ঈদুল আজহার বাকি কয়েকদিন। এরই মধ্যে পশু সরবরাহ বাড়ছে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা হাটে। বছরের অন্য সময় সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শুক্রবার এখানে পশু বিক্রি হয়। ঈদ সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার থেকে টানা হাট বসার কথা ছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার হাট বসানো যায়নি। তবে মঙ্গলবারের হাটে আসা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ক্রেতারা যে দাম বলছেন, এতে গরুপ্রতি তাদের ৬-৭ হাজার টাকা লোকসান হবে।
সূত্র জানিয়েছে, আগামীকাল রোববার থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত এখানে পশু বিক্রি চলবে। তবে মঙ্গলবারের হাটে ক্রেতার উপস্থিতি কম দেখে হতাশা প্রকাশ করেন আসা বিক্রেতারা। খামারিরা বলছেন, এবার গরু লালনপালনে খরচ বেশি হয়েছে। তাই একটু বেশি দামে গরু বিক্রি করতে হবে। কিন্তু ক্রেতারা সেই অনুযায়ী দাম বলছেন না।
এ বিষয়ে কথা হয় শিবালয়ের উথলী ইউনিয়নের বাশাইল গ্রামের ঐশী ডেইরি ফার্মের মালিক আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার আরিচা হাটে ক্রেতার সংখ্যা ছিল খুবই কম। তাই গরু বিক্রি হয়েছে কম। এই খামারি আশা করছেন, ঈদের ২-৩ দিন আগে হাট জমে উঠবে।
মঙ্গলবার এই হাটে ৩৫টি গরু নিয়ে আসেন পাবনার কাজীর হাট এলাকার বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, এদিন ক্রেতা একেবারেই কম ছিল। যারা এসেছেন, দামদরে মিল না পড়ায় কোনো গরুই বিক্রি করতে পারেননি।
হাটে দেশি গরুর পাশাপাশি শাহিওয়াল, ফ্রিজিয়ান ও শংকর জাতের গরু বেশি দেখা গেছে। বেশির ভাগ গরু বিক্রি হচ্ছে ওজনের ওপর নির্ভর করে। এদিন ৭৫টি গরু নিয়ে আসা ওহাব হোসেন বলেন, মাত্র ১২টি গরু বিক্রি হয়েছে তাঁর। প্রতি মণ ২৬-২৭ হাজার টাকা হিসাব করে হলেও গরু বিক্রি করতেন। কিন্তু ক্রেতারা যে দাম বলছেন, এতে গরুপ্রতি তাঁর ৬-৭ হাজার টাকা লোকসান হবে। এ দামে তিনি বিক্রি করবেন না। ফিরিয়ে নেবেন গরু।
এসব বিষয়ে কথা হয় উপজেলার বোয়ালী ডেইরি ফার্মের মালিক আতিয়ার রহমান, যমদুয়ারা জেপি ফার্মের মালিক আনোয়ার হোসেন, মেসার্স তুহিন এগ্রো ফার্মের খামারি জাহাঙ্গীর আলমসহ ২০-২৫ জন খামারমালিকের সঙ্গে। কোরবানি সামনে রেখে এদের কেউ কেউ খামারের জন্য ঋণ নিয়েছেন এনজিও থেকে, কেউ ব্যক্তিগতভাবে। তাদের সবার কথা, গত বছরের চেয়ে গোখাদ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। যে কারণে প্রতিটি গরুর পেছনে খরচ বেশি হয়েছে ১২-১৩ হাজার টাকা বেশি। সেই অনুপাতে এবার কোরবানির পশু একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। না পারলে সবারই লোকসান হবে। কিন্তু হাটে যে দামে গরু বিক্রি হচ্ছে, এতে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত তারা।
আরিচা গরু হাটের ইজারাদারের ব্যবস্থাপক হিরু মিয়ার ভাষ্য, তারা শতকরা ৩ টাকা হারে খাজনা আদায় করছেন। মঙ্গলবারের হাটে আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। তাই খাজনাও তেমন আদায় হয়নি।
উপজেলা উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো.
