্যবহার করছেন। তাঁরা বলছেন, দেশে এই হরমোন অনুমোদিত।

তবে ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার ঘোষণার সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে এই ক্যালেন্ডারের বাইরেও যদি কোনো এলাকায় কোনো আম আগাম পেকে যায়, তাহলে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে আম বাজারজাত করা যাবে। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এখন পর্যন্ত রাজশাহীর কোনো কৃষক আগাম আম পাড়ার জন্য প্রত্যয়নপত্র নেননি।

এ বিষয়ে ১৯ মে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘আম পাকাতে ব্যবহৃত হরমোন কি ক্ষতিকর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলছেন, ‘একটি গাছে সব মুকুল একসঙ্গে আসে না। প্রথম মুকুল থেকে শেষ মুকুলটা আসা পর্যন্ত প্রায় ২০ দিন সময় লাগে। তাহলে প্রথম পর্যায়ে আসা মুকুলের আম এবং শেষ পর্যায়ে আসা মুকুলের আম একসঙ্গে পাকে না। কিন্তু যাঁরা বাণিজ্যিকভাবে আম কেনাবেচা করেন, তাঁদের সব আম একসঙ্গে পাকা দরকার। তা ছাড়া তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ জন্য তাঁরা বলে থাকেন গাছ থেকে দু–একটি পাকা আম ঝরে পড়লে তা দিয়েই একটা ধারণা পাওয়া যায় যে আমগুলো পরিপক্ব হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পরিপক্ব আমে হরমোন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অপরিপক্ব আমে অবশ্যই নয়।’

কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, গাছের সব আম একসঙ্গে পরিপক্ব হয় না এবং পাকে না।
কৃষিবিদদের কাছ থেকে বরাবরই আমরা জেনে আসছি ‘আম পাকাতে ইথিলিন গ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আমের রেস্পিরেশন রেট এবং অভ্যন্তরীণ এনজাইমেটিক রিঅ্যাকশন বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ফলের মধ্যে থাকা স্টার্চ ধীরে ধীরে সুক্রোজে রূপান্তরিত হয়, যা ফলকে মিষ্টতা ও নরম অনুভূতি প্রদান করে। তবে অতিরিক্ত তাপমাত্রা (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ফল দ্রুত পাকায়। এতে পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও রং কমে যেতে পারে।’

এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে আমরা প্রকৃতির দিকে তাকাব, নাকি সব আম একসঙ্গে পাকাব। আর  তা করতে মাত্রাতিরিক্ত গরম সৃষ্টির জন্য কার্বাইড ব্যবহার করব, নাকি হরমোন ছিটাব। যদি তা–ই করি, তাহলে আমের স্বাদ আর পুষ্টিমান দুটোই হারাতে হবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা কী?

১৭ মে যখন ক্ষীরশাপতি আমে হরমোন ছিটানো হচ্ছিল, তখন থেকে ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আরও ১৩ দিন পরে এই জাতের আম পরিপক্ব হওয়ার কথা। অর্থাৎ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩০ মে এই আম বাজারে আসার কথা। তবে আম–গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলছেন, ক্ষীরশাপতি আম ১০ জুনের আগে খেলে তার প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাবে না। সেই হিসাবে আরও ২৩ দিন পরে এই আম পরিপক্ব হবে।  

যেদিন রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়, সেদিনই আম–গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন যে এখন ব্যবসায়ী ও চাষিরা আম গাছে থাকতেই একসঙ্গে পাকানো ও রং ধরানোর জন্য ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। বিষয়টি তিনি প্রশাসনের নজরে আনার চেষ্টা করেছিলেন।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার একজন আম ব্যবসায়ী সেদিন কথায় কথায় বললেন যে চিটাগাংয়ের ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছ থেকে এক শর্তে আম নিতে রাজি আছেন। শর্ত হচ্ছে কার্বাইড দিয়ে সব আম একসঙ্গে পাকিয়ে দিতে হবে। তাঁরা বারবার বলছেন কার্বাইড করেন, কার্বাইড করেন, তা ছাড়া আপনার আম চলবে না।

