শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন তিন বছর ধরে আয়নাঘরে ছিলেন, দাবি আইনজীবীর
Published: 28th, May 2025 GMT
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের আইনজীবী আদালতে দাবি করেছেন, ২০২২ সালের পর থেকে সুব্রত বাইন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন। ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে নারায়ণগঞ্জের ভূলতায় ফেলে চলে যান।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আজ বুধবার বিকেলে সুব্রত বাইনের রিমান্ড শুনানিতে এসব কথা বলেন তাঁর আইনজীবী মোহাম্মদ বাদল মিয়া।
আইনজীবী বাদল মিয়া আরও বলেন, সুব্রত বাইনকে গত বছরের ৫ আগস্ট ভূলতায় ফেলে যাওয়ার পর তাঁর মক্কেল ভয় পেয়ে যান। তিন বছর ধরে আয়নাঘরে নির্যাতিত হওয়ার তথ্য জানাতে সংবাদ সম্মেলন করার কথাও ভেবেছিলেন; কিন্তু জীবন বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত সুব্রত বাইন ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
সুব্রত বাইনকে ২০২২ সালে ভারত সরকার বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল বলে আদালতে দাবি করেন তাঁর এই আইনজীবী।
২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ জনকে শীর্ষ সন্ত্রাসী উল্লেখ করে একটি তালিকা প্রকাশ করে ছিল। সেই তালিকায় সুব্রত বাইনের নাম ছিল।
সুব্রত বাইনে ‘মিডিয়ার সৃষ্টি’ দাবি করে আদালতে আইনজীবী মোহাম্মদ বাদল মিয়া বলেন, তাঁর মক্কেল নিরপরাধ। তিনি অসুস্থ।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ গুরুতর ফৌজদারি অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে ৫টি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩টি গুলি এবং ১টি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত সুব্রত বাইনকে আট দিন এবং আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদসহ তিনজনকে ছয় দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। রিমান্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি হলেন মোল্লা মাসুদের সহযোগী শুটার আরাফাত ও শরীফ।
এর আগে সুব্রত বাইনসহ চারজনকে কড়া পুলিশ পাহারায় বিকেল সাড়ে তিনটার পর হাজতখানা থেকে আদালত কক্ষে তোলা হয়। কাঠগড়ায় তোলার পর সুব্রত বাইনসহ অন্যদের পরানো হেলমেট খুলে দেওয়া হয়। সাংবাদিকদের দেখার পর সুব্রত বাইন বলতে থাকেন, সংবাদকর্মীরা তাঁর বিরুদ্ধে মনগড়া কাহিনি লিখে যাচ্ছেন বহু বছর ধরে। তিনি এর কোনো প্রতিবাদ করেননি। বাস্তব কাহিনি সাংবাদিকেরা জানেন না বলেও দাবি করেন সুব্রত বাইন।
মোল্লা মাসুদেরও তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার বিকেলে ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
ফরিদপুরে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে আসাদ ওরফে বাচ্চু শেখ (৪৩) নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শামীমা পারভীন এ রায় দেন।
রায়ের সময় একমাত্র আসামি আসাদ শেখ কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর তাঁকে পুলিশি প্রহরায় জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই মাসে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ভাটিকান্দি গ্রামের মৃত মতিয়ার শেখের মেয়ে শান্তার সঙ্গে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার কানাই মাতুব্বরের বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ছাত্তার শেখের ছেলে আসাদের বিয়ে হয়। এ দম্পতি ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের দিরাজতুল্লা মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের ইদ্রিসের অ্যাগ্রো ফার্মে কাজ করতেন। ওই ফার্মে শান্তা ছিলেন শ্রমিক এবং আসাদ ছিলেন সুপারভাইজার। ফার্মের একটি আবাসিক কক্ষে থাকতেন তাঁরা। ২০২২ সালের ২৬ মে বেলা ১১টার দিকে ওই কক্ষ থেকে শান্তার মরদেহ উদ্ধার করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ। ঘটনার পর তিনি পলাতক ছিলেন।
ঘটনার দুই দিন পর ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর শান্তার মা জরিনা বেগম বাদী হয়ে শান্তার স্বামী আসাদকে আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলায় আসাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই আসাদকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
বিচারপ্রক্রিয়া শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হলো। এ বিষয়ে ফরিদপুর নারী ও শিশু নিযাতন দমন ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া বলেন, আদালতের এ রায় যুগান্তকারী। এর ফলে সমাজে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী নির্যাতন ও হত্যার প্রবণতা কমে আসবে। এ রায় দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক হবে।
নিহত শান্তা আসামি আসাদের তৃতীয় স্ত্রী। আসাদের বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রীকেও হত্যার অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে রাজবাড়ী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা বিচারাধীন।