ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই এলাকায় প্রায় ছয় কিলোমিটারজুড়ে এক বছর ধরে জ্বলছে না অধিকাংশ সড়কবাতি। ফলে কচমচ থেকে নবীনগরের নিরিবিলি পর্যন্ত সড়কের বড় অংশ অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকছে। ইসলামপুর-নয়ারহাট বংশী নদীর ওপর নতুনটিসহ চার সেতু ও ফুট ওভারব্রিজে জ্বলছে না বাতি। ফলে ব্যস্ততম মহাসড়কসহ শিল্পসমৃদ্ধ এলাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতে এসব সড়কবাতি বন্ধ থাকায় বৈদ্যুতিক তার, ফুট ওভারব্রিজের টিন ও সেতুর এসএস পাইপ (রেলিং) চুরি হয়ে গেছে। এখন শুধু তারবিহীন সড়কবাতির ল্যাম্পপোস্ট দাঁড়িয়ে রয়েছে। স্থানীয় কারখানার শ্রমিক সাহিদা আক্তার, কল্পনা রানীসহ কয়েকজনের ভাষ্য, ইসলামপুর কর্মস্থল থেকে রাত ১০টায় ছুটির পর মহাসড়ক ঘেঁষে হেঁটে বাসায় ফিরতে হয়। বাতি বন্ধ থাকায় তাদের চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে। কখন দুর্ঘটনার শিকার হন, সে ভয়ে থাকেন।
তার চুরি হয়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। সড়ক বিভাগ থেকে জানা গেছে, দুই বছর আগে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগরের নিরিবিলি বাসস্ট্যান্ড থেকে ধামরাইয়ের কচমচ পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও চার লেন আবার কোথাও ছয় লেন করা হয়েছে। এ সড়কের ইসলামপুর-নয়ারহাট বংশী নদীর ওপর একটি নতুনসহ পাশে চারটি সেতু রয়েছে। 

এ সেতু থেকে কচমচ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সার্ভিস লেন রয়েছে। এখানে মধ্যবর্তী স্থানে সড়ক বিভাজক দেওয়া হয়েছে দুটি করে। প্রায় দেড় বছর আগে মহাসড়কের প্রতিটি বিভাজকে ও ফুট ওভারব্রিজে বসানো হয় সড়কবাতি। বুধবার রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, কচমচ থেকে নিরিবিলি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটারে তারবিহীন সড়কবাতি থাকলেও তা জ্বলছে না। স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্যে ও সরেজমিনে চার শতাধিক ল্যাম্পপোস্ট অকেজো।
রাতে ইসলামপুর-নয়ারহাট বংশী নদীর ওপর নতুন সেতুসহ ঢুলিভিটা, ধামরাই থানা, নয়ারহাট ও নিরিবিলি বাসস্ট্যান্ডসহ চারটি ফুট ওভারব্রিজ পার হন পথচারীরা। নয়ারহাট সেতুর অনেক অংশের এসএস পাইপের রেলিংও কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। থানা বাসস্ট্যান্ডে পরিবহন কাউন্টার ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, প্রায় এক বছর ধরে সড়কবাতিগুলো বন্ধ থাকায় রাতে পথচারীদের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আলোস্বল্পতার কারণে যেকোনো সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক হযরত আলী। তিনি বলেন, তাদের ছেলেমেয়েরা প্রায়ই ইসলামপুর-নয়ারহাট বংশী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর ওপর দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। রেলিং চুরি হওয়ায় শিশু শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় রেলিংয়ের ফাঁকা স্থান দিয়ে নদীতে পড়ে যেতে পারে। দ্রুত এগুলো সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। 
সড়কবাতি বন্ধ থাকার সুযোগে ও ঈদ সামনে রেখে দুর্বৃত্তরা মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ যেকোনো ধরনের অপরাধ করে সহজেই পালিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ধামরাই শাখার সভাপতি মো.

নাহিদ মিয়া। তিনি বলেন, যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। 
ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, সড়কবাতি সচল থাকলে মহাসড়কে তেমন অপরাধ করার সাহস পাবে না দুর্বৃত্তরা। অপরাধপ্রবণতা রোধে মহাসড়কের ধামরাই অংশে প্রতি রাতে সাতটি স্থানে পুলিশি চেকপোস্ট বসানো হয়।
বিদ্যুৎ সংযোগের তার দুর্বৃত্তরা চুরি করে নেওয়ায় বাতিগুলো বন্ধ রয়েছে জানিয়ে মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার আলম বলেন, জিডি করা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এগুলো সচলের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছয় ক ল ম ট র বন ধ থ ক ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

২২ অনাথ কাশ্মীরি শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী

অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানি গোলায় ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরে যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের ২২ অনাথ শিশুর লেখাপড়ার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওই শিশুরা পুঞ্চ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা।

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠে স্নাতক হওয়া পর্যন্ত ওই শিশুদের পড়াশোনার সব খরচ রাহুল গান্ধী বহন করবেন। সেই খরচের প্রথম কিস্তির টাকা বুধবার ওই পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন জম্মু–কাশ্মীরের কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা।

পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল কয়েকজন জঙ্গি। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন মোট ২৬ জন পর্যটক। প্রত্যাঘাতের জন্য ভারত শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। চার দিনের সেই লড়াইয়ের সময় জম্মুর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবল গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তান। সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন গ্রামবাসী। আহত হয়েছিলেন ৭০ জনের বেশি। যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, ওই ২২ শিশু ওইসব পরিবারেরই সন্তান। তাদের কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ–বা দুজনকেই হারিয়েছে। কারও পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

রাহুল গত মে মাসে ওইসব এলাকায় গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনাথ শিশুদের স্কুলেও গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন অনাথ শিশুদের তালিকা তৈরি করতে। সরকারি নথির সঙ্গে সেই নাম মিলিয়ে ২২ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়। পুঞ্চ জেলা সফরের সময় রাহুল তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ওই শিশুদের স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনার সব খরচ তিনি দেবেন।

পাকিস্তানের গোলার আঘাতে মারা গিয়েছিলেন ১২ বছরের দুই যমজ ভাই–বোন জাইন আলি ও উরবা ফতিমা। রাহুল তাঁদের স্কুলে গিয়েছিলেন। সেই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের বন্ধুদের হারিয়েছ। সে জন্য তোমাদের মন খারাপ। ওই মৃত্যু আমাকেও দুঃখ দিয়েছে। তোমাদের দুঃখ আমি বুঝি। কিন্তু তোমাদের জন্য আমি গর্বিত। তোমরা ভয়কে জয় করেছ। রাহুল ওই শিশুদের বলেছিলেন, ভয়কে জয় করতে হবে। সুদিন আসবে। সব আবার স্বাভাবিক হবে।

ওই ২২ জনের জন্য বছরে কত খরচ হবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তা জানাননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