সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল তো বোর্ডের কাউন্সিলর নন। তাহলে তিনি কীভাবে বোর্ড সভাপতি হবেন? ফারুক আহমেদের পদত্যাগের গুঞ্জন এবং বুলবুলকে দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা যখন আলোচনায়, তখনই সামনে আসে বুলবুলের কাউন্সিলর না হওয়ার বিষয়টি।

বিসিবির গঠনতন্ত্র পর্যালোচনায় জানা গেছে, কাউন্সিলর না হয়ে বোর্ডের পরিচালক এবং পরে সভাপতি হওয়ার সুযোগ নেই। বুলবুলকে বোর্ডে আসতে হলে প্রথমে কাউন্সিলর হতে হবে। এরপর পরিচালক। সবশেষে হতে হবে বোর্ড সভাপতি। প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ হলেও সরকারের হস্তক্ষেপে তা সহজ হতে পারে।

তবে সরকার যদি বোর্ড সভাপতি নির্বাচন বা পদত্যাগে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে, তাহলে দেশের ক্রিকেটের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। অতীতে এমন পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল।

আরো পড়ুন:

ফারুকের বিরুদ্ধে যেসব অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি

ফারুকের বিরুদ্ধে ৮ পরিচালকের অনাস্থা, থাকছে না পদ

নিয়ম মেনেই বুলবুল বোর্ড সভাপতি হতে পারেন। তবে প্রক্রিয়াটি একটু জটিল, কারণ তিনি বর্তমানে কাউন্সিলর নন। কোনো নির্বাচিত কাউন্সিলর পদত্যাগ করলে তার জায়গায় আসতে পারবেন বুলবুল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে দুজনকে পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দিতে পারে।

সরকার পরিবর্তনের পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ক্যাটাগরির পরিচালক জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববির পরিবর্তে নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও ফারুক আহমেদকে মনোনীত করে।
২০২১ সালে নাজমুল আবেদীন ফাহিম বিকেএসপির কাউন্সিলর হয়ে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে নির্বাচন করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বিকেএসপির চাকরি না করায় তার কাউন্সিলরশিপ বাতিল হয়ে যায়।

তখন ফাহিমেরও কোনো কাউন্সিলরশিপ ছিল না। বিসিবির সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুস পরিচালকের পাশাপাশি এনএসসির কাউন্সিলর হিসেবেও পদত্যাগ করেন। এরপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রথমে ফাহিমকে কাউন্সিলর এবং পরে পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেয়। অন্যদিকে, ফারুক ছিলেন ‘সাবেক অধিনায়ক’ ক্যাটাগরির কাউন্সিলর। যদিও ববি পদত্যাগ করেননি, তবুও এনএসসি তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়। এর পরদিনই পরিচালক ফারুক সভাপতি নির্বাচিত হন।

এবারও তেমনটিই হতে পারে। বিসিবির গঠনতন্ত্রের ১২.

৭ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে—
‘মেয়াদ উত্তীর্ণের পূর্বে বা বোর্ড কর্তৃক প্রতিনিধির নাম প্রেরণের নোটিশ প্রদানের পূর্বে কোনো কাউন্সিলর পরিবর্তন করা যাবে না। তবে কোনো কাউন্সিলর পদত্যাগ, স্থায়ীভাবে প্রবাসে চলে যাওয়া, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া, সংস্থার চাকরিতে বদলি/অবসর অথবা মৃত্যুজনিত কারণে অযোগ্য বা অক্ষম হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান/সংস্থা/ক্লাব/সমিতি কাউন্সিলর পরিবর্তনের আবেদন করতে পারবে।’

অর্থাৎ বিসিবিতে কাউন্সিলর পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। কোনো বিদ্যমান কাউন্সিলর পদত্যাগ করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিসিবিতে নতুন কাউন্সিলরের নাম পাঠাতে পারে। পরিচালনা পর্ষদ তা অনুমোদন করলে তিনি কাউন্সিলর হিসেবে যোগ্য বিবেচিত হবেন। সেই অবস্থায় বুলবুলের কাউন্সিলর হওয়ায় কোনো বাধা থাকবে না।

এছাড়া গঠনতন্ত্রের ১৩.২ (ক) ধারায় বলা হয়েছে—
‘সভাপতি পদের প্রার্থীকে অবশ্যই একজন পরিচালক হতে হবে। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক নির্বাচিত হবেন।’
এবং অনুচ্ছেদ ১৯-এ বলা হয়েছে—
‘পরিচালনা পর্ষদের কোনো পদ শূন্য হলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, পরিচালনা পর্ষদের অনুরোধে, একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। এই কমিশন অনুচ্ছেদ ১৩ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করবে।’

তাই কাউন্সিলর ও পরিচালক হওয়ার পর বুলবুল সভাপতি নির্বাচিত হতেও কোনো বাধা থাকবে না।

সব মিলিয়ে, বোর্ড সভাপতি হওয়ার আগে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে অবশ্যই কাউন্সিলর হতে হবে। সেটি সম্ভব হবে যদি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে মনোনীত কোনো পরিচালক পদত্যাগ করেন।

এদিকে ফারুক আহমেদ ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। সেক্ষেত্রে বুলবুলের জন্য বিসিবিতে আসার পথ আপাতত বন্ধ। উল্টো যদি কেউ আইসিসির কাছে অভিযোগ পাঠায়, তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেট ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

তবে বোর্ডে তার অবস্থান যে নড়বড়ে হয়ে গেছে, তা মোটামুটি নিশ্চিত। এরই মধ্যে আটজন পরিচালক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে চিঠি দিয়ে ফারুকের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেছেন।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গঠনতন ত র র পদত য গ র পর ব আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

