Samakal:
2025-06-01@01:15:00 GMT

গরুপ্রতি লোকসান হবে ৬-৭ হাজার

Published: 30th, May 2025 GMT

গরুপ্রতি লোকসান হবে ৬-৭ হাজার

ঈদুল আজহার বাকি কয়েকদিন। এরই মধ্যে পশু সরবরাহ বাড়ছে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা হাটে। বছরের অন্য সময় সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শুক্রবার এখানে পশু বিক্রি হয়। ঈদ সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার থেকে টানা হাট বসার কথা ছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার হাট বসানো যায়নি। তবে মঙ্গলবারের হাটে আসা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ক্রেতারা যে দাম বলছেন, এতে গরুপ্রতি তাদের ৬-৭ হাজার টাকা লোকসান হবে।
সূত্র জানিয়েছে, আগামীকাল রোববার থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত এখানে পশু বিক্রি চলবে। তবে মঙ্গলবারের হাটে ক্রেতার উপস্থিতি কম দেখে হতাশা প্রকাশ করেন আসা বিক্রেতারা। খামারিরা বলছেন, এবার গরু লালনপালনে খরচ বেশি হয়েছে। তাই একটু বেশি দামে গরু বিক্রি করতে হবে। কিন্তু ক্রেতারা সেই অনুযায়ী দাম বলছেন না। 
এ বিষয়ে কথা হয় শিবালয়ের উথলী ইউনিয়নের বাশাইল গ্রামের ঐশী ডেইরি ফার্মের মালিক আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার আরিচা হাটে ক্রেতার সংখ্যা ছিল খুবই কম। তাই গরু বিক্রি হয়েছে কম। এই খামারি আশা করছেন, ঈদের ২-৩ দিন আগে হাট জমে উঠবে। 
মঙ্গলবার এই হাটে ৩৫টি গরু নিয়ে আসেন পাবনার কাজীর হাট এলাকার বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, এদিন ক্রেতা একেবারেই কম ছিল। যারা এসেছেন, দামদরে মিল না পড়ায় কোনো গরুই বিক্রি করতে পারেননি। 
হাটে দেশি গরুর পাশাপাশি শাহিওয়াল, ফ্রিজিয়ান ও শংকর জাতের গরু বেশি দেখা গেছে।  বেশির ভাগ গরু বিক্রি হচ্ছে ওজনের ওপর নির্ভর করে। এদিন ৭৫টি গরু নিয়ে আসা ওহাব হোসেন বলেন, মাত্র ১২টি গরু বিক্রি হয়েছে তাঁর। প্রতি মণ ২৬-২৭ হাজার টাকা হিসাব করে হলেও গরু বিক্রি করতেন। কিন্তু ক্রেতারা যে দাম বলছেন, এতে গরুপ্রতি তাঁর ৬-৭ হাজার টাকা লোকসান হবে। এ দামে তিনি বিক্রি করবেন না। ফিরিয়ে নেবেন গরু। 
এসব বিষয়ে কথা হয় উপজেলার বোয়ালী ডেইরি ফার্মের মালিক আতিয়ার রহমান, যমদুয়ারা জেপি ফার্মের মালিক আনোয়ার হোসেন, মেসার্স তুহিন এগ্রো ফার্মের খামারি জাহাঙ্গীর আলমসহ ২০-২৫ জন খামারমালিকের সঙ্গে। কোরবানি সামনে রেখে এদের কেউ কেউ খামারের জন্য ঋণ নিয়েছেন এনজিও থেকে, কেউ ব্যক্তিগতভাবে। তাদের সবার কথা, গত বছরের চেয়ে গোখাদ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। যে কারণে প্রতিটি গরুর পেছনে খরচ বেশি হয়েছে ১২-১৩ হাজার টাকা বেশি। সেই অনুপাতে এবার কোরবানির পশু একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। না পারলে সবারই লোকসান হবে। কিন্তু হাটে যে দামে গরু বিক্রি হচ্ছে, এতে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত তারা। 
আরিচা গরু হাটের ইজারাদারের ব্যবস্থাপক হিরু মিয়ার ভাষ্য, তারা শতকরা ৩ টাকা হারে খাজনা আদায় করছেন। মঙ্গলবারের হাটে আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। তাই খাজনাও তেমন আদায় হয়নি। 
উপজেলা উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো.

