মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার (এমএফএস) মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি। অর্থাৎ এই সেবার অপব্যবহার হচ্ছে।

টিআইবি জানিয়েছে, ২০২২ সালে কেবল এমএফএসের মাধ্যমে আনুমানিক ৭৮০ কোটি ডলার অর্থাৎ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। এই অর্থ পাচারের বড় অংশ হুন্ডি, ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন, অনলাইন জুয়া ও বেটিংয়ের মাধ্যমে হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় টিআইবি।

টিআইবির গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যক্তিগত এমএফএস হিসাবধারীদের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, এজেন্ট হিসাবধারীদের ১৭ শতাংশ ও মার্চেন্ট হিসাবধারীদের ১ দশমিক ৬ শতাংশ জালিয়াতি ও প্রতারণার শিকার হয়েছে। সেই সঙ্গে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন যথাক্রমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, ৮৭ শতাংশ ও ১ দশমিক ৪ শতাংশ হিসাবধারী।

জালিয়াতি বা প্রতারণার শিকার হয়ে ব্যক্তিগত হিসাবধারীদের সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮৩ হাজার টাকা; এজেন্টদের সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ও মার্চেন্ট হিসাবধারীদের সর্বনিম্ন ৫৩ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

টিআইবির গবেষণায় আরও দেখা গেছে, থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড/নগদ লিমিটেড–সংশ্লিষ্ট এমএফএস বিধিমালার ‘ই-মানি’ ও ‘ট্রাস্ট-কাম-সেটেলমেন্ট’সংক্রান্ত ধারা উপেক্ষা করে ট্রাস্ট ফান্ডে জমা করা অর্থের সীমা অতিক্রম করে অতিরিক্ত প্রায় ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি তৈরি করেছে। এই বিধি লঙ্ঘন গ্রাহকদের অর্থের ঝুঁকির মুখে ফেলেছে বলে মনে করে টিআইবি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ ছাড়া প্রভাব বিস্তার করে সুরক্ষা ভাতা ও উপবৃত্তির অর্থ বিতরণের সুবিধা গ্রহণ, আন্তলেনদেন প্ল্যাটফর্ম (বিনিময়)–সম্পর্কিত অনিয়ম-দুর্নীতি, এমএফএসপির মাধ্যমে অর্থ পাচার ও অবৈধ বৈদেশিক লেনদেনের মতো ঘটনাও গবেষণায় চিহ্নিত হয়েছে। ভাতা ও উপবৃত্তি বিতরণে আর্থিক জালিয়াতি, নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ই-মানি সৃষ্টির মাধ্যমে আত্মসাৎ করে প্রায় ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা নগদ লিমিটেডের বেনামি শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশে এমএফএস সেবার ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি বলে জানিয়েছে টিআইবি। গবেষণা করে তারা দেখিয়েছে, এমএফএস খাতের গ্রাহকদের পরিষেবা পেতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তুলনায় প্রায় ৭ থেকে ১৫ গুণ (৬ দশমিক ৯ থেকে ১৫ দশমিক ৯ গুণ) বেশি মাশুল দিতে হয়। তাদের হিসাব, ২০২৪ সালে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫ দশমিক ৫ লাখ কোটি টাকার ‘ক্যাশআউট’ বাবদ সর্বনিম্ন ৪ হাজার ৪১০ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে।

সেই তুলনায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এ বাবদ আয় অনেক কম। টিআইবি হিসাব করে দেখাচ্ছে, একই পরিমাণ নগদ উত্তোলনের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মাত্র ৬৩৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছে। এমনকি কিছু প্রতিবেশী দেশের মধ্যেও বাংলাদেশে এমএফএস পরিষেবা মাশুল সর্বোচ্চ।

এসব দেশে সর্বাধিক ব্যবহৃত মোবাইল আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারীদের পরিষেবা মাশুল তুলনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশে ২৫ হাজার টাকা নগদ উত্তোলনের জন্য ব্যয় হয় ৩৭২ দশমিক ৫০ টাকা থেকে ৪৬২ দশমিক ৫০ (বিকাশ) টাকা। পাকিস্তানে (ইজি পেসা) একই পরিমাণ নগদ উত্তোলনের জন্য ৩৫৫ দশমিক ৭০ টাকা এবং মিয়ানমারে (ওয়েভ পে) ২৩১ দশমিক ৩ টাকা ব্যয় হয়। ভারতে (ফোন পে) এ ধরনের পরিষেবার জন্য মাশুল আদায় করা হয় না।

