হার্ভার্ডপড়ুয়া সি চিন পিংয়ের মেয়ে কি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন, তাঁকে কেন বহিষ্কারের দাবি উঠল
Published: 31st, May 2025 GMT
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মেয়ে সি মিংজেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক ভাষ্যকার লরা লুমার।
চীনের প্রেসিডেন্টের মেয়ে সি মিংজে ২০১৪ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
মার্কিন রাজনৈতিক ভাষ্যকার লরা লুমার দাবি করেছেন, সি মিংজে এখনো ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে একজন বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে বসবাস করছেন। তবে এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
দ্য নিউইয়র্কার ২০১৫ সালে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, হার্ভার্ড থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর সি মিংজে চীনে ফিরে যান। এর পর থেকেই তিনি অনেকটা আড়ালে জীবন যাপন করছেন। গণমাধ্যমে তাঁকে প্রকাশ্যে তেমন দেখা যায় না।
লুমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে লিখেছেন, ‘সি চিন পিংয়ের মেয়েকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করো।’
পোস্টে লুমার আরও দাবি করেন, ‘তিনি (সির মেয়ে) ম্যাসাচুসেটসে থাকেন এবং তিনি হার্ভার্ডে পড়াশোনা করেছেন। আমার সূত্র অনুযায়ী, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সদস্যরা তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে নিরাপত্তা দেন।’
কট্টর ডানপন্থী এই মার্কিন রাজনৈতিক ভাষ্যকার তাঁর এক্স পোস্টটিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ মার্কিন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ট্যাগ করেন। কিন্তু তিনি তাঁর দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি বা সূত্রের নাম উল্লেখ করেননি।
নিউজউইকের পক্ষ থেকে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাস এবং লুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এটা কেন গুরুত্বপূর্ণ
বর্তমানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে আইনি টানাপোড়েন চলছে, বিশেষ করে বিদেশি শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে এই টানাপোড়েন বেড়েই চলছে। ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি বাতিল করেছে। এ ছাড়া হার্ভার্ডকে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়ানো এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগেও অভিযুক্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ রয়েছেন চীনের শিক্ষার্থী।
কী জানা গেল
লুমার তাঁর অনুসারীদের এই ইস্যু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি তাঁর পোস্টে যাঁদের ট্যাগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, সীমান্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা টম হোম্যান ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম।
সি মিংজে এখনো যুক্তরাষ্ট্রে আছেন—এমন কোনো প্রমাণ না থাকলেও লুমারের এ অভিযোগ এমন এক সময়ে এল, যখন মার্কো রুবিও চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন।
রুবিও এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত বা সংবেদনশীল বিষয়ে পড়াশোনা করছেন, এমন শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র।
ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের এক গবেষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করা ৯২ শতাংশ চীনা শিক্ষার্থী ডিগ্রি অর্জনের পাঁচ বছর পরও যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যান। দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৪১ শতাংশ।
রিপাবলিকান পার্টি যুক্তরাষ্ট্রে নির্দিষ্ট কিছু দেশের শিক্ষার্থীদের ভিসা সীমিত করার চেষ্টা করছে। সিনেটর এরিক শ্মিট ‘প্রটেক্টিং হায়ার এডুকেশন ফ্রম দ্য চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি অ্যাক্ট’ নামে একটি বিল উত্থাপন করেছেন, যাতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য শিক্ষার্থী ভিসা নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে।
চীন এ ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করে বলেছে, শিক্ষার কোনো রকম ব্যাঘাত হওয়া উচিত নয় এবং দেশটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং ২৮ মে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চীন মনে করে, স্বাভাবিক শিক্ষা সহযোগিতা ও শিক্ষাসংক্রান্ত বিনিময় কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়া উচিত নয়।
