বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
Published: 17th, September 2025 GMT
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বায়ার্নের টানা ১৪ ম্যাচ জয়ের অবিশ্বাস্য রেকর্ড
জার্মান ফুটবলের পরাশক্তি বায়ার্ন মিউনিখ আবারও ছুঁয়ে দেখল ইতিহাস। চলতি ডিএফবি পোকাল তথা জার্মান কাপের ২০২৫-২৬ আসরে আরেকটি দারুণ জয় তুলে নিয়ে তারা টানা ১৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার গৌরব অর্জন করেছে। এর মাধ্যমে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের ইতিহাসে নতুন এক রেকর্ড গড়ে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করল তারা।
ভিনসেন্ট কোম্পানির অধীনে এই মৌসুমে বায়ার্ন যেন অন্য গ্রহের এক দল। গ্রীষ্মের ট্রান্সফার উইন্ডোতে লুইস দিয়াজ ও নিকোলাস জ্যাকসনের মতো তারকাদের দলে টেনে শক্তি বাড়ায় জার্মান জায়ান্টরা। এরপর থেকেই তারা খেলছে দুরন্ত ছন্দে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ১৪ ম্যাচে জয়!
আরো পড়ুন:
রোহিতের সেঞ্চুরির ‘হাফ-সেঞ্চুরি’, ঢুকলেন এলিট ক্লাবে
রশিদ-জাম্পাকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের রিশাদ
এর আগে বায়ার্ন মিউনিখ ও এসি মিলান যৌথভাবে ১৩ ম্যাচ টানা জয়ের রেকর্ডের মালিক ছিল। তবে জার্মান কাপে বুধবার দিবাগত রাতে কোলনের বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয়ে সেই রেকর্ড ভেঙে এককভাবে শীর্ষে উঠে গেছে বাভারিয়ানরা।
সে ম্যাচে লুইস দিয়াজ শুরুতেই গোল করে এগিয়ে দেন দলকে। এরপর হ্যারি কেন ৩৮ ও ৬৪ মিনিটে জোড়া গোল করে ব্যবধান বাড়ান। আর ৭২ মিনিটে মাইকেল ওলিসে গোল করে বায়ার্নের উৎসবে যোগ দেন।
ম্যাচ শেষে বায়ার্নের ডিফেন্ডার জোনাথান তা বলেন, “আমরা সব সময় ক্ষুধার্ত, জয়ের ক্ষুধায়। কখনও সন্তুষ্ট থাকি না। আজকের জয় উপভোগ করছি। তবে কাল থেকেই পরের ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু হবে।”
আগামী ১ নভেম্বর বুন্দেসলিগায় বায়ার লেভারকুসেনের মুখোমুখি হবে বায়ার্ন মিউনিখ। এরপর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগে ৫ নভেম্বর তাদের অপেক্ষা করছে আরও বড় চ্যালেঞ্জ, প্যারিসে পিএসজির বিপক্ষে লড়াই। বর্তমানে দুই দলই চ্যাম্পিয়নস লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে। ফলে ম্যাচটি হয়ে উঠবে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের এক মহারণ।
ঢাকা/আমিনুল