Samakal:
2025-06-01@01:12:21 GMT

বিলম্ব কাঙ্ক্ষিত নহে

Published: 30th, May 2025 GMT

বিলম্ব কাঙ্ক্ষিত নহে

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ তাহারই ঘোষিত ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সংস্কার প্রস্তাবসমূহ গত আড়াই মাসেও বাস্তবায়ন করিতে সক্ষম হয় নাই বলিয়া শুক্রবার এক হতাশাজনক সংবাদ দিয়াছে সমকাল। প্রতিবেদনমতে, গত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ হইতে উপদেষ্টা পরিষদ ১২১টি সুপারিশ নিজেরা সরাসরি বাস্তবায়নের জন্য বাছাই করিয়াছিল। বলা হইয়াছিল, এইগুলি লইয়া রাজনৈতিক দলসমূহের সহিত আলোচনার কোনো প্রয়োজন নাই। জানা গিয়াছে, গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদ এই বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে সুপারিশসমূহ আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা; বাস্তবায়নযোগ্য হইলে উহার সম্ভাব্য সময়সীমা; বাস্তবায়নের প্রভাব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত লইয়া উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করিতে নির্দেশনা দিয়াছে। অথচ গত ২২ মার্চ গণমাধ্যম কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টার নিকট হইতে এতৎসংক্রান্ত নির্দেশনা পাইয়া মন্ত্রিপরিষদ সংশ্লিষ্ট সচিবদের আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবসমূহ বাছাই করিবার নির্দেশনা দিলে শেষোক্তরা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে উক্ত ১২১ প্রস্তাব জমা দেন। উহা হতাশাজনক এই কারণে, বিষয়টা এক প্রকার ঝুলিয়া গেল। কারণ সম্পূর্ণ বিষয়টা এক প্রকার কেঁচে গণ্ডূষ করিতে হইবে। অধিকন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিমত, এখন সকল বিভাগ, মন্ত্রণালয় হইতে মতামত পাইতে যদ্রূপ সময় লাগিবে, তদ্রূপ তাহাদের এই সংক্রান্ত আইন, বিধি ও প্রশাসনিক কাঠামো সুপারিশের আলোকে পর্যালোচনায় আরও কয়েক মাস লাগিতে পারে। এমনকি মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদও কোন দিন এই কাজ শেষ হইতে পারে, তাহা বলিতে পারেন নাই। 

স্মরণ করা যাইতে পারে, গত ১৫ জানুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন, পুলিশ ও দুদক-সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনপ্রধান প্রতিবেদন জমা দিয়াছেন প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের নিকট। ৫ ফেব্রুয়ারি জমা পড়ে বিচার ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন। ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নিকট জানিতে চাহিল, সেই প্রস্তাবসমূহ আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা। ইহাও উল্লেখ করিবার প্রয়োজন, ১২১ প্রস্তাবের অধিকাংশই আইন, বিধি ও নীতিমালা সংশোধন-সংক্রান্ত। কতিপয় প্রস্তাব প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কারের। প্রায় সকল প্রস্তাব সম্পর্কেই ইতোমধ্যে জনপরিসরে ঐকমত্য রহিয়াছে। উপরন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিমত, সরকার সদিচ্ছা পোষণ করিলে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ অধ্যাদেশ জারিপূর্বক প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করিতে পারে। অর্থাৎ অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে উক্ত ১২১ সুপারিশের প্রায় সকলই দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব। 

বিতর্ক না থাকিবার পরও উক্ত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে সরকারের গদাই লস্করি এমন সময় চলিতেছে যখন সরকার এবং রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচন লইয়া নানামুখী আলোচনা প্রায় তুঙ্গে উঠিয়াছে। একদিকে সরকার ১২১টি সুপারিশ বাদ রাখিয়া অন্য বহু সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সহিত দফায় দফায় আলোচনা করিতেছে, অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম দল বিএনপিসহ সিংহভাগ দল শুধু নির্বাচন-বিষয়ক সংস্কার শেষে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জোর তাগিদ দিয়া চলিয়াছে। তদুপরি উক্ত সংস্কার-সংক্রান্ত আলোচনায় বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে দলসমূহের নিজেদের মধ্যে এবং সরকারের সহিত এমন মতপার্থক্য দেখা দিয়াছে, যেগুলির সমাধান শুধু সময়সাপেক্ষ নহে, কঠিনও বটে। এই সকল কিছু মিলাইয়া অনেকের আশঙ্কা, সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহ অদূর ভবিষ্যতে পরস্পর মুখোমুখি হইবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হইয়াছে, যাহা আদৌ কাম্য নহে। কারণ ইহার মধ্য দিয়া রাষ্ট্র ও সমাজ ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতায় নিমজ্জিত হইতে পারে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলিয়াছেন, আরপিওসহ বেশ কয়েকটি অধ্যাদেশের খসড়া তাহারা করিয়া দিয়াছেন, প্রতিবেদন জমার পরই যেগুলি বাস্তবায়ন করা যাইত। তাঁহারও আশঙ্কা, এই সকল প্রস্তাব বাস্তবায়নে বিলম্ব হইলে অন্যান্য বিষয় ঝুলিয়া যাইবে। এখন দ্রুত নির্বাচনপ্রত্যাশী রাজনৈতিক দলসমূহ যদি এহেন বিলম্বের পশ্চাতে সরকারের নির্বাচন পিছাইবার বাসনা আবিষ্কার করে, তজ্জন্য তাহাদের দোষী বলা যাইবে কি?

