অর্পিত সম্পত্তি, কৃষকের জমি আটকে এলপিজি প্লান্ট
Published: 30th, May 2025 GMT
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার কিসমত ফুলতলা এলাকায় এলপিজি প্লান্ট স্থাপন করেছে জিএমআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস লিমিটেড। প্লান্টের নিরাপত্তার অজুহাত তুলে সরকারের অর্পিত সম্পত্তি ও সাধারণ কৃষকের জমি বেড়া দিয়ে আটকে দিয়েছে কোম্পানিটি। এতে নিজেদের জমিতে সহজে যেতে পারছেন না কৃষকরা। আগে যে জমিতে তিল, ডাল ও ধান চাষ করা হতো; বাধার কারণে সেখানে এখন ধান ছাড়া কিছুই চাষ করা যাচ্ছে না।
এদিকে, কৃষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে অর্পিত সম্পত্তি পুনরুদ্ধার এবং ব্যক্তিমালিকানা জমি পৃথক করার নির্দেশ দিয়েছে বিভাগীয় প্রশাসন। অর্পিত সম্পত্তি থেকে সীমানা বেড়া ও অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করতে কোম্পানিকে লাল নোটিশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসনও। কিন্তু দখল ছাড়ছে না তারা।
স্থানীয় কৃষক ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালে বটিয়াঘাটা উপজেলার কিসমত ফুলতলায় জিএমআই গ্যাস কোম্পানির এলপিজি প্লান্ট স্থাপনের কাজ শুরু হয়। প্লান্টটি খুলনা-বটিয়াঘাটা প্রধান সড়ক থেকে কিছুটা দূরে। এলপি গ্যাস প্লান্ট ও প্রধান সড়কের মাঝে ৩ দশমিক ৭৩ একর অর্পিত সম্পত্তি রয়েছে। এর পাশে রয়েছে কয়েকজন কৃষকের আরও দেড় একরের বেশি কৃষিজমি। ২০১৭ সালে অর্পিত সম্পত্তি ইজারা নেয় কোম্পানিটি। ২০২০ সালের দিকে তারা অর্পিত সম্পত্তিসহ সড়কের পাশে সম্পূর্ণ জমিতে টিনের বেড়া দিয়ে আটকে দেয়। এতে কৃষকের জমিও আটকে যায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, জিএমআই এলপিজি প্লান্টের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে প্রায় ১৫০ ফুট পর্যন্ত জমি টিনের বেড়া দিয়ে আটকানো। জমিতে প্রবেশ করতে দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হয়। অর্পিত সম্পত্তি ইজারা নিয়ে সেখানে সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক সুভাষ বৈরাগী বলেন, টিনের বেড়া দেওয়ার পর অনেক পথ ঘুরে আমাদের জমিতে যেতে হয়। আগে জমিতে ধানের পাশাপাশি তিল, ডালসহ অনেক কিছু চাষ করতাম। কিন্তু এখন বেড়ার কারণে ধান ছাড়া কিছুই আবাদ করা যায় না।
স্থানীয় জমির মালিক রবিউল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, বেড়া দেওয়ার পর ২০২২ সালে আমরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে গিয়েছিলাম। তখন আমাদের বের করে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ নেতারাও আমাদের হুমকি দেন। গত বছর ৫ আগস্টের পর উপজেলা প্রশাসনে নতুন এসিল্যান্ড এলে আমাদের সব কাগজপত্র দেখে তিনি কোম্পানিকে আমাদের জমি ছেড়ে দিতে কয়েকবার নোটিশ দেন। কিন্তু কোনো কিছুতে কাজ হচ্ছে না।
বটিয়াঘাটার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ শাওন জানান, কৃষকদের আবেদনের পর তারা সরেজমিন গিয়ে দেখতে পান, ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করে অর্পিত সম্পত্তিতে স্থাপনা নির্মাণ এবং জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে। তখন কোম্পানির ইজারা নবায়ন বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি জমি থেকে স্থাপনা ও টিনের বেড়া অপসারণের জন্য কোম্পানিকে নোটিশ দেওয়া হয়। স্থাপনা অপসারণ না করায় ৪ মার্চ তাদের লাল নোটিশ দেওয়া হয়।
জিএমআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস লিমিটেডের খুলনার ওই প্লান্টের ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) এন এম মোস্তফা কামাল বলেন, ওই স্থানে কোন জমি অর্পিত সম্পত্তি এবং কোন জমি কৃষকের, তার সীমানা দেওয়া নেই। প্লান্টের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা পুরো জায়গা বেড়া দিয়েছি। উপজেলা প্রশাসনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সময় চেয়েছি।
স্থানীয় জমির মালিক রাকিন বিশ্বাস বলেন, আমরাও জমির সীমানা চিহ্নিত করে আমাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া এবং বেড়া সরানোর জন্য অনুরোধ করছি। গত ২৯ এপ্রিল বিভাগীয় কমিশনারের অফিস থেকে সরকারি সম্পত্তি পুনরুদ্ধার এবং আমাদের জমি মেপে বুঝিয়ে দিতে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন কোম্পানির সুরে কথা বলছে।
অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা তান্নি বলেন, ইজারা নবায়নের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেশের বাইরে রয়েছেন। ঈদের পর তিনি দেশে ফিরলে বেড়ার বিষয়টি সুরাহা করা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অর্পিত সম্পত্তি, কৃষকের জমি আটকে এলপিজি প্লান্ট
