নাটোরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা: আটক বিএনপি নেতা-কর্মীদের নিয়ে নানা নাটকীয়তা
Published: 27th, May 2025 GMT
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দেওয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনীর হাতে আটক বিএনপি নেতা-কর্মীদের আপস-মীমাংসার কথা বলে মুক্তি দেওয়া হয়। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর আবার তাঁদের ডেকে এনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাদীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে নতুন এজাহার।
গতকাল সোমবার দুপুরে খাজুরা দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেনকে বের করে দিয়ে কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি হযরত আলী ও তাঁর সহযোগীরা। হযরত আলী খাজুরা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
নলডাঙ্গা থানা সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি হযরত আলীসহ কয়েকজন অভিভাবক সদস্য প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে গিয়ে পর্ষদের সভা করার কথা বলেন। তখন তিনি তাঁদের শিক্ষা বোর্ডের প্রজ্ঞাপন অনুসারে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার কথা জানান। এতে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে কার্যালয়ের আলমারি থেকে জরুরি কাগজপত্র বের করে নেন এবং শিক্ষকদের বের করে কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে যান। এ নিয়ে সভাপতিসহ পর্ষদের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে নলডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন প্রধান শিক্ষক।
ঘটনাটি জানার পর নাটোর সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে সন্ধ্যায় সভাপতি হযরত আলী এবং তাঁর সহযোগী অভিভাবক সদস্য রুস্তম আলী, ওহিদুর রহমান ও মিজানুর রহমানকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যান। রাত আটটার দিকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তাঁদের নলডাঙ্গা থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পর্ষদের সদস্যদের আটকের পর বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ঘটনাটি মীমাংসা করে নিতে চাপ দেওয়া হয়। স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতারা প্রধান শিক্ষককে ডেকে নিয়ে থানায় যান। দীর্ঘ আলোচনার পর আপস-মীমাংসার ভিত্তিতে পুলিশ রাত দুইটার দিকে মুচলেকা নিয়ে আসামিদের মুক্ত করে দেয়। খবর জানাজানির পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা আজ বিদ্যালয়ে যান। খোঁজখবর নিয়ে তাঁরা ঘটনার সত্যতা পান এবং প্রধান শিক্ষককে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দেওয়ার নির্দেশনা দেন। নির্দেশনার বিষয়টি পুলিশকে জানালে তারা পর্ষদের সভাপতিসহ চারজনকে থানায় ডেকে নেন। নতুন এজাহারটি মামলা হিসেবে নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে আপস-মীমাংসা করে নিয়েছিলেন। তবে আজ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তিনি আবার নতুন করে এজাহার জমা দেন।
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষক-অভিভাবকেরা আপস-মীমাংসা করে অভিযোগ প্রত্যাহার করায় গতকাল রাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক আজ আবার নতুন এজাহার দেওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে নলডাঙ্গা আমলি আদালতে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত আপস ম ম নলড ঙ গ গতক ল সদস য ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।