Samakal:
2025-09-18@03:09:41 GMT

‘খোঁড়া পায়ের মেয়ে বলছি’

Published: 31st, May 2025 GMT

‘খোঁড়া পায়ের মেয়ে বলছি’

ফ্রিদা কাহলো। মেক্সিকান পেইন্টার। সেল্ফ পোর্ট্রেইটে বা আত্মপ্রতিকৃতিকে নিয়ে গিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। কিংবদন্তি এই চিত্রশিল্পীর বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক

১৯২৫ সালে আমার তখনকার প্রেমিকের সঙ্গে একটা স্ট্রিটকারে ঘুরে বেড়ানোর সময়, বাসের ধাক্কায় কারটি দুমড়েমুচড়ে যায়। একটা হ্যান্ডলে গেঁথে যাই আমি। গুরুতর আহত হই। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে আমাকে। তারপর বাড়ি ফিরে দিন কেটেছে বিছানায়। সুস্থ হয়ে ওঠার সময়টিতে ছবি আঁকতে শুরু করি আমি। কেননা, আমি একেবারেই নিশ্চল হয়ে পড়েছিলাম। শুধু এ কাজটি করার ক্ষমতাই ছিল আমার। আমি প্রথম আত্মপ্রতিকৃতি আঁকি আমার সেই প্রেমিকের জন্য, যে দুর্ঘটনার সময় আমার সঙ্গে স্ট্রিটকারটিতে ছিল। আমার এই নিরন্তর অসুস্থতা দেখে সে হাঁপিয়ে উঠেছিল এবং আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
আমার জন্ম ও বাবার প্রতি ভালোবাসা
যে বছর মেক্সিকান বিপ্লব শুরু হয়, আমার জন্ম সে বছর। সেই উত্তাল সময়ে এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে আমি বেড়ে উঠি। আমি আর আমার ভাইবোনেরা একসঙ্গে দুটি বিপরীতমুখী সংস্কৃতির আবহ পেয়েছি। কেননা, আমার বাবা ছিলেন একজন জার্মান-ইহুদি ফটোগ্রাফার; আর মা কট্টরপন্থি ক্যাথলিক স্প্যানিশ-ভারতীয় নারী। আমাদের বাড়ির আবহ বরাবরই মনমরা ছিল। বাবা আমাকে মেয়ে নয়, বরং ছেলে হিসেবে দেখতেন। ছোটবেলায় ফুটবল, সুইমিং ও রেসলিং টিমে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তার জন্যই ন্যাশনাল প্রিপারেটরি স্কুলে পড়াশোনা করার সুযোগ পাই আমি। সেখানকার ২ হাজার ছাত্রের মধ্যে আমিসহ মেয়ে ছিল মাত্র ৩৫ জন। শুধু যে ছেলে, তা নয়, বরং একজন সাবালক ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে আমাকে গণ্য করতেন বাবা। তিনিই ছিলেন আমার সবকিছু। অন্যদিকে, মায়ের সঙ্গে বলতে গেলে কোনো সম্পর্কই ছিল না আমার। এমনকি তার মৃত্যুর পর মৃতদেহ দেখতেও যাইনি আমি।
‘খোঁড়া পায়ের মেয়ে’ বলে আমায় ক্ষেপাত
গুরুতর অসুস্থতার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় এটিই নয়। শৈশবে, ছয় বছর বয়সে, পোলিওর কারণে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলাম আমি। আমার বাবা-মা শুরুতে অসুখটা ধরতে পারেননি। যখন আমার ডান পা সরু হয়ে যেতে লাগল, স্কুলে যাওয়ার সময় ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে পা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতাম আমি। বাচ্চারা সারাদিন আমাকে জ্বালাতন করত। এমনকি ‘খোঁড়া পায়ের মেয়ে’ বলেও ক্ষেপাত। নিস্তেজ পা টেনেহিচড়ে হাঁটতে হতো আমাকে।
যে কারণে পশুর ছবি আঁকি 
আমার পেইন্টিংয়ের অনুপ্রেরণার মূলে রয়েছে এই যাতনা। মন ভাঙার যাতনা, অসুস্থতার যাতনা, বিশ্বাসঘাতকতার যাতনা। এই যাতনাকে আমি গ্রহণ করি, এই যাতনাকে আমি প্রকাশ করি, এবং এটিকে আমি বদলে দিই ইতিবাচক ও সুন্দর কিছুতে। এই সব পেইন্টিংয়ের মধ্যে আমি আমার যাতনা ভোগ থেকে মুক্তি খুঁজে নিই। নিজেকে একটা পশুর মতো উপস্থাপনের চেষ্টা করি আমি। পশুরা যার সঙ্গে থাকে, তার উপকার করতে না পারলেও, তার প্রতি সত্যবান থাকে। এ কারণে পশুদের ছবি এত আঁকি আমি। 
সিদ্ধান্তে অটল থাকা হলো না.

