বিলুপ্তির পথে পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘর
Published: 29th, May 2025 GMT
পাহাড়ি অঞ্চলের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য মাচাং ঘর এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। একসময় পার্বত্য বান্দরবান জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসবাসের জন্য মূল অবকাঠামো ছিল মাচাং ঘর। তবে, কালের বিবর্তনে বনজসম্পদের সঙ্কট এবং আধুনিক নির্মাণশৈলীর বসতঘরের সহজলভ্যতার কারণে ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘর এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।
মাচাং ঘর নির্মাণে মূল উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হতো বাঁশ, কাঠ ও ছন। পাহাড়ি এলাকার আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এ ধরনের ঘর মাটি থেকে ৫-৬ ফুট ওপরে নির্মণ করা হতো। এতে বন্যপ্রাণীর আক্রমণ ও বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাওয়া যেত। ঘরের খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হতো গাছের মোটা গুঁড়ি বা বড় বাঁশ। বাঁশের তৈরি বেত দিয়ে সন্ধি বা জোড়গুলোকে এমনভাবে বাঁধা হতো যে, ঘরটি হতো মজবুত ও স্থিতিশীল।
বর্তমানে বান্দরবান জেলা শহর কিংবা উপজেলা শহরগুলোতে এ ঘরের দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কেবল দুর্গম পার্বত্য এলাকায় এখনো কিছু মাচাং ঘর টিকে আছে। তবে, সেগুলোর সংখ্যাও দিন দিন কমছে।
মাচাং ঘরে বসবাসকারীদের মতে, এখন একটি মাচাং ঘর নির্মাণে খরচ হয় ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত। যেখানে একসময় সহজলভ্যভাবে পাওয়া যেত বাঁশ, ছন ও কাঠ, এখন সেগুলোর দাম আকাশছোঁয়া। বর্তমানে একটি বাঁশের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা, গাছের খুঁটির দাম ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা, এক বান্ডিল ছনের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এই উচ্চ ব্যয়ের কারণে অনেকেই আর মাচাং ঘর নির্মাণে আগ্রহ দেখান না।
পাহাড়ি প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, মাচাং ঘর শুধু আবাসন নয়, এটি পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ইতিহাস ও পরিবেশনির্ভর জীবনযাত্রার প্রতীক। এখনই যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এই অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন হারিয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আর কখনোই দেখতে পাবে না তাদের পূর্বপুরুষদের জীবনধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা প্রুমং মার্মা বলেছেন, “আগের মতো এখন আর কেউ মাচাং ঘর বানায় না। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশেরও কম পরিবারের এখন মাচাং ঘর আছে। আমাদের সংস্কৃতি আগের মতো নেই।”
রোয়াংছড়ির অংগ্যমা মার্মা এবং নোয়াপতংয়ের ধর্মজয় ত্রিপুরা বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বাঁশ, কাঠ পাওয়ার সুযোগ অনেক কমে গেছে। আগে যেটা হতো পাহাড়েই, এখন সেটা কিনে আনতে হয়। ফলে, খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনই টেকসই না হওয়ায় লোকজন আগ্রহ হারাচ্ছেন।
তারাছা মৌজার হেডম্যান এবং হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক উনিং হ্লা মার্মা বলেন, “সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বন সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সহজলভ্য করতে হবে। এতে একদিকে পরিবেশ রক্ষা হবে, অন্যদিকে ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘরের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।”
এ বিষয়ে বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক নুক্রাচিং মার্মা বলেন, “এটা শুধু কোনো ব্যক্তির দায়িত্ব নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জনগণের, সব কমিটির, সবার সম্মিলিত উদ্যোগে আমাদের বন রক্ষা করতে হবে। বাঁশ, কাঠ সহজলভ্য করতে পারলে হয়ত আমরা মাচাং ঘরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারব।”
ঢাকা/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ন দরব ন সহজলভ য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সহজলভ্য স্যানিটারি পণ্য উদ্ভাবন, ৫ প্রতিযোগী পুরস্কৃত
প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য নিরাপদ ও সহজলভ্য স্যানিটারি পণ্য উদ্ভাবনের জন্য পাঁচজনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস ২০২৫ উপলক্ষে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
‘আসুন, সবাই একসাথে গড়ি মাসিক–বান্ধব পৃথিবী’ প্রতিপাদ্যে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, কিম্বারলি ক্লার্ক ও এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম।
প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন নয়জন। তাঁদের সবাইকে অনুষ্ঠানে সম্মাননা ক্রেস্ট ও উপহার দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বি-স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী নারীর বিষয়টা আসলে অনেকেই বুঝতে পারেন না। মাসিকের সময় প্রতিবন্ধিতার ধরনের ভিত্তিতে তাঁদের চ্যালেঞ্জগুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। তাঁদের জন্য মাসিকের এসব পণ্যের ঘাটতি রয়েছে। সেই জায়গা থেকেই বি-স্ক্যান এই প্রতিযোগিতার আয়োজনের চিন্তা করে।
অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বক্তব্যে বি-স্ক্যানের পরিচালক ইফতেখার মাহমুদ বলেন, প্রতিবন্ধী নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবনী চিন্তা ও বাস্তবভিত্তিক সমাধানই এই প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য। ওয়াটারএইডের সহায়তায় ২০১৬ সালে বি-স্ক্যান প্রথমবারের মতো প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য এমএইচএম ডে উদ্যাপন শুরু করে। ১০ বছর পর তাদের সহায়তাতেই এই প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়েছে। এটি একটি বড় অগ্রগতি।
এ ছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আইসিডিডিআরবির এনভায়রনমেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ওয়াশের লিড ডা. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত মাসিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করার অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। সে জন্য দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং কর্মসূচি। প্রান্তিক নারীদের জন্য দরকার অভিগম্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পৌঁছে দেওয়া। এ জন্য এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের নিয়ে কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পরিচালক (প্রোগ্রামস অ্যান্ড পলিসি অ্যাডভোকেসি) পার্থ হেফাজ সেখ। তিনি প্রতিযোগিতার উদ্ভাবিত পণ্যের পেটেন্ট নেওয়ার অনুরোধ করেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (এনসিআরএইচ) ডা. সোহেল হাবীব, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালক (যুগ্ম সচিব) নাঈমা হোসেন বক্তব্য দেন।
প্রতিযোগিতার সার্বিক পরিকল্পনা ও কার্যক্রম তুলে ধরেন বি-স্ক্যানের সহযোগী সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান। আর বাংলা ইশারা ভাষায় দোভাষীর দায়িত্ব পালন করেন আরিফুল ইসলাম।