ফ্রিদা কাহলো। মেক্সিকান পেইন্টার। সেল্ফ পোর্ট্রেইটে বা আত্মপ্রতিকৃতিকে নিয়ে গিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। কিংবদন্তি এই চিত্রশিল্পীর বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক
১৯২৫ সালে আমার তখনকার প্রেমিকের সঙ্গে একটা স্ট্রিটকারে ঘুরে বেড়ানোর সময়, বাসের ধাক্কায় কারটি দুমড়েমুচড়ে যায়। একটা হ্যান্ডলে গেঁথে যাই আমি। গুরুতর আহত হই। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে আমাকে। তারপর বাড়ি ফিরে দিন কেটেছে বিছানায়। সুস্থ হয়ে ওঠার সময়টিতে ছবি আঁকতে শুরু করি আমি। কেননা, আমি একেবারেই নিশ্চল হয়ে পড়েছিলাম। শুধু এ কাজটি করার ক্ষমতাই ছিল আমার। আমি প্রথম আত্মপ্রতিকৃতি আঁকি আমার সেই প্রেমিকের জন্য, যে দুর্ঘটনার সময় আমার সঙ্গে স্ট্রিটকারটিতে ছিল। আমার এই নিরন্তর অসুস্থতা দেখে সে হাঁপিয়ে উঠেছিল এবং আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
আমার জন্ম ও বাবার প্রতি ভালোবাসা
যে বছর মেক্সিকান বিপ্লব শুরু হয়, আমার জন্ম সে বছর। সেই উত্তাল সময়ে এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে আমি বেড়ে উঠি। আমি আর আমার ভাইবোনেরা একসঙ্গে দুটি বিপরীতমুখী সংস্কৃতির আবহ পেয়েছি। কেননা, আমার বাবা ছিলেন একজন জার্মান-ইহুদি ফটোগ্রাফার; আর মা কট্টরপন্থি ক্যাথলিক স্প্যানিশ-ভারতীয় নারী। আমাদের বাড়ির আবহ বরাবরই মনমরা ছিল। বাবা আমাকে মেয়ে নয়, বরং ছেলে হিসেবে দেখতেন। ছোটবেলায় ফুটবল, সুইমিং ও রেসলিং টিমে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তার জন্যই ন্যাশনাল প্রিপারেটরি স্কুলে পড়াশোনা করার সুযোগ পাই আমি। সেখানকার ২ হাজার ছাত্রের মধ্যে আমিসহ মেয়ে ছিল মাত্র ৩৫ জন। শুধু যে ছেলে, তা নয়, বরং একজন সাবালক ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে আমাকে গণ্য করতেন বাবা। তিনিই ছিলেন আমার সবকিছু। অন্যদিকে, মায়ের সঙ্গে বলতে গেলে কোনো সম্পর্কই ছিল না আমার। এমনকি তার মৃত্যুর পর মৃতদেহ দেখতেও যাইনি আমি।
‘খোঁড়া পায়ের মেয়ে’ বলে আমায় ক্ষেপাত
গুরুতর অসুস্থতার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় এটিই নয়। শৈশবে, ছয় বছর বয়সে, পোলিওর কারণে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলাম আমি। আমার বাবা-মা শুরুতে অসুখটা ধরতে পারেননি। যখন আমার ডান পা সরু হয়ে যেতে লাগল, স্কুলে যাওয়ার সময় ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে পা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতাম আমি। বাচ্চারা সারাদিন আমাকে জ্বালাতন করত। এমনকি ‘খোঁড়া পায়ের মেয়ে’ বলেও ক্ষেপাত। নিস্তেজ পা টেনেহিচড়ে হাঁটতে হতো আমাকে।
যে কারণে পশুর ছবি আঁকি
আমার পেইন্টিংয়ের অনুপ্রেরণার মূলে রয়েছে এই যাতনা। মন ভাঙার যাতনা, অসুস্থতার যাতনা, বিশ্বাসঘাতকতার যাতনা। এই যাতনাকে আমি গ্রহণ করি, এই যাতনাকে আমি প্রকাশ করি, এবং এটিকে আমি বদলে দিই ইতিবাচক ও সুন্দর কিছুতে। এই সব পেইন্টিংয়ের মধ্যে আমি আমার যাতনা ভোগ থেকে মুক্তি খুঁজে নিই। নিজেকে একটা পশুর মতো উপস্থাপনের চেষ্টা করি আমি। পশুরা যার সঙ্গে থাকে, তার উপকার করতে না পারলেও, তার প্রতি সত্যবান থাকে। এ কারণে পশুদের ছবি এত আঁকি আমি।
সিদ্ধান্তে অটল থাকা হলো না.
