Samakal:
2025-08-01@00:39:55 GMT

নৃশংস ও নিন্দনীয়

Published: 29th, May 2025 GMT

নৃশংস ও নিন্দনীয়

চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক জোটের কর্মসূচিতে যেইভাবে হামলার ঘটনা ঘটিয়াছে, আমরা উহার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা মনে করি, সাংবিধানিকভাবে যে কোনো নাগরিকের সমবেত হইবার ও মতপ্রকাশের অধিকার রহিয়াছে এবং কাহারও উপর শারীরিক হামলা স্পষ্টতই ফৌজদারি অপরাধ। বিশেষত নারীর উপর হামলা আরও গুরুতর; বাংলাদেশ কিংবা বৈশ্বিক সংস্কৃতিতেই এইরূপ হামলা কোনো অজুহাতেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশগ্রহণকারী একজন নারীকে যেভাবে পদাঘাত করা হইয়াছে, উহা অভিযুক্ত ব্যক্তির অন্তর্গত পৈশাচিকতাই স্পষ্ট করিয়াছে। 

বস্তুত এই ঘটনার সূচনা হইয়াছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তিকে কেন্দ্র করিয়া। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত পূর্বেকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল করিয়া তাঁহাকে খালাস দিবার পরই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলি প্রতিবাদ জানাইয়াছিল। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এহেন প্রতিবাদ সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটিয়াছে। বস্তুত বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলির মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতাকর্মীর উপর হামলার প্রতিবাদেই চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সম্মুখে বুধবার সমাবেশ আহ্বান করা হইয়াছিল। সেই সমাবেশেও এক দল যুবকের হামলা শান্তিকামী নাগরিকগণকে বিক্ষুব্ধ না করিয়া পারে না। 

মন্দের ভালো, চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক জোটের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে পুলিশ দুইজনকে গ্রেপ্তার করিয়াছে। প্রশ্ন হইল, হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোথায় ছিল? এমনকি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও মাজারসহ বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটিয়াছে। সেই সকল হামলার অঘটন দেশব্যাপী সমালোচনার জন্ম দিলেও সরকার সেইগুলি প্রতিরোধ করিতে পারে নাই। আমরা দেখিয়াছি, বিগত আওয়ামী লীগের সময়েও বিরোধী গোষ্ঠীর কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটিত। এখনও এহেন ঘটনা অব্যাহত থাকিবার বিষয় অগ্রহণযোগ্য। 
চট্টগ্রামে হামলার জন্য গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট ছাত্রশিবিরকে দায়ী করিলেও বিবৃতি দিয়া ছাত্র সংগঠনটি তাহাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করিয়াছে। আমরা মনে করি, কেবল বিবৃতি দিয়া দায়িত্ব সম্পাদনের সুযোগ সামান্যই। বিশেষত যখন দলটি স্বীকার করিয়াছে, হামলাকারী একদা ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সহিত সংশ্লিষ্ট ছিল। বিবৃতিতে যথায় দলটি উল্লেখ করিয়াছে, নারীর প্রতি সহিংসতা তাহাদের আদর্শ ও নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থি, তথায় তাহাদের সাবেক কর্মী কীভাবে এহেন হামলার দুঃসাহস দেখাইয়াছে! আমরা চাহি, হামলার পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত করিয়া দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হউক। 
দুঃখজনক হইলেও সত্য, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দেশের ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যকার যেই ঐক্য আমরা প্রত্যক্ষ করিয়াছি, অভ্যুত্থানের পর হইতেই সেই ঐক্যে বৃহৎ ফাটল ধরিয়াছে। বর্তমানে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে সংহতি নাই বলিলেই চলে। এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হুমকি ও বিদ্বেষপূর্ণ স্লোগান বিনিময় করিতেছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা এবং নারীর প্রতি নৃশংসতা যাহারা চালাইতেছে, এই অনৈক্যের দায় তাহাদের অধিক। 

