যে প্রক্রিয়ায় বিসিবির পরিচালক হবেন বুলবুল
Published: 29th, May 2025 GMT
সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল তো বোর্ডের কাউন্সিলর নন। তাহলে তিনি কীভাবে বোর্ড সভাপতি হবেন? ফারুক আহমেদের পদত্যাগের গুঞ্জন এবং বুলবুলকে দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা যখন আলোচনায়, তখনই সামনে আসে বুলবুলের কাউন্সিলর না হওয়ার বিষয়টি।
বিসিবির গঠনতন্ত্র পর্যালোচনায় জানা গেছে, কাউন্সিলর না হয়ে বোর্ডের পরিচালক এবং পরে সভাপতি হওয়ার সুযোগ নেই। বুলবুলকে বোর্ডে আসতে হলে প্রথমে কাউন্সিলর হতে হবে। এরপর পরিচালক। সবশেষে হতে হবে বোর্ড সভাপতি। প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ হলেও সরকারের হস্তক্ষেপে তা সহজ হতে পারে।
তবে সরকার যদি বোর্ড সভাপতি নির্বাচন বা পদত্যাগে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে, তাহলে দেশের ক্রিকেটের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। অতীতে এমন পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল।
আরো পড়ুন:
ফারুকের বিরুদ্ধে যেসব অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি
ফারুকের বিরুদ্ধে ৮ পরিচালকের অনাস্থা, থাকছে না পদ
নিয়ম মেনেই বুলবুল বোর্ড সভাপতি হতে পারেন। তবে প্রক্রিয়াটি একটু জটিল, কারণ তিনি বর্তমানে কাউন্সিলর নন। কোনো নির্বাচিত কাউন্সিলর পদত্যাগ করলে তার জায়গায় আসতে পারবেন বুলবুল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে দুজনকে পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দিতে পারে।
সরকার পরিবর্তনের পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ক্যাটাগরির পরিচালক জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববির পরিবর্তে নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও ফারুক আহমেদকে মনোনীত করে।
২০২১ সালে নাজমুল আবেদীন ফাহিম বিকেএসপির কাউন্সিলর হয়ে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে নির্বাচন করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বিকেএসপির চাকরি না করায় তার কাউন্সিলরশিপ বাতিল হয়ে যায়।
তখন ফাহিমেরও কোনো কাউন্সিলরশিপ ছিল না। বিসিবির সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুস পরিচালকের পাশাপাশি এনএসসির কাউন্সিলর হিসেবেও পদত্যাগ করেন। এরপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রথমে ফাহিমকে কাউন্সিলর এবং পরে পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেয়। অন্যদিকে, ফারুক ছিলেন ‘সাবেক অধিনায়ক’ ক্যাটাগরির কাউন্সিলর। যদিও ববি পদত্যাগ করেননি, তবুও এনএসসি তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়। এর পরদিনই পরিচালক ফারুক সভাপতি নির্বাচিত হন।
এবারও তেমনটিই হতে পারে। বিসিবির গঠনতন্ত্রের ১২.
‘মেয়াদ উত্তীর্ণের পূর্বে বা বোর্ড কর্তৃক প্রতিনিধির নাম প্রেরণের নোটিশ প্রদানের পূর্বে কোনো কাউন্সিলর পরিবর্তন করা যাবে না। তবে কোনো কাউন্সিলর পদত্যাগ, স্থায়ীভাবে প্রবাসে চলে যাওয়া, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া, সংস্থার চাকরিতে বদলি/অবসর অথবা মৃত্যুজনিত কারণে অযোগ্য বা অক্ষম হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান/সংস্থা/ক্লাব/সমিতি কাউন্সিলর পরিবর্তনের আবেদন করতে পারবে।’
অর্থাৎ বিসিবিতে কাউন্সিলর পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। কোনো বিদ্যমান কাউন্সিলর পদত্যাগ করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিসিবিতে নতুন কাউন্সিলরের নাম পাঠাতে পারে। পরিচালনা পর্ষদ তা অনুমোদন করলে তিনি কাউন্সিলর হিসেবে যোগ্য বিবেচিত হবেন। সেই অবস্থায় বুলবুলের কাউন্সিলর হওয়ায় কোনো বাধা থাকবে না।
এছাড়া গঠনতন্ত্রের ১৩.২ (ক) ধারায় বলা হয়েছে—
‘সভাপতি পদের প্রার্থীকে অবশ্যই একজন পরিচালক হতে হবে। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক নির্বাচিত হবেন।’
এবং অনুচ্ছেদ ১৯-এ বলা হয়েছে—
‘পরিচালনা পর্ষদের কোনো পদ শূন্য হলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, পরিচালনা পর্ষদের অনুরোধে, একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। এই কমিশন অনুচ্ছেদ ১৩ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করবে।’
তাই কাউন্সিলর ও পরিচালক হওয়ার পর বুলবুল সভাপতি নির্বাচিত হতেও কোনো বাধা থাকবে না।
সব মিলিয়ে, বোর্ড সভাপতি হওয়ার আগে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে অবশ্যই কাউন্সিলর হতে হবে। সেটি সম্ভব হবে যদি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে মনোনীত কোনো পরিচালক পদত্যাগ করেন।
এদিকে ফারুক আহমেদ ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। সেক্ষেত্রে বুলবুলের জন্য বিসিবিতে আসার পথ আপাতত বন্ধ। উল্টো যদি কেউ আইসিসির কাছে অভিযোগ পাঠায়, তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেট ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
তবে বোর্ডে তার অবস্থান যে নড়বড়ে হয়ে গেছে, তা মোটামুটি নিশ্চিত। এরই মধ্যে আটজন পরিচালক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে চিঠি দিয়ে ফারুকের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গঠনতন ত র র পদত য গ র পর ব আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।
ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।
আরো পড়ুন:
আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য
আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান
এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।
যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।
লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।
বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।
ঢাকা/আমিনুল