পাহাড়ি অঞ্চলের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য মাচাং ঘর এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। একসময় পার্বত্য বান্দরবান জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসবাসের জন্য মূল অবকাঠামো ছিল মাচাং ঘর। তবে, কালের বিবর্তনে বনজসম্পদের সঙ্কট এবং আধুনিক নির্মাণশৈলীর বসতঘরের সহজলভ্যতার কারণে ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘর এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

মাচাং ঘর নির্মাণে মূল উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হতো বাঁশ, কাঠ ও ছন। পাহাড়ি এলাকার আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এ ধরনের ঘর মাটি থেকে ৫-৬ ফুট ওপরে নির্মণ করা হতো। এতে বন্যপ্রাণীর আক্রমণ ও বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাওয়া যেত। ঘরের খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হতো গাছের মোটা গুঁড়ি বা বড় বাঁশ। বাঁশের তৈরি বেত দিয়ে সন্ধি বা জোড়গুলোকে এমনভাবে বাঁধা হতো যে, ঘরটি হতো মজবুত ও স্থিতিশীল।

বর্তমানে বান্দরবান জেলা শহর কিংবা উপজেলা শহরগুলোতে এ ঘরের দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কেবল দুর্গম পার্বত্য এলাকায় এখনো কিছু মাচাং ঘর টিকে আছে। তবে, সেগুলোর সংখ্যাও দিন দিন কমছে।

মাচাং ঘরে বসবাসকারীদের মতে, এখন একটি মাচাং ঘর নির্মাণে খরচ হয় ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত। যেখানে একসময় সহজলভ্যভাবে পাওয়া যেত বাঁশ, ছন ও কাঠ, এখন সেগুলোর দাম আকাশছোঁয়া। বর্তমানে একটি বাঁশের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা, গাছের খুঁটির দাম ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা, এক বান্ডিল ছনের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এই উচ্চ ব্যয়ের কারণে অনেকেই আর মাচাং ঘর নির্মাণে আগ্রহ দেখান না।

পাহাড়ি প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, মাচাং ঘর শুধু আবাসন নয়, এটি পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ইতিহাস ও পরিবেশনির্ভর জীবনযাত্রার প্রতীক। এখনই যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এই অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন হারিয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আর কখনোই দেখতে পাবে না তাদের পূর্বপুরুষদের জীবনধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা প্রুমং মার্মা বলেছেন, “আগের মতো এখন আর কেউ মাচাং ঘর বানায় না। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশেরও কম পরিবারের এখন মাচাং ঘর আছে। আমাদের সংস্কৃতি আগের মতো নেই।”

রোয়াংছড়ির অংগ্যমা মার্মা এবং নোয়াপতংয়ের ধর্মজয় ত্রিপুরা বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বাঁশ, কাঠ পাওয়ার সুযোগ অনেক কমে গেছে। আগে যেটা হতো পাহাড়েই, এখন সেটা কিনে আনতে হয়। ফলে, খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনই টেকসই না হওয়ায় লোকজন আগ্রহ হারাচ্ছেন।

তারাছা মৌজার হেডম্যান এবং হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক উনিং হ্লা মার্মা বলেন, “সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বন সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সহজলভ্য করতে হবে। এতে একদিকে পরিবেশ রক্ষা হবে, অন্যদিকে ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘরের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।”

এ বিষয়ে বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক নুক্রাচিং মার্মা বলেন, “এটা শুধু কোনো ব্যক্তির দায়িত্ব নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জনগণের, সব কমিটির, সবার সম্মিলিত উদ্যোগে আমাদের বন রক্ষা করতে হবে। বাঁশ, কাঠ সহজলভ্য করতে পারলে হয়ত আমরা মাচাং ঘরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারব।”

ঢাকা/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ন দরব ন সহজলভ য

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া

ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক সব সময়ই দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল অনুযায়ী এগিয়েছে।

অতীতেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে লম্বা বিরতি দেখা গেছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৮—টানা ২৪ বছর পাকিস্তান সফরে যায়নি ভারত। আবার ১৯৬০ সালের পর পাকিস্তানও প্রথমবারের মতো ভারতে খেলতে যায় ১৯৭৯ সালে।

এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান নিয়মিত মুখোমুখি হয়েছে। এই সময়ে ভারত তিনবার পাকিস্তান সফরে গিয়ে খেলে ১২ টেস্ট, পাকিস্তানও ভারতে গিয়ে খেলে ৮ টেস্ট।

দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান তিন টেস্ট খেলতে ভারতে যায়। এর মধ্যে একটি ছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রথম এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ভারত ফিরতি টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যায় ২০০৪ সালে, যা ছিল ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের অভিষেকের পর প্রথমবার।

২০০৪ সালের পাকিস্তান সফরে কড়া নিরাপত্তায় ব্যাটিংয়ে নামেন শচীন টেন্ডুলকার

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • ইতিহাসের দ্রুততম মানবের এখন সিঁড়ি ভাঙতে দম ফুরিয়ে আসে
  • ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া