পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই প্রধান ইমরান খান বর্তমানে কারাবন্দি। সরকারের কঠোর অবস্থান ও সেনাবাহিনীর দৃশ্যমান দূরত্ব বজায়ের কারণে তাঁর আইনি ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। এমন পরিস্থিতিতে আমেরিকা প্রবাসী পাকিস্তানি চিকিৎসক ও ব্যবসায়ীদের একটি দল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চায় বলে সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে জানিয়েছে একটি সূত্র। 

সূত্র জানায়, প্রভাবশালী প্রবাসীদের সমন্বয়ে গঠিত দলটি ইতোমধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তানে এসেছে। ইমরানও তাদের আসার বিষয়ে জানেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবাসীদের দলটির এ সফরের উদ্দেশ্য হলো, শান্ত কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ইমরান খানের জন্য কোনো আইনি বা রাজনৈতিক ছাড় আদায়ের চেষ্টা করা। পিটিআই নেতা ও খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন তাদের সঙ্গে আগেই যোগাযোগ করেছেন।

তবে পাকিস্তানে আসা এই দলটি এখনও ইসলামাবাদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। এর আগে এই প্রতিনিধিরা গোপনে ইমরান খান ও সরকারের কিছু উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাদের আবার পাকিস্তানে আসায় ইমরানের জন্য নতুন কোনো সমঝোতার পথ তৈরি হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। এ বিষয়ে এখনও কোনো অগ্রগতির কথা জানা যায়নি। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলেছে, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় যাওয়ার বিষয়টিও নাকচ করেছে তারা।

পিটিআইর অনেক নেতাই বলছেন, দলের আগ্রাসী অবস্থানের কারণে আলোচনার পথ আটকে যাচ্ছে। এমনকি কারাবন্দি অবস্থায়ও দলের অনেকেই কঠোর ভাষা ব্যবহার করছেন। পরিবর্তিত অবস্থায় দলের অনেকেই চাইছেন, চলমান কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে পিটিআই যাতে কিছুটা নমনীয় পথে হাঁটে। তবে দলকে আবারও নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে, যা খুব একটা ভালো ফল বয়ে আনবে না বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ট আই ইমর ন খ ন ইমর ন খ ন র জন ত ক ন র জন প ট আই অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