মাও নিং বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাই যেন তারা বিদেশে অবস্থানরত চীনা শিক্ষার্থীসহ সব বিদেশি শিক্ষার্থীর বৈধ অধিকার ও স্বার্থ যথাযথভাবে রক্ষা করে।’
কে এই সি মিংজে
সি মিংজের জন্ম ১৯৯২ সালে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও বিখ্যাত লোকগায়িকা পেং লিউয়ানের একমাত্র মেয়ে তিনি। তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ছদ্মনামে মনোবিজ্ঞান পড়াশোনা করেন এবং ব্যক্তিগত জীবন গোপন রাখেন। মাঝেমধ্যে তিনি তার মা–বাবার সঙ্গে প্রকাশ্যে দেখা দেন। ২০০৮ সালে চীনের সিচুয়ানে ভূমিকম্পের পর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিলেন সি মিংজে। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর।
বর্তমানে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির শুধু শিক্ষার্থী নন, বরং সব ভিসাধারীর ওপর বাড়তি নজরদারি করছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর হার্ভার্ড–সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী, ব্যবসা, ভ্রমণ ও অন্যান্য ভিসার বিষয়গুলো আবার যাচাই-বাছাই করছে।
নতুন করে নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সব ধরনের শিক্ষার্থী ভিসার আবেদনপ্রক্রিয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ লাখ ডলারের অনুদান বাতিল করেছে। কারণ, প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত কিছু প্রস্তাবিত পরিবর্তনের সঙ্গে সহমত হয়নি। এসব পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি (ডিইআই) প্রোগ্রাম বন্ধ করা, শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলাভঙ্গ–সংক্রান্ত নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করা এবং ফেস মাস্ক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ ফেলো আরন রিচলিন-মেলনিক এনএএফএসএর পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘ছাত্র ভিসা সাক্ষাৎকার স্থগিত করার ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বছরে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ক্ষতি এবং ৩ লাখ ৭০ হাজার চাকরি হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’
মেলনিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আরও লিখেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি শিক্ষার্থী নেওয়া বন্ধ করে দেয়, তাহলে তার অর্থনৈতিক প্রভাব হবে ভয়াবহ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ র ভ র ড ইউন ভ র স ট য ক তর ষ ট র র পরর ষ ট র ব শ বব মন ত র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আইয়ার–ঝড়ে ফাইনালে পাঞ্জাব, নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে আইপিএল
প্রথমে ব্যাট করে ২০০ করা মানেই মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের জয়, ব্যাপারটা এমনই ছিল। পরিসংখ্যানটা আর নিখুঁত রইল না। ২০০ করে প্রথম ১৮ ম্যাচেই জেতা মুম্বাই আজ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ২০৩ রান করেও হেরে গেছে পাঞ্জাব কিংসের কাছে। আর ৫ উইকেটের জয়ে ১১ বছর পর আবার ফাইনালে আইপিএলের ফাইনালে উঠল পাঞ্জাব। যেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। পাঞ্জাবের মতো বেঙ্গালুরুও কখনো জেতেনি আইপিএল। যার অর্থ, মঙ্গলবারের ফাইনালে নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে যাচ্ছে আইপিএল
আহমেদাবাদে পাঞ্জাবের জয়ের নায়ক শ্রেয়াস আইয়ার। ৪১ বলে ৮৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেই এক ওভার হাতে রেখেই দলকে জিতিয়েছেন পাঞ্জাব অধিনায়ক। ৮টি ছক্কা মেরেছেন আইয়ার। যার সর্বশেষটি হয়ে আছে জয়সূচক শট।
রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি পাঞ্জাবের। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে যখন ওপেনার প্রভসিমরান সিং ফিরলেন দলটির স্কোর ১৩/১। এরপর অবশ্য ঝড় তোলেন প্রিয়াংশ আর্য ও জশ ইংলিস। ১৮ বলেই দ্বিতীয় উইকেটে ৪২ রান যোগ করেন দুজন। এর ২০ রানই এসেছে যশপ্রীত বুমরার করা পঞ্চম বলে। ২টি করে চার-ছক্কায় ২০ রানই এসেছে ইংলিসের ব্যাট থেকে। এবারের আইপিএলে বুমরার ওভারে সবচেয়ে বেশি তোলার রেকর্ড এটিই।
চতুর্থ উইকেটে ৪৭ বলে ৮৪ রান যোগ করেন শ্রেয়াস আইয়ার ও নেহাল ওয়াধেরা