ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে জনগণকে কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না: জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
Published: 29th, May 2025 GMT
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেছেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার দোসর ছিল, তাদের বিচারের দাবি জনগণের ভিতরে জাগ্রত থাকবে। ঠিক একইভাবে জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবি জাগ্রত আছে। ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে জনগণকে কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না।
বুধবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন ফয়জুল হাকিম। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস দেওয়ার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, যেসব কারণ উল্লেখ করে উচ্চ আদালত এই রায় দিয়েছেন, তাতে অভিযুক্ত ব্যক্তি মামলা থেকে খালাস পেতে পারেন না। তাই এই রায়ে ন্যায়বিচারও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সম্পাদক বলেন, বরং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ অ্যাফিলেট ডিভিশনের দেওয়া আগের রায় বাতিল করে মামলাটি পুনরায় শুরু করা যথাযথ ছিল। এর মধ্য দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারের পথ উন্মুক্ত হতো।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালে জুলাই- আগস্টে শেখ হাসিনা সরকার যে গণহত্যা চালিয়েছিল এবং বিগত ১৬ বছরে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল, তার বিরুদ্ধে বর্তমানে যে বিচার প্রক্রিয়া জারি আছে, তার পরিনতি নিয়ে জনমনে অনাস্থা তৈরিতে এই রায় ভূমিকা রাখবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)