গাজায় ত্রাণ নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের গুলি, নিহত ১৫
Published: 1st, June 2025 GMT
গাজার রাফাহ শহরে একটি নতুন মানবিক সহায়তা বিতরণকেন্দ্রে ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
রবিবার (১ জুন) স্থানীয় চিকিৎসক ও বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রাফাহের স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ গারিব বিবিসিকে বলেন, “মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত একটি মানবিক সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রে রবিবার ভোরে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি জড়ো হয়েছিল, ঠিক তখনই ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো এগিয়ে এসে জনতার উপর গুলি চালায়।”
আরো পড়ুন:
গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ: জাতিসংঘ
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত এলাকা এখন ‘গাজা’
স্থানীয় সাংবাদিক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা রাফাহের আল-মাওয়াসি এলাকার একটি রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতালে মরদেহ ও আহত ব্যক্তিদের গাধার গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার ভয়াবহ ফুটেজ শেয়ার করেছেন, কারণ উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি বলে জানা গেছে।
গারিব বিবিসি বলেন, “ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো উপস্থিত হয়ে গুলি চালানোর কিছুক্ষণ আগে, স্থানীয় সময় রবিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে আল-আলম চৌরাস্তার কাছে ফিলিস্তিনিদের ভিড় জড়ো হয়েছিল।”
গারিব বলেন, “নিহত ও আহতরা দীর্ঘক্ষণ মাটিতে পড়ে ছিলেন। উদ্ধারকারীরা ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় প্রবেশ করতে পারেননি। এর ফলে বাসিন্দারা গাধার গাড়ি ব্যবহার করে আহতদের ফিল্ড হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হন।”
রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতালের একজন চিকিৎসক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ১৫টি মরদেহ এবং ৫০ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসক আরো জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য হতাহতদের খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, আহতদের সংখ্যা ১০০ জনেরও বেশি। তিনি বলেন, “ত্রাণ নিতে আসা হাজার হাজার ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ ও গুলিবর্ষণের ফলে কমপক্ষে ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো ১০০ জন আহত হয়েছেন।”
বিবিসি বলছে, এই ঘটনাটি রাফাহের ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি প্রকাশ করে, যেখানে সাম্প্রতিক ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে সাহায্য ও জরুরি পরিষেবার প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবারও (২৭ মে) ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ভিড় সামলাতে না পেরে গুলি চালিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এতে একজন নিহত এবং ৪৮ জন আহত হয়েছিলেন।
গাজায় প্রায় ৮০ দিন ধরে খাবার, ওষুধ, পানি, জ্বালানিসহ সব ধরনের সরবরাহে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার পর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে মানবিক চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গাজায় খুবই সীমিত সংখ্যক আন্তজার্তিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল, যেটিকে ‘সমুদ্রের এক ফোঁটা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত একটি নতুন সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ গত সপ্তাহ থেকে গাজায় নির্ধারিত স্থানে খাবার বিতরণ শুরু করেছে। হামাসের বিরুদ্ধে ত্রাণ চুরির অভিযোগ এনে ইসরায়েল নতুন এই পরিকল্পনা তৈরি করেছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে হামাস।
ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনের চাপে মার্কিন ও ইসরায়েল সমর্থিত নতুন এই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের শৃঙ্খলা প্রায়শই ভেঙে পড়ছে। ফলস্বরূপ ফিলিস্তিনিদের ভিড়ের উপর গুলিবর্ষণ করছে ইসরায়েলি সেনবাহিনী।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, তথাকথিত বাফার জোনে ত্রাণ বিতরণের জন্য ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর পরিকল্পনা ভয়াবহভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইসরায়েল ও হামাসের কাছে যুদ্ধবিরতির একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন।
হামাস মার্কিন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, তারা বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি এবং ১৮ জন মৃত জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত।
তবে হামাস গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে সম্পূর্ণ ইসরায়েলি প্রত্যাহার এবং মানবিক সাহায্যের ধারাবাহিক প্রবাহের নিশ্চয়তার দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেছে। এর কোনোটিই টেবিলে থাকা চুক্তিতে নেই।
উইটকফ বলছেন, হামাসের দাবিগুলো ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং এটি ‘যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে পিছনের দিকে নিয়ে যাবে’। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, মার্কিন প্রস্তাবই ‘আগামী দিনগুলোতে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন করার একমাত্র উপায়।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল প রস ত ব তরণ ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
মাদারীপুরের সাবেক দুই ডিসিসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান
শিবচরে পদ্মা সেতু রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মাদারীপুরের সাবেক দুই জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন ও মো. ওয়াহিদুল ইসলামসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় এ সংক্রান্ত নোটিশ মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সাবেক দুই জেলা প্রশাসকসহ অভিযুক্তদের কাছে পাঠিয়েছে ।
দুদক সূত্র জানায়, পদ্মা রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক দুই জেলা প্রশাসকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন জন্য দুদক মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামানকে দলনেতা ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান অপুকে সদস্য করে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
খুকৃবির সাবেক উপাচার্যসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুবির নতুন ক্যাম্পাসের জমি ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ, তথ্য চেয়েছে দুদক
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৯ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর বিধি ৮ অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য এবং চাহিদাপত্র চেয়ে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে তারা হলেন- মাদারীপুর সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ওহিদুল ইসলাম, সাবেক জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ ফারুক আহম্মদ, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ঝোটন চন্দ্র, মাদারীপুরের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস।
মোহাম্মদ সুমন শিবলী, প্রমথ রঞ্জন ঘটক, আল মামুন, মো. নাজমুল হক সুমন, মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কানুনগো (ভারপ্রাপ্ত) মো. নাসির উদ্দিন, মো. আবুল হোসেন, রেজাউল হক এবং মাদারীপুর কালেক্টরেট রেকর্ড রুম শাখার রেকর্ড কিপার মানিক চন্দ্র মন্ডল।
দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান বলেন, “মাদারীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম ও ড. রহিমা খাতুনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তথ্য ও বিভিন্ন চাহিদাপত্র চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নোটিশ অভিযুক্তদের কাছে পাঠানো হয়েছে।”
ঢাকা/বেলাল/মাসুদ