খেলার মাঠের অভাবে শিশুরা মোবাইল, ইন্টারনেটে আসক্ত হচ্ছে: নূরজাহান বেগম
Published: 29th, May 2025 GMT
খেলার মাঠের অভাবে শিশুরা মোবাইল, ইন্টারনেট আর ফাস্ট ফুডে আসক্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। শিশুদের বেড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এখন মাঠ নেই, উঠান নেই।
শিশুরা তাই মোবাইল, ইন্টারনেট আর ফাস্ট ফুডে আসক্ত হচ্ছে। খেলাধুলা ও দূষণমুক্ত পরিবেশ ছাড়া এ অবস্থা থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। অনেক আন্দোলন দেখি, কিন্তু আজ পর্যন্ত খেলার মাঠ বা দূষণমুক্ত শহরের জন্য কেউ আন্দোলন করেনি।’
বুধবার রাজধানীর মহাখালীতে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) মিলনায়তনে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচএন) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘পুষ্টিহীনতা থাকলে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে বিকশিত হয় না। এতে মনোযোগ কমে যায়, কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। সারা দেশকে হাসপাতাল বানালেও লাভ নেই, যদি রোগ প্রতিরোধে মনোযোগ না দেওয়া হয়। পুষ্টিকর তরকারি ভুল প্রক্রিয়ায় রান্না করলে তার গুণ থাকে না। শুধু তাই নয়, খাদ্যের উৎস কৃষিতেও সচেতনতা জরুরি। সেখানে অতিমাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব ডা.
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, জীবের টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন সূত্র থেকে যে শক্তি সংগ্রহ করে থাকে, সেটিই পুষ্টি। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো ২৮ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতিতে ভুগছে। ৯ শতাংশ শিশু ওয়েস্টিং (উচ্চতার তুলনায় ওজন অস্বাভাবিক কম)। এ অবস্থায় রাষ্ট্রের পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রুটিন দায়িত্বে) মো. খোরশেদ আলম বলেন, সরকারের ২৩টি মন্ত্রণালয় পুষ্টি কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। অথচ শহর ও গ্রাম মিলিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। হাঁটার অভ্যাস কমে যাচ্ছে, শিশু-কিশোররা স্থূলতায় ভুগছে, এমনকি প্রবীণ শিক্ষিতদের মধ্যেও সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। তিনি বলেন, জীবনাচারে পরিবর্তন আনা ছাড়া কোনো পথ নেই। গ্রামগঞ্জেও এখন ফাস্ট ফুডের দোকান। তাই সারা বছরব্যাপী পুষ্টি ও সচেতনতার ক্যাম্পেইন চালাতে হবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাদারীপুরে মেলায় জুয়ার আসরে অভিযানে সংঘর্ষ, পুলিশের বন্দুক ছিনতাই
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়িতে গণেশ পাগলের কুম্ভমেলায় পুলিশের সঙ্গে জুয়াড়িদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক পুলিশ সদস্যকে মারধর করে ৩০টি গুলি ছিনিয়ে নিয়েছে জুয়াড়িরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে কদমবাড়ি গণেশ পাগল সেবাশ্রমের মেলা প্রাঙ্গণে ঘটনাটি ঘটে। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে গতকাল রাতে মেহেদি হাসান ও জুবায়ের হাসান নামের দুই কনস্টেবলকে মাদারীপুর পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাদাপোশাকে ওই দুই পুলিশ সদস্য মেলার মাঠে জুয়ার আসরে গেলে জুয়াড়িদের সঙ্গে তাঁদের তর্ক হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে এবং কনস্টেবল মেহেদির সঙ্গে থাকা শটগানের গুলিভর্তি ম্যাগাজিন ছিনিয়ে নেয় জুয়াড়িরা। ঘটনার পরপরই জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
মেলার আয়োজক কমিটি জানায়, বুধবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী গণেশ পাগলের কুম্ভমেলা শুরু হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও কিছু অসাধু চক্র মেলায় জুয়া ও মাদকের আসর বসিয়েছে। তবে এসব প্রতিরোধে প্রশাসনের দৃশ্যমান তৎপরতা নেই বলেও অভিযোগ তাদের।
সেবাশ্রম কমিটির সভাপতি মিরণ বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা যতবার জেনেছি, পুলিশের সহায়তায় জুয়ার আসর বন্ধ করেছি। তবে এবার তারা কিছুটা দূরে গিয়ে জুয়ার আসর বসিয়েছে।’ প্রকাশ্যে গাঁজা সেবনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেও কিছু করতে পারছি না। প্রশাসনও পারেনি। এখন আমরা কী করব?’গতকাল রাতে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হালকা বৃষ্টির কারণে মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কম। কালীমন্দিরসংলগ্ন এলাকায় প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন ও বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। সেখানে শতাধিক মাদকসেবীকে একত্রে বসে গাঁজা সেবন করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে সচেতন নাগরিকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় মেলার পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হচ্ছে।
মেলার মাঠে জুয়ার আসর পরিচালনাকারী মাসুদ নামের এক জুয়াড়ি বলেন, ‘জুয়ার খোটের বিষয় সব কমিটির (গণেশ পাগল সেবাশ্রম কমিটি) লোকজন জানেন, আমি কিছু জানি না। আমাকে দুই হাজার টাকা বেতনে কাজ করাত। পুলিশের সঙ্গে জুয়াড়িদের মারামারির পরে সবগুলো আসরই এখন বন্ধ।’
মেলায় আসা দর্শনার্থী সুজয় কর্মকার বলেন, ‘মেলার দ্বিতীয় দিনে বৃষ্টিতে ভিজেই এসেছি। এখানে সবকিছুর ব্যবস্থাপনা ভালো হলেও মেলায় মাদক সেবন বন্ধ করা অতিজরুরি। এতে চারপাশের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। যারা দূরদূরান্ত থেকে এসেছে, তাদের মধ্যেও ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হচ্ছে।’
প্রত্যাহার হওয়া পুলিশের কনস্টেবল মেহেদী হাসান মুঠোফোনে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে মাদারীপুর পুলিশ লাইনসে আছেন। তাঁর কাছ থেকে ৩০টি গুলি ছিনতাইয়ের বিষয়টা ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা দেখছেন।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনার পর দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। মেলায় মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।