বুধবার সমকালে প্রকাশিত এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা উল্লেখ করিয়াছি, জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পাইয়াছেন বটে, কিন্তু একাত্তরে যাহাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হইয়াছিল, তাহাদের ন্যায়বিচারের কী হইবে? উপরন্তু ঐ রায়ের প্রতিবাদে সমাবেশে হামলা ক্ষোভ বৃদ্ধি বৈ হ্রাস করিবে না। যেই কোনো পরিস্থিতিতেই বিপরীত মতাদর্শের উপর হামলা, নিপীড়ন এমনকি তাহাদের নিশ্চিহ্নকরণের মানসিকতা অত্যন্ত ভয়াবহ। চট্টগ্রামে হামলার ঘটনা তাহারই ইঙ্গিত দিতেছে। আমরা প্রত্যাশা করি, শিক্ষাঙ্গনগুলিতে সহাবস্থান নিশ্চিত করা হইবে; ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে সেই সহনশীলতা থাকিতে হইবে, যাহাতে প্রত্যেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করিতে পারে। তৎসহিত যেই কোনো হামলা বন্ধে প্রশাসনকেও আগাম তৎপর হইতে হইবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত র স গঠনগ ল র ম গণত ন ত র ক কর য় ছ র কর য় হইয় ছ অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

যে পরিকল্পনায় এগোচ্ছে ছাত্রসংগঠনগুলো, প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় যাঁরা

গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ছয় বছর আগে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে বেশির ভাগ পদে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) প্যানেল থেকে জয় পেলেও সহসভাপতির (ভিপি) পদে জয়ী হয়েছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নূর।

সেই কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই গত বছর বাংলাদেশে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন ঘটে আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনের। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের একটি অংশ এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁরা বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে আছেন। তাই নতুন এই বাস্তবতায় ডাকসু নির্বাচনে কোন কোন ছাত্রসংগঠনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে এবং কারা সম্ভাব্য প্রার্থী, তা নিয়ে ক্যাম্পাসের রাজনীতিসচেতন শিক্ষার্থীদের কৌতূহল রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৯ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৫ আগস্ট। আর ভোট গ্রহণ হবে ৯ সেপ্টেম্বর।

থাকছে না বয়সের বাধা

সর্বশেষ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়স ছিল ৩০ বছর। তবে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়সসীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হলেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তমতে, এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীরা। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থী হতে হলে শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হতে হবে, যিনি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা এমফিলে অধ্যয়নরত এবং কোনো আবাসিক হলে অবস্থানরত বা সংযুক্ত।

এ ছাড়া সান্ধ্যকালীন কোর্সের পাশাপাশি পেশাদার বা এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট ও ভাষা কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও ভোটার বা প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন না। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও সংযুক্ত কলেজ বা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

তা ছাড়া ছাত্রত্ব না থাকলে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। আইনি জটিলতা এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে গঠিত নির্বাচন কমিশন।

এবারের ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ছাত্রসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি দাবি ছিল হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করা। সেই দাবি মেনে ডাকসু নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কেন্দ্রগুলো হলো: এক. কার্জন হল কেন্দ্র (পরীক্ষার হল); ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ হল, অমর একুশে হল ও ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভোট দেবেন। দুই. শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র; জগন্নাথ হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভোট দেবেন। তিন. ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি); রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল ও কবি সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভোট দেবেন। চার. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্র; বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভোট দেবেন। পাঁচ. সিনেট ভবন কেন্দ্র (অ্যালামনাই ফ্লোর, সেমিনার কক্ষ, ডাইনিংরুম); স্যার এ এফ রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভোট দেবেন। ছয়. উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র; সূর্যসেন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কবি জসীমউদ্‌দীন হলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভোট দেবেন।

যে পরিকল্পনায় এগোচ্ছে ছাত্রসংগঠনগুলো

তফসিল ঘোষণার পর ছাত্রসংগঠনগুলোর নিজেদের মধ্যে প্রার্থী নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। কাকে কোন পদে প্রার্থী করলে জয় ছিনিয়ে আনা যাবে, চলছে সেসব বিশ্লেষণ। তবে অধিকাংশ ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার দলীয় প্যানেলের চেয়ে সম্মিলিত সাধারণ শিক্ষার্থী প্যানেলের কথা ভাবছে সংগঠনগুলো। নিজ সংগঠনের বাইরে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অনেক প্রার্থীকে তাঁরা নিজেদের প্যানেলে রাখতে চাচ্ছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর হওয়া ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা অভ্যুত্থানে অবদান রাখা প্রার্থীদের কিছুটা এগিয়ে রাখবেন—এমনটা মনে করছে কিছু সংগঠন। এ ছাড়া নারী শিক্ষার্থী, বিজ্ঞান অনুষদগুলোর শিক্ষার্থী, আদিবাসী, সংখ্যালঘু ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট প্রার্থীদের জিতে আসার জন্য বড় ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করা হচ্ছে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল কেমন হবে, তা দলীয় সিদ্ধান্তের আলোকেই ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সম্মিলিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্যানেল করবে, এমন আলোচনা চলছে। বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর পাশাপাশি ইসলামী ছাত্রশিবিরও পৃথকভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে প্যানেল দিতে পারে এমন আলোচনা হচ্ছে।

