Samakal:
2025-08-01@21:58:13 GMT

বিলম্ব কাঙ্ক্ষিত নহে

Published: 30th, May 2025 GMT

বিলম্ব কাঙ্ক্ষিত নহে

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ তাহারই ঘোষিত ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সংস্কার প্রস্তাবসমূহ গত আড়াই মাসেও বাস্তবায়ন করিতে সক্ষম হয় নাই বলিয়া শুক্রবার এক হতাশাজনক সংবাদ দিয়াছে সমকাল। প্রতিবেদনমতে, গত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ হইতে উপদেষ্টা পরিষদ ১২১টি সুপারিশ নিজেরা সরাসরি বাস্তবায়নের জন্য বাছাই করিয়াছিল। বলা হইয়াছিল, এইগুলি লইয়া রাজনৈতিক দলসমূহের সহিত আলোচনার কোনো প্রয়োজন নাই। জানা গিয়াছে, গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদ এই বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে সুপারিশসমূহ আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা; বাস্তবায়নযোগ্য হইলে উহার সম্ভাব্য সময়সীমা; বাস্তবায়নের প্রভাব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত লইয়া উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করিতে নির্দেশনা দিয়াছে। অথচ গত ২২ মার্চ গণমাধ্যম কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টার নিকট হইতে এতৎসংক্রান্ত নির্দেশনা পাইয়া মন্ত্রিপরিষদ সংশ্লিষ্ট সচিবদের আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবসমূহ বাছাই করিবার নির্দেশনা দিলে শেষোক্তরা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে উক্ত ১২১ প্রস্তাব জমা দেন। উহা হতাশাজনক এই কারণে, বিষয়টা এক প্রকার ঝুলিয়া গেল। কারণ সম্পূর্ণ বিষয়টা এক প্রকার কেঁচে গণ্ডূষ করিতে হইবে। অধিকন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিমত, এখন সকল বিভাগ, মন্ত্রণালয় হইতে মতামত পাইতে যদ্রূপ সময় লাগিবে, তদ্রূপ তাহাদের এই সংক্রান্ত আইন, বিধি ও প্রশাসনিক কাঠামো সুপারিশের আলোকে পর্যালোচনায় আরও কয়েক মাস লাগিতে পারে। এমনকি মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদও কোন দিন এই কাজ শেষ হইতে পারে, তাহা বলিতে পারেন নাই। 

স্মরণ করা যাইতে পারে, গত ১৫ জানুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন, পুলিশ ও দুদক-সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনপ্রধান প্রতিবেদন জমা দিয়াছেন প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের নিকট। ৫ ফেব্রুয়ারি জমা পড়ে বিচার ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন। ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নিকট জানিতে চাহিল, সেই প্রস্তাবসমূহ আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা। ইহাও উল্লেখ করিবার প্রয়োজন, ১২১ প্রস্তাবের অধিকাংশই আইন, বিধি ও নীতিমালা সংশোধন-সংক্রান্ত। কতিপয় প্রস্তাব প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কারের। প্রায় সকল প্রস্তাব সম্পর্কেই ইতোমধ্যে জনপরিসরে ঐকমত্য রহিয়াছে। উপরন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিমত, সরকার সদিচ্ছা পোষণ করিলে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ অধ্যাদেশ জারিপূর্বক প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করিতে পারে। অর্থাৎ অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে উক্ত ১২১ সুপারিশের প্রায় সকলই দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব। 

বিতর্ক না থাকিবার পরও উক্ত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে সরকারের গদাই লস্করি এমন সময় চলিতেছে যখন সরকার এবং রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচন লইয়া নানামুখী আলোচনা প্রায় তুঙ্গে উঠিয়াছে। একদিকে সরকার ১২১টি সুপারিশ বাদ রাখিয়া অন্য বহু সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সহিত দফায় দফায় আলোচনা করিতেছে, অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম দল বিএনপিসহ সিংহভাগ দল শুধু নির্বাচন-বিষয়ক সংস্কার শেষে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জোর তাগিদ দিয়া চলিয়াছে। তদুপরি উক্ত সংস্কার-সংক্রান্ত আলোচনায় বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে দলসমূহের নিজেদের মধ্যে এবং সরকারের সহিত এমন মতপার্থক্য দেখা দিয়াছে, যেগুলির সমাধান শুধু সময়সাপেক্ষ নহে, কঠিনও বটে। এই সকল কিছু মিলাইয়া অনেকের আশঙ্কা, সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহ অদূর ভবিষ্যতে পরস্পর মুখোমুখি হইবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হইয়াছে, যাহা আদৌ কাম্য নহে। কারণ ইহার মধ্য দিয়া রাষ্ট্র ও সমাজ ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতায় নিমজ্জিত হইতে পারে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলিয়াছেন, আরপিওসহ বেশ কয়েকটি অধ্যাদেশের খসড়া তাহারা করিয়া দিয়াছেন, প্রতিবেদন জমার পরই যেগুলি বাস্তবায়ন করা যাইত। তাঁহারও আশঙ্কা, এই সকল প্রস্তাব বাস্তবায়নে বিলম্ব হইলে অন্যান্য বিষয় ঝুলিয়া যাইবে। এখন দ্রুত নির্বাচনপ্রত্যাশী রাজনৈতিক দলসমূহ যদি এহেন বিলম্বের পশ্চাতে সরকারের নির্বাচন পিছাইবার বাসনা আবিষ্কার করে, তজ্জন্য তাহাদের দোষী বলা যাইবে কি?

আমাদের প্রত্যাশা, সরকার আশঙ্কাগুলি বিবেচনায় লইবে এবং ১২১টি প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা না করিয়া শুধু নির্বাচন-সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারসমূহ সম্পাদন করিয়া দ্রুত দেশকে নির্বাচনমুখী করিবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ত ব সরক র র উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