ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ভবুকদিয়া গ্রামে বোনের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা যুগ্ম-সদস্য সচিব বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান তারা মোল্যা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। 

শুক্রবার (৩০ মে) বিকেলে ঘটে যাওয়া এ ঘটনার প্রতিবাদে রাত ৮টার দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৈশাখী ইসলামের বোনকে কিছুদিন ধরে স্থানীয় যুবক জালাল বেপারীর ছেলে শরীফ বেপারী উত্ত্যক্ত করে আসছিল। এ বিষয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানো হলে শুক্রবার সকাল ১১টায় শালিস বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু বৈঠক না হওয়ায় বৈশাখী দুপুরে থানা পুলিশ ও ইউএনওর কাছে অভিযোগ জানান। 

পরে পুলিশের একটি দল নিয়ে বাড়ি ফিরলে বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান তারা মোল্যা ও তার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বৈশাখীর ওপর হামলা চালায়। এ সময় উপস্থিত পুলিশের ওপরও হামলা হয়, ফলে পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

হামলার পরপরই বৈশাখী ফেসবুক লাইভে এসে আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “জুলাই আন্দোলন করা কি আমাদের ভুল ছিল? বিএনপির পোলাপানরা রাস্তায় ফেলে মারছে, চুল ধরে লাথি মারছে। আমার আব্বাকে খুঁজছে মারার জন্য।” 

মাত্র ৩০ সেকেন্ডের এই লাইভ ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টার মধ্যে ভিডিওটি এক লাখেরও বেশি ভিউ পায়।

বৈশাখীর এই লাইভ দেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা নেতৃবৃন্দ ভবুকদিয়া গ্রামে তার বাড়িতে ছুটে যান। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে বিএনপির লোকজন বৈশাখী ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুনরায় হামলা চালায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈশাখী ইসলাম বলেন, “বোনের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান তারা মোল্যা ও তার লোকজন আমাকে রাস্তায় ফেলে মারধর করেছে, চুল ধরে লাথি মেরেছে। তারা আমার বাবাকেও মারার হুমকি দিয়েছে। আমি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং আমার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য জোরালো বিচার দাবি করছি।”

এ ঘটনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি করেছে।

ফরিদপুর জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র জেবা তাহাসিন বলেন, “আমরা ফেসবুকে ঘটনার লাইভ দেখতে পেয়েছি। লাইভ দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য এগিয়ে এসেছি।”

ফরিদপুর জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কাজী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যারা এই ন্যক্কারজনক হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। উত্ত্যক্তকারী শরীফ বেপারীকে পুলিশ আটক করেছে। হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।

ফরিদপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল), মো.

আসিফ ইকবাল বলেন, “এই মুহূর্তে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। উত্ত্যক্তকারী শরীফ বেপারীকে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে। হামলার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।”

ঢাকা/তামিম/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ব এনপ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় অপু গ্রেপ্তার

রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির মামলায় এজাহারনামীয় আসামি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে ওয়ারী থেকে ডিবির ওয়ারী বিভাগের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছেন। তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।

গত ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একটি চক্র রাজধানীর গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব অপু এবং আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। এ সময় শাম্মী আহমেদ দেশের বাইরে থাকায় তার স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে জিম্মি করে ভয় দেখানো হয়।

চক্রটি বাসায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে প্রথম ধাপে ১০ লাখ টাকা আদায় করে নেয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা ভাগ পান অপু এবং বাকি ৫ লাখ পান রিয়াদ। চাঁদার দ্বিতীয় কিস্তি আনতে ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় আবারও গুলশানের ওই বাসায় গেলে চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, সাকদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং আমিনুল ইসলাম। তাদের সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বিভিন্ন পদে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পরপরই  তাদেরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে, চাঁদাবাজির এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এজাহারনামীয় ছয় আসামি ও অজ্ঞাত ১০-১২ জন সমন্বয়ক পরিচয়ে ১৭ জুলাই সকালে আমার গুলশান-২ নম্বরের বাসায় আসে। যার মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেখায়। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে ১০ লাখ টাকা দিই। পরে ১৯ জুলাই রাতে রিয়াদ ও অপু আমার বাসায় এসে ধাক্কাধাক্কি করে, যা আমি পুলিশকে ফোন করে জানাই। এ সময় অভিযুক্তরা সেখান থেকে সটকে পড়ে।

এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ২৬ জুলাই শনিবার বিকেলে রিয়াদের নেতৃত্বে আসামিরা আমার বাসার সামনে এসে আমাকে খুঁজতে থাকে। আমি বাসায় না থাকায় বাসার দারোয়ান আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। এ সময় আসামিরা তাদের দাবিকৃত আরো ৪০ লাখ টাকা না দিলে আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হবে বলে হুমকি দিতে থাকে।

ঢাকা/এমআর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