প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় যাঁরা

ডাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহসাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) এবার মোট ২৮টি পদের বিপরীতে লড়বেন প্রার্থীরা। ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবির মুখে এবার গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক; ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক; স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক নামে চারটি নতুন পদ তৈরি করা হয়েছে।

ছাত্রসংগঠনগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরিচিত কিছু মুখ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত হওয়া সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, সদস্যসচিব জাহিদ আহসান ও মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদ্দাসির চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের প্রার্থী হতে পারেন। আলোচনায় রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদও।

ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান ও বি এম কাওসার, কবি জসীমউদ্‌দীন হল শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক তানভীর বারী হামিম প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।

বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু ও বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর জাবির আহমেদের নাম আলোচনায় রয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম ও বর্তমান সভাপতি এস এম ফরহাদ প্রার্থী হতে পারেন। এ ছাড়া ছাত্র অধিকার পরিষদের বিন ইয়ামিন মোল্লার নামও আলোচনায় রয়েছে।

কে কী বলছেন

নির্বাচন আয়োজনে কালক্ষেপণের অভিযোগ ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এরপরও তফসিল ঘোষণায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছুটা তড়িঘড়ি করেছে বলে মনে করছেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন।

নাহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছিল নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হলে এবং শিক্ষার্থী নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত চিহ্নিত ছাত্রলীগ কর্মী ও ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষকদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পর তফসিল ঘোষণা করা হবে। কিন্তু আমরা সেগুলোর কিছুই দেখিনি। ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের বিষয়েও কোনো প্রকার অগ্রগতি দেখিনি।’

শিক্ষার্থীদের সংস্কার প্রস্তাবের বেশির ভাগই উপেক্ষা করে আগের কাঠামোর মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের। সংগঠনটির একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ডাকসু সংস্কারের প্রস্তাব দেয়। অপরাপর সংগঠনগুলোও সংস্কারের দাবি জানায়। কিন্তু আমরা দেখি, শিক্ষার্থীদের সংস্কার প্রস্তাবের বেশির ভাগই উপেক্ষা করে আগের কাঠামোর মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করা হলো।’

এরপরও ডাকসু নির্বাচনকে সাধুবাদ জানিয়ে শিমুল বলেন, প্রতিবছর নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রত্যাশা করেন তাঁরা। ছাত্র ইউনিয়ন চায়, ডাকসু নির্বাচনে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং চব্বিশের জুলাইয়ে যাঁরা গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত, সেসব সংগঠন এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচনকে বিতর্কিত না করুক।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার সঞ্চার করেছে বলে মনে করছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এই উচ্ছ্বাস যেন আশাহত অবস্থায় রূপ না নেয়, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সচেষ্ট থাকতে হবে। কুচক্রী মহলের ডাকসু বানচালের পাঁয়তারায় প্রশাসনের মধ্যে যেন জুজুর ভয় সঞ্চারিত না হয়, সেটাই আমাদের আহ্বান থাকবে।’

ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচন করা জুলাইয়ের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা। আমাদের দাবি থাকবে, অনতিবিলম্বে প্রতিটি ক্যাম্পাসেই যেন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।’

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের (সবার জন্য সমান সুযোগ) ওপর প্রশাসনের জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিপুল অর্থ এবং পেশিশক্তির ব্যবহার করে যাতে কোনো গোষ্ঠী এই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন।’

আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর১৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে পরিকল্পনায় এগোচ্ছে ছাত্রসংগঠনগুলো, প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় যাঁরা