রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের হাতাহাতি, মারামারি ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়। আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে কয়েক ঘণ্টা ধরে এ ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে রোগীদের নিরাপত্তা নেই। এভাবে হাসপাতাল চালানো যায় না। তিনি সাত দিনের ছুটি নিয়েছেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের কয়েকজন গত মঙ্গলবার হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানালে পরিচালক কক্ষ ছেড়ে চলে যান। এর জের ধরে আজ সকালে নিজেদের নিরাপত্তা দাবি করে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে যান। ওই সময় প্রথমে হাসপাতালে আসা সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে এবং পরে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কর্মচারীদের হাতাহাতি হয়।

পরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) থেকেও জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা এসে যোগ দিলে মারামারি আরও বড় আকার ধারণ করে। দফায় দফায় বিকেল পর্যন্ত উত্তেজনা তৈরি হয়, বিক্ষোভ হয়। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিচার্জ করে।

আজ দুপুরে আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সামনে সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যদের দেখা যায়। প্রধান ফটক তালাবদ্ধ ছিল। বাইরে থেকে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারছিলেন না। অনেক রোগী ও স্বজন আতঙ্কে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে প্রধান ফটকের বাইরে অপেক্ষা করেন। অনেক রোগী ভর্তি হতে এসে ফেরত যান।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের অভিযোগ, তাঁরা উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। নামমাত্র চিকিৎসা পান। তাঁদের চোখের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। তাঁদের খাবারের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না। হাসপাতালের কর্মচারীরা তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

অপর দিকে হাসপাতালের কর্মীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি থাকা আহত ব্যক্তিরা অল্পতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিদেশে চিকিৎসার জন্য চাপ দেন, তাঁদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। সবশেষ গত মঙ্গলবার হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এর প্রতিবাদে আজ তাঁরা কর্মবিরতি পালন করছিলেন।

রোববার থেকেই জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। উন্নত চিকিৎসার দাবিতে ওই দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চারজন বিষপান করলে তাঁদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের চতুর্থ তলায় আটটি পুরুষ ওয়ার্ডে ৫০ জনের বেশি জুলাই আহত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন।

আজ বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে হাসপাতালে আসেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) কামাল আকবর। তিনি হাসপাতালে এসে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের পরিস্থিতি নিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা বসব। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করব। আমরা দেখব, এই মারামারিতে তৃতীয় পক্ষের কোনো ইন্ধন ছিল কি না।’

চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভেতরে বিক্ষোভ চলার সময় বাইরের সড়ক অবরোধ করে নিটোরে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিদের একটি অংশ। এ সময় শ্যামলী থেকে আগারগাঁও সড়কের এক পাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে কামাল আকবরের অনুরোধে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা।

পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম প্রথম আলোকে বলেন, আজ পরিচালকের কক্ষে আহত ব্যক্তিরা প্রবেশ করে নিজেদের মধ্যে তর্কে জড়িয়ে পড়েন, একপর্যায়ে হাতাহাতি করেন। তাঁদের একজন পেট্রলজাতীয় দাহ্য পদার্থ নিয়ে আসেন। তাঁরা আত্মহত্যা করতে চাইছিলেন, নাকি হাসপাতাল জ্বালিয়ে দিতে চাইছিলেন, তা পরিষ্কার নয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছিলেন। সে সময় সেবাপ্রার্থী ও আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

হাসপাতালের অস্ত্রোপচারকক্ষের সহযোগী মো.

সবুজ প্রথম আলোকে বলেন, আজ হামলায় তাঁর মাথা ফেটে গেছে। আরও ৮-১০ জন কর্মচারী আহত হয়েছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোহান মাহমুদ বলেন, সকাল থেকে সব ধরনের সেবা বন্ধ করে হাসপাতালের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছিলেন। জরুরি সেবাও দিচ্ছিলেন না। এটা নিয়ে সেবাপ্রার্থীরা প্রতিবাদ জানালে তাঁদের ওপর হামলা করেন কর্মচারীরা। এ সময় তাঁরা নিচে নেমে এলে তাঁদের ওপরও হামলা করা হয়। এতে তাঁদের ১০-১৫ জন আহত হন।