ফারুকের নামে ‘কপি–পেস্ট’ অভিযোগে অনাস্থা আনা যায় তাঁদের বিরুদ্ধেও

ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে দেওয়া অনাস্থা প্রস্তাবে ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এনেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আট পরিচালক। যার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফারুক আহমেদকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়েই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) বিসিবি পরিচালক হিসেবে তাঁর মনোনয়ন বাতিল করেছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, পুরো স্ক্রিপটটা যেন লেখাই ছিল! পরশু রাতে ক্রীড়া উপদেষ্টা ফারুককে জানালেন, সরকারের ‘ঊর্ধ্বতন মহল’ তাঁকে আর বিসিবি প্রধান পদে ‘কন্টিনিউ’ করতে চাচ্ছে না। ফারুক জানতে চাইলেন, ‘কেন?’ কোনো উত্তর পাননি। এরপর কাল দুপুরে ফারুক সংবাদমাধ্যমে জানিয়ে দিলেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। কারণ, কেন তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে, তার কোনো ব্যাখ্যা তাঁকে দেওয়া হয়নি।

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়ে সংবাদমাধ্যমে এল ফারুকের বিরুদ্ধে উপদেষ্টার কাছে দেওয়া আট বিসিবি পরিচালকের অনাস্থা প্রস্তাব। পরপরই এল বিপিএল নিয়ে গঠন করা সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন। বিপিএলের সঙ্গে অনেকের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও প্রতিবেদনে ঢালাওভাবে সবকিছুর দায় ফারুককে দেওয়া হয়েছে। এরপর কাল রাতেই এনএসসি বিসিবি পরিচালক হিসেবে ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করে।

আরও পড়ুনকাউন্সিলর অনুমোদন পেয়েছেন আমিনুল, বিকেলে বোর্ড সভা১ ঘণ্টা আগে

অস্ত্র সব তাক করাই ছিল। ফারুক নিজ থেকে হার মেনে নিলে এত কিছু হয়তো হতো না। সেটা করেননি বলেই একটার পর একটা অস্ত্র ছুড়ে একপেশে খেলায় মেতে উঠে তাঁকে ‘ক্ষমতাচ্যুত’ করা হলো এবং সেটা কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে।
ফারুক বোর্ডে এনএসসির মনোনীত পরিচালক ছিলেন। কোনো সমস্যা থেকে থাকলে আগে এনএসসি সেসব নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলবে, এটাই স্বাভাবিক হতো। কিন্তু অদৃশ্য কোনো জাদুবলে এনএসসি সে পথে যায়নি।

অনাস্থা প্রস্তাবে আনা অভিযোগগুলোকে ফারুক বলেছেন ‘কপি–পেস্ট’ অভিযোগ। অর্থাৎ গত ১২ বছরে পরিচালকেরা নিজেরা যা যা করেছেন, সব এখন ফারুকের নামের পাশে জুড়ে দিচ্ছেন। যদি তা–ই হয়, অনাস্থা তো এই পরিচালকদের বিরুদ্ধেও আনা যায়!

তার আগে বরং একটু বিশ্লেষণী দৃষ্টিতে দেখা যাক কী আছে আট পরিচালকের অনাস্থা প্রস্তাবে, যেটির এত শক্তি?

ফারুক স্বেচ্ছাচারী, কর্তৃত্ববাদী

বাংলাদেশের ক্রিকেটে ফারুককে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে চেনেন, তাঁরা জানেন ফারুক কঠোর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং স্পষ্টভাষী একজন মানুষ। কাজের ক্ষেত্রে অনেক সময় তাঁর আচরণে রূঢ়তা প্রকাশ পায়। আট পরিচালক ফারুকের এই চরিত্রকেই হয়তোবা স্বেচ্ছাচারী ও আধিপত্যবাদী বোঝানোর চেষ্টা করেছেন অনাস্থা প্রস্তাবে।

কিন্তু এই আট–নয় মাসে ফারুকের ‘স্বেচ্ছাচারী ও কর্তৃত্ববাদী’ আচরণ কি আওয়ামী লীগের সময়ের সাবেক বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসানের চেয়ে বেশি ছিল? স্বেচ্ছাচারী, কর্তৃত্ববাদী, আধিপত্যবাদী—এসব শব্দ তো নাজমুল হাসানের সঙ্গেই বেশি যেত, যাঁর বোর্ড সভায় ভিন্নমত প্রদানের সুযোগ ছিল না বলে ফারুকের প্রতি অনাস্থা আনা পরিচালকেরাই বিভিন্ন সময় বলেছেন। কই তখন তো তাঁরা কেউ নাজমুল হাসানের প্রতি অনাস্থা আনেননি? উল্টো হীরক রাজার পারিষদের ব্যক্তিত্বহীন সদস্যদের মতো সবকিছুতে ওপর–নিচ মাথা নেড়ে গেছেন।

বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিসিবির নতুন সভাপতি বুলবুল
  • বিসিবিতে ক্রিকেট বাদে সবকিছুই হচ্ছে: তামিম
  • ফারুকের নামে ‘কপি–পেস্ট’ অভিযোগে অনাস্থা আনা যায় তাঁদের বিরুদ্ধেও
  • কাউন্সিলর অনুমোদন পেয়েছেন আমিনুল, বিকেলে বোর্ড সভা
  • আনফেয়ার, আই ওয়ান্ট টু চ‌্যালেঞ্জ: ফারুক
  • বিসিবি সভাপতি ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করল এনএসসি
  • ‘পদত্যাগ’ করতে পারেন বিসিবি সভাপতি ফারুক