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এমএফএস খাতে ভোক্তা স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। সেই সঙ্গে জালিয়াতির হার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। পূর্ণাঙ্গ আইনি কাঠামোর অভাব, বৈষম্যমূলক মডেল ও শর্তাবলি, পরিষেবার মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপের সুযোগের অভাব ও বিদ্যমান আইনি বিধিনিষেধ এমএফএস খাতে একচেটিয়া বাজার তৈরি করেছে। বিশেষ করে, বিকাশ ও নগদ বাজারের সিংহভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে (ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টধারীদের ৮৪ দশমিক ৪ শতাংশ বিকাশ ও ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ নগদ)।

ঘুষ, অর্থ পাচার, অনলাইন জুয়া ও ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনে এমএফএস ব্যবহার দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের যে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তার অন্যতম কারণ এমএফএস ব্যবহার করে অবৈধ হুন্ডি লেনদেন নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার কারণে নয়, এ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে এমএফএস ব্যবহার করে অর্থ পাচারে জড়িত অপশক্তির পতনের ফলে। এ দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই পরিবর্তনকে স্থায়িত্ব দিতে উদ্যোগী হবে বলে আমরা আশা করি। পাশাপাশি আগে যে সরাসরি ঘুষ নেওয়ার প্রবণতা ছিল, এখন তা এমএফএসের মাধ্যমে করার সুযোগ হয়েছে। তাই এমএফএস খাতকে আয়করের আওতায় আনতে হবে। ফলে বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আয়, কর ফাঁকি ও ঘুষ লেনদেন চিহ্নিত করা যাবে।’

গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলের আলোকে টিআইবির ১৩ দফা সুপারিশ করেছে। যেমন এমএফএস খাতের জন্য স্বতন্ত্র আইন প্রণয়ন করা, যেখানে সবার জন্য সমান প্রতিযোগিতা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিসহ সুশাসন নিশ্চিতকল্পে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের ভূমিকা সুনির্দিষ্ট করা, আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত রীতির আলোকে এমএফএস পরিচালন ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো নিশ্চিত করা; সেবামূল্য ও এজেন্ট পরিবেশকদের কমিশনের সীমা নির্ধারণ ও তদারকি নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এমএফএস খ ত এমএফএস ব অর থ প চ র ব যবহ র ট আইব র র জন য ল নদ ন আর থ ক পর ষ ব দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে শুরু হচ্ছে। আবেদন করা যাবে আগামী ১৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। এ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে ১৩ নভেম্বর থেকে। গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন যেসব শিক্ষার্থী

২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি বা সমমান এবং ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন ভর্তির জন্য। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি) ও ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এ-লেভেল, ও-লেভেল ও বিদেশি সনদধারীদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নিয়মে সরাসরি ডিন অফিসে বা ই–মেইলে আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
যেসব শিক্ষার্থী গত দুই শিক্ষাবর্ষে (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল বা স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেয়েছেন, তাঁরা এই শিক্ষাবর্ষে নতুন করে ভর্তি হতে পারবেন না। তবে পূর্ববর্তী ভর্তি বাতিল করে নতুন শিক্ষাবর্ষে আবেদন করতে পারবেন। একই সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী দ্বৈত ভর্তি হলে তাঁর উভয় ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে।

আবেদন ফি ৪০০ টাকা

ভর্তি ফি হিসেবে প্রাথমিক আবেদন ফি ৪০০ টাকা, যার মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ ২৫০ টাকা এবং কলেজের অংশ ১৫০ টাকা। ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন ফি ৭২০ টাকা জমা দিতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে অনলাইনে নিশ্চয়ন করবে। তবে নিশ্চয়ন ছাড়া কোনো আবেদনকারীকে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। আবেদন ফি ১৯ অক্টোবরের মধ্য জমা দিতে হবে।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ বিমানে ইন্টার্নশিপ, দৈনিক হাজিরায় সম্মানী ৬০০ টাকা৪ ঘণ্টা আগে

আবেদনকারীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিটি কলেজের জন্য আলাদাভাবে কোর্সভিত্তিক মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে। একই মেধা নম্বরপ্রাপ্ত হলে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ (৪০: ৬০ অনুপাতে) এবং প্রয়োজনে মোট নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। এরপরও সমতা থাকলে বয়স কম শিক্ষার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভর্তি কার্যক্রম ধাপে ধাপে প্রথম মেধাতালিকা, দ্বিতীয় মেধাতালিকা, কোটার মেধাতালিকা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। তবে এবারও তৃতীয় রিলিজ স্লিপে আবেদন করার সুযোগ থাকবে না।

বিস্তারিত দেখুন এখানে

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, সুযোগ পাবেন ৪৮ জেলার যুবরা১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর