মমতার সরকারকে নিশানা প্রধানমন্ত্রী মোদির
Published: 29th, May 2025 GMT
পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে সবদিক থেকে সমালোচনার নিশানা করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বৃহস্পতিবার রাজ্যটির আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত জনসভার শুরু থেকেই তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি, তোষণের রাজনীতি, নারীদের উপর অত্যাচার, কুশাসন, কাটমানি ইস্যুতে একের পর তুলোধুনো করেন প্রধানমন্ত্রী।
মোদি বলেছেন, “আজ পশ্চিমবঙ্গ নানা সংকটে ডুবে আছে। প্রথমত- সমাজে হিংসা, অরাজকতা ছেয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত- মা-বোনেরা অরক্ষিত, তাদের উপর অত্যাচার বাড়ছে। তৃতীয়ত-নতুন প্রজন্মের মধ্যে বেকারত্বের হতাশা বাড়ছে। চতুর্থত- প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। পঞ্চমত- গরীবদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে।”
সম্প্রতি রাজ্যটির মুর্শিদাবাদ ও মালদা জেলায় গোষ্ঠী সংঘর্ষের বিষয়টি উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন “এই দুটি জায়গায় যা ঘটেছে সেটাই এখানকার রাজ্য সরকারের নির্মমতার উদাহরণ। ওই সহিংসতায় মা-বোনেদের যতটুকু সঞ্চয় ছিল সব নষ্ট হয়ে গেছে। তোষণের নামে কার্যত গুন্ডাগিরি চলছে। সরকারেরই বিধায়ক ওয়ার্ড কাউন্সিলররাই সাধারণ মানুষের ঘর চিহ্নিত করে অগ্নিসংযোগ করায়, আর সেখানে পুলিশ তামাশা দেখে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি কল্পনাই করা যায় না।”
রাজ্যবাসীর কাছে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন “আমি সবার কাছে জানতে চাই এইভাবে কি একটা সরকার চলে? আসলে রাজ্যের মানুষের উপরে হওয়া অত্যাচারে এখানকার ক্ষমতাসীন দলের কিছু এসে যায় না। এখানে কোনো কিছু হলেই আদালতে যেতে হয়, আদালত ছাড়া কোন সমস্যার সমাধান হয় না। এই সরকারের উপরে রাজ্যের মানুষের আর কোন ভরসা নেই। সেই কারণে গোটা বাংলা বলছে, এই নির্মম সরকার আর চাই না।”
মোদির অভিমত, “রাজনীতি তার নিজের জায়গা থাকবে কিন্তু গরীব, দলিত, পিছিয়ে পড়া শ্রেণি, আদিবাসী এবং নারীরা কেনো তৃণমূলের শত্রু হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রে যে সব প্রকল্প চলছে তার মধ্যে অনেক প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গে চালু হতে দিচ্ছে না। এই নির্মম সরকার বাংলার মানুষকে আয়ুষ্মান কার্ডের সুবিধা দেয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার গরীবদের ঘর করে দিয়েছে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে লাখ লাখ গরীব মানুষকে তাদের ঘর পেতে দেয়নি। তৃণমূলের নেতারা সেই গরীবদের কাছ থেকেও কমিশন খাচ্ছে। তৃণমূলের সরকার আপনাদের নিয়ে কেন এতটা নির্মম হয়েছে? পশ্চিমবঙ্গের বড় সংখ্যায় আদিবাসী মানুষ বসবাস করে কিন্তু তাদের উন্নয়নের প্রতি তৃণমূল সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এই সরকার আদিবাসী সমাজকে বঞ্চিত রাখতে চায়। আদিবাসীদের সম্মানের ব্যাপারে কোনো পরোয়া করে না। কেন্দ্রের এনডিএ সরকার একজন আদিবাসী মহিলাকেই রাষ্ট্রপতি বানিয়েছে। সেখানে তার সবচেয়ে বিরোধিতায় ছিল এই তৃণমূল কংগ্রেস। কয়েকদিন আগে দিল্লিতে নীতি আয়োগ এর খুব গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছিল। এটা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে গোটা দেশের মুখ্যমন্ত্রীরা একসাথে বসে উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু হতাশার বিষয় হল এবার রাজ্য সরকার এই বৈঠকে উপস্থিত ছিল না। আসলে এই সরকারের উন্নয়নের বিষয়ে কোনো অগ্রাধিকার নেই।”
তিনি বলেন, “দুর্নীতি, বেকারত্বের প্রভাব পড়ছে নতুন প্রজন্ম, নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের উপর। দুর্নীতি কিভাবে ছেয়ে গেছে সেটা শিক্ষক নিয়োগেও আমরা দেখতে পেয়েছি। হাজার হাজার শিক্ষকের ক্যারিয়ার বরবাদ হয়ে গেছে, তাদের পরিবারকে অনিশ্চয়তা ফেলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাতাই বরবাদ হয়ে গেছে। তৃণমূলের নেতারাই এইসব পাপ করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত এদের নেতারা সেই দোষ স্বীকার করছে না উল্টে আদালতকে দোষী সাব্যস্ত করছে।”
মোদির বার্তা-“পশ্চিমবঙ্গকে সহিংসতা, তোষণের রাজনীতি, দাঙ্গা, নারীদের উপর অত্যাচার, দুর্নীতি থেকে রাজনীতি মুক্ত করতে হবে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের সামনে বিজেপির উন্নয়নই হচ্ছে একমাত্র মডেল। গোটা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির সরকার চলছে, বার বার তারা বিজেপিকে সুযোগ দিচ্ছে। পার্শ্ববর্তী অসম, ত্রিপুরা কিংবা ওড়িশায় দ্রুত গতিতে উন্নয়নের কাজ করে চলেছে বিজেপি সরকার।
পশ্চিমবঙ্গের সব পরিবারকে সুরক্ষা, সুশাসন, উন্নয়নের গ্যারান্টি দিতে রাজ্য বিজেপি নেতা-কর্মীদের কোমর বেঁধে তৈরি থাকার আহ্বান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগামী দিনে আপনাদের প্রচেষ্টাকে আরো গতি বাড়াতে হবে। উন্নত ভারত গড়তে গেলে পশ্চিমবঙ্গেও খুব দ্রুতগতিতে উন্নয়ন দরকার। পশ্চিমবঙ্গের পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে এবং এটা আমাদের সবাইকে মিলে করতে হবে।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র র র জন ত র উপর
এছাড়াও পড়ুন:
বৃক্ষমেলা নিয়ে আগ্রহ
২ / ৯গাছ বাছাইয়ে ব্যস্ত একজন বৃক্ষপ্রেমী