বগুড়ায় ৪ আগস্ট পুলিশের ছররা গুলিতে ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় মো. নাহার হাসানের। পরিচালকের কক্ষে বাদানুবাদের সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রথম আলোকে হাসান বলেন, চিকিৎসা না পেয়ে হতাশা থেকে আহত ব্যক্তিরা আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘সেদিন পরিচালককে অবরুদ্ধ করা হয়নি, তিনি আমাদের কথা না শুনে পাশের কক্ষ দিয়ে বেরিয়ে চলে যান।’

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি ও মারামারির পর এক পর্যায়ে হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা আজ বুধবার দুপুরে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক

এছাড়াও পড়ুন:

ইউরোপে পাইলটদের বেতন কোন দেশে কত

ইউরোপে সবচেয়ে বেশি বেতনের পেশার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পাইলট। ফ্রান্সে এটি পঞ্চম সর্বোচ্চ মাসিক বেতনের পেশা। জার্মানিতে জটিল ভূমিকার পাইলটেরা মাসে ২৮ হাজার ৯৬ ইউরো উপার্জন করেন। যুক্তরাজ্যে পূর্ণকালীন পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা মধ্যম আয়ে পঞ্চম স্থানে। ডেনমার্কে ২০২৩ সালে মাসিক বেতন ১৩ হাজার ৫২৩ ইউরো, দেশটির হিসাবে সপ্তম সর্বোচ্চ বেতন।

অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেতনের বৈচিত্র্য

পাইলটদের বেতন দেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। যুক্তরাজ্যে বেতন শুরু হয় বছরে ৫৪ হাজার ২৮৩ ইউরো (৪৭,০০০ পাউন্ড) থেকে, অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্য এটি প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৪৩ ইউরো (১ ইউরো সমান ১৪১ টাকা ৭৭ পয়সা, ২২ অক্টোবর ২০২৫ হিসাবে) পর্যন্ত হতে পারে, জানিয়েছে ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্যারিয়ার্স সার্ভিস।

ইআরআই অর্থনৈতিক গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, আট বছরের বেশি অভিজ্ঞতার পাইলটরা এক থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞ পাইলটের চেয়ে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি আয় করেন। অর্থাৎ অভিজ্ঞ পাইলটরা প্রায় তিন গুণ বেশি উপার্জন করেন।

আরও পড়ুনফ্রিল্যান্সিংয়ে নামার আগে এ পাঁচটি বিষয় ভাবুন১৯ অক্টোবর ২০২৫দেশভিত্তিক তথ্য

যুক্তরাজ্য

২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এএনএসের তথ্যানুসারে, পূর্ণকালীন ‘এয়ারক্রাফট পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার’-এর বার্ষিক আয় প্রায় ৯৫ হাজার ২৪০ ইউরো (৮০,৪১৪)। ইআরআইয়ের মতে, গড় বার্ষিক বেতন ৯০ হাজার ২৫৩ ইউরো (৭৮,১৪৬ পাউন্ড), লন্ডনের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৬২ ইউরো (১০০,০৬০ পাউন্ড)।

জার্মানি

জার্মানির ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসের তথ্যমতে, গড় মাসিক বেতন ১২ হাজার ৫৬৬ ইউরো (বার্ষিক ১,৫০,৭৯২ ইউরো)। মধ্যম আয় ১০ হাজার ২০৭ ইউরো (বার্ষিক ১,২২,৪৮৪ ইউরো), অভিজ্ঞ ও বিশেষায়িত পাইলটদের ক্ষেত্রে তা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭২ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। ইআরআইয়ের তথ্য অনুসারে, এক থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটের গড় বেতন ৭৩,৭৮৫ ইউরো, আট বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটদের জন্য ১ লাখ ৩২ হাজার ১১৭ ইউরো।

ফ্রান্স

INSEE জানায়, ‘সিভিল এভিয়েশন টেকনিক্যাল ও কমার্শিয়াল ফ্লাইট অফিসার’দের গড় মাসিক বেতন ৯ হাজার ৩০০ ইউরো (বার্ষিক ১,১১,৬০০ ইউরো)। ERI অনুসারে, অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্য গড় বেতন ১ লাখ ৯ হাজার ২৯২ ইউরো।

ছবি: এমিরেটসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