এই ব্যবসায়ীর বক্তব্য হচ্ছে, তিনি গাছে আম পাকা দেখলে সেই আম পেড়ে অল্প অল্প করে অনলাইনে ভোক্তাদের বিশ্বস্ততার সঙ্গে পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু বেশি লাভের জন্য বড় পার্টি ধরতে গেলে তাঁকে এই অসততার আশ্রয় নিতে হবে। তাঁরা রঙিন আম পাবেন, দেখে মনে হবে ফ্রেশ। সবগুলো একসঙ্গে পাকা পাবেন কিন্তু হয়তো পুষ্টি আর স্বাদটা কম পাবেন।

১৩ মে রাজশাহীর সাহেববাজারে ডালি ভরে গোপালভোগ আম নিয়ে বসে আছেন একজন ব্যবসায়ী। খদ্দেরদের ডেকে বলছেন, ভাই নেন নেন, স্বাদ হবে। ভেতরে রস আছে, কিন্তু রাজশাহীর মানুষ তো আমের স্বাদ বোঝে। একজন ক্রেতা এসে একটা আমের ঘ্রাণ নিয়ে কিচ্ছু না বলে চলে গেলেন। রাজশাহীর গোপালভোগ ২২ মে থেকে বাজারে আসার কথা। আর মাহবুব সিদ্দিকীর হিসাব অনুযায়ী ২৮ মের আগে গোপালভোগ খেলে স্বাদ পাওয়া যাবে না।

রাজশাহীতে ঘোষিত ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে গুটি জাতের আম ভাঙা হচ্ছে। ২২ মে থেকে গোপালভোগ ও ৩০ মে ক্ষীরশাপাতি বা হিমসাগর আম বাজারজাত করার কথা। তার আগেই গোপালভোগ আমে বাজার ভরে গেছে।

রাজশাহীর আম–গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী ফেসবুকে নিজের মতো একটা ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছেন। তাতে বলেছেন, ‘সরকারিভাবে আমের ক্যালেন্ডার প্রকাশ পেলেও সেটি মোটেই নির্ভুল নয়। দেশের অগণিত আম ভোক্তাগণের সদয় অবগতির জন্য সঠিক সময়ে আম কেনার একটি ক্যালেন্ডার প্রদান করছি। এতে ভোক্তাগণ ঠকবাজ ও প্রতারক আম ব্যবসায়ীর কবলে পড়বেন না।’

তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী, গোপালভোগ মে মাসের ২৮ তারিখ থেকে জুন মাসের ১০ তারিখের মধ্যে, ক্ষীরশাপাতি জুন মাসের ১০ তারিখ থেকে ৩০ জুন অবধি। অন্য আম আরও পরে।

এখন বেচারা আম কী করবে বলুন। কোন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পাকবে। প্রশাসনের, গবেষকের, কৃষকের নাকি ভোক্তার? সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে, আমের যদি জবান থাকত, তাহলে সে ওই প্যারোডিটা গাইত, ‘আমাকে আমার মতো পাকতে দাও, যেটা পাকেনি পাকেনি সেটা না খাওয়াই ঠিক, সব খেলে নষ্ট জীবন.