আর্টিস্ট দিয়েগো রিভেরা ও আমার বিয়েটি হয়েছিল খোলা মতের ভিত্তিতে। দু’জনের আলাদা পার্টনার থাকতে পারবে– এ শর্ত মেনে নিয়েছিলাম আমরা। তবু, আমার নিজেরই ছোট বোন ক্রিস্টিনার সঙ্গে দিয়েগোর সম্পর্কটা মানতে পারিনি। এই সম্পর্ক আমার মন ভেঙে দিয়েছে; আর দিয়েগোর কাছে ফেরার নিরন্তর চেষ্টা করে গেছি আমি। আমাদের মধ্যে সাময়িক বিবাহ-বিচ্ছেদ শেষে, আবারও দু’জন একসঙ্গে থাকতে শুরু করলেও সম্পর্কটি আর কখনোই আগের মতো হয়নি।
পেইন্টার হিসেবে আমার ফোকাস
দিয়েগোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পরিচয় হওয়ার আগে, বাবার এক বন্ধুর ওয়ার্কশপে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনচিত্র খোদাই করার কাজ দিয়ে আর্ট ক্যারিয়ার শুরু করি আমি। মেক্সিকান পেইন্টার আদলফো বেস্ট মুগার্ড স্টাইলের ড্রয়িংয়ে পাঠ নিয়েছিলাম আমি। তারপর ওয়াটার কালার আর অয়েল পেইন্টের চর্চা শুরু করি। পেইন্টার হিসেবে, আব্রাহাম অ্যাঞ্জেলের কাজের ওপর শুরু করি পড়াশোনা। নিজের পেইন্টিংয়ে আমি ব্যতিব্যস্ত শহুরে জীবনের পরিবর্তনকে ফুটিয়ে তুলি। রঙের সামান্য ব্যবহার করে, নিপাট ও জ্যামিতিক আকারের ছবি আঁকতে থাকি আমি। পেইন্টার হিসেবে আমার ফোকাস ছিল ফর্ম ও কনটেন্টের ওপর। অনেকেই বলে, আমি নাকি পরাবাস্তববাদী শিল্পী। তবে আমার কাছে আমার আঁকা ছবি হলো আমারই বাস্তবতা। আমার ছবি ঠিক একটা দিনলিপির মতো। আমার মনের গহীন ভাবনা ও অনুভূতিকে ধারণ করে এটি। ছবিতে সেগুলো প্রকাশ করতে গিয়ে নারীবাদী ও দেশজ অনুপ্রেরণার আশ্রয় নিই আমি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দিয়ে দুমড়েমুচড়ে গেল যাত্রীবাহী বাস
খুলনা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিল যাত্রীবাহী বাসটি। ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই আসার পর হঠাৎ বাসটি ধাক্কা দেয় একটি কাভার্ড ভ্যানের পেছনে। এতে দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। দুর্ঘটনায় আহত হন বাসের দুই যাত্রী। আজ মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার দিকে খৈয়াছড়া ইউনিয়নের মিরসরাই ফিলিং স্টেশনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
যাত্রীদের বরাতে ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঘুম চোখে গাড়ি চালাচ্ছিলেন বাসচালক। তাই বাসটি নিয়ে কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দেন তিনি। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের একজন দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বাসের সামনের আসনে আটকে ছিলেন। বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় তাঁকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
আহত দুজন হলেন আনোয়ার হোসেন (২৮) ও মো. রায়হান ইসলাম (৩৮)। তাঁদের মধ্যে খুলনার বাসিন্দা আনোয়ারকে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। মো. রায়হান ইসলাম নৌবাহিনীতে কর্মরত। তাঁকে উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম নগরে নেভি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলের পাশের একটি গ্যারেজে কাজ করছিলেন মো. শামসুল আলম। তিনি বলেন, মহাসড়কের পাশে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখেন একটি কাভার্ড ভ্যানের পেছনে বাস ধাক্কা দিয়েছে। বাসের ভেতরে যাত্রীরা আতঙ্কে চিৎকার করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের বাস থেকে নামিয়ে আনেন। আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে একজন বাসে আটকে থাকায় বাসিন্দাদের পক্ষে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে ফায়ার সার্ভিস তাঁকে উদ্ধার করে। আহত দুজনই বাসের সামনের দুটি আসনের যাত্রী বলে জানান শামসুল আলম।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি নিউ বলেশ্বর পরিবহনের বলে জানান উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের মিরসরাই স্টেশনের দলনেতা হায়াতুন্নবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আটকে পড়া এক যাত্রীকে অনেক কষ্টে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তাঁর ডান পায়ের নিচের অংশ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আহত অপর ব্যক্তিকে আমরা আসার আগেই স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। যাত্রীরা জানিয়েছেন, চালক চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আহত যাত্রীদের একজনের অবস্থা গুরুতর। আমরা দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি হেফাজতে নিয়েছি। তবে বাসের চালক দুর্ঘটনার পরেই সটকে পড়েছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’