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার কিসমত ফুলতলা এলাকায় এলপিজি প্লান্ট স্থাপন করেছে জিএমআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস লিমিটেড। প্লান্টের নিরাপত্তার অজুহাত তুলে সরকারের অর্পিত সম্পত্তি ও সাধারণ কৃষকের জমি বেড়া দিয়ে আটকে দিয়েছে কোম্পানিটি। এতে নিজেদের জমিতে সহজে যেতে পারছেন না কৃষকরা। আগে যে জমিতে তিল, ডাল ও ধান চাষ করা হতো; বাধার কারণে সেখানে এখন ধান ছাড়া কিছুই চাষ করা যাচ্ছে না।
এদিকে, কৃষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে অর্পিত সম্পত্তি পুনরুদ্ধার এবং ব্যক্তিমালিকানা জমি পৃথক করার নির্দেশ দিয়েছে বিভাগীয় প্রশাসন। অর্পিত সম্পত্তি থেকে সীমানা বেড়া ও অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করতে কোম্পানিকে লাল নোটিশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসনও। কিন্তু দখল ছাড়ছে না তারা।
স্থানীয় কৃষক ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালে বটিয়াঘাটা উপজেলার কিসমত ফুলতলায় জিএমআই গ্যাস কোম্পানির এলপিজি প্লান্ট স্থাপনের কাজ শুরু হয়। প্লান্টটি খুলনা-বটিয়াঘাটা প্রধান সড়ক থেকে কিছুটা দূরে। এলপি গ্যাস প্লান্ট ও প্রধান সড়কের মাঝে ৩ দশমিক ৭৩ একর অর্পিত সম্পত্তি রয়েছে। এর পাশে রয়েছে কয়েকজন কৃষকের আরও দেড় একরের বেশি কৃষিজমি। ২০১৭ সালে অর্পিত সম্পত্তি ইজারা নেয় কোম্পানিটি। ২০২০ সালের দিকে তারা অর্পিত সম্পত্তিসহ সড়কের পাশে সম্পূর্ণ জমিতে টিনের বেড়া দিয়ে আটকে দেয়। এতে কৃষকের জমিও আটকে যায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, জিএমআই এলপিজি প্লান্টের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে প্রায় ১৫০ ফুট পর্যন্ত জমি টিনের বেড়া দিয়ে আটকানো। জমিতে প্রবেশ করতে দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হয়। অর্পিত সম্পত্তি ইজারা নিয়ে সেখানে সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক সুভাষ বৈরাগী বলেন, টিনের বেড়া দেওয়ার পর অনেক পথ ঘুরে আমাদের জমিতে যেতে হয়। আগে জমিতে ধানের পাশাপাশি তিল, ডালসহ অনেক কিছু চাষ করতাম। কিন্তু এখন বেড়ার কারণে ধান ছাড়া কিছুই আবাদ করা যায় না।
স্থানীয় জমির মালিক রবিউল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, বেড়া দেওয়ার পর ২০২২ সালে আমরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে গিয়েছিলাম। তখন আমাদের বের করে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ নেতারাও আমাদের হুমকি দেন। গত বছর ৫ আগস্টের পর উপজেলা প্রশাসনে নতুন এসিল্যান্ড এলে আমাদের সব কাগজপত্র দেখে তিনি কোম্পানিকে আমাদের জমি ছেড়ে দিতে কয়েকবার নোটিশ দেন। কিন্তু কোনো কিছুতে কাজ হচ্ছে না।
বটিয়াঘাটার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ শাওন জানান, কৃষকদের আবেদনের পর তারা সরেজমিন গিয়ে দেখতে পান, ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করে অর্পিত সম্পত্তিতে স্থাপনা নির্মাণ এবং জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে। তখন কোম্পানির ইজারা নবায়ন বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি জমি থেকে স্থাপনা ও টিনের বেড়া অপসারণের জন্য কোম্পানিকে নোটিশ দেওয়া হয়। স্থাপনা অপসারণ না করায় ৪ মার্চ তাদের লাল নোটিশ দেওয়া হয়।
জিএমআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস লিমিটেডের খুলনার ওই প্লান্টের ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) এন এম মোস্তফা কামাল বলেন, ওই স্থানে কোন জমি অর্পিত সম্পত্তি এবং কোন জমি কৃষকের, তার সীমানা দেওয়া নেই। প্লান্টের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা পুরো জায়গা বেড়া দিয়েছি। উপজেলা প্রশাসনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সময় চেয়েছি।
স্থানীয় জমির মালিক রাকিন বিশ্বাস বলেন, আমরাও জমির সীমানা চিহ্নিত করে আমাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া এবং বেড়া সরানোর জন্য অনুরোধ করছি। গত ২৯ এপ্রিল বিভাগীয় কমিশনারের অফিস থেকে সরকারি সম্পত্তি পুনরুদ্ধার এবং আমাদের জমি মেপে বুঝিয়ে দিতে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন কোম্পানির সুরে কথা বলছে।
অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা তান্নি বলেন, ইজারা নবায়নের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেশের বাইরে রয়েছেন। ঈদের পর তিনি দেশে ফিরলে বেড়ার বিষয়টি সুরাহা করা হবে।