জুলাই আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দাখিল করা হবে দুপুরে। 

রবিবার (১ জুন) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। দুপুর ১২টা থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে এ বিচার কাজ সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করতে পারে বলে জানা গেছে।

এ মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আরো দুজন অভিযুক্ত রয়েছেন। তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

আইনজীবীরা বলছেন, আজ অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রথম কোনো বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

মামলাটিতে শেখ হাসিনাকে জুলাই–অগাস্ট আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, জুলাইয়ে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘উসকানিদাতা’ হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক নম্বর অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারান এই আন্দোলনে।

ঢাকা/এম/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম নবত ব র অপর ধ র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় গণহত্যা বন্ধে বিবেকের জোট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্ধকারতম দিনগুলোতে আনা ফ্রাঙ্ক ও তাঁর পরিবার নাৎসি নির্যাতনের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে আমস্টারডামের একটি গোপন ছাদে লুকিয়ে ছিলেন। তাঁর মরণোত্তর প্রকাশিত ডায়েরি বিশ্বকে সেই সময়ে ইহুদি পরিবারগুলোর ভয় এবং মানসিক ট্রমার এক ভূতুড়ে আভাস দেয়।

আজ ফিলিস্তিনে তেমনই করুণ এক গল্পই ফুটে উঠছে। এবার আনা ফ্রাঙ্কের মতো হাজার হাজার শিশু ইসরায়েলি সরকারের অনাহার ও অবিরাম বোমাবর্ষণের কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি। তাদের লুকানোর জন্য একটি ছাদও নেই; নির্বিচারে ইসরায়েলি আক্রমণে তাদের চারপাশের ভবনগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

হলোকাস্টের আট দশক পর আরেকটি গণহত্যা চলছে। এবার ফিলিস্তিনি শিশুরা জাতিগত নির্মূল অভিযানের শিকার ও সাক্ষী হয়ে থাকবে। এ শিশুদের প্রত্যেকেরই একটি মর্মান্তিক গল্প রয়েছে, যা বিশ্ববাসীকে শুনতে হবে। একদিন আমরা হয়তো তাদের স্মৃতিকথায় পড়তে পারি, যদি তারা সেগুলো লেখার জন্য ততদিন বেঁচে থাকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদাযয়ের উচিত ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা না করা। এখনই তারা এই শিশুদের দুর্দশা বন্ধে উদ্যোগী হতে হবে। এ কারণে আমরা একটি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে গাজার শিশুদের বার্তা তুলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছি, যাতে তারা বিশ্বের সামনে একটি জোরালো প্রশ্ন তুলতে পারে। ‘তোমরা চুপ কেন?’ তুরস্কের উদ্যোগে গৃহীত এই তথ্যচিত্র গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা অভিযানের নৃশংস বাস্তবতা উদোম করে দিতে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে প্রচারিত প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে একটি।
অনেক পশ্চিমা রাষ্ট্র এখন গণহত্যার সহযোগী বা সমর্থক হিসেবে কাজ করে। তারা নৈতিক কর্তৃত্ব ও আধিপত্যবাদী বক্তব্য হারিয়েছে। আরও দুঃখজনক হলো, কেউ কেউ আট দশক আগে নিজেরাই সংঘটিত গণহত্যার আহ্বান জানিয়ে তাদের অবস্থানকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যারা একসময় ইতিহাসের ভুল পথে হেঁটেছিল, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছিল, তারা এখন অন্য জাতির প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ এড়িয়ে যাচ্ছে। অতীতের নৃশংসতায় জড়িত থাকার দোষ নতুন কোনো তৎপরতার কারণে ক্ষমা করা যায় না। পুরোনো অপমান ঢাকতে নতুন করে লজ্জিত হলে বিবেকের পরিশুদ্ধি ঘটে না। ‘আর কখনও নয়’ কথাটির যদি কোনো তাৎপর্য থাকে, তবে এটি কেবল অতীতের ভুক্তভোগীদের বেলায় প্রযোজ্য নয়, বরং আজকের জন্যও কার্যকর হওয়া উচিত।

গাজায় গণহত্যার ক্ষেত্রে পশ্চিমা নীরবতা এবং তাদের জড়িত থাকার একটি প্রধান কারণ হলো ইসরায়েলের প্রোপাগান্ডা। তারা চলমান সহিংসতার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বৃহৎ অংশের অসংবেদনশীলতাকে কাজে লাগাচ্ছে। গাজাবাসীকে ‘পাপিষ্ট সন্তান’ হিসেবে উল্লেখ করে ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। 
সব মানুষের বিশেষ করে ক্ষমতাহীনদের অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার ভিত্তির ওপর একটি নতুন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এখন যা প্রয়োজন তা হলো বিবেকের একটি জোট, যেখানে জাতিগুলো তাদের মূল্যবোধসম্পৃক্ত সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে যথেষ্ট সাহসী হবে এবং নেতারা উদ্যমী হয়ে কিছুটা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কাজ করতে প্রস্তুত থাকবে। ন্যায়বিচার নিজে থেকে আসবে না; এটি তাদের দ্বারাই নিশ্চিত হবে, যারা নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সাহসী।

যদি তারা ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে হবে। অবশ্যই তাদের লাখ লাখ শিশুর জিজ্ঞাসা বুঝতে হবে, যারা বলছে– ‘ কেন তোমরা চুপ আছো?’ গণহত্যাকারী ইসরায়েলি সরকারকে মুখোমুখি হতে দেরি করার প্রতিটি দিন ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরও অপরাধ বয়ে আনছে। এই ব্যর্থতা কেবল ফিলিস্তিনিদের দুর্দশাকেই আরও গভীর করে না, বরং ইসরায়েলি জনগণের জন্যও এক গুরুতর ক্ষতিকর হিসেবে কাজ করে, যাদের অনেকেই ব্যাপকভাবে একটি নতুন ও ন্যায়সংগত নেতৃত্বের আশা করে। আসুন আমরা এখনই পদক্ষেপ নিই; যাতে আনা ফ্রাঙ্কের মতো স্মরিত হতে ফিলিস্তিনি শিশুদের নীরবে মরতে না হয়।

ফাহরেতিন আলতুন: তুরস্ক সরকারের যোগাযোগপ্রধান, আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৪০০ ছাড়াল
  • গাজায় গণহত্যা বন্ধে বিবেকের জোট
  • শেখ হাসিনার বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে সরাসরি সম্প্রচার হবে: প্রসিকিউটর