বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) যে কোনো দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আমিনুল ইসলাম। জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক ও বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আজ সকালে এই প্রতিবেদককে বলেছেন, নির্দিষ্টভাবে বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব নিতে এখনো তাঁকে কোনো অনুরোধ করা হয়নি। তবে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা তাঁকে বলেছেন, সরকার বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাঁকে কাজে লাগাতে চায়।

গতকাল রাতে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে তাঁর বাসভবনে সাক্ষাৎ করেছেন বর্তমান বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ। সাক্ষাতে ফারুককে বার্তা দেওয়া হয়, সরকার বিসিবির শীর্ষ পদে পরিবর্তন আনতে চায়। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে ফারুক দুই-এক দিন সময় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ফারুক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে অবশ্য সরকারের জন্য বিসিবি সভাপতি পদে পরিবর্তন আনাটা সহজ হবে না। কারণ ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপের ব্যাপারে আইসিসির কঠোর বিধিনিষেধ আছে।

বিসিবি সভাপতির ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের পর আজ প্রথম আলোকে দেওয়া আমিনুলের বক্তব্যে বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের ভবিষ্যৎটা মোটামুটি স্পষ্ট। যে কোনো প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য আমিনুলই হতে যাচ্ছেন বিসিবির সভাপতি।
প্রথম আলোকে আমিনুল বলেন, ‘আমাকে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নিতে এখনো বলা হয়নি। ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে বোর্ড সভাপতির সঙ্গে গতকালের সভায়ও আমি ছিলাম না। তবে ১০-১৫ দিন আগে আমার সঙ্গে উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তারা আমাকে কোনো একটা ভূমিকায় কিছু সময়ের জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটে চাচ্ছেন। আমিও তাতে রাজি হয়েছি।’

মাঝে একটা গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল, আমিনুলকে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যদিও তিনি বলেছেন, ‘এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন একটি কথা। প্রধান নির্বাহী হওয়ার ব্যাপারে কোনো রকম আলোচনাই হয়নি, টাকা পয়সা নিয়ে আলোচনা তো দূরের কথা।’

সেটি না হলে আমিনুলের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের জন্য বোর্ড সভাপতির পদটাই খোলা থাকে। জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে,  এনএসসির প্রতিনিধি হিসেবে প্রথমে তাঁকে বোর্ড পরিচালক করা হবে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী পরিচালকদের ভোটে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হবেন। তবে সেটা আগামী অক্টোবরের বিসিবি নির্বাচন পর্যন্ত। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আমিনুলেরও দায়িত্ব শেষ হবে। তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না।

আমিনুলও বলেছেন, বিসিবির যে দায়িত্বই নেন না কেন, সেটা হয়তো খুব বেশি দিনের জন্য তিনি নিতে পারবেন না। আমিনুল বর্তমানে আইসিসির এশিয়া অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া আইসিসির হাইপারফরম্যান্স কার্যক্রম এবং ট্রেনিং এডুকেশনেরও প্রধান তিনি। ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে আগামী মাসে তাঁর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আমিনুল জানিয়েছেন, আইসিসির সঙ্গে তাঁর এক বছরের জন্য চুক্তি বাড়ানোর আলোচনা চূড়ান্ত হয়ে গেছে।

কিন্তু আইসিসিতে থেকে কীভাবে বিসিবিতে দায়িত্ব নেবেন তিনি? এ ব্যাপারে আমিনুল বলেছেন, ‘আইসিসিকে আমি জানিয়েছি বিসিবি আমাকে একটা সময়ের জন্য চাচ্ছে। তারা খুশি মনে তাতে রাজি হয়েছে এবং বলেছে, আমার জন্য আইসিসির দরজা খোলা থাকবে। বিসিবিতে দায়িত্ব পালন শেষ করে আমি আবার চাইলে আইসিসিতে যোগ দিতে পারব। সে জন্য হয়তো একটা পদও তারা খালি রাখবে।’

আমিনুল বলেন, ‘আমার বিসিবিতে লম্বা সময় ধরে থাকার ইচ্ছা নেই। আমাকে হয়তো আবেগ প্রবণ ভাবতে পারেন, তবে একটা দেশের যখন সৈনিক দরকার হয়, ওই সৈনিক কিন্তু তার পারিশ্রমিক বা নিজের স্বার্থ দেখে না। কাজটাই তার কাছে আগে। আমার চিন্তাও সেরকম। বিসিবির যে কোনো দায়িত্ব নিতে আমি প্রস্তুত। দেখা যাক কি হয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট আইস স র প রস ত আম ন ল বল ছ ন র জন য সরক র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