মিজানুর রহমানের তথ্যমতে, শিবালয়ে এবার কোরবানির জন্য ৪ হাজার ৯৬১টি গরু ও ছয় শতাধিক ছাগল প্রস্তুত আছে। চাহিদা রয়েছে দেড় হাজার পশুর। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অর্ধেকের বেশি পশু বাইরে বিক্রি করতে পারবেন খামারিরা।
আরিচা হাটটি উপজেলার একমাত্র পশুহাট। ২০২৫ সালে এ হাট ৪ কোটি ৫ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন ফরিদপুরের ব্যবসায়ী মো. গোলাম কুদ্দুস মিয়া। আগের বছরের তুলনায় যা প্রায় দেড় কোটি টাকা কম। এ তথ্য জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন বলেন, ২০২৪ সালে একই ব্যবসায়ী ৫ কোটি ৬৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬  টাকায় ইজারা নিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় এবং ২০২২ সালে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা দেওয়া হয়। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গর উপজ ল র বলছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মেয়েকে ‘খুশি’ করতে এনরিকের ৫ গোলের ‘খেলনা’

ছবিটি বেশ কিছুদিন হলো ফিরে এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এখন অবশ্য আরও বেশি চোখে পড়ার কথা।

বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে স্যূট পরা লুইস এনরিকে। কোমরে হাত দিয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে। মিটিমিটি হাসছেন। একটু দূরেই তাঁর পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে জানার হাতে বার্সেলোনার লাল-নীল-হলুদ পতাকা। মেয়ের কাণ্ড দেখে বাবা যেন খুশিতে আটখানা!

এক দশক আগের সেই স্মৃতি যাঁদের স্মরণে আছে, এই ছবিটি দেখে তাঁদের এটাও মনে পরতে পারে পরে কী ঘটেছিল। বাবাকে সাক্ষী রেখে জার্মানির মাটিতে বার্সেলোনার পতাকা পুঁতেছিল জানা।

আরও পড়ুনইন্টারকে গোলের মালা পরিয়ে ইউরোপসেরার মুকুট পিএসজির৪ ঘণ্টা আগে

চার বছর পর ২০১৯ সালে জানা মারা গেল। তার আগে হাড়ের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়েছে পাঁচ মাস। এনরিকে তখন স্পেন দলের কোচ। দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন মেয়ের কাছে। ফিরেছিলেন পাঁচ মাস পর। পরিবারের সঙ্গে শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার সেই সময়ে এনরিকের যোগাযোগ ছিল শুধু স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে। ৯ বছর বয়সী মেয়েকে হারাতে কেমন লাগে, সেসব কথা তিনি কাউকে বলবেন না বলে হোয়াটসঅ্যাপেও ছিলেন না।

সেই এনরিকেই মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় শেষ বাঁশি বাজার আগেই অন্য রুপে। আনন্দে ভেসে গেলে যেমন হয় আরকি!

দুই হাত তুলে উদ্‌যাপন তো ছিলই, ম্যাচ শেষে পিএসজির খেলোয়াড়দের জড়িয়ে ধরে তাঁর কী উল্লাস! চোখে দেখা কারণ হলো, কিছুক্ষণ আগেই মাঠে ইতিহাস গড়েছে এনরিকের পিএসজি। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে বিধ্বস্ত করেছে ৫-০ গোলে। এই প্রতিযোগিতার ফাইনালের ইতিহাসে এর আগে কোনো দল এত বড় ব্যবধানে জিততে পারেনি। আর পিএসজিও আরাধ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে হলো ট্রেবলজয়ীও, যেটা এনরিকের জন্য আবার বার্সাতেই চেখে দেখা স্বাদ।

খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে সফল এনরিকের ওভাবে আনন্দে ভেসে যাওয়ার কারণ তাই শুধু মাঠের ফলই নয়। কারণ এসব সাফল্যের কিছুই এনরিকের জীবনে নতুন না। যেটা নতুন, সেটা হলো, মেয়েকে হয়তো খুশি করতে পেরেছেন। সেজন্যই কি এনরিকের মুখে হাসি আর ধরে না!

