আমাকে স্পর্শ করার সাহস কীভাবে পেলেন, যৌন হেনস্তা নিয়ে অভিনেত্রী
Published: 29th, May 2025 GMT
বলিউড অভিনেত্রী অম্রুতা সুভাষ। থিয়েটার থেকে টিভি, তারপর রুপালি পর্দায় অভিষেক। তবে ‘সেক্রেড গেম’, ‘গল্লি বয়’ দিয়ে খ্যাতি কুড়ান এই অভিনেত্রী।
এই অঙ্গনে কাজ করতে গিয়ে যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করলেন অম্রুতা। কয়েক দিন আগে জুম টিভি-কে সাক্ষাৎকার দেন অম্রুতা সুভাষ। এ আলাপচারিতায় রুপালি জগতের অন্ধকার দিক সামনে আসে।
অম্রুতা সুভাষ বলেন, “আমি তখন নাটক করতাম। একবার এক নাটকের প্রযোজক আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলাম, তাই হয়তো আমার পরনের টপটা একটু উপরে উঠেছিল। বুঝলাম কোমরের কাছে একটা হাত এগিয়ে এসেছে। আমি তখনই ঘুরে দাঁড়ালাম। যার কথা বলছি, সে অনেক বড় প্রযোজক ছিলেন। আমি ঘুরে তাকিয়ে বললাম, আপনি এইমাত্র এটা কী করলেন? এটা কী? প্রযোজক বলেন, আমার টপটা উঠেছিল তাই। আমি তৎক্ষণাৎ বললাম, এটা আপনার একেবারেই করা উচিত হয়নি। আমাকে স্পর্শ করার সাহস কীভাবে পেলেন? এ ঘটনার পর উপস্থিত সকলে থমকে যান।”
আরো পড়ুন:
প্রভাসের নায়িকা হতে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিলেন তৃপ্তি
আমাকে ‘আন্ডা সেলে’ রাখা হয়েছিল: সুরাজ পাঞ্চোলি
অভিযুক্ত প্রযোজক দীর্ঘদিন ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন, পরিচিত মুখ এবং বয়স্ক। প্রতিবাদের ফলাফল কী হবে তারপরও ভাবেননি অম্রুতা। সবাই ভেবেছিলেন অম্রুতা কাজ হারাবেন। এ বিষয়ে অম্রুতা বলেন, “আমি তাদের বললাম, সব জাহান্নামে যাক। নিজে যদি নিজের জন্য প্রতিবাদ না করি, তাহলে আর কে করবে?”
সিনেমার একজন বর্ষীয়ান পরিচালক অম্রুতাকে হেনস্তা করেছিলেন। প্রায় রাতে ফোন করে তাকে মদ্যপানের জন্য ডাকতেন। পরিচালক ফোন করে বলতেন, ‘তুমি কেন রাতে মদ খেতে আসো না?’ একবার গভীর রাতে মদ্যপানের জন্য অম্রুতাকে ডেকে পাঠায়। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেন অম্রুতা।
ঘটনার বর্ণনা করে অম্রুতা বলেন, “আমি গেলাম। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। আমি জানতাম মানুষজন দেখছে। সে হতবাক হয়ে গেল। আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘স্যার, আপনি আমার বাবার বয়সি। আপনি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছেন কেন? আপনার সমস্যা কী?’ শান্তভাবে কিন্তু সরাসরি কথাগুলো বললাম। এরপর আমি তার চোখে-মুখে বিব্রতভাব দেখতে পেলাম। আমি তাকে বললাম, ‘আপনি এটা কেন করছেন? এটা আর করবেন না। আপনি আমার বাবার মতো।’ এরপর পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যায়।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এবার হালদায় মিলেছে ১৪ হাজার কেজির বেশি ডিম
হালদা নদীতে দুই দফায় নমুনা ডিম ছাড়ার পর এবার পুরোদমে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। ভারী বৃষ্টিপাত আর আর পাহাড়ি ঢল নামায় বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে ডিম ছাড়তে শুরু করে মা কার্প জাতীয় মাছগুলো। আর শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রাথমিক হিসেবে ১৪ হাজার কেজির বেশি ডিম সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন হালদা বিশেষজ্ঞ, মৎস্য অফিস ও ডিম সংগ্রহকারীরা। প্রায় তিনশ’ নৌকা নিয়ে মাছ ডিম সংগ্রহ করেন হালদাপড়ের মানুষ। এক থেকে পাঁচ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেন তারা।