আরিচা হাটটি উপজেলার একমাত্র পশুহাট। ২০২৫ সালে এ হাট ৪ কোটি ৫ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন ফরিদপুরের ব্যবসায়ী মো. গোলাম কুদ্দুস মিয়া। আগের বছরের তুলনায় যা প্রায় দেড় কোটি টাকা কম। এ তথ্য জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন বলেন, ২০২৪ সালে একই ব্যবসায়ী ৫ কোটি ৬৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬ টাকায় ইজারা নিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় এবং ২০২২ সালে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা দেওয়া হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট: ‘মৃত’ নন জীবিত এমন ১৫ জনকে হাজির করলে ব্যবস্থা
বিহারে খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ চিহ্নিত ১৫ জন জীবিতকে হাজির করাতে পারলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ব্যবস্থা নেবেন। বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলাকারীদের আইনজীবীদের এ আশ্বাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি সূর্য কান্ত ও জয়মাল্য বাগচী এ আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া দেওয়া হলে তাঁরা অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
আবেদনকারীদের উদ্দেশে দুই বিচারপতি বলেছেন, প্রক্রিয়ায় অনিয়ম বা ত্রুটি পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।
মামলাকারীদের আবেদন মেনে সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য খসড়া ভোটার তালিকা পেশ করার ওপর স্থগিতাদেশ দেননি। তবে ইসিকে তাঁরা বলেছেন, তাদের কাজ গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া নয়। তাদের দেখা উচিত যাতে গণহারে ভোটারদের তালিকাভুক্ত করা যায়।
এসআইআর–প্রক্রিয়া অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংশোধনের পর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে ১ আগস্ট। সে লক্ষ্যেই ইসি এগিয়ে চলেছে। ইসি সূত্রে খবর, নিবিড় সংশোধনপ্রক্রিয়ার পর প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে ৬৫ লাখেরও বেশি নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২২ জন ‘মৃত’, ৩৬ লাখ ‘নিখোঁজ’। এ ছাড়া বেশ কয়েক লাখ ভোটারের নাম বিভিন্ন এলাকার তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ একই ভোটার অন্তত দুই জায়গায় নথিভুক্ত। আগের তালিকা অনুযায়ী বিহারে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৮৯ লাখ। ইসির দাবি, এই তালিকায় বহু ভোটার ভুয়া। তাদের বাদ দিতেই এই নিবিড় সংশোধন।
যে প্রক্রিয়ায় এই খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, মামলাকারীদের আপত্তি তা নিয়েই। তাঁদের অভিযোগ, ইসি যেভাবে নাগরিকত্বের যাচাই করছে, সে জন্য যেসব নথি পেশ করতে বলা হচ্ছে, তা বহু ক্ষেত্রে সম্ভবপর নয়। তেমন করা তাদের কাজও নয়। সেই কাজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তাঁদের অভিযোগ, এভাবে বহু দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের ভোটাধিকার ইসি কেড়ে নিচ্ছে।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। মঙ্গলবারের শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে আশ্বস্ত করে বিচারপতিরা বলেন, কমিশনের ত্রুটি–বিচ্যুতি দেখলে তাঁরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। ভোটার প্রমাণে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ডকে নথি হিসেবে গ্রাহ্য করার সুপারিশ বিচারপতিরা জোরের সঙ্গে করেছেন। এই দুই নথি জাল করা সহজ বলে ইসির দাবি নস্যাৎ করে বিচারপতিরা বলেছেন, যে ১১টি নথির ওপর নির্ভর করে তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেগুলোর প্রতিটিই জাল করা সম্ভব। কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে বিচারপতিরা বলেন, খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ অথচ আসলে জীবিত, এমন ১৫ জনকে আপনারা হাজির করুন। আমরা ব্যবস্থা নেব।
আগামী ১২ ও ১৩ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে ৮ আগস্টের মধ্যে মামলাকারীদের বক্তব্য লিখিতভাবে আদালতে পেশ করতে হবে।