গত জানুয়ারির কথা। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কাকে এনরিকে বলেছিলেন, ‘বার্লিনে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর আমার সঙ্গে তার একটি অবিশ্বাস্য ছবি মনে আছে। মাঠে বার্সেলোনার পতাকা পোঁতার ছবি। আশা করি পিএসজির সঙ্গেও এটা করতে পারব।’

এটুকু পড়ার পর নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে, পিএসজির পতাকা বাবা-মেয়ে একসঙ্গে পুঁতবে কীভাবে? জানা তো নেই।

এনরিকের বাকি কথাগুলো শুনুন। তাতে বাবার কষ্টটা হয়তো একটু ধরা যায়, ‘আমার মেয়ে সেখানে (ফাইনাল) থাকবে না, শারীরিকভাবে থাকবে না। কিন্তু আধ্যাত্মিকভাবে থাকবে আর এটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’

কেন গুরুত্বপূর্ণ, সে প্রশ্নের উত্তর অন্তত বাবাদের জানা। মেয়েটা দেখে কষ্ট পাবে, এমন কিছু তাঁর সামনে করা যাবে না; মানে হারা যাবে না, ম্যাচটি ফাইনাল হওয়ায় অন্য অর্থে জিততে হবে। তাই মেয়েকে খুশি করতেই হয়তো এনরিকের এই পাঁচ গোলের ‘খেলনা’!

ইন্টারকে সেটা বানানোর পর এনরিকের গায়ে দেখা গেল একটা কালো টি-শার্ট। সামনে বুকের ওপর ১০ বছর আগের সেই ছবিটির মতো বাবা-মেয়ের পিএসজির পতাকা পোঁতার স্কেচ। অর্থাৎ জানুয়ারিতে বলা সেই কথাগুলো শুধু কথার কথা ছিল না। তাহলে পিএসজির ইউরোপসেরার এ মুকুট মেয়ে হারানো এক বাবার বিশুদ্ধ আবেগের পিছু ছোটার ফলও।

সেই আবেগ সংক্রমিত হয়েছে পিএসজির সমর্থকদের মধ্যেও। ফরাসি ক্লাবটির খেলোয়াড়েরা ততক্ষণে ট্রফি বুঝে নিয়েছেন। গ্যালারিতে ভেসে উঠল এনরিকে ও তাঁর প্রয়াত মেয়েকে নিয়ে বানানো বড় এক তিফো। তাতে ফুটে ওঠা ছবিটি এমন, মাঠে এনরিকে পিএসজির পতাকা পুঁতছেন, ৮ বছর বয়সী জানা পাশেই দাঁড়িয়ে, পরনে পিএসজির ৮ নম্বর জার্সি।

এনরিকেরও চোখে পড়েছে এই তিফো। দেখার পর কেমন লেগেছে সেটাও বলেছেন মিক্সড জোনে ‘খুব ভালো লাগছে। সমর্থকেরা আমার পরিবারের জন্য যে ব্যানার করেছে সেটা খুবই আবেগপূর্ণ ব্যাপার। তবে আমি সব সময় মেয়ের কথাই ভাবি।’

স্প্যানিশ এ কোচের সহজ যুক্তি, ‘মেয়েকে মনে রাখতে আমার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের দরকার নেই। সে সব সময় আমাদের সঙ্গেই আছে, বিশেষ করে যখন আমরা হেরে যাই।’

হারে কেউ পাশে দাঁড়ালে মনের কষ্ট লাঘব হয়। কিন্তু জয়ে পাশে দাঁড়ালে আনন্দ হয়। এনরিকে অনুচ্চারে ও অদৃশ্যে আনন্দটুকু ভাগ করেছেন জানার সঙ্গে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