..
আর্টিস্ট দিয়েগো রিভেরা ও আমার বিয়েটি হয়েছিল খোলা মতের ভিত্তিতে। দু’জনের আলাদা পার্টনার থাকতে পারবে– এ শর্ত মেনে নিয়েছিলাম আমরা। তবু, আমার নিজেরই ছোট বোন ক্রিস্টিনার সঙ্গে দিয়েগোর সম্পর্কটা মানতে পারিনি। এই সম্পর্ক আমার মন ভেঙে দিয়েছে; আর দিয়েগোর কাছে ফেরার নিরন্তর চেষ্টা করে গেছি আমি। আমাদের মধ্যে সাময়িক বিবাহ-বিচ্ছেদ শেষে, আবারও দু’জন একসঙ্গে থাকতে শুরু করলেও সম্পর্কটি আর কখনোই আগের মতো হয়নি। 
পেইন্টার হিসেবে আমার ফোকাস
দিয়েগোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পরিচয় হওয়ার আগে, বাবার এক বন্ধুর ওয়ার্কশপে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনচিত্র খোদাই করার কাজ দিয়ে আর্ট ক্যারিয়ার শুরু করি আমি। মেক্সিকান পেইন্টার আদলফো বেস্ট মুগার্ড স্টাইলের ড্রয়িংয়ে পাঠ নিয়েছিলাম আমি। তারপর ওয়াটার কালার আর অয়েল পেইন্টের চর্চা শুরু করি। পেইন্টার হিসেবে, আব্রাহাম অ্যাঞ্জেলের কাজের ওপর শুরু করি পড়াশোনা। নিজের পেইন্টিংয়ে আমি ব্যতিব্যস্ত শহুরে জীবনের পরিবর্তনকে ফুটিয়ে তুলি। রঙের সামান্য ব্যবহার করে, নিপাট ও জ্যামিতিক আকারের ছবি আঁকতে থাকি আমি। পেইন্টার হিসেবে আমার ফোকাস ছিল ফর্ম ও কনটেন্টের ওপর। অনেকেই বলে, আমি নাকি পরাবাস্তববাদী শিল্পী। তবে আমার কাছে আমার আঁকা ছবি হলো আমারই বাস্তবতা। আমার ছবি ঠিক একটা দিনলিপির মতো। আমার মনের গহীন ভাবনা ও অনুভূতিকে ধারণ করে এটি। ছবিতে সেগুলো প্রকাশ করতে গিয়ে নারীবাদী ও দেশজ অনুপ্রেরণার আশ্রয় নিই আমি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ইন ট র র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল

একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদা আক্তারের ছয় সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই মারা গেল। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পরপরই একটি শিশু মারা যায়। আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে আরও চার নবজাতকের মৃত্যু হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কর্মকর্তা মো. ফারুক প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামের মোকসেদা আক্তার রোববার সকালে একসঙ্গে এই ছয় সন্তানের জন্ম দেন। তাঁর স্বামী মো. হানিফ কাতারপ্রবাসী। মোকসেদা আক্তারের ননদ লিপি বেগম আজ প্রথম আলোকে বলেন, বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকের অবস্থাও বেশি ভালো নয়।

ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মোকসেদা তিন ছেলে ও তিন মেয়েসন্তান প্রসব করেন। সন্তানেরা ২৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্ম নেয়। জন্মের সময় প্রত্যেকের ওজন ছিল ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামে মধ্যে। এ কারণে তাদের সবার অবস্থাই ছিল সংকটজনক।

আরও পড়ুনঢাকা মেডিকেলে একসঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম, নবজাতকদের অবস্থা সংকটাপন্ন২২ ঘণ্টা আগে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে আইসিইউতে পর্যাপ্ত শয্যা খালি না থাকায় তিনজনকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকটি বেসরকারি হাসপাতালে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের কাজ কি শুধু ভাইভা নেওয়া
  • কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 
  • যে ১০ কারণে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বেশি ঝগড়া হয়
  • স্মার্ট সিটি হবে চট্টগ্রাম, একসঙ্গে কাজ করবে গ্রামীণফোন-চসিক
  • অনলাইন জীবন আমাদের আসল সম্পর্কগুলোকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-গ্রামবাসীতে বিদ্বেষ কেন
  • তিনি চাকরি ছাড়বেন শুনলেই সহকর্মীরা হাসাহাসি করেন
  • প্রেমিকের সঙ্গে বাগদান সারলেন হুমা কুরেশি!
  • একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল
  • চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: ট্রাম্প কি দাঙ্গা–ফ্যাসাদকেই নীতি হিসেবে নিয়েছেন