আমাদের প্রত্যাশা, সরকার আশঙ্কাগুলি বিবেচনায় লইবে এবং ১২১টি প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা না করিয়া শুধু নির্বাচন-সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারসমূহ সম্পাদন করিয়া দ্রুত দেশকে নির্বাচনমুখী করিবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ত ব সরক র র উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

বিলম্ব কাঙ্ক্ষিত নহে

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ তাহারই ঘোষিত ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সংস্কার প্রস্তাবসমূহ গত আড়াই মাসেও বাস্তবায়ন করিতে সক্ষম হয় নাই বলিয়া শুক্রবার এক হতাশাজনক সংবাদ দিয়াছে সমকাল। প্রতিবেদনমতে, গত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ হইতে উপদেষ্টা পরিষদ ১২১টি সুপারিশ নিজেরা সরাসরি বাস্তবায়নের জন্য বাছাই করিয়াছিল। বলা হইয়াছিল, এইগুলি লইয়া রাজনৈতিক দলসমূহের সহিত আলোচনার কোনো প্রয়োজন নাই। জানা গিয়াছে, গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদ এই বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে সুপারিশসমূহ আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা; বাস্তবায়নযোগ্য হইলে উহার সম্ভাব্য সময়সীমা; বাস্তবায়নের প্রভাব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত লইয়া উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করিতে নির্দেশনা দিয়াছে। অথচ গত ২২ মার্চ গণমাধ্যম কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টার নিকট হইতে এতৎসংক্রান্ত নির্দেশনা পাইয়া মন্ত্রিপরিষদ সংশ্লিষ্ট সচিবদের আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবসমূহ বাছাই করিবার নির্দেশনা দিলে শেষোক্তরা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে উক্ত ১২১ প্রস্তাব জমা দেন। উহা হতাশাজনক এই কারণে, বিষয়টা এক প্রকার ঝুলিয়া গেল। কারণ সম্পূর্ণ বিষয়টা এক প্রকার কেঁচে গণ্ডূষ করিতে হইবে। অধিকন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিমত, এখন সকল বিভাগ, মন্ত্রণালয় হইতে মতামত পাইতে যদ্রূপ সময় লাগিবে, তদ্রূপ তাহাদের এই সংক্রান্ত আইন, বিধি ও প্রশাসনিক কাঠামো সুপারিশের আলোকে পর্যালোচনায় আরও কয়েক মাস লাগিতে পারে। এমনকি মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদও কোন দিন এই কাজ শেষ হইতে পারে, তাহা বলিতে পারেন নাই। 

স্মরণ করা যাইতে পারে, গত ১৫ জানুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন, পুলিশ ও দুদক-সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনপ্রধান প্রতিবেদন জমা দিয়াছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিকট। ৫ ফেব্রুয়ারি জমা পড়ে বিচার ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন। ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নিকট জানিতে চাহিল, সেই প্রস্তাবসমূহ আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা। ইহাও উল্লেখ করিবার প্রয়োজন, ১২১ প্রস্তাবের অধিকাংশই আইন, বিধি ও নীতিমালা সংশোধন-সংক্রান্ত। কতিপয় প্রস্তাব প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কারের। প্রায় সকল প্রস্তাব সম্পর্কেই ইতোমধ্যে জনপরিসরে ঐকমত্য রহিয়াছে। উপরন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিমত, সরকার সদিচ্ছা পোষণ করিলে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ অধ্যাদেশ জারিপূর্বক প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করিতে পারে। অর্থাৎ অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে উক্ত ১২১ সুপারিশের প্রায় সকলই দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব। 

বিতর্ক না থাকিবার পরও উক্ত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে সরকারের গদাই লস্করি এমন সময় চলিতেছে যখন সরকার এবং রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচন লইয়া নানামুখী আলোচনা প্রায় তুঙ্গে উঠিয়াছে। একদিকে সরকার ১২১টি সুপারিশ বাদ রাখিয়া অন্য বহু সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সহিত দফায় দফায় আলোচনা করিতেছে, অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম দল বিএনপিসহ সিংহভাগ দল শুধু নির্বাচন-বিষয়ক সংস্কার শেষে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জোর তাগিদ দিয়া চলিয়াছে। তদুপরি উক্ত সংস্কার-সংক্রান্ত আলোচনায় বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে দলসমূহের নিজেদের মধ্যে এবং সরকারের সহিত এমন মতপার্থক্য দেখা দিয়াছে, যেগুলির সমাধান শুধু সময়সাপেক্ষ নহে, কঠিনও বটে। এই সকল কিছু মিলাইয়া অনেকের আশঙ্কা, সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহ অদূর ভবিষ্যতে পরস্পর মুখোমুখি হইবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হইয়াছে, যাহা আদৌ কাম্য নহে। কারণ ইহার মধ্য দিয়া রাষ্ট্র ও সমাজ ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতায় নিমজ্জিত হইতে পারে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলিয়াছেন, আরপিওসহ বেশ কয়েকটি অধ্যাদেশের খসড়া তাহারা করিয়া দিয়াছেন, প্রতিবেদন জমার পরই যেগুলি বাস্তবায়ন করা যাইত। তাঁহারও আশঙ্কা, এই সকল প্রস্তাব বাস্তবায়নে বিলম্ব হইলে অন্যান্য বিষয় ঝুলিয়া যাইবে। এখন দ্রুত নির্বাচনপ্রত্যাশী রাজনৈতিক দলসমূহ যদি এহেন বিলম্বের পশ্চাতে সরকারের নির্বাচন পিছাইবার বাসনা আবিষ্কার করে, তজ্জন্য তাহাদের দোষী বলা যাইবে কি?

আমাদের প্রত্যাশা, সরকার আশঙ্কাগুলি বিবেচনায় লইবে এবং ১২১টি প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা না করিয়া শুধু নির্বাচন-সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারসমূহ সম্পাদন করিয়া দ্রুত দেশকে নির্বাচনমুখী করিবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