হালদা বিশেষজ্ঞ, মৎস্য অফিস ও ডিম সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তর চট্টগ্রামে প্রবাহমান হালদা নদীর মদুনাঘাট ছায়ার চর থেকে রামদাস মুন্সির হাট, আজিমের ঘাট, মাচুয়া গোনা, কাগতিয়া, অইডিএফ হ্যাচারি, সিপাহী ঘাট, নোয়াহাট, কেরামতলীর বাঁক এবং অঙ্কুরিঘোনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন নদীরপাড়ে স্থাপিত সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারি এবং ট্রেডিশনাল মাটির কুয়াগুলোতে ডিম পরিস্ফুটনে ব্যস্ত সময় পার করছেন পেশাদার ডিম সংগ্রহকারীরা। শুরু থেকেই ডিম সংগ্রহের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নৌ পুলিশ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে জোয়ারের সময় হালদা নদীর আমতুয়া অংশে কার্পজাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়ে। পরবর্তীতে ডিমগুলো হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যারা প্রথম দিকে ডিম সংগ্রহ করতে নদীতে ছিলেন, তারা অধিক পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন। ডিম সংগ্রহকারীরা গড়ে আড়াই বালতি করে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন।’
বৃহস্পতিবার রাত রাত দুইটার দিকে হালদা নদীতে পুরোদমে ডিম ছাড়তে শুরু করে মা মাছ। শুক্রবার বিকেল পষর্ন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করে নদীর দুইপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। রাতে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকলে হালদা নদীর আমতুয়া অংশে প্রথমে কার্পজাতীয় মা মাছ পূরোদমে ডিম ছাড়া শুরু করে। পরবর্তীতে নদীর বিভিন্ন অংশে ডিম ছাড়া শুরু করে মা মাছ। এই তথ্যটি জানিয়েছেন রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকতা আলমগীর হোসেন।
জানা যায়, হালদার রাউজান উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে দিনভর নদীর দুইপাড়ে ডিম সংগ্রহকারীদের ডিম সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা থেকে তিন শতাধিক নৌকা নিয়ে সাত শতাধিক ডিম আহরণকারী ডিম সংগ্রহ করেছেন। ডিম আহরণকারীরা এক থেকে পাঁচ বালতি পর্যন্ত ডিম পেয়েছেন।
হালদা নদীর সিপাহীঘাট কুম এলাকার প্রবীণ ডিম আহরণকারী মো. ইদ্রিসসমকালকে বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নদীতে অবস্থান করছি। রাত দুইটার দিকে ডিম ছাড়ে মা মাছ। আমি দুই থেকে বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি। এর আগে ২০০ গ্রাম নমুনা ডিম সংগ্রহ করেছি।’
ডিম সংগ্রহকারী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা নদীতে ১০টি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করি। প্রতিটি নৌকায় গড়ে দুই থেকে আড়াই বালতি করে ডিম পেয়েছি। এখানে রুই কাতলা মৃগেল ও কালিবাউস মাছের ডিম রয়েছে।’
হালদা নদীর ডিম আহরণকারী সমিতির সভাপতি মো. শফিউল আলম জানান, ছয়টি নৌকা ও দুটি বাঁশের ভেলা করে ১৩ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন তিনি।
রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো.আলমগীর হোসেন বলেন, হালদা নদীতে প্রথমে দুইদফায় নমুনা ডিম ছাড়েন মা মাছ। বৃহস্পতিবার রাতে নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়েছে। রাউজান ও হাটহাজারী অংশে ৭০০ ডিম সংগ্রহকারী তিন শতাধিক নৌকা নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেন।
জানা যায়, বংশ পরম্পরায় ডিম সংগ্রহ করেন হালদাপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। অভিজ্ঞ এই লোকজন রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করে সরকারি হ্যাচারি, মাটি ও সিমেন্টের কুয়ায় এসব ডিম থেকে রেনু ফোটাবেন। এ কাজে সময় লাগবে চার দিন। প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া এসব রেণুর পোনা দ্রুত বড় হয় বলে সারাদেশের মাছ চাষিদের প্রথম পছন্দ। তাই দামও থাকে বেশি। তারপরও এসব রেণু সংগ্রহের জন্য মুখিয়ে থাকেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
হাটহাজারীর গড়দুয়ারার ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘প্রতিকূল পরিবেশের কারণে কয়েক বছর ধরে আশানুরূপ ডিম পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে আমাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছিল। তবে এবার ভালো ডিম সংগ্রহ হয়েছে। চার দন পর রেণু ফুটবে। নিবিড় পরিচর্যা করতে হবে এখন। তারপর নির্দিষ্ট সময় শেষে পোনা বিক্রি শুরু করা হবে। ফলে দীর্ঘদিন পর লাভের মুখ দেখবেন ডিম সংগ্রহকারি ও হ্যাচারি মালিকর।’