..।’

আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক য ল ন ড র অন য য় ম হব ব স দ দ ক ব যবহ র কর ব যবস য় আম প ড় র জন য প রক শ হরম ন বলছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা

নারায়ণগঞ্জ শহরের শায়েস্তা খান সড়কে অবস্থিত জনতা ব্যাংক বিবি রোড কর্পোরেট শাখার এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রাহককে হয়রাণির অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী ওই নারী গ্রাহক খুরশিদা জানান, বড় বোনকে সঙ্গে নিয়ে ডিপিএসের টাকা তুলতে গেলে নানা টালবাহানা করেন ওই কর্মকর্তা। এর আগে বড় বোনের ডিপিএস ভাঙ্গানোর সময়ে টাকা চেয়ে না পেয়ে ক্ষিপ্ত ছিলেন তিনি। গুণধর ওই কর্মকর্তার নাম আশরাফ। তিনি ওই শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জনতা ব্যাংকের ভিজিল্যান্স ডিপার্টমেন্টের উপ মহাব্যবস্থাপক বরাবর ইমেইলে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে খুরশিদা জানান, গত ১৪-০৯-২০২৫ তারিখে আমি আমার ডিপিএস ৮৩০০০০৯৯ নম্বর এর টাকা আমার বড় বোনকে সঙ্গে নিয়ে উত্তোলন করতে যাই। আমার বোনকে দেখে একজন কর্মকর্তা আমাকে পরে আসতে বলে। অনেকক্ষন পর আমার বোন জামাই এসে ওই কর্মকর্তাকে বললে তিনি বলেন, দরখাস্ত করতে হবে। জবাবে আমার বোন জামাই বলেন, দরখাস্ত দেন, সবতো আপনাদের কাছে। এরও কিছুক্ষন পর তিনি একটি কাগজ দিয়ে বলেন আমি পূরণ করতে পারবো না। পরে আমি অন্য একজনকে দিয়ে পূরণ করে তার কাছে জমা দিলে তিনি খুব ধীরলয়ে কাগজটি নাড়াচাড়া করতে থাকেন। বিভিন্ন কিছু গুছাতে থাকেন।

এরপর বলেন, কাকে দিয়ে ফিলাপ করিয়েছেন। আমি একজনের নাম বলি। ওই সময়ে আমার বোন জামাই বলে, কে ফিলাপ করলো এটা জানার কি খুব দরকার। সঠিক হয়েছে কি-না তা দেখেন।

এ নিয়ে আমার বোন জামাইয়ের সঙ্গে তার তর্ক হলে তিনি এক পর্যায়ে কাগজ নিয়ে ম্যানেজার সাহেবের রুমে ঢুকেন। তখন ম্যানেজার সাহেব আমাদের ডেকে নেন, ঘটনা শুনেন। পরে তিনি বলেন, আজ হিসেব করে আপনার সেভিংস একাউন্টে টাকা জমা হবে আপনারা চলে যান।

ম্যানেজার সাহেবের কাছে ওই কর্মকর্তার পরিচয় জানতে পারি, ওনার নাম আশরাফ উনি ওই ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার।

এখানে উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১০ জুলাই আমার বড় বোন পারভীন ডিপিএসের টাকা তুলতে গেলে ওই কর্মকর্তা আশরাফ সাহেব তার কাছে টাকা চান। বিষয়টি আমার বোন জামাই শুনতে পেয়ে তার কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি (আশরাফ সাহেব) তখন বলেন, টাকা চাই নাই পেয়ারা খেতে চেয়েছি। তখন তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। ওই ঘটনার কারনেই তিনি আমার বোনকে দেখে সেদিন আমাকে নূন্যতম সহযোগীতা না করে হয়রাণি করতে চেয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাগদানের গুঞ্জনের মাঝে হুমার রহস্যময় পোস্ট
  • ভোররাতে রণক্ষেত্র: নরসিংদীতে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • যে ১০ কারণে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বেশি ঝগড়া হয়
  • স্মার্ট সিটি হবে চট্টগ্রাম, একসঙ্গে কাজ করবে গ্রামীণফোন-চসিক
  • অনলাইন জীবন আমাদের আসল সম্পর্কগুলোকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে
  • তিনি চাকরি ছাড়বেন শুনলেই সহকর্মীরা হাসাহাসি করেন
  • প্রেমিকের সঙ্গে বাগদান সারলেন হুমা কুরেশি!
  • একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল